♠ ব্লগার ইমন জুবায়ের ♠ মেঘের আড়ালে থাকা একটি নক্ষত্রের নাম
০১.
সে আমায় বলতো আমি নাকি ভালোবাসতেই জানিনা।
কিন্তু আমার মনের মধ্যে চিন্তার মহা জালটা বলে এর চেয়েও কি আরও বেশি ভালোবাসা যায়। আবার কখনও কখনও নিজের মনের শ্লেটে নিজেই লিখে চলি; হয়তো আরো বেশি ভালোবাসা যায় !! যে টুকু আমি জানিনা। আমার না; জানা ভালোবাসাটা জানা থাকলে ভালো হতো; তাহলে হয়তো তাকে আর; নোনা স্রোতে ভাসতে হতো না।
আশা ছাড়া ভাসা-ভাসা ছোট এক ডিঙ্গিতে; পূর্ণতা মিলবে না আর কারো ইঙ্গিতে।
আকাশ জুড়ে মেঘ করেই আছে সেই বিকেল থেকে; কিন্তু বৃষ্টি নামবার নামটি পর্যন্ত নেই।
আমি ত্রিচক্রযান থেকে নেমেই গলিতে ঢুকলাম। ছোপ ছোপ আধার পুরো গলিময়; এভাবেই তো পথ চলি প্রতিদিন; আমাকে এভাবেই চলতে হয়।
গলির শেষ প্রান্তে আসতেই সেই পুরোনো ডাক;
-রোহিত দা চলে এলে নাকি ?
-হ্যা, তুই এখানে দাড়িয়ে কি করছিস ?
-তোমাকে দেখছি;
-পাকামো করিস না তো, আজ আমার মন খারাপ।
-সে,কি কেউ কিছু বলেছে !!
-না
-আমাকে বলো না।
এই কথা বলতে বলতে জানালা ছেড়ে বেড়িয়ে এলো সিথীঁ। চুলের পাশে ধুতুরা ফুল হয়তো কোন ধুতুরা গাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে নয়তোবা আমাকে দেখাতেই এই উপলক্ষ্য। আমি পা চালিয়ে চলে এলাম। কিন্তু ও আবার এসে পথ আগলে দাড়ালো।
-তোমার মন খারাপ থাকলে আমারও মন খারাপ হয় যে;
আমি রেগে গিয়ে বলি আমি তো, তোর বয়সে বড়।
-তাতে কি ভালোবাসায় ছোট আর বড় কি !!
-সিনেমা দেখে বেশি পাকাঁ হয়েছিস না; মারবো এক থাপ্পর;
সিথীঁ এগিয়ে এসে বলে দাও তো দেখি;
আমি হেটে চলে আসি; ওর পলক লেগে থাকে আমার শরীরে।
০২.
সিথী আমার চেয়ে বয়সের ব্যাবধান ছোট কিন্তু কথা শুনে মনে হয় আমার চেয়ে বড়। ভালো ঝগড়া করতে পারে,তবে মনটা স্বচ্ছ কাচের মতো। জানি ভালোবাসার মতো মন আছে আমার কিন্তু দারিদ্রতা আমকে সব সময়ে বাদ সাধে। আর যাই হোক আগাছা কখনোই পাতাবাহার নয় যে ওটা কারো বারান্দায় শোভা পাবে; আগাছা বরাবরেই পথের ধারের বাসিন্দা।
তাই আমি দু’হাত মেলে ভালোবাসার আহবান গ্রহণ করতে যেতে পারিনা; কেননা মাঝ পথে মুখ থুবড়ে পড়ে মরে যাওয়ার চাইতে প্রেমহীন থাকাই ভালো। শত কাজের বাহানায় আমি প্রতিটা লগ্নে ওকে এড়িয়ে যাই; কিন্তু সিথীঁ প্রতিটা শুভদিনে আমাকে দেখবার জন্য চাতকের মতো অপেক্ষায় থাকে।
মাঝরাতে যখন মেঘ চাঁদটাকে গিলে খেতে চায়; রাখতে চায় বুকের মাঝে কিছুটা সময়, তখন আমারও মাঝে মাঝে স্বাদ হয় ভালোবেসে বুকের হাহাকারটা অন্তত কিন্তু পারিনা হৃদয়ের কপাট খুলে দেখতে ইচ্ছে করে ভালোবাসা আছে হৃদয়ের জুড়ে কিন্তু সেটা কাউকে দেবার মতো নয়।
