নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর। তারপর অন্যকে অনুশাসন কর। নিজে নিয়ন্ত্রিত হলে অন্যকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন।
মানুষের স্বভাবগত সংষ্কার পরিবর্তন করা খুবই কঠিন এবং এক ধরনের উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা; যার পরিপ্রেক্ষিতে জীবনে অনেক জাগতিক বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা স্বত্ত্বে ও চেনা হয়ে উঠে না ।
অচেনা বাস্তবতাগুলো বারবার আঘাত দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়া স্বত্ত্বে ও আমাদের খুব কম জনেরই বাস্তব চেতনার উদ্ভব ঘটে; তাই হিংসা-বিদ্বেষগুলো প্রকর থেকে প্রবলতর হয়ে বেড়ে উঠে । হারানো ব্যথা-বেদনায় যখন স্পর্শকাতরে পরিপূর্ণ হৃদয় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়, পরাজয়ের হতাশা যখন গ্রাস করে রাহুরুপী ধারণ করে তখনিই শুরু হয় তীব্র হা-হুতাশ । বাকী থাকে শুধু আক্ষেপ এবং সমবেদনা; নির্দয়ের সর্বশেষ স্তর ।
সবকিছুর সাথে আমরা অচেনা এবং অজানা হয়ে বসবাস করতে চাই - একসাথে বসবাস করেছি বহু বছর যাবৎ তবু ও চিনতে পারিনি "হতাশা" কি ? একসময় হতাশাই ছিল আমার একমাত্র বন্ধু, নিদ্রার পরম শত্রু, ক্ষুদার্ত পাকষ্থলির জ্বালানিবারক কিংবা পিপাসু শরীরের দূর্বলতা । তবু ও ভুলে গিয়েছিলাম পিছনে ফেলে আসা সেই বন্ধুসুলভ 'হতাশা'র কথা - কিন্তু সে যে কখনো আমাকে ভুলে থাকার নই -সুযোগ ফেলেই ঝাঁপড়ে ধরবে; খেয়ে ফেলবে জটিল শরীরটাকে - বাকি রাখবেটা কি বলা কঠিন ।
কিন্তু এটো বছর যার সাথে কাটিয়েছিলাম সেই 'হতাশা'কে আমার কি একবার ও চেনার দরকার ছিল না (?) যে আমাকে ভুগিয়েছে -আমাকে মরণের পথে ধাবিত করেছে -সবকিছু লুটে নিতে চেয়েছিল সেই হতাশাকে আমি এতো সহজে কেনো ভুলতে বসলাম (?) আমাকে একজনই ব্যর্থ করতে চেয়েছিল -জীবনকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল - চোষকের ন্যায় আমার শরীরে যা রক্ত ছিল সব চুষে নিতে চেয়েছিল -কাঁদিয়েছিল - আঘাতে জর্জরিত করে শরীরের ক্ষুদ্রানু কোষগুলোকে দূর্বল করে রেখে দিয়েছিল দু-দুটো বছর -সেই "হতাশা"কে আমি ভুলতে বসেছিলাম । আমি স্বার্থপরের ন্যায় আচরণ করতে চেয়েছিলাম - পারিবারিক দ্বায়িত্ববোধকে বিসর্জন দিয়েছিলাম - কেননা সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন করে আমি শুধু এক সত্যিকার মানুষ হতে চেয়েছিলাম । আমি হতাশা'কে আর উপলব্ধি করতে চাই না -বরং আমি এখন চিনতে চাই -বুঝতে চাই । এই হতাশাকে আমি যা খুশি তা বলতে পারি, গালমন্দ করতে পারি; কারণ সে ছিল আমার - ভবিষ্যতে থাকবে আমারই । ইহা পরনিন্দা নই বরং আত্ম-সমালোচনা ।
আমরা ভুল করে পরনিন্দা এবং আত্ম-সমালোচনাকে এক করে গেঁথে ফেলি -যার চুড়ান্ত পরিণতি জটিলতা - এবং মনুষ্যত্বজ্ঞানহীনতা ।
