বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
তাবড় তারকাদের উপস্থিতি, চোখ ধাঁধাঁনো পোশাক, গ্ল্যামারের বন্যা_ সবই ছিল। কিন্তু কোথায় সেই উন্মাদনার ঝড়? অস্কারে কোনো একটি ছবির একাধিপত্যের দিন কি শেষ? ১১-১২টা মনোনয়ন পেয়ে একাই ৭-৮টা পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়ার রেওয়াজে কি ইতি পড়ে গেল? এমন সব প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে ৮৩তম অস্কার অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পর।
গত রোববার লস অ্যাঞ্জেলেসের স্থানীয় সময় আটটা এবং বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টায় কোডাক থিয়েটারে বসেছিলো বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে আলোচিত পুরস্কার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের আসর যা অস্কার নামে পরিচিত। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের আসর ছিলো টানটান উত্তেজনাপূর্ণ। কোন চলচ্চিত্রই এবার একক প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেনি।
মোট ২৪টি বিভাগের মধ্যে ১২টিতে মনোনয়ন পেয়েছিলো টম হুপার পরিচালিত ‘দি কিংস স্পিচ’। সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা চিত্রনাট্য (মৌলিক) সহ সর্বাধিক ৪টি বিভাগে অস্কার জিতে নিয়েছে এ ছবিটি। দি কিংস স্পিচ ছবিতে তোতলা রাজা ষষ্ঠ জর্জের ভূমিকায় অভিনয় করে অস্কার জিতেছেন খ্যাতিমান অভিনেতা কলিন ফার্থ। আর ব্ল্যাক সোয়ান ছবিতে নর্তকীর ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে অস্কার জিতে নিয়েছেন নাটালি পোর্টম্যান। এ দুটি বিভাগে কলিন ও নাটালির পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি একরকম নিশ্চিত ছিলো।
এর আগে দুজনই গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা পুরস্কার জিতে জানান দিয়েছিলেন অস্কার এবার তাদের ঘরেই যাচ্ছে।
তবে দি কিংস স্পিচ সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা পরিচালকের পুরস্কার পাওয়ায় সবাই বেশ অবাকই হয়েছেন। গুঞ্জন ছিলো সামাজিক যোগাযাগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে নিয়ে নির্মিত ‘দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ ছবিটি সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা পরিচালক বিভাগে পুরস্কার পেতে যাচ্ছে। ৮টি বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া ডেভিড ফিঞ্চার পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটি গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা অ্যাওয়ার্ডসহ প্রায় সবগুলো অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে পুরস্কার জিতে নিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত এই ছবির ঝুড়িতে উল্লেখযোগ্য অর্জন বলতে শুধু সেরা সম্পাদনা আর সেরা চিত্রনাট্য (অ্যাডপ্টেড) বিভাগের অস্কার।
অপরদিকে ৮টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ইনসেপশন’ জিতে নিয়েছে চারটি অস্কার। ইনসেপশন মনোনয়নের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম স্থান অর্জন করা দি কিংস স্পিচের সঙ্গে সহ অবস্থানে রয়েছে ।
হলিউডে বক্সিং নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বরাবরই প্রাধান্য পায়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ৭টি বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া ‘দি ফাইটার’ ছবিতে অভিনয় করে ক্রিশ্চিয়ান বেল ও মেলিসা লিও জিতে নিয়েছেন সেরা পার্শ্ব অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার।
মোট ১০টি বিভাগে মনোনয়ন পেলেও ইথান কোয়েন ও জোয়েল কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয় পরিচালিত ‘ট্রু গ্রিট’ ছবিটির ভাগ্যে একটি অস্কারও জুটেনি । এর আগে ২০০৩ সালে মার্টিন স্করসিস পরিচালিত “গ্যাংগস অব নিউইয়র্ক” চলচ্চিত্রটির বেলায় একই ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালে কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান’ সেরা চলচ্চিত্রের অস্কার পুরস্কার পায়।