আমি ছন্নছাড়া জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে ওর হাত ধরতে যেতে পারিনা;মনের ভেতর থেকে সম্মতি আসেনা; আবার ওকে ফিরিয়ে দিতে গেলেও কষ্ট হয়; আমি পাথর ভাঙ্গা নদীর নীল স্রোতের চারপাশে আশার চারা গুনে দেখি ওগুলো সতেজ হওয়ার বদলে কেমন যেন রং ছাড়া হয়ে যায়;চন্দন কাঠের সুবাসে মাতানো সবুজ বনভূমিতে রোদের ঝিলিক মনে করিয়ে দেয় পুরোনো সূর্যমুখীর কথা; মনে করিয়ে দেয় সূর্যেরও গ্রহণ হয়; গ্রহণ চাঁদেও লাগে।
এক বিকেলে শঙ্খখোলের শাড়ি পড়ে ও এসে দাড়ালো আমি বিহারী রোডের পাশে তখন দাড়িয়ে শেষ বাসের জন্য।
মুখে কিউপিড মার্কা হাসি হেসে বলে আসলে দেবী ভেনাস আমার সাথে আছে মনে হচ্ছে তা,না হলে এমনটা হয় কি,করে।
আমি তো তোর সাথে যাবো না বলে চেঁচিয়ে উঠলাম; কে শোনে কার কথা; এক বাসের পাশাপাশি সিটে; কোথায় যাবে তুমি যেতে যে হবেই আজ আমার সাথে। ধূলো মাখা সে পথে স্বস্থি’র স্ব বাদে অস্বস্থিতে পড়ে রইলাম; এতো প্রেম সইবে না বাপু শেষে গ্যাস বেলুনের মতো চুপসে যাবি তো।
০৩.
ছুটির দিনে এক সকালে, আমি ঘুমের ঘোরে। হঠাৎ জানালার পাশ থেকে কে যেন ডাকছে; উঠে দেখি সিথীঁ বাইরে বেরুবার অবকাশ আর পাইনে চিৎকার করে বলে খবর শুনেছ !!
-নিশীথ দা আত্মহত্যা করেছে।
আমি ওর হাত ধরে ছুট দেই। সারা পথ যদি উড়ে যাওয়া যেত তাহলেও হয়তো মনে হতোনা এতো দুরত্ব।
সেদিন আমি কেঁদেছি বোবার মতো চিৎকার করতে পারিনি নিশীথ আমার বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম। ঝিলের ধারে সবুজ ঘাসের পারের পুরোনো ব্রীজ থেকে পড়ে গিয়ে নিশীথ পানিতে ভেসে আছে দুমড়ানো-মুচড়ানো শাপলার মতো।
হা করে সবাই তা গিলছে।
হয়তো ভালোবাসার জ্বালায় পুড়তে পুড়তে নিশীথ সেদিন তাই ঝাপ দিয়েছিলো। হয়তো কিউপিডের হাতছানি শেষে মৃত্যুতে মিশেছে।
লেকের এই পানিতে; আজ নিস্তব্ধতা নেই আছে শুধু আস্ফালন।
নিশীথের প্রেমটা আমিই গড়ে দিয়েছিলাম। আজ নিজেকেই সবচেয়ে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে।
সেদিন নিশীথ প্রেম চায়নি কিন্তু নিশির চোখে জল দেখে আমিই হাত জোড় করেছিলাম নিশি’র কাছে। তারই ফলাফল আজ এই ভাসমান মৃত্যু।
