বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
ইতালিও নৌ-অভিযাত্রী খ্রিস্টফার কলম্বাস; ইনি পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপকে এক ‘নতুন বিশ্বের’ পথ দেখিয়েছিলেন । যে পথ ধরে উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী সাম্রাজ্যবাদী লুন্ঠনকারীরা পৌঁছে যায় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে। অবাধ লুন্ঠনের পাশাপাশি আদিবাসীদের লোকজ সংস্কৃতি ধ্বংস করে সূচিত করে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের ... বহু বছর পর খোদ ইউরোপেই এই নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ হয়েছে ... ইউরোপের একটি মিউজিকাল কম্পোজিশনে তারই প্রতিফলন আমরা দেখি ... একুশ শতকের প্রারম্ভে কলম্বাস- এর দেখানো পথে হেঁটেছেন মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ... ২০০৩ সালে ইরাক তছনছ করেছেন ... সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগ এনেছে সুইজারল্যান্ডের বামপন্থি ও মানবাধিকার কর্মীরা ...
কলম্বাসের সমকালীন সময়ে স্পেনের কর্তৃত্ব ছিল রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্দিনান্দ-এর হাতে।
এঁরাই কলম্বাস -এর নৌ-অভিযাত্রার পৃষ্টপোষক ছিলেন । ‘নতুন বিশ্বের’ প্রাচুর্যের সম্ভাবনা তারা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন । যার ফলে ‘নতুন বিশ্ব’ শোষন করে ষোড়শ শতকে স্পেন ইউরোপের অন্যতম সম্পদশালী রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছিল।
কলম্বাসের নৌরুট
১৪৯২ থেকে ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলম্বাস চারটি ট্রিপ সম্পন্ন করেন - যা ইউরোপীয় অভিযাত্রার সূচনা করে। নিনা, পিনটা এবং সান্টা মারিয়া- এই তিনটি জাহাজ নিয়ে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের অগাস্ট মাসে খ্রিষ্টফার কলম্বাস দক্ষিণ স্পেনের পালস বন্দর থেকে প্রথম যাত্রা করেন।
ক্যারিবিয় অঞ্চল থেকে ফিরে এসে কলম্বাস স্পেনের রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্দিনান্দকে বললেন: These people in the Caribbean have no creed and they are not idolaters, but they are very gentle and do not know what it is to be wicked, or to kill others, or to steal...and they are sure that we come from Heaven....So your Highnesses should resolve to make them Christians, for I believe that if you begin, in a little while you will achieve the conversion of a great number of peoples to our holy faith, with the acquisition of great lordships and riches and all their inhabitants for Spain. For without doubt there is a very great amount of gold in these lands. (এইসব ক্যারিবিয় জনগনের ধর্মীয় বিশ্বাস নেই এবং তারা মূর্তিপূজকও নয়, অথচ ভারি শান্ত এবং অসৎ হওয়া উপায় জানে না, কাউকে খুন করতে কি চুরি করতেও জানে না ...তারা মনে করে যে আমরা স্বর্গ থেকে এসেছি ...কাজেই মাননীয় ওদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার কথা ভাবা উচিত। যদি তাই করা হয় তাহলে আমি বিশ্বাস করি যে অচিরেই বিপুল সংখ্যক মানুষ আমাদের পবিত্র বিশ্বাসে স্থান পাবে সেই সঙ্গে ওদের বিপুল সম্পদ স্পেনের অধিকৃত হবে। সন্দেহ নেই এইসব স্থানে স্বর্ণের প্রাচুর্য রয়েছে। )
বিস্তারিত দেখুন
কলম্বাস এর বক্তব্যে ক্যারিবিয় অঞ্চলের অধিবাসীদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার বিষয়টি রয়েছে। কিন্তু ধর্মান্তরিত করা কেন? নিশ্চয়ই পূণ্য অর্জনের জন্য নয়।
ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্য ক্যারিবিয় অঞ্চলে স্পেনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা তথা ক্যরিবিয় জনগনকে রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্দিনান্দ-এর বশীভূত করা। এভাবে ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের গ্রাস করা । তাছাড়া খ্রিস্টীয় সাম্রাজ্যবাদী কলম্বাসের বক্তব্যে মিথ্যেও রয়েছে। কলম্বাস বলেছেন ... এইসব ক্যারিবিয় জনগনের ধর্মীয় বিশ্বাস নেই। কলম্বাসের এই কথাটি সত্য নয়।
কেননা, কলম্বাস-পূর্ব ক্যারিবিয় অঞ্চলে ধর্ম ছিল। তবে সেটি অবশ্যই গির্জে পিতাদের রোমান ক্যাথলিক ধর্ম নয়, ক্যারিবিয় অঞ্চলের ধর্ম হল ভূমিপুত্রদের প্রকৃতিলগ্ন লোকজ ধর্ম, যা লাতিনভাষী ধর্মান্ধ যাজকদের ব্যাখ্যাবয়ানের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়-যা বিকশিত হয়েছে আদিম জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত সংস্কৃতির বিবর্তনের ফলে । ... ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে কলম্বাস যখন ক্যারিবিয় অঞ্চলে পৌঁছলেন তখন ওই অঞ্চলে তাইনো জাতির বাস ছিল। এদের উৎপাদনের কলাকৌশল ছিল আদিম স্তরের এবং এরা নৌকা যোগে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। যেমি-র ধারণার ওপর ভিত্তি করে এদের ধর্ম গড়ে উঠেছিল।
যেমি হল দেবতা, পূর্বপুরুষের আত্মা এবং ভাস্কর্য-এই তিনটি বিষয়ের মিলিত রূপ ...
