আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্যালেন্টাই ডে বাণিজ্যিক ভালোবাসা কতটুকু দরকার



ভ্যালেন্টাই ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে এখন ১৪ ফ্রেব্র“য়ারি দিনটি পালন করা হচ্ছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বেশ আগে থেকেইে এই দিনকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করে থাকে। তাদের নানা ধরনের আয়োজন থাকে আগে ও পরে। এই দিবসকে সামনে রেখে তাদের একটি বড় উদ্দেশ্য থাকে বিজ্ঞাপন প্রাপ্তি ও আর্থিকভাবে লাভ হওয়া। কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নানাচমকের প্রলোভনমূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করে।

এই দিন পালনে উৎসাহিত করতে হোটেলগুলোর কোনো কোনোটিতে বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা থাকে। এই কয়েকটি দিকে তাকালে ব্যাপক প্রচার প্রপাগান্ডাই আপাতত বলে মনে হয়। কেননা যেসব মাধ্যমে এসব সংবাদ প্রচারিত হয় সেই সব মাধ্যমের উপর দেশের মানুষ প্রতিদিনের সংবাদ, বিনোদন বা খবরাখবরের খোঁজে দৃষ্টি দেয়। নানা প্রয়োজনে তাদের উপর নির্ভর করে থাকে। আর এসব মাধ্যমে এই দিবস উপলে এমন পরিবেশনা থাকে যাতে মনেই হতে পারে দিনটির গুরুত্ব বুঝি অনেক।

এর সাথে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। দেশের টিভির পর্দায় ও পত্রিকার পাতায় ভালোবাসা দিবসের কথা এত বেশি শোনা যায়, তাতে এই উপলব্ধি হতেই পারে যে আমাদের দেশ ভালোবাসায় কানায়কানায় পূর্ণ। যারা দিনটি পালন করে তারা দিনটিকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকে। অনেক েেত্রই মনে হয় এটাই এখন বাংলাদেশের মূল কালচার। ব্যক্তি বিশেষে অনেককেই এর ভিতর জড়িত হতে দেখা যায়।

তবে ব্যাপক জনমানুষের সম্পৃক্ততা অবশ্য এতে থাকে না। এই দিবস মূলত শহরকেন্দ্রিক, বিশেষভাবে আবার ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করেই উদযাপিত হচ্ছে। সেখানেও আবার শ্রেণী বিশেষে যুক্ত হতে দেখা যায়। গোটা জনগণ সম্পৃক্ত নয়। অথচ টিভি আর পত্রপত্রিকা দেখলে মনে হয় সারা দেশই এই দিনটি পালনে জড়িয়ে আছে।

সারা দেশ, দেশের সকল মানুষ দিনটি পালন করতে অপো করছে। তারা খুব ভালো করেই দিনটি সম্পর্কে অবগত। তাই সচেতন হয়েই তারা দিনটিকে বরণ করছে। ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সর্বত্র নানাভাবে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ডে কি তা আমরা কয়জন জেনে দেখেছি।

যারা ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস পালনের নামে এই দিনকে প্রচার করে তারা ঠিকই এর বাণিজ্যিক দিকটি বিবেচনায় এনেই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। তাদের আকর্ষণ থাকে তাদেরকেই টানার যারা এর প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়, এই প্রলোভনে ধরা দেয়। মূলত তরুণ-তরুণীরা আবেগবশতই এই ফাঁদে পা দেয়। তারা বাছ-বিচার বা আগপাছ বিবেচনা না করেই এর প্রতি আকর্ষণকে স্বভাবসুলভ তারুণ্যের ঝোঁক বলেই মনে করে। তবে এইখানে নিঃসন্দেহে সব তরুণ-তরুণীরাই ঝাাঁপিয়ে পড়ে না।