আমার বোবা হয়ে যাওয়া কান্নায় জমতে জমতে মিশে যাচ্ছিলাম। একটা ব্যর্থতা জীবনে জায়গা করে নিলো আমি অপয়া; আমি যেখানে হাত দেই সেখানেই মেঘ জমে; বর্ষণ হয়। টপটপ করে বেয়ে চলা ফোটা বালিতে বিন্দু সৃষ্টি করে যাচ্ছেই অবিরত; সে বিন্দু উত্তপ্ত নোনা জলের; আর কত ব্যর্থতা আসবে; ছোট বেলা মা গেছে; বারো বয়সে বাবা গেছে; চৌদ্দ বছরে ভাই গেছে; কাউকে তো ধরে রাখতে পারিনি; ধরে রাখতে হয়তো কেউই আমরা পারিনা তাই বলে আমার কি একটু ভালোবাসা কি স্নেহ পাবার অধিকার ছিলনা; হয়তো ছিল কিন্তু বিধাতা পুরুষ আমাকে ষ্ট্রাচু করে রেখেছে যেন আমি সব সয়ে সয়ে শেষে ক্ষয়ে যেতে পারি।
আমি সেখানে বসে থেকে থেকে হতবাক হয়ে যাচ্ছিলাম এই দেখে; সবাই নিশিথকেই দোষ দিচ্ছিল কেউ নিশিকে কোন দোষ দিচ্ছিল না।
আরো হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম পাশে বসে থাকা সিথীঁর কান্না দেখে। আমি বলেছিলাম তুই কাঁদছিস কেন।
- তোমার কথা ভেবে
- আমি আবার কি করলাম
- যেদিন আমি মরে যাব; সেদিন কে তোমায় শান্তনা দেবে বল; সেটা ভেবেই তো কাঁদছি।
হঠাৎ কান্নাটা দলা পাকিয়ে আমার গলায় আটকে গেলো।
কিছুই বলতে পারলাম না।
০৪.
এক শনিবারে লোকাল বাসে কংশের উপারে যাচ্ছি। সাথে ক’জন বন্ধুও রয়েছে; নানা কথার নানা ঢঙ ঘুড়িয়ে হঠাৎ সিথির প্রসঙ্গে উঠে এলো। সবকটা আমাকে চেপে ধরলো, কি,রে তুই এমন পাথর ভাব ধরছিস কেন রে, তোর ভুতুম ভাবটা কি তুই ছাড়বি না। আমি কিছু বললাম না; শুধু হাসলাম।
এ ব্যাপারটা নিজেও ভাবি তাই তো !! আমি কি পাথর হয়েই কাটিয়ে দেব; আবার ভাবি পাথর না হয়ে তো উপায় নেই; আমি আর ভালবাসতে পারবো না। আমি ভালবাসার কাঙাল আর সাজতে চাইনা। ভালবাসার বিস্তৃতি পুরো শহর জুড়েই তো রয়েছে; কোথাও তো কমতি দেখা দেয়নি আর আমি না বাসলেও কমতি দেখা দেবেনা।
বটগাছকে ভালোবাসি না আমরা; শুধু তার নিচে মঞ্চ টেনে ভাষণ কিংবা কোন উৎসব করতেই ভালবাসি; আর ভালবাসি দুপুর রোদের বিশ্রাম বা প্রেম করতে। সেই পা-ফেল বয়স অবদি থেকে আমি ঠোকর খেতে খেতে বড় হয়েছি; আমি ফেলে এসেছি সেসব দিন কিন্তু ফেলে আসতে পারিনি স্মৃতি; স্মৃতি কি ফেলে আসা যায় ? তাই আমি করুণা চাইনা আর কারও
আমিও ভালোবাসতে জানি; জানি কাছে টানতে; আমার ভালোবাসা কারো আকাশ ছুতে পারেনি; কারো মনে জাগাতে পারেনি স্পন্দন।
আমি মন রাঙ্গানো দিনগুলো থেকে এই আজ পর্যন্ত নিরন্ন যাত্রী থেকেছি তাতেই কি আমি ভালো থাকতে পারতাম না; আমি পারতাম সেই ভালো আমার বিরহ ছিলো; তবে সেটা লুকানো; আমার ভালোবাসাটাই তো চাপা পড়ে আছে তিরস্কারের নীল পাহাড়ের আড়ালে।