যেমি।
তাইনো জাতি ঈশ্বর ও উর্বরতার দেবীর (মাদার গডেস) উপাসনা করত। তাইনোদের বিশ্বাস ছিল - ঈশ্বর খাদ্যশস্যের নিয়ন্ত্রন করেন, দেবী নিয়ন্ত্রন করেন পানি, নদী ও সমুদ্র। অন্যান্য দেবদেবীরা প্রাকৃতিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ করেন। আর, বৃষ্টিজল কি? বৃষ্টিদাতা দেবতার কান্নাই বৃষ্টিজল।
(এইসব কবিতা কলম্বাস ঠিক উপলব্দি করতে পারেননি; তিনি বাহামা দ্বীপে জাহাজ ভিড়িয়ে ... তাইনোদের নগ্ন দেখেছেন ...কাজেই মহামূর্খ ভেবেছেন ...অথচ এই যুগে অর্ধনগ্ন ‘ইন্ডিয়ান ফকিরকে’ (মহাত্মা গান্ধী) কেউ মূর্খ ভাবে না ...সভ্যতার বিবেকই ভাবে )
তাইনো আর্ট
এই প্রকৃতিলগ্ন সবুজ সংস্কৃতিই ধ্বংস করেছিল আধুনিক মারণাস্ত্রের অধিকারী শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা। যে পথটি দেখিয়েছিল খ্রিস্টীয় সাম্রাজ্যবাদী খ্রিস্টফার কলম্বাস। যে পথ ধরে উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী সাম্রাজ্যবাদী লুন্ঠনকারীরা পৌঁছে যায় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে। বহু বছর পর এই নির্মম ঘটনার খোদ ইউরোপেই প্রতিবাদ হয়েছে ... এনিগমার একটি মিউজিকাল কম্পোজিশনে সেই প্রতিফলন দেখি।
এনিগমার অ্যালবাম "ক্রশ অভ চেঞ্জেস" এর প্রচ্ছদ।
এনিগমা মূলত একটি ‘ইলেকট্রনিক মিউজিকাল প্রোজেক্ট’। প্রোজেক্টটি ১৯৯০ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্টিত হয়েছিল। এনিগমা মূল কারিগর রুমানিয়ার মাইকেল ক্রেটু। তবে তাঁকে সহোযোগীতা করেছেন ডেভিড ফাইরস্টেইন এবং ফ্রাঙ্ক পেটারসন। মাইকেল ক্রেটু-র রের্কডিং স্টুডিও ছিল স্পেনে! মনে থাকার কথা ... নিনা, পিনটা এবং সান্টা মারিয়া- এই তিনটি জাহাজ নিয়ে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের অগাস্ট মাসে খ্রিষ্টফার কলম্বাস দক্ষিণ স্পেনের পালস বন্দর থেকে প্রথম যাত্রা করেন।
যা হোক। ১৯৯৩ সালে বের হয় এনিগমার ‘দ্য ক্রশ অভ চেঞ্জেস’ অ্যালবামটি। এই অ্যালবামের ৬নং ট্র্যাকটি হল ‘সাইলেন্ট ওয়ারিয়র। ’ এই ট্যাকটিতে উম্মোচিত হয়েছে প্রকৃতিনির্ভর সবুজ জনগোষ্ঠীর ওপর শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান ইউরোপীয় আগ্রাসনের সরূপ ....
সাইলেন্ট ওয়ারিয়র -এর কথাগুলি পাঠ করা যাক-
Long ago, for many years
White men came in the name of God
They took their land, they took their lives
A new age has just begun
They lost their Gods, they lost their smile
They cried for help for the last time
Liberty was turning into chains
But all the white men said
"That's the cross of changes"
In the name of God, in the name of God
The fight for gold these were the changes
Tell me is it right, in the name of God
These kind of changes?
They tried to fight for liberty
Without a chance in hell, they gave up
White men won in the name of God
With the cross as alibi
There's no God who ever tried
To change the world in this way
For the ones who abuse His name
There'll be no chance to escape
On judgment day
In the name of God, in the name of God
The fight for gold these were the changes
Tell me is it right, in the name of God
These kind of changes?
Tell me why, tell me why, tell why
The white men said
"That's the cross of changes?"
