অন্ধকার; মৃত নাসপাতিটির মতন নীরব'
প্লট, সিনামাটোগ্রাফি, মোরাল তথা সার্বিক বিবেচনায় একবাক্যে যদি বলি ‘ ডেড পয়েট সোসাইটি’ হল সিনামেটিক মাষ্টারপিস । রিয়ালিজম আর রোমান্টিসিজম এর মাঝে কন্ট্রাষ্টকে ফোকাস কারী অসাধারণ একটি মাষ্ট সি মুভি ।
মুভিটির কাহীনি গড়ে উঠেছে টড আন্ডারসনের দৃষ্টিকোন থেকে যে কিনা তথাকথিত রিয়ালিষ্ট ভাবধারার অনুসরনকারী ওয়েল্টন অ্যাকাডেমিতে নবাগত । টডের রুমমেট নিল পেরি-মুভির অন্যতম প্রধান চরিত্র । নিল সেই তরুন/কিশোরদের প্রতিনীধি যারা কঠিন, কঠোর, নিষ্ঠুর রিয়ালিজমের কাছে পৃথিবীব সমান বয়সী আজন্ম লালিত স্বপ্নকে জমা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন প্রতিরাত ।
নিল চরিত্রটিকে আমার মনে হয়েছে ইকারুসের মত, দুরন্ত স্পর্ধায় যার ছিল সূর্য ছোয়ার নেশা । যদিও নিলের বাবা মি. পেরি একজন ডিক্টেটর এর মতই তার পুত্রের যাবতীয় কর্মকান্ড এমনকি ফিউচার প্লান, এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিজকে নিয়ন্ত্রন করতে আগ্রহী । ইকারুসের ডানার মোম গলে যায় সূর্যতাপে, ডিডেলাসের জীবন্ত পুতুল ডানা হারিয়ে আকাশ থেকে ছিটকে বিমুর্ত হয় সমুদ্র এপিটাফে ।
জীবনানন্দ যেমন বলেছিলেন ‘যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙের মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা’ সেই জীবনেরই প্রকৃত সুধা আস্বাদনে উদ্ভুদ্য করা, সেই একদল প্রাণউচ্ছল তরুন/কিশোরকে দুই চোখ মেলে স্বপ্ন দেখতে আগ্রহী করার থিমকে উপজীব্য গড়ে উঠেছে লিটারেচার শিক্ষক কিটিংস এর চরিত্র । আমার দেখা ওয়ান অফ দ্যা বেষ্ট ইন্সপিরেশনাল ক্যারেক্টার, ছাত্ররা তাকে সম্বোধন করে ‘Oh captain, my captain’।
কিটিংস চরিত্রটিকে এমন মনে হয়েছে যে তিনি যেন ছাত্রদের রোলার কোষ্টারের সিটের টিকেট কিনে দিয়েছেন, আর ছাত্ররা খুজে পেয়েছে ‘দোয়েল ফড়িঙের’ সে জীবনের সন্ধান । তারা নিজের সিট গুলোকে গ্রিপ করে তারা অন্তরে লালন করে সে চেতনা যা ল্যাটিন টার্ম "Carpe Diem " (seize the day) ইন্ডিকেট করে । তার টিচিং ফিলোসফি তার ‘Words and ideas can change the world’ উক্তিটির সামগ্রীকতাকে রিপ্রেজেন্ট করে ।
আবেগ-উদ্দীপ্ত প্রথম ক্লাসেই কিটিংস তার ছাত্রদের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে EXTRAORDINARY বা কীর্তিমান করে তোলার জন্য জীবনেরই প্রকৃত সুধা আস্বাদনে উদ্ভুদ্য করেন ‘ Gather ye rosebuds while ye may’ । বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কবিতার মাহত্ব উপলব্ধির উদ্দেশ্য পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভক্ত একটি আর্টিকেল ছিড়ে ফেলতে উৎসাহিত করেন ।
ছাত্ররা কিটিংসের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে । কিটিংস ছাত্রদের হেনরি ডেভিড থিয়েরু, শেলি বা বায়রন এর মত রোমান্টিক ভাবধারার অনুসারী কবিদের সাহিত্যগুলোর প্রতি আগ্রহী করে তোলেন ।
“But only in their dreams can men be truly free,
‘Twas always thus, and always thus will be.”