ভীরু মনে আমি ভালোবাসতে জানি আর তারই প্রমাণ স্বরুপ নিয়ে এসেছিলাম লাঞ্চনার এক তোড়া ফুল। আমি ভ্র“হীন মোনালিসার মতো এক পারিজাতের চোখের নেশায় পড়ে গিয়েছিলাম; কেন যে মনের পাখিটা গুনগুন করে সেদিন গেয়েছিলো ভালোবাসার গান; কেন যে আমার দৈন্যতা সেদিন আমার চোখকে ফাকি দিয়ে শিখিয়েছিলে ভালোবাসা। আমি সেই পারিজাতের এক পলক ভালোবাসা পাবার আশায় হন্যে হয়ে পিছু ছুটলাম; আমি তাকে পেলাম এক হাতে আঁকা সিম্ফনির মাঝে; তাকে ভালোবাসলাম। আসলে ভালবাসাটাই আপেক্ষিক তাই তো এত দহন মাঝেও আমাদের ভালোবাসার ইচ্ছ থাকে প্রবল ভাবে আমি তাই তো এতা দৈন্যতার মাঝেও ভালোবাসা নিয়ে থাকতে পারিনি।
সিথী দিন-মাস-বছর আমার পাশেই জেগে থাকে বিশাল না হলেও তার কাছাকাছি ভালোবাসা নিয়ে; আমি ওকে ফেরাতে গিয়ে বলে দিলাম যে; আমি একসময় কারো ভালোবাসায় উন্মাদ ছিলাম কিন্তু হাফসোল খাওয়ার সুবাদে ফিরে এসেছি পুরোনো ব্ল্যাকবোর্ডে তাই হাতে সাদা চক মাটি থাকা স্বত্তেও আর আঁকতে চাইনা কারো মুখ; ভয় হয় যদি কেউ সেটা মুছে দেয় অজান্তেই; মেঘদূত এস যদি রুখে দাড়ায় এই বসন্তেই বাদল নামাবে বলে; যদি দেখি অর্থ আমাকে ডুবিয়ে দিয়েছে সামর্থের নদীতে।
সিথী আমাকে রোজ-রোজ ভালোবেসে ঋণী করে দিতে থাকে প্রতিদিন। আমি কেমনে শোধাবো সেসব; আমার দিন কাটে তো-রাত কাটেনা আমি শুধু অভিমান করেই থাকি মুখ ফোটে আর বলিনা তোকে ভালোবাসি। রাগে কেঁদে বলে তুমি ভালোবাসতেই জাননা !!
০৫.
কাক ডাকা ভোর তখন;
আজ আমার অনেক কাজ; সিথীর বিয়ে আজ।
মাসিমা কাল দুপুরে বারবার বলে দিয়েছেন রোহিত তোর তো হাত ভালো; এসব কাজে তোর জুড়ি নেই; ঘর সাজাতে পারিস যতœ করে।
সিথীর বিয়ের কাজ কিন্তু তোকেই করতে হবে।
ভোরের আলোতে চোখ মেলতেই এসব চিন্তা দেয়ালের চারপাশ থেকে আমাকে ডাকছে কিন্তু সারা রাত আধার ঘরে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছে কাল সন্ধ্যের সিথীর বলা কথা গুলো
-রোহিত দা আমার জন্য একটি বারও কি ভাববে না; আমি যে তোমাকে ভালোবেসে অন্ধ হয়ে আছি তুমি বুঝতে পারছো না।
- আমি বললাম সিথী পাগলামি করিস না; ভালোবাসা হলো আবেগের নৌকা পালে হাওয়া আছে যতক্ষণ ততক্ষণ চলবে; হাওয়া ফুরোলে দাড় টানতে হয়। আমার যে সেই সাধ্য নেই; আমি যে ফুল বিহীন শুষ্ক বৃক্ষ আমার স্বাদের ডালপালা প্রশস্থ হতে হতে মাটিতে নেমে গেছে তবুও ফুল ফোটেনি আমার গায়।
- রোহিত দা আমি তোমার ফুল হবো।
আমি তোমার দৈন্যদশার ঘরে আশা হবো আমি তোমার স্বাদের সাধ্য হবো। আমি তোমাকে হারালে পঙ্গু হবো। আমার তখন পৃথিবী দেখবার ইচ্ছে আর রবে না।