বাছ-বিচার বা বিবেচনাবোধ যাদের তীè, সূক্ষ্ম ও সমুজ্জল তারা সহজেই প্রচার প্রপাগান্ডার ফাঁদে পা দেয় না। তাদের কাছে রুচিবোধ, শ্লীলতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ অনেক মূল্যবান। অবাধ মেলামেশা আর অশ্লীলতার মাপকাঠি অত্যন্ত সূক্ষ্ম। এদের সচেতনতাবোধও প্রখর। পৌত্তলিকতা আর কুসংস্কারকে ভিত্তি করেই এসেছে ভ্যালেন্টাইন ডে।

আধুনিক বিশ্বে পুঁজিপতিরা উৎসবটিকে আরো প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভ্যালেন্টাইন ডে’কে রঙ দিয়েছে। তুলে এনেছে কৌশলে নিজেদের স্বার্থে, অত্যন্ত সুকৌশলে। প্রতারণার জাল ফেলেছে আর সেই জালে আটকে পড়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসা যদি বাণিজ্যিকই হয় তাহলে তো সেই ভালোবাসা এমনিতেই দরকার পড়ে না কারো। একদিনের ভালোবাসা বিলানোর মানেই হলো সে ভালোবাসা মেকি।

কৃত্রিম আবরণে সমাজকে ঢেকে রেখে একটি অপুষ্ট কালচারের রূপ দেয়ার চেষ্টা করা। বাণিজ্যিক ভালোবাসার পুষ্টিকর স্বার্থ তুলে নেয় সুবিধাবাদীরা। প্রকৃতপে দেখা যায়, সেই মেকি ভালোবাসার আবেগের সমাপ্তির সাথে সাথে অনেকেরই আসল চেহারা বের হয়ে আসে। ধরা পড়ে সমাজে এদের অসহায়ত্ব। অথচ আমরা কতভাবেই না আমাদের সুন্দর কালচারের সাথে পশ্চিমা, ভারতীয়, শাহরুখীয় বা ব্যালে নৃত্যের মতো বিষয়গুলোকে ডুকিয়ে দিচ্ছি।

কিভাবে দিচিছ তার বিবেচনাবোধও অনেকের কাছে ধার না ধারারই বিষয় হয়ে থাকছে। ভালোবাসার নামে আজ দেশে যা হচ্ছে তার প্রভাব আস্তে আস্তে পড়ছে যুব সমাজের উপর। মতার পালাবদলে সরকার আসে সরকার যায়, দেশ ভালোমন্দ মিলিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করে। সেখানে ভালোমন্দের প্রয়োজনীয় সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধনের সুযোগ থাকে। অনেক কিছুকে টেনে তোলা যায়।

বাদ দেয়া যায়। হয়তো সবই সময়ের ব্যাবধানে মেরামত সম্ভব। কিন্তু কালচারের ভিতর যেসব সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম বিষয় আশয় ডুকে পড়ে তার প্রভাব সময়ের পরিক্রমায় আরো গভীর হয়ে ওঠে। সূক্ষ্ম সুই হয়ে যেটা প্রবেশ করে কালচারে সেটা মোটা কালো তের দাগ বসিয়ে দেয় এক পর্যায়ে। সেই কালচারের দূষিত প্রভাব থেকে, ফলাফল থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়ে।

অনেক যুগ অপো করতে হয়। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে অপসংস্কৃতির ফাঁদে পা দিয়ে সেসব উপাদানকেই আলিঙ্গন করার চেষ্টা করছি যা কোনোভাবেই সুস্থ, শ্লীল নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। আমাদের সংস্কৃতিতে যুক্ত হতে মানানসই নয়। চতুর্থ শতাব্দী থেকেই ভ্যালেন্টাইন ডে প্রচলন হতে দেখা যায়। ইতিহাস তাই বলে।

