আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শবনমের অবেলায় চিরবিদায় এবং একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু

---- পূর্বানুমতি ছাড়া এ ব্লগের কোন লেখা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি, এডিট করে কপি , পূনর্মুদ্রণ নিষিদ্ধ ----

-“ রহিম মিয়া .........” =জি স্যার – -- -“ আমি আগামীকাল নোয়াখালীর ছন্দুগঞ্জে আমাদের নতুন সাইট অফিসে যাব মিটিং এ। সাথে আরো কিছু কাজ আছে, আমার ফিরে আসতে এক সপ্তাহ লাগবে। স্যালারির চেকগুলো মাহবুব স্যারের রুম থেকে নিয়ে আসেন। আর সাথে দরকারী ফাইল থাকলেও আনেন। “ (কিছুক্ষণ পরে ) =স্যার, আনছি !!-- “ দেন......... কয় তারিখ আজকে ??” ২৯ তারিখ স্যার।

-- হঠাৎ করে যেন বাজ পড়ল। মনে পড়ে গেল দশ বছর আগের কথা। শবনমকে হারিয়েছি দশ বছর হয়েছে। ভাবতে ভাবতেই যেন অজানা ভূবনে হারিয়ে গেলাম। সেদিন ছিল ৩০ জুলাই ।

তখন সবেমাত্র আমাদের ব্যবসা উঠতে শুরু করেছে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ঠিকমত সময় দিতে পারিনি শবনমকে। তখন আমাদের মাঝে দাম্পত্য কলহ চলছিল। বিষয়টি তেমন গুরুতর ছিল না, তবে অনেকগুলো ছোট ছোট জিনিস নিয়ে ঝগড়া হত। কিন্তু শবনম ছিল অসম্ভব আবেগপ্রবণ, একটুতেই সে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলতো।

এটা কি ভালোবাসার কষ্টে নাকি আবেগের বশবর্তী হয়ে সেটা বুঝাটা আমার জন্য অনেক কষ্টকর ছিল। তাকে অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, এমনকি ডাক্তারের কাছে নিয়েও, কিন্তু কোন ফল পাইনি। সেই ২৯ জুলাই রাতেও আমাদের ঝগড়া হয়েছিল, সে সিডাক্সিনের প্যাকেট খুলতেই আমি তার হাত থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম। হাল্কা ধস্তাধস্তি হল। অতঃপর আমি সফল হলাম।

অনেক রাত পর্যন্ত আমি তাকে বুঝালাম। সেও বুঝলো এবং ওয়াদা করল আর কখনো এরকম করবে না। আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে উঠে আম্মাকে বললাম যাতে নুশানা কে স্কুলের জন্য রেডি করে দেয়। শবনম তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

ডাকলে ডিস্টার্ব হবে ভেবে আর ডাকিনি। নুশানা কে মানারাতে দিয়ে আমি চলে আসি অফিসে। দুপুর ১২ টায় আম্মার ফোন। আম্মার কাঁপা কন্ঠ শুনে আমি দৌড়ে গেলাম বাসায়। গিয়ে দেখলাম বাসা ভর্তি মানুষ।

দৌড়ে উপরে ছুটে গেলাম আমদের রুম এ। দেখলাম, আমার ভালোবাসার মানুষটির নিথর দেহ পড়ে আছে বিছানায়। আর হাতের মুঠি থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটে শুধু একটা লাইন লেখা “ ভালোবেসে যদি মরে যাই, ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই। “ পোস্টমর্টেমে জানতে পারি সে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছে। আজ অব্দি আমি জানতে পারিনি আমার মনের মানুষটি কি কারণে এ কাজটি করল।

কিন্তু আমি এটুকু নিশ্চিৎ যে আমাদের মাঝে এমন কিছু হয়নি কিংবা তার জীবনে এমন অন্য কিছু ঘটেনি যার জন্য সে এমনটি করেছে । -- ( হঠাৎ রহিম মিয়া আগমন) =স্যার, আপু ফোন দিছে। আপনারে নাকি মোবাইলে পাইতাছে না - ( ওপাশ থেকে নুশানার গলা ) বাবা, তুমি ফোন ধরছো না কেন ?? শুনলাম তুমি নাকি ঢাকার বাইরে যাচ্ছো !! যাবার আগে আমাকে নিয়ে বাইর খেতে যাবে প্লিজ !!। --আচ্ছা মা, আমি আসছি। শবনমের চলে যাবার ৫ বছর পর মা মারা যান।

এখন নুশানা কে ঘিরেই আমার জীবন। আজ আমি প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী, তারপরও আমার জীবনে অনেক কিছুই নেই। শবনমের কথা মনে হলেই মনে পড়ে যায় আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিনটির কথা। হেমন্তের বিকেলে ফাস্টফুডে বসে তার সেই চাহনি, মনে পড়ে যায় তার সেই নজরকাড়া হাসি, মন ভোলানো অভিমান। আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো নিজেদের নিয়ে, সেই স্বপ্নটুকু ছারখার হয়ে যায় তার এ অবেলায় চলে যাওয়ায়।

তারপরও বেচে থাকতে হয় জীবনের রূঢ় বাস্তবতায়। এখন যখনই তার কথা মনে হয়, আমি খুজে ফিরি তাকে তারই রেখে যাওয়া স্মৃতির মাঝে। কেন জানি নিজেকেই দায়ী মনে হয় শবনমের মৃত্যুর জন্য, কেন জানি বিবেকই আমাকে প্রতিনিয়ত দংশন করে আমার কৃ্তকর্মের জন্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।