প্রবাসী
ইলেক্ট্রোডায়াগনোসিস
স্নায়ুতন্ত্র আমাদের শরীরের প্রধান নিয়ন্ত্রক। এদের মধ্যে মস্তিষ্ক এবংস্পাইনাল কর্ড মিলিয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (central nervous system CNS), এবং এর বাইরে সারা শরীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নার্ভ গুলো নিয়ে হল পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম(peripheral Nervous system)। স্নায়ুতন্ত্রের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তথ্য পৌছে যায় বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মাধ্যমে অনেকটা যেমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পৌছে যায় শহর বন্দর গ্রামে। ঠিক একই ভাবে মাংশপেশীর সংকোচন, প্রসারন ও ঘটে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহের কারনে। স্নায়ু তন্ত্রে আবার রয়েছে মোটর(Motor Nerve) এবং সেন্সরী(Sensory nerve) বিভাগ।
মোটর নার্ভের কাজ হল নড়াচড়া করানো আর সেন্সরী নার্ভের কাজ হল অনুভুতি পৌছে দেওয়া। আমার পায়ে মশা কামড় দিলে অনুভুতি সেন্সরী নার্ভ দিয়ে যখন মস্তিষ্কে পৌছল আমি তা বুঝতে পারলাম, তখন মস্তিষ্ক নির্দেশ দিল ডান হাতের মাংশপেশী গুলো কে মশা টা কে মারতে। নার্ভে তথ্য সঞ্চালন এবং মাংশপেশীর সঙ্কোচন প্রসারন , পুরোটাই ঘটলো বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মাধ্যমে,পা থেকে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে মাংশপেশীতে। অধিকাংশ নার্ভের মধ্যে রয়েছে নড়াচড়া এবং অনুভুতির ব্যবস্থা অর্থাৎ তারা হল মোটর এবং সেন্সরী অংশের মিশ্র (Mixed)নার্ভ।
এই স্নায়ুতন্ত্রে বা মাংশপেশীতে যখন তথ্য আদান প্রদানে ব্যাঘাত ঘটে তখনই ঘটে অনুভব করার বা নড়াচড়া করার অক্ষমতা।
এই ব্যাঘাতটা হতে পারে আঘাত বা অন্য কোন রোগ থেকে। সমস্যা কোথায়, কি ধরনের সমস্যা, সেন্সরী না মোটর নার্ভ, নাকি মাংশ পেশী? নার্ভ এবং মাংশপেশীর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তরঙ্গের গতি প্রকৃতি নির্নয় করে এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাওয়া সম্ভব। ঠিক যেমন এক জন বিদ্যুৎ মিস্ত্রি নির্নয় করে থাকেন তারের কোথা্য কি সমস্যা ঠিক একই ভাবে নার্ভ এবং মাংশপেশীর সমস্যা নির্নয় করা হয়ে থাকে।
ইলেক্ট্রোডায়াগ্নোসিস(Electrodiagnosis):- এ গুলো হল মাংশপেশী এবং নার্ভের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রেকর্ড করে রোগ নির্নয়ের পদ্ধতি। এর মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফী, নার্ভ কনডাকসান স্টাডি( Nerve Conduction study NCS),এবং বিভিন্ন ধরনের ইভোকড পোটেন্সিয়াল স্টাডি(Evoked Potential study)।
এদের মধ্যে ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফী এবং নার্ভ কনডাকশান স্টাডি সবচে’ বেশী এবং সাধারনতঃ এক সাথে করা হয়ে থাকে।
ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফী (Electro myography,EMG)-মায়ো হল মাংশপেশী আর গ্রাফ হল রেকর্ড। মাংশপেশীর বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহের রেকর্ড হল ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাম আর যে যন্ত্র দিয়ে এই গ্রাফকে রেকর্ড করা হয় সেটা হল ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফ আর এই পদ্ধতিকে বলে ইলেক্ট্রোমায়গ্রাফী। ঐচ্ছিক মাঙ্গশপেশীর তরঙ্গ প্রবাহ বিশ্লেষন করে মাংশপেশির রোগ বা ওই নার্ভের রোগ ডায়াগনোসিস করা হয়ে থাকে। ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফীতে রোগির শরীরে ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে মাংশপেশীর বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রেকর্ড করা হয়।
দুই ধরনের ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করা হয়। চামড়ার উপরে(Surface Electrode) এবং , মাংশপেশীর মধ্যে সুচ ঢুকিয়ে। রোগ নির্নয়ের জন্য সাধারানত সূচ ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাকে বলা হয় নিডল ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফী (Needle EMG)।
নার্ভ কনডাকশান স্টাডিঃ-( NCS )এই পরীক্ষাতে নার্ভে তথ্য আদান প্রদানের সমস্যা নির্নয় করা হয়ে থাকে। নার্ভের এক প্রান্তে বৈদ্যুতিক শক প্রয়োগ করে অন্য প্রান্তে তা রেকর্ড করা হয়।
আর এর মাধ্যমে নার্ভে তথ্য সঞ্চালনের গতি প্রকৃতি নির্নয় করা হয়। গতি বেশী না কম, কোথায় বাধা পাচ্ছে সঞ্চালন, ইত্যাদি মেপে নার্ভের সমস্যা ডায়াগনোসিস করা হয়ে থাকে। এটিকে নার্ভ কন্ডাকশান ভেলোসিটি(Nerve Conduction Velocity, NCV) ও বলা হয়।
কি কি সমস্যা থাকলে ইলেক্ট্রোডায়াগ্নোসিস করা হয়ে থাকেঃ- ১)ব্যাথাঃ- ঘাড়, কোমর হাত বা পায়ের ব্যাথা,২) মাংশপেশীর দুর্বলতা ৩)মাংশপেশীর খিচুনি বা অনিচ্ছাকৃত লাফালাফি,৪) অনুভুতির সমস্যা যেমন জালাপোড়া, ঝিন ঝিন বা অবশ,৫)অল্প পরিশ্রমে মাংশপেশীর দুর্বলতা ইত্যাদি।
যে সমস্ত রোগে ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফী,নার্ভ কনডাকশান স্টাডি( EMG, NCS) করা হয়ঃ-
১) ঘাড় ও হাতের সমস্যাঃ-
• ঘাড় ব্যাথা(Neck Pain)
• কারপাল টানেল সীন্ড্রোম (Carpal Tunnel Syndrome)
• সার্ভিক্যাল রেডিকুলোপ্যাথী(Cervical radiculopathy)
• আলনার নিউরোপ্যাথী,(Ulnar neuropathy)
• রেডিয়াল নিউরোপ্যাথী,(Radial Neuropathy)
• ব্রাকিয়াল প্লেক্সাস ইঞ্জুরী বা নিউরোপ্যাথী,(Brachial plexus neuropathy,Injury)
২) কোমর ও পায়ের সমস্যাঃ-
• কোমর ব্যাথা(Back Pain)
• ডিস্ক প্রোলাপ্স ( Prolapsed Lumbar intervertebral Disc)
• পেরোনিয়াল নিউরোপাথী(Peronial Neuropathy)
• লাম্বোস্যাক্রাল প্লেক্সোপ্যাথী(lumbosacral plexopyathy)
• টারসাল টানেল সীন্ড্রোম(Tarsal Tunnel Syndrome)
৩) মাংশ পেশীর সমস্যাঃ-
• মায়োপ্যাথী(Myopathy)
• মাসকুলার ডিস্ট্রফী(Mascular Dystrophy)
• মায়োফাশাল পেইন(Myofascial Pain)
৪)নার্ভের সমস্যাঃ-
• নার্ভে আঘাত(Nerve Injury)
• নিউরোপ্যাথীঃ- ডায়াবেটিক বা পেরিফেরাল (Diabetic / Peripheral neuro pathy)
৫)নার্ভ এবং মাংশপেশীর সংযোগ স্থানের সমস্যাঃ-
• মায়াস্থেনিয়া গ্রাভিস(Myasthenia Gravis)
• ইটন লেম্বার্ট সিন্ড্রোম(Eaton Lambert Syndrome)
টেস্ট করার আগে যে গুলো দেখা উচিতঃ-
• রক্ত জমাট বাধার রোগ
• পেসমেকার
• এলার্জী
• ব্যবহৃত ঔষধ।
রোগ অনুযায়ী ৪/৫ টা মাংশপেশী বা নার্ভ পরীক্ষা করা হয়।
কারা করেনঃ- সাধারনত বিশেষজ্ঞ চিকিতসক নিউরোলজিস্ট, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ফিজিক্যাল থেরাপিস্টরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।