পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/
বাংলা একাডেমিতে আমার এক আত্মীয় চাকরি করেন। বহুদিন যাবৎ যাওয়ার জন্যে টেলিফোনে পীড়াপীড়ি করছেন। ক’দিন আগে তার উদ্দেশে রওনা হলাম। মিরপুর থেকে গুলিস্তানগামী কোষ্টার চড়ে বসলাম।
বিকেল সাড়ে তিনটা।
শাহবাগ মোড়ে নেমে অপেক্ষাকৃত কম ব্যস্ত ও ছিমছাম পথটা বেয়ে হেঁটে যাচ্ছি। গাড়ির ঝাঁকুনিতে প্রকৃতি ২ নম্বর সংকেত দিয়ে বসলো। একটু পথ যেতেই আর পা চলছে না। তলপেটটা শক্ত হয়ে আসছে।
অনেকটা অস্থির হয়ে উঠলাম। শরীর ঘেমে সয়লাব। লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। ডানে বামে কোন পাবলিক টয়লেট পাওয়া গেল না। কোনো মতে হাঁটছি।
দু’পা একত্র করে উর্ধ্বমুখী হয়ে দম আটকিয়ে চাপ কমাবার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। বরং দম আটকানোর ফলে হিসুর চাপ দ্বিগুণ বেড়ে গেল।
এমনি এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে রাস্তার বাম পাশের দেয়ালে আনাড়ি হাতের অস্পষ্ট লেখা চোখে পড়ল, ‘এইখানে পেশাব করিবেন না, করিলে পঞ্চাশ টাকা জরিমানা। ’ এটা দেখে অস্থির অবস্থায় সহসাই স্বস্তি ফিরে পেলাম। মনে মনে বল্লাম, যা করবে আল্লায়।
পঞ্চাশ টাকা গেলে যাবে! আমি বুক পকেটে হাত চেপে রাস্তার ডান পাশ থেকে একটা দৌড়ে বাম পাশে দেয়ালের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে এপাশ-ওপাশ দেখে নিলাম। তারপর অসম্ভব দ্রুততায় প্যান্টের বেল্ট ও চেইনটা কোনমতে খুলে সটান দাঁড়াতেই শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে প্রচন্ড বেগে হিসু করতেই পেছন থেকে কে যেন আচমকা হ্যাঁচকা টানে আমাকে রাস্তায় ফেলে দিল। কে-রে! -বলে পেছনে তাকিয়েই দেখি-পুলিশ! হাতে তেল চিকচিকে মৃসণ লাঠি। লাল টকটকে চোখ। তীর্যক ভাবে আমার দিকে ফণা তুলে তাকিয়ে আছে।
কী যেন বলতে চাইছে পুলিশটি, প্রচন্ড রাগের ঠেলায় চোয়ালে ঢেউ খেলছে; বলতে পারছে না কিছুই।
'শালা। নিষিদ্ধ জাগায় মূত্রত্যাগ করস’ -বলেই পুলিশ আমার পেছনে প্যান্টের বেল্টটা ধরে উল্টো দিকে টেনে উর্ধ্বশ্বাসে হাঁটা শুরু করল। হিংস্র বাঘের মুখে অসহায় হরিণের মতো অবস্থা আমার! কুল রাখি না শ্যাম রাখি! কোন মতে ইন করা শার্ট দিয়ে সামনের উদোম অংশটা ঢাকার চেষ্টা করছিলাম বটে কিন্তু মাগার পুলিশের টানাটানিতে মূত্রথলির সমস্ত মূত্র চঞ্চল হয়ে উপরের দিকে উঠতে শুরু করল। পুলিশের অসম্ভব টানা-হ্যাঁচড়ায় আমার প্যান্ট, মোজা ও জুতার অনেকটা অংশ ভিজে গেছে।
এরই ফাঁকে তার জবা ফুলের মত লাল দু’টো চোখে আমার চোখ পড়তেই রক্ত হিম হয়ে যাওয়ার যো হয়েছে।
বেরসিক পুলিশটি আমাকে বার বার হ্যাঁচকা টান মারছে আর বলছে, ’ক, এই আকামডা করলি ক্যান?’ আমি করজোড়ে বললাম, ’ভাই পুলিশ, আমার বিপদের কথাটা একটিবার মন দিয়ে শুনুন। কী অসহ্য যন্ত্রণায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে আমি এখানে দাঁড়িয়ে.....। ’ ’চুপ। চুপ কর, বেটা খট্টাস।
’-বলতেই লক্ষ্মী ছেলের মতো চুপ মেরে গেলাম। পুলিশ বলছে, তুই কত খারাপ কামডা করলি তা কি বুঝতে পারছস? বললাম, জ্বী বুঝতে পারছি ভাই। পুলিশ বলল, বুঝতে পারলে ’হ্যাবলার মতো ভাই, ভাই করতাছস ক্যান?’