যৌক্তিক সমালোচনা কখনো পরনিন্দা নয়; যৌক্তিক সমালোচনাগুলো সবসময় ভবিষ্যৎ উন্নয়নের অনুকুলে হয়ে কাজ করে; আর অন্যদিকে পরনিন্দা এক মানুষকে ব্যর্থতার সম্মুখে ধাবিত করে । পরনিন্দার কোন যৌক্তিকবোধ থাকে না -যা তাকে হচ্ছে হীন মনমানসিকতার জঞ্জাল -হিংসা-দ্বেষ-বিদ্বেষে পরিপূর্ণ । সেজন্য পরনিন্দুকরা কখনো যৌক্তিক সমালোচনা করতে জানে না; কিন্তু খারাপ উদ্দেশ্যমূলক চক্রান্তে তাদের স্থান সুউচ্চে । আমাকে সমালোচনা করা হয় কারণ আমার রস-কসের উপলব্ধিতা ভিন্ন ধরনের; কারণ আমি কখনো টাকাকে মুখ্য মনে করিনি ।
আমাকে ও পরনিন্দার কবলে বহুবার পড়তে হয়েছিল, অনেক সময় আঘাত ও পেয়েছিলাম মানুষদের মনমানসিকতাগুলো সেরকম হীন দেখে । তবে এর সমালোচনা আমি প্রকাশ্য করেছিলাম এটে লুকিয়ে রাখার ছিল না ।
আমাদের বাংলাদেশে একটা জিনিস খুব প্রবলভাবে চর্চা হয় সেটি হচ্ছে "পরনিন্দা" - অনেকক্ষেত্রে আড্ডাকে হাসিমুখর এবং প্রাণোজ্জ্বল করে তোলার জন্য ও পরনিন্দাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরা হয়ে থাকে । দুই-তিনজনের মহিলা মিললে হয়ে যায় ভালো এক আড্ডা -আর চলে রীতিমতো পরনিন্দা চর্চা । আজকাল পুরুষরা ও পিছিয়ে নেই ।
আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদরা এগিয়ে । এরা আত্ম-সমালোচনাতো দূরের কথা যৌক্তিক সমালোচনা পর্যন্ত কিভাবে করতে হয় ভুলে গেছে -বরং চলছে সমালোচনার নামে "পরনিন্দা" । এভাবে দেশের কথাতো বাদই দিতে হয় -এক ক্ষুদ্র গ্রামকে ও উন্নয়ন করা সম্ভব কিনা সন্দেহ । যেদিকে রাত কাটিয়েছি শুনেছি একে অন্যকে যা খুশি মাটির ভরাট দিচ্ছে -অনেক সমস্যা আর রীতিমতো ঢাল ছুঁড়াছুড়ি । আমাদের বাংলাদেশের মানুষের অবনতির অন্যদের মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে এটি ।
আমরা দিনদিন উগ্র হয়ে উঠছি; কারণ বেড়ে উঠার পরিবেশ আমাদেরকে তা হতে বাধ্য করছে । প্রতিবাদ করা খারাপের কিছু না কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করছি যেখানে সেখানে -লাগামহীন এবং যুক্তিবিহীনভাবে । কারণ ছাড়া একে অন্যর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছি আর ছোটদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা ও ভুলে গিয়েছি -এর প্রতিফল হিসেবে আমাদের ও ছোটদের কর্তৃক লাঞ্জনার স্বীকার হতে হচ্ছে । আমরা ভুল করার পর ও ভুলকে মানতে নারাজ -চিনতে চেষ্টা করি না । এক-দুবার করার পর কিছু একটা যেখানে শিখবো কিন্তু অভ্যসগতভাবে শিখে ফেলি ভুল কিভাবে বারবার করা যায় ।
আমাদের অভ্যসটা হচ্ছে নিজের ভাত খেয়ে পরের হয়ে বাঁচা যা পরিবর্তন করা অতীব জরুরী ।
অবশেষে - পরনিন্দা করলাম নাকি আত্ম-সমালোচনা ? ( চলবে )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।