-সিথী আমার কথা বাদ দে; আমাকে ভালোবেসে ফুল হতে গিযে শেষে কাটার আঘাতে নিজের জীবনটাকে কষ্টের মাঠে উড়িয়ে দিতে হবে যতক্ষণ না সে কষ্ট তোকে ঘুড়ি করে রাখবে আকাশে।
সিথী হাত জড়িয়ে কাঁদে; আমি কতো করে যে ওকে বুঝিয়েছি সিথী তুই কেন বুঝতে চাস্না আগাছা কি কখনো গাছ হতে পারে।
রোজকার দুনিয়ায় এতো মানুষ ওদের কে চোখে দেখিস না; ওদের কে গিয়ে ভালোবাসতে পারিস না। ওরা তোকে ঠিকই কাছে টেনে নেবে; তোকে ভালোবাসবে;
সন্ধ্যেটা শেষ হয়ে আসছিল আমাদের কথা ফুরোচ্ছিল না।
সিথী চোখ মুছে বললো রোহিত দা শেষ বারের মতো তোমার হাতটা একটু স্পর্শ করতে দেবে; আমি তোমার কিছুই তো পেলাম না; না হয় এই বোবা স্পর্শটাই নিলাম; আমি তো কিছুই দিতে পারলাম না তোমায় না; হয় এই চোখের পানিই দিলাম; এই চোখ কাঁদলো যখন তোমার চোখের পানে চেয়ে; তখনও যখন তোমার ভাবান্তর হলো না; তাহলে আমার আর কিছুই করার থাকলো না রোহিত দা। আমি পূন্য পথের শূণ্য যাত্রী হয়েই রইলাম; রোহিত দা আমি তারা হতে পারলাম না; তোমাকে দেখতে পাবার আশা আমাকে পোড়াবে, জ্বালাবে; আমি তাই আধার হলাম; তুমি ঠিক যেদিন পৌছে যাবে ঈশ্বরের ভান্ডারে সেদিন তোমায় ঠিক কেড়ে নেব; আমাকে ফেরাতে পারবেনা তুমি।
রোহিত দা তুমি আমাকে অন্য কারো পায়ে অঞ্জলী দিতে বলো; এক ফুল কি কখনো দুই দেবতার পূজোয় দেয়া যায় ? রোহিত দা আমার মনটা তো মানুষের মন তাই সহজে ভেঙ্গে যায়; যদি মনটা মানুষের না হতো তা, হলে না হয় একটা অপদেবতার পায়েই ফুল দিতাম।
আমার বুকের ভেতরে তখন স্পন্দন আর হাহাকার; মনের ভেতরটা বলে রোহিতাশ্ব; তোমার মনের ভেতর জমে থাকা ভালোবাসাও হার মেনেছে সিথীর ভালোবাসার কাছে; তুমি ভালোবাসতেই জান না।
সিথী চলে যাবার আগ মুহুর্তে বলে গিয়েছিলো রোহিত দা তুমি আসলে ভালোবাসতেই জানো না; তোমার বুকে ভালোবাসার ঢেউ নেই।
ভাবনাটা এ পর্যন্ত আসতেই দরজায় শব্দ!!
এই রোহিত; রোহিত তারাতারি বাইরে আয় !!
আমি পড়িমরি করে উঠে বসি ঘুম জ্বলা চোখ নিয়ে সাত সকালে কেউ আজকাল ভয় হয়; নিশিথের মৃত্যুর পর আমার সাহস আরে নেই কমে গেছে।
বিছানা থেকে নামতে গিয়ে আচমকা মাথা দুলে উঠলো; তাল সামলাতে না পেড়ে পড়ে গেলাম মাটিতে; উঠে দাঁড়াবার সুযোগ বুঝি আর মিলবে না দরজায় তখন করাঘাত চলছে; গলা ছেড়ে বলে উঠলাম আরে আসছি তো; এতো তাড়া কেন রে;
ঘর ছেড়ে বাইরে এসে আকাশ দেখে আমি হতবাক যে হাঁকডাক দিচ্ছিল তাকে আর ঝাড়ি দিতে পারলাম না। এই সাত সকালে রংধনু উঠেছে আকাশের গায়; কেমন যেন স্বপ্ন-স্বপ্ন ভাব আকাশটায়।
তনু আমায় ডাক ছিলো রোহিত দা ঝিলের ধারে কে যেন পড়ে আছে দেখবে চল !!