বিনয়ের সাথে বল্লাম, ’কী করব এখন আমি!’ পুলিশ একটু এগিয়ে এসে বলছে, ’অই হালায় কয় কিরে। বোদাই তো দেখেছি, এতো দেখছি রাম বোদাই। ’ কষ্টে বল্লাম, ’ভাই, এগুলা কী বলছেন আপনি আমারে?’ পুলিশ হাতের লাঠিটা ঘুরিয়ে বলল, ’কতা কই, হারামজাদা।
তুই পেচ্ছাব কইরা সারা শহর ভিজাইয়া ফালাইছস, আর এহন ন্যাকামি করতাছস্ নাহ্। ’
আমি বললাম, ’আমাকে ধরে এমন করতেছেন ক্যান? জরুরি কাজে এক জায়গায় যাচ্ছি। আমাকে ছেড়ে দেন। ’ ’কী? ছাইরা দিমু তরে? অই শালায় মনে অয় আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নাই। তাই আমাগোর ছাইজটা বুঝতে পারতাছে না।
’-বললাম, ’কী করতে হবে ভাই, টানা-হ্যাঁচড়া না করে বলেন। পুলিশ বলছে, আব্বে হালা টেহা ল বেডা। ’
’কীসের টাকা চান আপনি?’ বলতেই হাতের বেন্দা দিয়ে আমার তল পেটে সজোরে গুতো মেরে বলল, ’তুই বুজসনা কীসের টেহা? জরিমানা ল বেডা, জরিমানা। পেচ্ছাবের জরিমানা। ’
পুলিশের এসব মারফতি জেরায় আমার হাত-পা ও বুক অনেকক্ষণ ধরেই কাঁপাকাঁপি করছিল।
কম্পিত হাতে পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার নোটটা বের করতেই পুলিশ সিংহের মত গর্জে ওঠে বলছে ’এই, এইডা কি বার করতাছস? আমার সাথে মসকরা করস্? আমারে পঞ্চাশ টাহার পুলিশ মনে করছস। ’
আমি বললাম, ’এই যে দেয়ালেই ত লেখা আছে পঞ্চাশ টাকা জরিমানা!’ ’আব্বে হালায় আমারে আইন দেহায় দেহি। আরে বেডা কোন আবাইল্যা হালায় পঞ্চাশ টেহা লেকছে, হেইডারেই তুই আইন মনে করছস। আস্তা গর্ধভ। আমি আইনের লোক বোজছস? যেইডা কই হেইডা হোন।
নাইলে কিন্তু ভেরা-ছেরা কইরা ফালামু তরে। ’
ভয়ে ভয়ে বললাম, ’আমি তাহলে কী করব এখন?’ ডানে বামে বারকয়েক তাকিয়ে আমার কানের কাছে মুখটা এগিয়ে নিয়ে পুলিশ ফিস ফিস করে বলছে, ’যেই আকামডা তুই করছস মেলা ঝামেলায় পইরা যাবি কিন্তু। আর শুরু থাইককাই কিন্তু মেলা বেয়াদবি করতাছস। এইগুলানের কিন্তু ক্ষমা-ক্ষেমান্তি নাই। জানে বাঁচবার চাইলে তাড়াতাড়ি পাঁশসো টেহা আমার বাম পকেডে গুইঞ্জা দে।
’
পুলিশের এই কথায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। অবাক হয়ে বল্লাম, ’ভাই এটা কী কন! পাঁচশ টাকা! ঠিকমত পেশাবটাও করতে পারি নাই। যা-ও একটু করলাম, সব তো আমার জাইঙ্গা, প্যান্টে আর মোজার মধ্যেই। শহরের তো কোন ক্ষতি হয়নি!’ একথা শুনে পুলিশের হাতের লাঠিটা ঘুরাতে ঘুরাতে মাথাটা ঝাকিয়ে বলছে, ’তুই কি জানস যে তোর এক ফোটা মুতের মইধ্যে কয়শ রোগ আছে? তুই ত আমার কাপড়ও নষ্ট কইরা ফালাইছস। ল, টেহাডা ল।
