অনেকদিন পর গতকাল একটা টক শো প্রায় সম্পূর্ণটা দেখলাম। এ টি এন নিউজ চ্যানেল এ। টক শো র বিষয়-হার্ট ডিজিস মানে হৃদরোগ নিয়ে। আলোচক ছিলেন দুজন ডাক্তার। প্রথমজন মি. জাহাংজ্ঞীর; হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, অন্যজন মি. বিমল; একজন ভারতীয় ডাক্তার।
(কেমন ডাক্তার তা জানিনা, অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ মিস করি)। উপস্থাপক মুন্নী সাহা। উপস্থাপক মুন্নী সাহা।
আলোচনার মূল বিষয় হৃদরোগ চিকিৎসায় মি. বিমল এর আমদানীকৃত একটি একটি আইডিয়া(বা তার ভাষায় নতুন ধরনের চিকিৎসা)। সে এমন একটি যুগান্তকারী, নতুন চিকিৎসার বিষয় নিয়ে আসেন যার মূলে আছে লাইফস্টাইল এর পরিবর্তন যার দ্বারা হৃদরোগ ৯৯.৯৯% নির্মূল করা।
লাইফস্টাইল এর পরিবর্তন বলতে সে বলেছেন – কম কম খাওয়া, তেল একদম না খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, হাটা, যোগব্যায়াম, ইয়োগা ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মতে হৃদরোগের প্রচলিত চিকিৎসা যেমন, বাইপাস সার্জারি + অন্যান্য চিকিৎসার (আমি মেডিকেলের স্টুডেন্ট নই) কোনো দরকার নেই। সে প্রচলিত এই চিকিৎসাকে অনেকটা সরাসরি অস্বীকার করেছেন। এগুলো মানে একটি স্বাভাবিক শরীরে কাটাকুটি করা(অপারেশন)। তার মতে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সুইডেন এর মানুষের হৃদরোগ ৫০-৬০% কমে গিয়েছে এই বিশেষ চিকিৎসা দ্বারা।
এরপর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কথা বললেন। তার কথাগুলোতে তিনি বললেন- একজন ডাক্তার এর কাজ রোগ নিরুপণ করা, এর কারণ ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে তার সমাধান করা। তিনি বলেছেন, ধমনীতে চর্বি বা কোলেষ্টেরল জমলে রক্ত চলাচল এ বাধা হয়, যার কারণে বুকে ব্যাথা সৃষ্টি হয় ও চুড়ান্ত পর্যায়ে হার্ট-এটাক বা স্ট্রোক করে; যার ফলে একজন মানুষ তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণও করতে পারেন। একজন ডাক্তার অপারেশন বা চিকিৎসা দ্বারা একে স্বাভাবিক করে তোলেন। এছাড়া রোগীকে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলার কথাও বলেন।
তিনি আরো জানান, অনেক সময় জিনগত কারণে অনেকের হৃদরোগ এর ঝুকি বাড়তে পারে। ইত্যাদি। এটাও বললেন যে, আধুনিক চিকিৎসা দেখিয়েছে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত জিবনযাপন হৃদ্রোগের ঝুকি কমায়। তার মানে এই নয় যে, বর্তমানে প্রচলিত হৃদরোগের চিকিৎসা অপ্রয়োজনীয়।
মোট কথা তিনি পুরো বিষয় টা ব্যাখ্যা করলেন।
এটাও বললেন যতই নিয়ম মানা হোক না কেন হৃদরোগ নির্মূল অসম্ভব। আর হার্ট ফেইলিওর বা স্ট্রোক করলে তার তাৎক্ষণিক যথাযথ চিকিৎসার অবশ্যই প্রয়োজন।
সমস্যা হল তিনি যতই বুঝান না কেন ওই ডাক্তারটার একই কথা। “ ‘‘লাইফস্টাইল এর পরিবর্তন। ” কেনই বা চিকিৎসার দরকার হবে।
আমরা যেই চিকিৎসার আমদানি এখানে করছি (মানে লাইফস্টাইল এর পরিবর্তন) তাতে রোগি অসুস্থ ই হবেনা। এটা কি ভাল নয়?”