-কি বলিস !!
-হ্যা তাই তো দেখলাম;
-নিশিথ,চুমকি, তো কবেই ছেড়ে গেছে আমায় তবে কি সিথী...... আমি আর দাড়াতে পারলাম না। আমি ঝড়ের বেগে ছুটে গেলাম। সিথী আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা ।
আজ হঠাৎ কোত্থোকে জানি আমার ভেতরে পুরোনো ভালোবাসা চাগিয়ে উঠলো; আমি কেমন করে নিজেকে পুনরায় একা ভাবতে শুরু করলাম। সিথীকে নিয়ে আমি দুরে চলে যাবে।
ঝিলের পানি থমকে আছে; শুয়ে আছে সিথী মাথাটা তার একটু উবু করা মুখে বিমর্ষতায় ভরা; শেষ কালে বাঁচবার একটা শেষ চেষ্টা ছিলো সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ঘাসফুল গুলো দুমরে আছে যেখান থেকে পড়ে গিয়েছিলো সিথী; আজ আর প্রজাপ্রতি উড়ছেনা ওরা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে; সকাল বেলার শিশির স্নানে ভেজা দূর্বা গুলো কেমন ভ্যাবাচ্যাকা মুডে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে; ছোট্ট জটলাটা আস্তে আস্তে পরিপূর্ণ হচ্ছে।
ছোট থেকে বড়রা ভীড় করছে একটু আহাজারি কিংবা হাহাকার দেখবে বলে; কেউবা চোখের জলের আয়োজন করছে আজ কাঁদবে বলে।
প্রতি বছর এই রকমই হয়ে আসছে বলে বুড়োরা মুখ বাঁকাচ্ছিল।
আমি কি করবো কাঁদবো না পাথর হয়ে মনটাকে আজ ঘাসের ধারে ছূড়ে ফেলে বিসর্জন দেব; কিছূই বুঝতে পারছিনা।
সিথী; তুই অভিমানটা এভাবেই করলি; আমাকে একা রেখে চলে যাওয়া আর সেই যাওয়ার ফিরে না আসা আমি ভাবনার মায়াজালে আর কতো জড়াবো।
চোখ বুঝতেই মনে পড়ে; রোহিত দা আমি কাঁদছি তোমার জন্য; আমি মরে গেলে তোমাকে কে শ্বান্তনা দেবে ? কে তোমার পাশে দাড়াবে;
সত্যিই তো কে দেবে আজ শ্বান্তনা; কেউ দেবে না.........
আমার চারপাশের বন্ধুরা বলছে;
ছি ! রোহিত ছি !
এই তোর অহংকার!!
কি মনে করিস নিজেকে তুই ?
.০৬
সিথী আমি তোমাকে আকাশে খুঁজবো না; আকাশটা কাঁদবে; আমি সাগরের মোহনায় তোমাকে খুঁজবো না; উত্তাল ঢেউয়ে সর্বনাশ বয়ে আনবে । আমি তোমাকে সুউচ্চ পাহাড়েও খুঁজবো না সেখানে মেঘেরা বর্ষণ করবে। আমার নিজের ভেতরে তোমাকে খুজবো যেখানে তুমি একে দিয়েছিলে ভালোবাসার চিহ্ন।
আমাকে কোনদিন ক্ষমা করোনা; কোনদিন না;
আমি আসলে ভালোবাসতেই জানিনা।
কারো স্বপ্নে বাঁধা দিতে নেই; কারো আশার নদীতে ঝড় উঠাতে নেই; যার মনে বুক ভরা ভালোবাসা আছে তাকে কাঁদাতে নেই; তার চোখের জল তোমাকে ভাসাবে নিয়ে যাবে দুঃখের করুণ সাগরে কষ্টের স্রোতে করে।
________________( সমাপ্ত )____________________
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।