অস্কারের ৮৩তম আসরে বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ হাসি হেসেছে ডেনমার্কের ‘ইন এ বেটার ওয়ার্ল্ড ’ ছবিটি। সুসানে বিয়ের পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটিতে উঠে এসেছে ডেনিশ দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সংঘাতের উপাখ্যান ।
এ বিভাগে লড়াইয়ে আরো ছিলো দি ডেথ ট্রিলজির পরিচালক আলেহান্দ্রেস গঞ্জালেঞ্জ ইনারিতুর বিউটিফুল (মেক্সিকো), ডগটুথ (গ্রিস), ইনসেনডিস (কানাডা) এবং আইটসাইড দ্য ল (আলজেরিয়া)।
আবারও ড্যানি বয়েলের চলচ্চিত্রে (১২৭ আওয়ার্স) কাজ করার সুবাদে উপমহাদেশের কিংবদন্তী সংগীত পরিচালক এ আর রাহমান দ্বিতীয়বারের মত জোড়া অস্কারের মনোনয়ন পান। কিন্তু এবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। রাহমান অরিজিনাল স্কোর ও অরিজিনাল সং বিভাগে মনোয়ন পেলেও এ বিভাগ দু’টিতে যথাক্রমে দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও টয় স্টোরি ৩ পুরস্কার জিতে নেয়।
এবারের আসরে উপস্থাপনা করেন অভিনেত্রী অ্যান হ্যাথওয়ে (দি প্রিন্সেস ডায়রীজ, অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড, হ্যাভক) এবং অভিনেতা জেমস ফ্রাঙ্কো (স্পাইডারম্যান, মিল্ক, হাউল, ১২৭ আওয়ার্স)।
স্লামডগ মিলিয়নিয়ার খ্যাত অস্কারজয়ী পরিচালক ড্যানি বয়েলের ১২৭ আওয়ার্স ছবিতে অভিনয় করে ফ্রাঙ্কো এবার নিজেও লড়েছেন সেরা অভিনেতার অস্কারের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার মুখে হাসি ফোটেনি। উপস্থাপনা দিয়েও মন জয় করতে পারেননি অ্যান ও ফ্রাঙ্কো। চলচ্চিত্র বোদ্ধারা মনে করছেন এবারের অস্কারে নূতনের কেতন উড়ানোর প্রচেষ্টা থাকলেও এ দু’জনের রসায়নহীন উপস্থাপনায় তা জমে উঠেনি ।
জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী গিনেথ প্যালট্রো।
তার অভিনীত কান্ট্রি সং ছবির কামিং হোম গানটি তিনি গেয়ে শোনান। এ আর রাহমান তার সুরের মূর্ছনায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন গোটা কোডাক থিয়েটার। এছাড়া জাকারি লেভি, ম্যান্ডি মুর ও এবারের আসরে জয়ী র্যান্ডি নিউম্যানের পরিবেশনা ছিলো উল্লেখ করার মত।
এক নজরে ৮৩ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীরা
ছবি: দি কিংস স্পিচ
পরিচালক: টম হুপার (দি কিংস স্পিচ)
অভিনেতা: কলিন ফার্থ (দি কিংস স্পিচ)
অভিনেত্রী: নাটালি পোর্টম্যান (ব্ল্যাক সোয়ান)
পার্শ্ব অভিনেতা: ক্রিশ্চিয়ান বেল (দি ফাইটার)
পার্শ্ব অভিনেত্রী: মেলিসা লিও (দি ফাইটার)
চিত্রনাট্য (অরিজিনাল): ডেভিড সেইডলার (দি কিংস স্পিচ)
চিত্রনাট্য (অ্যাডাপ্টেড): অ্যারন সরকিন (দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক)
বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র: ইন এ বেটার ওয়ার্ল্ড (ডেনমার্ক),
অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম: টয় স্টোরি ৩
অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম: দি লস্ট থিং
লাইভ অ্যাকশন শর্ট ফিল্ম: গড অব লাভ
প্রামাণ্যচিত্র (ফিচার): ইনসাইড জব
প্রামাণ্যচিত্র (শর্ট সাবজেক্ট): স্ট্রেঞ্জারস নো মোর
অরিজিনাল স্কোর: ট্রেন্ট রেজোনার ও অ্যাটিকাস রস (দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক)
অরিজিনাল সং: ‘উই বিলং টুগেদার’ , র্যান্ডি নিউম্যান (টয় স্টোরি ৩)
সম্পাদনা: দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক
শিল্প নির্দেশনা: এলিস এন ওয়ান্ডারল্যান্ড
কস্টিউম ডিজাইন: এলিস এন ওয়ান্ডারল্যান্ড
মেকআপ: দি উলফম্যান
সিনেমাটোগ্রাফি: ইনসেপশন
শব্দ সম্পাদনা: ইনসেপশন
শব্দ মিশ্রণ: ইনসেপশন
ভিজুয়াল অ্যাফেক্টেস: ইনসেপশন
অস্কার পুরস্কার হাতে ক্রিশ্চিয়ান বেল, নাটালি পোর্টম্যান, মেলিসা লিও ও কলিন ফার্থ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।