কি বলব
পাবনার ঈশ্বরদীর দিয়ারবাঘাইলে স্বর্ণা খাতুন নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হাত-পা ভেঙে এবং চোখ উঠিয়ে হত্যা করে লাশ একটি মেহগনি গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছিল সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল লাশ উদ্ধার করে। স্বর্ণার লাশ দেখতে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে যান এবং ধিক্কার জানান। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বর্ণার বাবা সন্ত্রাসীর নাম-ঠিকানা দিলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পুলিশ জানায়, ঈশ্বরদীর দিয়ারবাঘাইল গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে স্বর্ণা খাতুনকে (১৫) রোববার রাত ১১টার দিকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এরপর ধর্ষণ করে হাত-পা ভেঙে, চোখ উঠিয়ে তাকে হত্যা করে লাশ একটি মেহগনি গাছের ডালের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। সারারাত বাড়ির লোকজন স্বর্ণাকে খোঁজাখুঁজি করেও পায়নি। সকালে প্রতিবেশী রোজিনা স্বর্ণার ঝুলন্ত লাশ দেখে চিত্কার শুরু করেন। এ সময় ছুটে আসেন স্বর্ণার বাবা-মা।
স্বর্ণার শরীরে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
স্বর্ণার বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, তার মেয়েকে একই গ্রামের পলান শেখের ছেলে আনোয়ার বিয়ে করতে না পেরে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামিউল আলম জানান, স্বর্ণার পরিবারের কথায় মনে হয়েছে হত্যাকাণ্ডটি প্রেমঘটিত। তবে তদন্ত করে বিষয়টি পরিষ্কার বলা যাবে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
থানায় মামলা হয়েছে।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার এসএসসি পরীক্ষার্থী স্বর্ণা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সোমবার রাতে প্রধান আসামি আনোয়ারসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল তাদের পাবনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২-এর বিচারক সাইদুর রহমানের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচারের দাবিতে ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকগণ গতকাল দুই কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন করেছে।
গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর একটি প্রতিনিধিদলও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
গত সোমবার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের দিয়াড়বাঘইল গ্রামের মণ্ডলপাড়ার এসএসসি পরীক্ষার্থী স্বর্ণাকে নৃশংসভাবে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। সোমবার রাতে পুলিশ কথিত প্রেমিক ও প্রধান আসামি আনোয়ার হোসেন আনু (২২) ও তার বন্ধু তৌহিদুলকে (২৩) গ্রেফতার করেছে।
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার ঈশ্বরদীর দিয়াড়বাঘইল গ্রামে নৃশংসভাবে খুন হওয়া স্কুলছাত্রী স্বর্ণা খাতুনের বাড়িতে শিক্ষামন্ত্রী ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধিদল দুপুরে পরিদর্শন করেন।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. কুতুব উদ্দিন, ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান ও বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামসুল আলম।
প্রতিনিধিদলটি বাঘইল কেন্দ্রীয় গোরস্তানে দুপুর ১২টায় নিহত স্কুলছাত্রী স্বর্ণার নামাজে জানাজা ও দাফন কাজ শেষ করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তারা নিহত স্বর্ণার বাড়িতে যান। এ সময় স্বর্ণার বাড়িতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রতিনিধিদলটি নিহত স্বর্ণার খুনিদের সঠিক বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বর্ণার বাবা-মাকে বলেন, যেকোনো মূল্যে স্বর্ণার খুনিদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এই সময় পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী, শিক্ষকসহ শতশত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নিহত স্বর্ণার খুনিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে স্বর্ণার বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২শ’ ছাত্রছাত্রী দুপুর দুইটার দিকে মানববন্ধন করে। বাঁশেরবাদা থেকে আওতাপাড়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বন্ধু স্বর্ণার খুনিদের গ্রেফতারসহ ফাঁসির দাবিতে তারা বিভিন্ন সেম্লাগান দেয়।
বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম জানান, নিহত স্বর্ণার জন্য বিদ্যালয়ে বুধবার একদিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে শোক পতাকা উত্তোলন ও কালোব্যাজ ধারণ করা হবে। উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে বাঘইল গ্রামের একদল দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসী নিজ বাড়ি থেকে স্বর্ণাকে ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের পর নৃশংসভাবে খুন করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।