ছাত্ররা এরই মাঝে জানতে পারে যে কিটিংস ছিলেন ‘ডেড পোয়েট সোসাইটি’ এর সদস্য । ছাত্রদের অনুরোধে তিনি ডেড পোয়েট সোসাইটি’কে ছাত্রদের মাঝে যেভাবে উপস্থাপন করেন:
‘The Dead Poets were dedicated to sucking the marrow out of life... we would gather at the old Indian cave.... and in the enchantment of the moment, we'd let poetry work its magic... We weren't a Greek organization. We were romantics... Spirits soared, women swooned and gods were created’
রিয়ালিজম আর রোমান্টিসিজমের সংঘাত প্রথম ফোকাসে আসে যখন চার্লি ডাল্টন (নুয়ান্ডা) ডেড পোয়েটস দের নামে একটা আর্টিকেল পাব্লিশ করে । আর্টিকেল টি অ্যাডমিন্সট্রেশনের বিপ্রতীপ ভাবাদর্শ প্রকাশ করে ।
ফলে তারা এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে । নিল অনুভব করে অভিনয়ের প্রতি তার প্রকৃত প্যাসন, এবং সে থিয়েটারে সেক্সপিয়ারের মিডসামার নাইটস ড্রিম কমেডির পাক(অবেরন এর সারভেন্ট) এর চরিত্রে অভিনয় করে সফলতার সাথে । তার বাবা তাকে একজন ডাক্তার হিসাবে দেখতে চাইত । খাঁচায় বন্দী পাখি স্বপ্নের মৃত্যুতে আত্মহননের পথ বেছে নেয় ।
ওয়াল্টন অ্যাকাডেমির মেকি পবিত্রতার দেয়াল থেকে প্রতিধ্বনিত হয় রুঢতা আর নিষ্ঠুরতা ।
নিলের আত্মহত্যার পর টড তুষারের পতন দেখে বলে উঠে ‘ইটস বিউটিফুল’, পর মুহুর্তেই বমি করে সে! সেই বমি আসলেই কনফরমিজম বা প্রথাবদ্ধতার গোড়ামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ । নুয়ান্ডার সবশেষ রোমান্টিক অ্যাকটিভিটি ছিল ক্যামেরন এর মুখে পাঞ্চ করা । নক্স ওভারস্ট্রিটের ক্রিসের প্রতি ভালবাসা নিবেদনে কিটিংসের শিক্ষার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ।
টড আর কিটিংসের ইন্টারঅ্যাকশনের মুহুর্তগুলো আসলেই প্রচন্ড ইন্সপিরেটিভ । ফাইনাল দৃশ্যটা প্রচন্ড টাচিং! এখানে কনফ্লিক্টিং দুটো আদর্শ-রিয়ালিজম আর রোমান্টিসিজম এর মাঝে ব্যালান্স করা হয়েছে ।
মুভিতে একসময় টডকে ‘অ্যামিবা’ হিসাবে অ্যাড্রেস করা হয়, সেই টডই কিটিংস এর বিদায় ক্ষনে বেঞ্চে দাড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রিয় শিক্ষকে যে তাকে জীবনের প্রকৃত স্বাদ গ্রহন করতে শিখিয়ছে-
‘Oh captain, my captain’ ।
মুভির ক্যামেরা শটস গুলো বেশ ক্রিয়েটিভ । ডিপ্রেসিভ সিনগুলোকেও অনেক আর্টিস্টিক ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । ডাইলোগ গুলো অসাধারন আর বেশ থট প্রোভোকিং । কিটিংসের চরিত্রটি মুভিতে এক্সাইট্মেন্ট ধরে রাখে আর নিল চরিত্রটি ধরে রাখে মুভির প্যাসন ।
' Oh captain, my captain ’ কবিতাটা আব্রাহাম লিংকনের অ্যাসাসিনেশন এর ঘটনার পোট্রেইট যা শেষ পর্যন্ত মুভিতে তার প্যাসনের মৃত্যুকে (শিক্ষকতার প্রফেশন থেকে বরখাস্ত) ইন্ডিকেট করে ।
মুভিটা আমি এ পর্যন্ত কতবার দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছিনা । তবে যতবার ই দেখেছে সমান উৎসাহের সাথে উপভোগ করেছি । কতগুলো মুভি আপনাকে আবেগে আপ্লুত করেই থেমে থাকেনা, স্বপ্ন দেখতে আমরা যারা ভুলে গিয়েছি, তাদের স্বপ্ন দেখতে অণুপ্রানিত, উদ্বুদ্ধ করে । আপনি মুভিটা যদি না দেখে থাকেন, তাহলে আমি বলবো অপেক্ষা না করে আজই ডিভিডিটা কিনে ফেলুন; Yes, don't rent it but buy it. কারন মুভিটা আপনি বারবার দেখতে চাইবেন ।
ডাউনলোড
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।