Tell me why, tell me why, tell why
In the name of God
These kind of changes
এই ইংরেজি কথাগুলি বাংলায় রূপান্তরিত করলে এরকম দাঁড়ায়-
অনেক দিন আগে, দীর্ঘদিন ধরে
ঈশ্বরের নামে সাদা মানুষেরা এসেছিল
তারা তাদের জমি নিয়েছিল, তারা তাদের জীবন নিয়েছিল
(এভাবে এক) নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল
তারা তাদের ঈশ্বরকে হারিয়েছিল, তারা তাদের হাসি হারিয়েছিল
শেষবারের মত তারা সাহায্যের জন্য কাঁদছিল
শিকলে রূপান্তরিত হয়েছিল স্বাধীনতা
কিন্তু সাদা মানুষেরা বলেছিল:
‘এই হল পরিবর্তনের ক্রশ। ’
ঈশ্বরের নামে, ঈশ্বরের নামে
স্বর্নের জন্য যুদ্ধ -এই ছিল পরিবর্তন !
বল আমাকে এটা কি ন্যায্য, ঈশ্বরের নামে
এই ধরনে র পরিবর্তন?
তারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে চেয়েছিল,
তবে তারা সফল হয়নি।
ঈশ্বরের নামে সাদা মানুষেরা জিতেছিল
তাদের অজুহাত ছিল ক্রশ।
এমন কোনও ঈশ্বর নেই যিনি
এভাবে পৃথিবীকে বদলাতে চান।
যারা ঈশ্বরকে অবমাননা করেছে
শেষ বিচারের দিনে তারা
পালাতে পারবে না।
ঈশ্বরের নামে, ঈশ্বরের নামে
স্বর্নের জন্য যুদ্ধ -এই ছিল পরিবর্তন !
বল আমাকে এটা কি ন্যায্য, ঈশ্বরের নামে
এই ধরনের পরিবর্তন?
কেন আমাকে বল, কেন আমাকে বল, বল কেন
সাদা মানুষ বলে:
‘এই হল পরিবর্তনের ক্রশ। ’
কেন আমাকে বল, কেন আমাকে বল, বল কেন
ঈশ্বরের নামে এই ধরনের পরিবর্তন?
কলম্বাস স্পেনের রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্দিনান্দ কে বলেছিলেন: ... ... for I believe that if you begin, in a little while you will achieve the conversion of a great number of peoples to our holy faith, with the acquisition of great lordships and riches and all their inhabitants for Spain. For without doubt there is a very great amount of gold in these lands….
একুশ শতকে কলম্বাস- এর দেখানো পথে হেঁটেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ।
২০০৩ সালে ইরাক তছনছ করেছেন। তিনি এখন ৮৫ হাজার নিহত ইরাকি হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।
২০০৩ সালের ২০ মার্চ বাগদাদ শহরে ইউ এস বিমান বাহিনীর বোমা হামলা
ইরাকিরা পঞ্চদশ শতকের ক্যারিবিয় অঞ্চলের আদিবাসীদের মতোই নিরীহ ছিল । ২০০৩ সালের ২০ মার্চ বাগদাদ শহরের ওপর বোমা বর্ষনের নির্দেশ দেওয়ার আগে ইনি কি জানতেন না যে বাগদাদ শহরে কেবল সাদ্দাম হোসেন নয় বাগদাদ নগরে শিশুরা বাস করে? জর্জ বুশ নাকি কলম্বাসের মতোই একনিস্ট খ্রিস্টান! (এ রকম আজব তথ্য আমরা ইরাক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সংবাদপত্র মারফত শুনেছি) ...
ইরাকি শিশু
সম্প্রতি গ্রেফতার এড়াতে বুশ সুইজারল্যান্ড সফর বাতিল করেছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি ওখানে তার একটি চ্যারিটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু গুয়ান্তানামো উপসাগরের বন্দিশালায় অতি নিমর্ম পদ্ধতিতে বন্দি নির্যাতনের অভিযোগে সুইস মানবাধিকার কর্মী ও বামপন্থিরা বুশকে বন্দি করার জন্য সুইস সরকারকে আহ্বান জানিয়ে জেনেভায় একটি মামলা দায়ের করে ...
খ্রিস্টফার কলম্বাসের অন্যায্য লুন্ঠন ও খ্রিস্টীয়করণের প্রতিবাদ করেছে এনিগমা, যুদ্ধাপরাধী বুশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সুইজারল্যান্ডে ।
আমরা কি আশাবাদী হয়ে উঠতে পারি?
যখন পৃথিবীব্যাপী সবুজ ক্রমেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
তাইনো বসার আসন। ইউরোপীয় আগ্রাসনে এসব কুঠির শিল্প ধ্বংস হয়েছিল
কলম্বাসের দেখানো পথে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের বর্বর হত্যাযজ্ঞ
এনিগমার "সাইলেন্ট ওয়ারিয়র" এর ভিডিও
তথ্যসূত্র:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।