’
আমি হতবিহ্বল হয়ে আবার পঞ্চাশ টাকার নোটটা বের করতেই পুলিশ হিংস্র দানবের মত আমার কন্ঠ চেপে ধরে বলতে লাগল, ’বেডা তুই আমারে দুলাভাই পাইছস’-বলেই হাতের লাঠিটা দিয়ে অন্ধভাবে পেটাতে লাগল। আমি মার খেয়ে যতটা পর্যুদস্ত, বেচারা পুলিশ আমাকে মেরে তারচে বেশি কাহিল। আমাকে এলোমেলো পিটিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে পুলিশটি বলছে, ’তরে আইজকা আমি জীবনের শিক্ষা দিয়া ছারমু, হারামজাদা। ’ এ কথা বলেই পুলিশ আমাকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, ’এহানে চুপ কইরা খাঁড়া, আমি মুইত্তা লই। ’
মূহুর্ত বিলম্ব না করে পুলিশ প্যান্টের চেইনটা খুলেই আমি যেখানে পিশাব করতে দাঁড়িয়েছিলাম ঠিক সেখানে তিনি নির্বিঘ্নে পিশাব করে দিলেন।
আমি ডান-বাঁও তাকিয়ে সুযোগ বুঝে দিলাম ভোঁ দৌড়। এক দৌড়ে শাহবাগের মোড়ে মিরপুরগামী চলন্ত কোষ্টারের রড ধরে ওঠে পড়লাম। স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলে পেছনে তাকিয়ে দেখি, বেচারা পুলিশ প্যান্টের চেইনটা লাগাতে লাগাতে ব্যাঙ্গের মত লাফিয়ে আমার দিকে দৌড়ে আসছে আর বলছে, ’এই যে ভাই যাইয়েন না, আমারে পঞ্চাশ টেহাই দিয়া যান। ’ কোষ্টার মোড় ঘুরে এগিয়ে চলেছে। পুলিশের ক্লান্ত অথচ বিনম্র আবেদন অষ্পষ্টভাবে আমার কানে ভেসে আসছে।
শত অত্যাচারিত হয়েও তার করুণ আর্তিতে আমার মনে করুণার উদ্রেক হলো। এতক্ষণের কোস্তাকোস্তিতে সেও আমার মত ক্লান্ত-শ্রান্ত। সামান্য টাকার জন্য গলদঘর্ম পুলিশ অসামান্য পরিশ্রম করতে বিন্দু পরিমাণ অবহেলা করেনি। তাকে একেবারে বঞ্চিত করতে বিবেক বাধা দিল। অচল অবশ কম্পমান হাতে পকেট থেকে কোনোমতে ২ টাকার একটা মলিন নোট বের করে প্যাঁচিয়ে বিড়ি বানিয়ে গাড়ির জানলার ফাঁক দিয়ে নিচে ছুড়ে মারলাম।
দেখি, বেচারা পুলিশ এক খাবলে টাকাটা হাতে তুলে নিয়েই আমার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে বলতে টাকাটা পকেটে ঢুকালো। তার অস্পষ্ট কথায় আর চাহনিতে কী ছিল তা আর বোঝা গেল না!
হিস্যু যখন ইস্যু (রম্য গল্প)
বি এম বরকতউল্লাহ
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।