আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলের প্রথম দাদার বাড়ী যাত্রা

হঠাৎ করেই ৩ দিন আগে সিদ্ধান্ত নিতে হলো, তাই প্রস্তুতি ভালো ছিলো না। ট্রেনের টিকেট কাটা নিয়ে অনেক ঝামেলা। অনলাইনে টিকেট পেলাম ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সবচেয়ে ধীরগতির ট্রেন মহানগর গোধূলীতে। অতিরিক্ত গরমে সবার ত্রাহি অবস্হা। তবে আমরা ছোট বড় ৬-৭ জন (ছোটবোন, মা, বড় বোন, ভাগ্নে, আমি, আমার ছেলে, গিন্নী) একটা নন-এসি কেবিন পেয়েছি, বাইরের কোন মানুষ নাই, তাই রক্ষে।

ট্রেন ছাড়ার কথা বিকাল ৪.৪০ মিনিটে, আমরা বাসা থেকে বের হলাম ৩.৫০ এ, আর ট্রেনে উঠে বসলাম ৪.২০ মিনিটে। কিন্তু তখনো ট্রেনের সাথে ইঞ্জিন লাগে নাই, অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ৫.২০ এ ট্রেন ছাড়লো। সন্ধ্যার পর চারদিকে অন্ধকার, ট্রেন কতটুকু ধীরে যাচ্ছে, সেটা বুঝার উপায় নাই। আমাদের কেবিনটা ছিল একদম দরজার কাছাকাড়ি, টয়লেটের পাশেই। বিমানবন্দর আসার পর ট্রেনে এমন পরিমাণে মানুষ উঠেছিলো, কেবিন থেকে বের হওয়ার কোন উপায় ছিলো না।

যতো ফাকা জায়গা ছিলো, সবখানে মানুষ বসে আছে, ঝুলে আছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাগ্নে বললো, টয়লেটে যাবে, কিন্তু টয়লেটের সামনের সব জায়গা দখল করে আছে কয়েকজন, তারা সবাই বি.বাড়িয়া যাবেন। বললাম, একটু জায়গা দেন, উনারা উল্টো ধমক দিলো, বললো, অন্যপাশের টয়লেটে যান। শেষে যথেষ্ট উচ্চস্বরে কথা বলার পর তারা জায়গা ছাড়লো। সবচেয়ে হাসি পেলো, একলোক পাশের লোককে বলছে, ভাই নরসিংদী আসলে বগীর দরজা বন্ধ করে দিবেন, নাইলে মানুষ এসে ভর্তি হয়ে যাবে।

বলা বাহুল্য, এই মানুষগুলো একজনও টিকেট কাটে নাই, আর ট্রেনের যিনি এটেন্ডেন্ট, তিনি সবার থেকে ভাড়া তুলছেন, বাসের ভাড়া তোলার মতো। বি.বাড়িয়া যাওয়ার পর ঐ লোকের হাতে প্রায় ৭০০+ টাকা দেখেছি। রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার কসবাতে আসার পর ট্রেনের ইঞ্জিন গেল নষ্ট হয়ে। তারপর অনন্তকাল অপেক্ষা। সবাই ক্ষিধায় কাহিল।

কিন্তু আমাদের বগিটার সম্পূর্ণ আইসোলেটেড, কোন দরজা নাই অন্য বগি কিংবা খাওয়ার গাড়িতে যাওয়ার জন্য। বাসা থেকে যে হালকা খাওয়া নিয়ে আসা হয়েছিলো, তা শেষ। এমনকি এক কাপ চাও পাওয়া যায় নাই। গরমে, ক্ষিধাতে সবার খুবই শোচনীয় অবস্হা। একসময় ট্রেন চলা শুরু করলো, কিন্তু সেও এক অনন্ত যাত্রা।

চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছলাম রাত ৩.৪৫ মিনিটে, আর বাসায় গেলাম ৪.০০টারও পরে। যেমন আমি তওবা করেছি, এই ট্রেনে জ্ঞান বশত আর যাবো না ছোট বাচ্ছা নিয়ে। এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে ট্রেনের লোকশান বাড়বেই দিন দিন। পরদিন তারেক জিয়ার জন্য হরতাল ডাকা হয়েছে। আমাদের বিশেষ কাজে যেতে হবে থানা সদরে, তারপর বাড়ীতে, তাই সকাল ৬টার দিকেই রওনা দিলাম।

কিন্তু এখানেও বিপদে পড়লাম। কয়েকটা ছবি তুলেছি, আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। প্রথমেই একটা কুইজ। নিচের ছবিটা কিসের ছবি হতে পারে? একটা মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের বিজ্ঞাপন, এখানে কিভাবে বউ দেখানো হয়, সেটা বোধগম্য হলো না। একটু উকিঝুকি দিয়ে কাপলদের বিশেষ ব্যবস্হাটা দেখে আমি মাননীয় স্পীকার হয়ে গেলাম।

এই সরকারের আমলে প্রায় প্রতিটা হরতালে অফিসে আসি, আল্লাহর রহমতে কোন ঝামেলা হয় নাই। কিন্তু আমার গ্রামের এলাকাতেই হরতালকারীদের হামলার শিকার হলাম আমি। চোখের সামনেই ৫-৬জন এসে আস্ত ইট ছুড়ে মারলো, তারা দলবেঁধে ৮-১০টা গাড়ি ভাঙ্গা শুরু করলো। আমি ছিলাম সামনেই, সিএনজিওয়ালার পাশে বসা। ২ সেকেন্ডের জন্য এই ইট আমার বুক বরাবর এসে লাগে নাই, লাফ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলাম।

ঢাকার মতো সিএনজিতে খাঁচা লাগানো থাকলে আমাকে এখন হাসপাতালে থাকতে হতো। আস্ত ইটখানা এতো জোরে মারা হয়েছিলো, সিএনজির আয়না ভেঙ্গে পিছনের লোহা বাঁকা হয়ে গেছে। আরএকজন গাড়ি চালকের মাথা ফেটে গেছে। আমাদের সিএনজি ড্রাইভাবের হাত কাটলো কাঁচের টুকরোতে। কাঁচগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছিলো, তাই সব খুলে ফেলা হলো।

যারা হরতাল ডাকছেন, কিংবা ভাঙচুর চালাচ্ছেন, তারা কি একবারও ভাবছেন না, তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও তো এইভাবে কোথাও আক্রান্ত হতে পারতেন। আমাদের সিএনজিটাতে ৮৮ বছরের বৃদ্ধ আমার বড়চাচা ছিলেন, তিনি অসুস্হ, একা চলাফেরা করতে পারেন না, তিনিও রেহাই পেলেন না। সবশেষ আরো দুইটা ছবি, ফেরার পথে লাকসাম স্টেশনে থেমে থাকা ডেমু ট্রেন। এই ট্রেনটা যথেষ্ট বিতর্কিত। কষ্টকরে যারা পড়েছেন, তাদের জন্য আমার ভাতিজীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ সবাইকে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।