আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি খুবই মর্মাহত...।

নিজের মাঝেই আমি নিজে যেন হারিয়ে যাই বারবার।

সড়ক দূর্গটনায় রেডিও কলোনী মডেল স্কুল এর ছাত্রের মৃত্যুতে আমি খুবই মর্মাহত। এক সময় আমিও এই স্কুল এর ছাত্র ছিলাম যদিও আজ হতে ১১ বছর আগের কথা। আমি ছাত্র থাকাকালীন সময়েই আমরা একটা উড়াল সেতু নির্মানের দাবি করে আসলেও আজ তা বাস্তবায়ন হয়নি। যদি বাস্তবায়ন হত তাহলে আর কোন ছাত্রকে লাশ হতে ঘড়ে ফিরতে হত না।

খবরটি পেপারে পরে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। খুব ভাল লাগে নিজেকে এই স্কুল এর একজন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে, কিন্তু কষ্ট লাগে এই ভেবে যে প্রশাসন আমাদের প্রতি কতটা উদাসিন। তা না হলে আজ এই ঘটনা ঘটতো না। একজন মায়ের বুক শুন্য হত না। মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছিল শিশুটি।

মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই জীবনপ্রদীপ নিভে যায় শিশুটির। সড়কে পড়ে থাকে ছোট্ট নিথর দেহ। শিশুটির নাম তানজিম আহসান (৭)। গতকাল শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে সাভারে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে।

এর জের ধরে গতকাল বিকেলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা। শিশুটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই স্কুলের শিক্ষার্থী ও কয়েক হাজার মানুষ মহাসড়কে নেমে আসে। তারা দুর্ঘটনার প্রতিবাদ ও উড়ালসেতু নির্মাণের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে। আগুন ধরিয়ে দেয় বাসে। ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে।

এর জবাবে জনতাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের ওপর। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটা ও জনতার ইটের আঘাতে সাভার থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কাওছার মাতাব্বর, ছয় কনস্টেবলসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। তানজিম সাভারের রেডিও কলোনি মডেল স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে পড়ত। তার বাবা নিজাম উদ্দিন ওই স্কুলেরই শিক্ষক। বাড়ি সাভারের জামশিং এলাকায়।

সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই স্কুলটি। পরিবার সূত্র জানায়, সকালে স্কুল শেষে তানজিম বাড়ি যেত। কোচিং করার জন্য বিকেলে ফিরত মায়ের সঙ্গে। বাক্রুদ্ধ কণ্ঠে তানজিমের মা পারভীন আক্তার জানান, দুপুরের খাবার শেষে বেলা সোয়া তিনটায় ছেলেকে নিয়ে তিনি বাসা থেকে বের হন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে ছেলের হাত ধরে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকাগামী একটি বাস ছেলেকে চাপা দিয়ে চলে যায়।

‘ছেলে আমার ডান হাতের আঙুল ধরে ছিল...’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সাভার থানার পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তানজিমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রেডিও কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী মহাসড়কে নেমে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আশপাশের এলাকার শত শত মানুষ। তারা সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র (বিপিএটিসি) পর্যন্ত মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান নিয়ে শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করে। উত্তেজিত জনতা একপর্যায়ে রেডিও কলোনি এলাকায় একটি, রেডিও কলোনি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে দুটি এবং বিপিএটিসি এলাকায় আরও দুটি বাসসহ পাঁচটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

খবর পেয়ে সাভার থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে তিনটি বাসই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুড়ে যায় অপর দুটি বাসের কিছু অংশ। বিকেল পাঁচটায় সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজিত জনতাকে লাঠিপেটা করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনতা মারমুখো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় জনতাকে নিবৃত্ত করতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। বুলেটের মুখে ছাত্র-জনতা মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন গলির মধ্যে ঢুকে পড়ে। এরপর ছাত্র-জনতা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও এর জবাবে তাদের হটিয়ে দিতে ফাঁকা গুলি করতে থাকে। খবর পেয়ে সোয়া পাঁচটার দিকে আরও পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতাকে ধাওয়া করে।

এ সময় মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তানজিমের লাশ এ সময় ঘটনাস্থলের পাশেই পড়ে ছিল। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় মহাসড়ক পুরোপুরি র্যাব ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে এলে সোয়া ছয়টার দিকে যান চলাচল শুরু হয়।

পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর পুলিশ স্বজনদের বাধা উপেক্ষা করে তানজিমের লাশ থানায় নিয়ে যায়। এর আগে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে পলাশ পরিবহনের ওই বাসটিকে পুলিশ আটক করে। ঢাকামুখী বাসটি গোপালগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসেছিল। তবে এর চালক ও সহযোগী পালিয়ে যান। তানজিমের বাবা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বিশেষ করে, রেডিও কলোনি মডেল স্কুলসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক পার হয়ে যাতায়াত করে।

মাঝেমধ্যেই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এই স্ট্যান্ডে একটি উড়ালসেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। আমিও তাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। আজ আমার ছেলেরই ওই স্থান দিয়ে পার হওয়ার সময় লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হলো। ’ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় আর কিছু বলতে পারেননি তানজিমের বাবা।

রুমাল দিয়ে কেবলই চোখ মুছছিলেন। সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, উত্তেজিত ছাত্র-জনতাকে নিবৃত্ত করতে ৭৮টি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। তিনি পাঁচটি বাসে আগুন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তথ্যসূত্র এখানে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.