আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিয়ার মুহাব্বাত ইশক

নাজমুল ইসলাম মকবুল

নাজমুল ইসলাম মকবুল প্রেম প্রীতি ভালোবাসা কিংবা পিয়ার মুহাব্বাত ইশক শব্দটি বড়ই স্পর্শকাতর। মুহাব্বাত বা পীরিত কিন্তু দুজন ছাড়া হয়না এবং সাথে সাথেও পয়দা হয়না। প্রথমে মন দেয়া নেয়া, পারস্পরিক ভাব বিনিময়, রাগ অনুরাগ, ডুবে ডুবে পানি খাওয়া, এরপর ধীরে ধীরে প্রবাহিত হতে থাকে ইশক মুহাব্বাতের তরঙ্গ। ইশকে মুহাব্বাত পয়দা হবার পর শুরু হয় রোমাঞ্চ। মাঝে মধ্যে অনুরাগ বিরাগ বিচ্ছেদ কত কিছু যে হয় তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

প্রেম প্রেম খেলা বা প্রেমের উত্থাল তরঙ্গ ছাড়া নাকি নাঠক উপন্যাস কিংবা আরও অনেক কিছু এক্কেবারে জমেইনা। আমাদের একান্ত আপনজন দাদাগো সাথে আমাদের মুহাব্বাতের শেকড় সেই আদিকাল থেকেই এক্কেবারে গভীর থেকে গভীরে প্রোতিথ আছে এবং বহাল তবিয়তে এখনও ছল ছল করছে। কিয়ামত তক চিরস্থায়ী থাকারও সম্ভাবনা খুবই বেশি। হাদীস শরিফে আছে যার সাথে যার মুহাব্বাত তার সাথে তার হাশর হবে। মুহাব্বাতের কারনেও তার সাথে স্বর্গ কিংবা নরকেও যাবার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে।

যার সাথে যার মুহাব্বাত সে যা চাইবে তা দেওয়াটাই হচ্ছে মুহাব্বাতের বন্ধনকে চিরস্থায়ী বা অটুট রাখার একটা নমুনা। দাদাগোর সাথে আমাদের আদি মুহাব্বাত যেন অটুট থাকে কিয়ামত তক, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সেই আপ্রাণ প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি দিন কা দিন, বছরকা বছর, যুগকা যুগ। এক কথায় আজীবন। দাদাগো একান্ত চাওয়া ছিলো আমাদের বুকের উপর দিয়ে তাদের নির্বিঘেœ চলাচল করার সুযোগ অবারিত করে দিতে হবে। আমরা মুহাব্বাতের জোশে আমাদের নিজ খরছে দাদাগোরে আমাদেরই বুকের উপর দিয়ে প্রায় বিনা পয়সায় বাহারি যানবাহন নিয়ে আয়েশের সাথে চলাচল করার অবারিত সুযোগ করে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম।

এক কথায় যাকে বলে ট্রানজিট। শুধু শুকনো মুহাব্বাত হলেতো আর চলে না। মুহাব্বাতের সাথে পানীয় জলের একটা সম্পর্ক অত্যান্ত চমৎকার। মুহাব্বাতের জোশে অনেক সময় অতিরিক্ত ফুর্তিতে হাসতে হাসতে চোখে পানি আসে। আবার মুহাব্বাতের কোন এক পর্যায়ে যখন বিরহের বাঁশি বাজে তখন কান্না আসে দুনয়নে।

সেই কান্নারও একটা নোনা পানি গন্ডদেশ গড়িয়ে গড়িয়ে ভিজে যায় অনেক কিছু। ভালোবাসার চিজকে উল্টিয়ে কান্দালে তখন কপোল ভিজে চলে নয়নেরই জলে। আমরা এখনও প্রথমটায় আছি। তাই মুহাব্বাতের গভীরতা আরও বাড়াতে জোশের ঠেলায় আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দর দাদাগোরে আরামের সাথে ব্যবহারের জন্য মহাসুযোগ করে দিয়ে আনন্দে যেন লাফাতে লাগলাম। এসব মুহাব্বাতে যাতে কেহ কোন ছেদ ধরাতে না পারে সেজন্য এর চমৎকার সুফল সম্পর্কেও নানা যুক্তির ফুলঝুরি উপস্থাপন করতে কসুর করলামনা।

