যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
কোন রাস্তায় কাপঁতে থাকে নিত্য মানুষজনে?
কোন রোডে তে এমন দোলা দোলে যানবাহনে?
একটা কবিতাকে জগন্নাথপুর যাবার রাস্তার সাথে মানিয়ে লিখলে এরকম হয়। আপনি যদি সিলেট থেকে জগন্নাথপুর যেতে চান তাহলে আপনাকে দোল খেতে হবে। যে যানবাহনে চড়ে যাবেন ঐটা ডানে বামে দুলবে।
সাথে আপনিও। ঠিক নাগরদোলার মত। বিনা পয়সায় নাগরদোলা চড়তে চান? জগন্নাথপুর যাবার রাস্তাটায় একটু চক্কর দিয়ে আসুন।
প্রশ্ন জাগতে পারে রাস্তা দিয়ে যাব এর মধ্যে দোলা আসল কোত্থেকে? কোন আধুনিক প্রযুক্তির নাগরদোলা টাইপের কিছু কি রাস্তার নিচে বসানো আছে নাকি?
এই প্রশ্নটার উত্তর খুব সহজ। সিলেট থেকে জগন্নাথপুর যাবার যাত্রাপথ অসংখ্য ছোটবড় গর্ত নিয়ে চিৎ হয়ে শোয়ে আছেন।
মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে বলা যায়, অসংখ্য ছোটবড় ক্ষত বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন এক রক্তাক্ত পথ। উল্লেখ্য এখানে ধুলো বালি রক্তের সাথে তুলনীয়। উচ্চস্তরের দার্শনিক মনোভাব নিয়ে দেখলে বলা যায়,ছোট বড় অসংখ্য পুকুর নদী খালের
সমন্বয়ে গঠীত এক যাত্রাপথ।
আমরা যারা নিতান্তই আমজনতা মানে ম্যাংগো পিপল তাদের এই রাস্তা দিয়েই যাওয়া আসা করতে হয়। ছোট ছোট পুকুর নদী খালে আমাদের যানবাহঙ্গুলোর চাকা পতিত হয়।
আমাদের বহন করা যানবাহন কবার ডানে একবার বামে এরকম তালে তালে দোলতে থাকে। আমরাও নিতান্ত ভাল মানুষের মত দুলতে থাকি। দোলন রাস্তায় চড়ে কোথাও গেলে ভ্রমণ শেষেও আপনি দোলতে থাকবেন। দোলন জড়তা এর বড়ই প্রকট। এটা পাগলা দোলা।
এমন দোলা দোলবেন যে স্বপ্নেও দোল খেতে থাকবেন। দোল খেতে খেতে অঞ্জন দত্তের গান মনের মাঝে বাজতে পারে,
“ মায়ের কোলের সেই দোলাটা,মনে পড়ে যায় যে আমার”
এই রাস্তার নাম দেয়া যায় দোলন রাস্তা। আমার মনে হয় কণ্ঠশিল্পী মিলা এই রাস্তা দিয়ে কখনো দোল খেতে খেতে কোথাও গিয়েছিলেন। তাই তিনি গাইতে পেরেছেন সেই অমর গান, “দোলা দে দোলা দে দোলা দে রে পাগলা দোলা দে রে”।
এই রাস্তা দেখার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের নিশ্চয়ই এই গানটা ফেভারিট।
দোলন রাস্তার কিছু আলাদা রূপ আছে। এই দোলন রাস্তায় বছরের প্রায় সবসময়ই দেখা যায় একদল রূপ পরিচর্যাকারী বা বিউটিশিয়ান। এরা রাস্তার পাশে বিশাল টিনের পাত্রে কাল একধরনের পদার্থ কয়লার আগুনে উত্তপ্ত করে তরল করেন এবং অনবরত কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরী করে থাকেন। এরপর তারা এইসব কাল তরল, মাটি,ইটের টুকরা,সিমেন্ট একসাথে মিশিয়ে দোলন রাস্তার দোলন গর্তসমূহ ভর্তি করেন। অতঃপর মুখে যেমন ফেইস পাউডার জাতীয় জিনিস বিউটিশিয়ানরা ব্যবহার করেন তেমনি একধরনের সাদা বালু ভরাট করা গর্তের উপর দিয়ে দেন।
তাদের এই নিপুণ রুপ পরিচর্যা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি।
তারা সবসময়ই গর্ত অথবা পুকুর নদী খাল ভরাট করতে থাকেন। কিন্তু বিচিত্র কারনে এগুলো ভরাট হয় না। আগের মতই থেকে যায়। অসীম ধৈর্য নিয়ে তারা ভরাট করতে থাকেন।
ফেইস পাউডার রুপী বালু ছিটাতে থাকেন।
এসব দেখছিলাম এমন সময় আমার পাশের এক দোলন যাত্রী বললেন, ই থেখান(দোল) খাইয়া আইলে গেলে এখটা লাভ আছে। ডায়বেটিস অইত নায়।
দোলনযাত্রীর চিন্তাটা অতি বাস্তব। ডায়বেটিস একটা মারাত্বক রোগ।
বিনা পয়সায় আমরা একরকম ডায়বেটিস না হবার ট্রিটমেন্ট পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা আসলে ডায়বেটিস প্রতিরোধের আন্দোলনে নেমেছেন। এজন্যই রাস্তায় এরকম পুকুর নদী খাল। আমরা আসলে বুঝতে পারি না তারা আমাদের কত বড় উপকার করছেন। আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি কতটা যত্নশীল দেখলে চোখে পানি এসে যায়।
প্রধানমন্ত্রী আমাদের এম পি দের কেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী বানালেন না বুঝে পাই না!
ঝাকুনী খেলে ব্রেইন পরিষ্কার হয়। ক্রিয়েটিভ আইডিয়া আসে। শৈল্পীক চিন্তাধারার বিকাশ হয়। তার উপর রাস্তায় বারোমাসি মেকাপ ম্যান নিয়োগ দিয়েছেন আমাদের এম পি রা। এরা দোলন রাস্তাকে মেকাপ দিয়ে,ফেস পাউডার রুপী সাদা বালু দিয়ে লাস্যময়ী রাস্তায় পরিণত করছেন।
আমাদের জনপ্রতিনিধি রা আসলেই শৈল্পীক মনের অধিকারী। উনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকে দোলযাত্রায় দোল খেতে খেতে কিছু ছবি তোললাম। এখানে আছে নদী পুকুর খাল। আছেন বিউটিশিয়ানরা।
আছে সেই দোলন রাস্তা। নিচে ছবিগুলো দেয়া হলঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।