আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তদবিরকারীদের ভিড়ে বিপর্যস্ত সচিবালয়

সরকারের শেষ সময়ে সচিবালয়ে অস্বাভাবিক ভিড় বেড়েছে তদবিরকারীদের। রমজান মাস হওয়ায় তদবিরকারীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছেন এ-মন্ত্রণালয় থেকে ও-মন্ত্রণালয়। স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের চাপে। আমলারা বলছেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে তদবিরকারীরা বিভিন্ন নথি অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আছে চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য তদবিরও।

কেউ কেউ তদবির করছেন বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেওয়ার। বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতির তদবিরও আছে।

এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নাম ভাঙিয়ে তদবিরকারীরা নানা কাজ বাগিয়ে নিতে তৎপর। এর সত্যতাও মেলে সরকারি একটি চিঠি থেকে। অতিসম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের সচিব, মহাপরিচালক, প্রকল্প পরিচালক, নির্বাহী চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো ওই সরকারি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মুখ্য সচিবের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসে তৎপর রয়েছে তদবিরকারীরা।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এ রকম তদবির বন্ধসহ এসব কাজে যারা জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে সচিবালয়ে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় তদবিরকারীদের ভিড়। সরকারের শেষ সময় হওয়ায় তদবিরকারীরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করিয়ে নিতে ব্যস্ত। ফলে মন্ত্রণালয়গুলোতে ভিড় লেগে আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, ভূমি, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি।

বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। এখানে চাকরিপ্রত্যাশীদের হয়ে তদবিরকারীরা ধরনা দিচ্ছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কাছে। কেউ কেউ আবার ব্যক্তিগত কাজ বাগিয়ে নিতেও ব্যস্ত। মঙ্গলবার কথা হয় খুলনা থেকে আসা এক তদবিরকারীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'আমি পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে দুজনের চাকরির তদবির করছি।

' একই পদে তদবির করছেন সিলেট থেকে আসা স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মী। তিনি বলেন, 'প্রায় দেড় মাস আগে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার কাছে টাকা-পয়সা দিয়ে গেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত চাকরি হয়নি। তবে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, চাকরি হবে, একটু সময় লাগবে। ' একই অবস্থা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

এখানেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দফতরে তদবিরকারীরা ভিড় করছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালগুলোতে সহকারি শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা চলছে বিভিন্ন জেলায়। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে চাকরিপ্রত্যাশীরা তদবির করছেন নানাভাবে। আছে সংসদ সদস্যদের ডিও লেটারও। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'কী বলব ভাই, তদবিরের যন্ত্রণায় আর পারছি না।

প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলা থেকে লোকজন আসছে কিংবা ফোন করছে মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের হাতে তো কিছু নেই। সবকিছুই জেলা পর্যায়ে। '

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পেতে চট্টগ্রাম থেকে আসা জাহেদ নামে একজন বলেন, চাকরি এখন সোনার হরিণ। তাই তদবির না করে উপায় নেই।

এ জন্য তিনি মন্ত্রণালয়ে এসেছেন। তবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো কিনারা করতে পারেননি বলে জানান তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের ভিড় লেগেই আছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় একত্রে থাকা অবস্থায় তদবিরকারীদের তৎপরতা এতটা না থাকলেও পৃথক হওয়ার পর থেকেই উভয়টিতে সার্বক্ষণিক তদবিরকারীদের ভিড় লেগেই থাকে। বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ পেতে তদবিরকারীরা মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে নিয়মিত ধরনা দেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ভিড় মূলত বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ভালো কলেজ বা স্কুলে পোস্টিং পেতে কিংবা বদলি ঠেকাতে প্রতিদিনই মন্ত্রণালয়ে হাজির হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাদের সঙ্গে আছেন তদবিরকারীরাও, যারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হয়ে মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার কাছে তদবির করছেন। তদবিরকারীদের একজন টঙ্গী সরকারি কলেজের প্রভাষক, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাকে ডেপুটেশনে ওই কলেজে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্থায়ী করা হয়নি।

অথচ তিনি যে বিষয়ের প্রভাষক, সেই পদটি শূন্য রয়েছে। এখন শুনছেন আরও কয়েকজন এ পদে পোস্টিং নিতে তদবির করছেন। এ কারণে তিনি নিজেও তিন-চার মাস ধরে তদবির করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। মন্ত্রী দফতরে থাকলেই তদবিরকারীদের ভিড়ে ওই মন্ত্রণালয়ের বারান্দা দিয়ে হাঁটা যায় না।

মন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় চার-পাঁচ দিন ধরে ভিড় কিছুটা কম থাকলেও ওই মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, তদবিরকারীদের ভিড়ে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, এখানে তদবিরকারীরা আসেন চাকরি, বদলি আর বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমার তদবির নিয়ে। ভিড় আছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়েও। মন্ত্রী দফতরে থাকলেই তদবিরকারীরা এখানে ভিড় জমান। যতক্ষণ মন্ত্রী থাকেন ততক্ষণ তদবিরকারীরাও থাকেন সমানতালে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের এখন শেষ সময়। ভিড় কিছুটা থাকবেই। এমনকি ঈদের পর তদবিরকারীদের এ ভিড় আর ব্যাপক হতে পারে। সরকারের শেষ সময় হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সব আমলেই সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে তদবিরকারীরা তৎপর হয়ে ওঠে। তদবিরকারীদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই ভূমি মন্ত্রণালয়ে।

এখানে মূলত সরকারি খাসজমি, জলমহাল, বালু মহাল ইজারা পেতে তদবিরকারীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকর্তার দফতরে ধরনা দেন। রূপক নামে মৌলভীবাজারের একজন জলমহাল ইজারাদার বলেন, অনেক চেষ্টা-তদবির করে একজন যুগ্ম সচিবকে ধরে তিনি সম্প্রতি একটি জলমহাল ইজারা নিতে পেরেছেন। হবিগঞ্জের নবাব নামে একজন বলেন, একটি জলমহাল পেতে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.