রোমানরা উর্বরতা ও পশুর দেবতা হিসেবে খ্যাত লুপারকাসের সম্মানার্থেই ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন শুরু করে। এর সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক এক যুবকের প্রেম জড়িত। আবার কারো মতে এর সাথে সেই সময়ের কুমারীদের মাতৃত্বের কুসংস্কারের বিষয়টি জড়িত। তবে বোঝাই যায়, এটা পৌত্তলিকতা আর কুসংস্কার থেকেই এসেছে। সপ্তদশ শতাব্দীতে এসে নতুন করে আবার কোথাও কোথাও সেটারই প্রচলন শুরু হয়।

এসময় ইউরোপের কোনো কোনো দেশে একে আবার নিষিদ্ধও করা হয়। খৃস্টান যাজক সমাজ থেকেও আসে প্রচণ্ড বিরোধীতা। বিংশ শতাব্দীতে এসে তা আবার উৎসবের আমেজে তুলে ধরা হয়। দেশে দেশে একে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে কিছু দিন আগে রাশিয়াতে ভ্যালেন্টাই ডে পালনকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এছাড়াও সঙ্গতকারণেই ভারত সহ অনেক দেশেই এর প্রচলনের বিরোধীতা করা হচ্ছে। আমাদের দেশে আজ এর প্রচার করার চেষ্টা করা হচ্ছে বেশ জোরেশোরে। বিগত শতাব্দীর নব্বই দশকের শুরুতে দিবস হিসেবে পালনের প্রচলন শুরুর যে চেষ্টা করা হয় তাতে আজ অনেকেই যুক্ত হয়েছে। ভ্যালেন্টাইন দিবসে কি করা হবে তা প্রচার করা হয়, কিভাবে ভালোবাসা যুগলবন্দী হয়ে পালন করতে হবে তা জানানো হয়, কিভাবে অবাধ মেলামেশা করতে হয় তা শিখানো হয়। জানানো হয় দিবসে কি করা উচিত আমাদের।

অর্থাৎ ভালোবাসার নামে কি হয়, কি প্রচার করা হয়, কিসে উৎসাহ দেয়া হয়, আর কি কি বিষয়ে পরোভাবে অবাধ স্বাধীনতা দাবি করা হয় তাই দেখা যায়। পত্রপত্রিকায় যেসব প্রচার করা হয় তাতে অনেক কিছুই উপলব্ধি করা যায়। আরো অনেক কিছুই গোপন থেকে যায় বিলাসী ও বিশেষ স্থানগুলোর নামে। বোঝাই যায় কেউ কেউ ভালোবাসা দিবসকে সম্বল করে আরো অবাধ ও স্বাধীন হতে চায়। অবৈধতাকে আরো একটু উন্মুক্ত স্বাধীনতার কাতারে দাঁড় করিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।

স্নেহ, প্রীতি, ভালোবাসা, এসব তো জীবনেরই অঙ্গ। এগুলো জীবনের সৌন্দর্যবর্ধনে আরো ফলপ্রসূ করে। ভালোবাসা দিবসের কৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে এরা সুন্দর, স্বাভাবিক, সুস্থতার ভিতর অসুস্থতা, অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতির প্রবেশ ঘটাতে চায়। কেউ বুঝে করে, সচেতন ভাবে করে। বাকিরা হুজুগেই যোগদেয়।

দিনের শেষে দেখা যায় হিসেবের সবই অন্তঃসার শূন্য। মাঝখান দিয়ে বাণিজ্যিকগোষ্ঠী আমার আপনার পকেট থেকে হাতড়িয়ে নিয়ে গেছে অর্থ। দিয়ে গেছে একটি কৃত্রিম আবেগ। মাঝখান দিয়ে পুঁজিপতিদের উদ্দেশ হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হলাম আমরা। পেলাম অপসংস্কৃতির একটি উপাদান।

সমাজ থেকে দূর হলো না অন্যায়, অবিচার, অশ্লীলতা, পরকীয়ার মতো নোংরা বিষয়গুলো। বরং এসবে সাথে আরো একটি অপসংস্কৃতির র্চ্চা যুক্ত করার জোর প্রচেষ্টা অব্যাবহত থাকলো। ১২.০২.২০১১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।