আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাই আমাদের বাঁচান। বাংলাদেশের শ্রমমন্ত্রী বলেছেন, আমরা নাকি কোন অসুবিধায় নেই। আমরা নাকি ভাল আছি। মিথ্যা কথা। আমরা বাঁচবো কি মরবো জানি না।

সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
ভাই আমাদের বাঁচান। আমরা ৭ হাজার বাংলাদেশী কি অবস্থার মধ্যে আছি বলতে পারবো না। প্রতিদিন লিবিয়ানরা এসে আমাদের মারধর করেছে। ৪-৫ জনকে ছুরি মেরেছে। তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছে না।

এভাবেই বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১৮শ’ কিলোমিটার দূরের সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর বেনগাজিতে বসবাসকারী ৩২ বছরের যুবক আবদুল হালিম। গতকাল সকাল থেকে চেষ্টা করে বিকাল সোয়া ৫টায় তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়। ‘ঢাকা থেকে বাংলাদেশী সাংবাদিক বলছি’ এ পরিচয় পাওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন হালিম। বলেন, আজ খবর পেলাম বাংলাদেশের শ্রমমন্ত্রী বলেছেন, আমরা নাকি কোন অসুবিধায় নেই। আমরা নাকি ভাল আছি।

মিথ্যা কথা। আমরা বাঁচবো কি মরবো জানি না লিবিয়ায় বিক্ষোভকারীদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশিরা ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এখন আপনাদের কাছে আমাদের একটাই দাবি- সরকারকে বলেন আমাদের যেন দেশে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমাদের কাজকর্ম সব বন্ধ হয়ে গেছে। একটা বড় ডরমিটরিতে প্রায় ৩শ’ লোক আছি।

পানি নেই, বাথরুম নেই। অনেক কষ্টে দিন কাটছে। বাংলাদেশ থেকে সাংবাদিক ফোন করেছেন শুনে কথা বলার জন্য সেখানে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। হালিমের হাত থেকে ফোন কেড়ে নেন শফিকুল হক। তিনি হড়বড় করে বলতে থাকেন দু’ দিন থেকে দেশে কথা বলার চেষ্টা করছি।

কিন্তু ফোন করা যাচ্ছে না। দেশ থেকেও ফোন আসছে না। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন। তার কথা না শেষ হতেই ফোন নেন আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ভাই আজ ৩ দিন ধরে ভাত নেই, পানি নেই।

হাতের টাকা সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। শহরের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অনেক লিবিয়ান অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। আমাদের ডরমিটরির আশপাশে অনেকে পাহারা দিচ্ছে। কাউকে বাইরে ফোন করতে দিচ্ছে না।

কোন পুলিশকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর পরই গোটা শহর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কলা-পাউরুটি আর বিস্কুট খেয়ে দিন কাটছে আমাদের। এখানকার বাংলাদেশী দূতাবাসের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করেছি।

কিন্তু যোগাযোগ করতে পারিনি। সিকিউরিটিরা কারও সঙ্গে কথা বলতে দেয় না। ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ড কথা বলার পর ফোনের সংযোগ কেটে যায়। এরপর একাধিকবার ওই ফোনসহ আরও ১০-১২টি ফোন নম্বরে চেষ্টার পরও যোগাযোগ করা যায়নি। ওদিকে সংবাদপত্রে লিবিয়ায় বাংলাদেশীদের জিম্মি হওয়ার খবর পড়ে এবং লিবিয়ায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে অনেকেই ঢাকায় এসেছেন।

কেউ সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্ট অফিসে এসে একটু কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। কেউ বা জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর সামনে এসে ভিড় করছেন। জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর সামনে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার সময় কথা হয় বৃদ্ধ ইমান আলী ও তার ছোট ছেলে জুম্মন আলীর সঙ্গে। তারা এসেছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী গ্রাম থেকে। ইমান আলীর বড় ছেলে রিমন আলী ২০০৭ সাল থেকে লিবিয়ার আল বায়দা শহরে আছেন।

সবকিছুই ঠিক ছিল। গত রোববারও ছেলের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বলে জানালেন। বললেন, রোববার যখন কথা হয় তখন রিমন আমাকে বলেছিল, এখানে মনে হচ্ছে গোলমাল হবে। তবে ভয়ের কিছু নেই। আমি ভাল আছি।

কিন্তু গতকাল থেকেই তার মোবাইলে ফোন করে বন্ধ পাচ্ছি। চাঁপাই নবাবগঞ্জের জনশক্তি রপ্তানি এজেন্ট মাসুদ রানা বলেন, আমার মাধ্যমে যারা লিবিয়া গেছে তাদের আত্মীয়রাও দলে দলে আমার বাড়িতে আসছে। জানতে চাইছে তাদের স্বজনেরা কেমন আছে? কিন্তু আমি তাদের কিছু বলতে পারছি না। কারণ লিবিয়া যাওয়ার পর অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। যারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখে গত দু’ দিন ধরে তারাও কোন ফোন করেনি।

আমি ফোন করলেও ফোন যাচ্ছে না। নেয়া হয়েছে মানব জমিন ও বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে। ২৩/০২/১১
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।