এরপর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, যদি কোনো হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী বুকে ব্যাথা নিয়ে আপনার কাছে আসেন তাহলে তাকে ইমিডিয়েট কি চিকিৎসা দেবেন আর সেই চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই বা কি? উত্তরে আমদানিকারক বললেন, তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা মেডিসিন দেই। তিনি বারবার ওই একই কথা বলেন যে, আমরা রোগী বানানো তে বিশ্বাসী নই। বিশেষজ্ঞ আবার বললেন, ধমনীর এই ব্লক হয়ে যাওয়া কিভাবে সারাবেন, আপনাদের চিকিৎসা কি বলে? এরও কোনো স্পষ্ট উত্তর পাও্য়া যায়না। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হল উপস্থাপক মুন্নি সাহা একবারও ওই লোকটাকে চেপে ধরলেন না।
পুরো অনুষ্ঠান টি দেখে আমি যা বুঝলাম, একটা ভাওতাবাজীর ব্যাবসা ফেদে এদেশের সাধারণ মানুষের থেকে কিছু পয়সা রোজগারের ধান্ধায় ওইসব ডাক্তার এখানে আসছে। সস্তায় চিকিৎসা পেলে আর এমন নিশ্চয়তা পেতে অনেকেই ওদের কাছে যাবে। কারণ মানুষ চায় সুস্থতা।
আরে লাইফস্টাইলের কথা তো ডাক্তাররা আজীবনই বলে আসছেন। তো এইটারে আবার নতুন চিকিৎসা বলার কি আছে? আর প্রচলিত চিকিৎসার বিরুদ্ধে বলার ই বা কি উদ্দেশ্য? পুরোটাই ধান্দাবাজী।
অনুষ্ঠানটিকে আমার অনেকটা রাস্তার মোড়ের সর্বরোগের চিকিৎসা-র একটা বিজ্ঞাপণ বলে মনে হল। ভয়াবহ বিজ্ঞাপণ। পুরো অনুষ্ঠানটি তে যা ছিল তা হল একটা অযোগ্য ব্যাক্তির একগুয়ে সব কথাবার্তা। যে কোনো যুক্তির ধার ধারে না। এত অর্থহীণ, একগুয়ে একটা ব্যাক্তিকে টক শোতে আনার কোন কারণ ছিলনা।
কিন্তু তারপরও এ.টি.এন নিউজ তাকে এনেছে। তা কারণ হল মিডিয়ার জোচ্চুরি। বিজ্ঞাপণ। টাকা পয়সা দিয়ে যদি কোনোভাবে যদি মিডিয়া কাভারেজ যদি পাওয়া যায় তাহলেই তো ব্যাবসা। নতুন চিকিৎসার আমদানিকারক এই সুযোগটাই নিয়েছেন।
জঘন্য, নগ্ন, রুচিহীণ মিডিয়া এইসব ব্যাবসাকে উৎসাহিত করে। নিয়ম-কানুন এর যেখানে কোনো বালাই নেই। এমনকি চিকিৎসা-র মত সেন্সিটিভ ব্যাপারেও। ওদের এই বিজ্ঞাপণ দেখানোর বিষয়টা আরো পরিষ্কার হয় যখন মুন্নি সাহা অনুষ্ঠান শেষ করার সময় এটা বলে যে, ‘আমি কিন্তু এই নতুন চিকিৎসায় কনভিন্সড। প্রচলিত ডাক্তারদের কম টাকা দিয়ে এরকম চিকিৎসায় সবার ই ভাল হবে।
’
অর্থলোভী, মূনাফালোভী মিডিয়ার যেনতেন উপায়ে এই অর্থলাভের অভ্যাস কি কোনোদিন পরিবর্তণ হবে না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।