দাদাগো মাল আমাগো দেশে অবাধে বিচরন করে আমাদের বাজার সয়লাব করার সুযোগ করে দিয়েও তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম। দাদাগোর প্রকাশ্য ও গোপনীয় আদেশ নিষেধ কায়মনোবাক্যে আনন্দের সাথে তামিল করে মহাগৌরব অনুভব করলাম এই আশায় যে আশিক ছাড়া মাসুক মিলেনা। আশিক যা চায় মাসুক দেবে আর মাসুক যা চায় আশিক দেবে এটাইতো প্রেম পীরিতি ভালোবাসা বা মুহাব্বাতের নিয়ম। কিন্তু মুহাব্বাতের নিদর্শন স্বরূপ প্রতিদানে দাদারা আমাদেরকে যেসব উপঢৌকন দিলেন তা আমরা নিতান্ত আগ্রহসহকারে হাত বাড়িয়ে অমৃতসমান গণ্য করে বরন করে নিয়ে মুহাব্বাতের জোশ কিংবা গভীরতা বড়িয়ে দিলাম শত সহস্র গুন। আমাদের আরামের ঘুম হারাম করে হৃদয় মন প্রাণ উজাড় করে দিবারাত্রি দাদাগো গুণকীর্তনেই মশগুল থেকে জীবনটাকে ধন্য করলাম।

বিনিময়ে দাদারা আমাদেরকে নিরাশ না করে মুহাব্বাতের প্রতিদানও দিলেন অঞ্জলী ভরে। দাদারা মুহাব্বাতের নিদর্শন স্বরূপ আমাদের সীমান্তে কাটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদেরকে প্রেমের খাচায় বন্দি করে দিলেন। যাতে তাদের প্রেমের খাচার পিঞ্জর থেকে তাদেরই ভালোবাসার তথা মনের মানুষ আমাদেরকে অন্য কেহ ছিনিয়ে নিয়ে ভালোবাসার ভাব বিনিময় তথা ডুবে ডুবে পানি খাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে না পারে। এতো মুহাব্বাত দেখানোর জন্য আমাদের আনন্দে লাফানোরই কথা। কিন্তু যখনই নিস্পাপ অবুঝ কিশোরি ফেলানীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে প্রেমের পিঞ্জর কাটাতারের উপর উপুড় করে ঝুলিয়ে রাখে, যখন সীমান্তের ওপারে এসে আমাদের নিরপরাধ মা ভাই বোনদের গুলি করে হত্যা করে মুল্যবান মৎস্য সম্পদ কিংবা নিজের জমিতে নিজ হাতে ফলানো ফসল লুট করে নিয়ে যায় তখন আমাদের প্রেমের সাগরে একটুও গর্জন দেখা যায়না।

বরং প্রেমের উত্থাল তরঙ্গ ছল ছল করে আরও উছলে উঠে প্রবাহিত হতে থাকে বহমান ধারায়। প্রেমের বালুচর ফারাক্কা টিপাইসহ অনেকগুলি বাঁধ দিয়ে যখন আমাদের ন্যায্য হিস্যা পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে আমাদের সিক্ত বুক খানিকে প্রেমের ধু ধু বালুচর বানায়, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে খা খা করে তখন আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তোলে এই বলে আত্মতৃপ্তি অনুভব করতে পারি যে, আমাদের আর কষ্ট করে শুষ্ক মৌসুমে নৌকা যোগে কিংবা সেতু দিয়ে নদী পারাপার হয়ে মহা মুল্যবান সময় নষ্ট করতে হবেনা বরং যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে অত্যান্ত স্বল্প সময়ে হেটে হেটে মনের সুখে গান গেয়ে গেয়ে নদী পারাপার হতে পারবো। মুহাব্বাতের প্রতিদান স্বরূপ এমন দুর্লভ সুযোগ কজনেরই বা ভাগ্যে জুটে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে যখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের চুবিয়ে চুবিয়ে মেরে বাড়ী ঘর ধ্বংস করে ফসলহানি ঘঠিয়ে তাদের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ অবারিত করে দেবে তখন এই বলে আত্মতৃপ্তি পেতে পারি যে শুস্ক মৌসুমে পানির জন্য জান আকুবাকু করলেও দেরীতে হলেও প্রেমের ফোয়ারা প্রবাহিত হচ্ছে এখন। তাই সবাই মিলে মাথায় গামছা বেধে একই জাতের পোসাক পরে একই আয়তনের রঙিন বৈঠা নিয়ে তড়িগড়ি করে লম্বা বাইচের নৌকা সংগ্রহ করে সাধের নৌকা বাইচ আরম্ভ করে দিয়ে শুরু করতে পারি আনন্দেরই তুফান।

আর করতাল বাজিয়ে লাফাতে লাফাতে ভরাট গলায় গাইতে থাকি ‘প্রেমেরও দরিয়া, গেলো যে ভরিয়া, দাদারও লাগিয়া..............।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।