--------জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকূটি হেরি --------জাগো অগনণ ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রকূটি হেরি
কি করিয়া আরম্ভ করিব তাহা মাথায় ঢুকিতেছে না। বহুদিন সাহিত্য চক্রে যোগ দিই না। তাহার উপরে লেখায় আমার কুখ্যাতি। এদিকে লেখাও জমা দিতে হইবে শীঘ্র। কি আর করা, মনে সাহিত্যের ভাব উদয় হইয়াছে বলিয়া নয়, নিতান্তই দায়ে পড়িয়া লিখিতে বসিলাম, দু তিনখানা কলম ভাঙ্গিয়া যদি কিছু বাহির হয়।
লিখিবার বিষয় নির্ধারণ করা হইয়াছে ‘শীতকাল’। ইহা লইয়া লিখিবার তেমন কিছু পাইতেছি না। এদিকে না লিখিলেও বিপদ। ভাবিলাম, যেনতেন প্রকারে কিছু একটা লিখিয়া দিই। যা প্রথমেই মাথায় ঢুকিল তাহা হইল কবিতা।
তাও যে সে কবিতা নহে, একেবারে আধুনিক উত্তুঙ্গ কবিতা। ‘কোনও এক শীতের সকালে তোমারে দেখিয়াছি আমি গহীন নীরব অরণ্যে’, এই জাতীয় কতিপয় ছত্রও লিখিলাম। কিন্তু ওই পর্যন্তুই, কলম আর আগাইল না। ক্ষণকাল পরে ভাবিলাম গদ্য লিখিব। নতুন উদ্যমে কাগজ কলম লইয়া বসিলাম, যেন জগতের শ্রেষ্ঠ গদ্যটি এইমাত্র এইখানে প্রসূতঃ হইবে।
কিন্তু বিধি বাম। সাহিত্যে যে এখনও অ আ ক খ স্তর পার করিতে পারে নাই, তাহার হাতে গদ্য! গোবরে কষ্টেসৃষ্টে যদিও বা পদ্মফুল ফোটানো যায়, বহুক্ষণ পন্ডশ্রম করিতা এতটুকুন বুঝিলাম, গদ্য আমার জন্য নহে।
শেষবেলায়, যাহা বাকি থাকে তাহা হইল প্রবন্ধ। এই ফাঁকে একটি কথা বলিয়া রাখি, আগামী পরশুদিন আমার কলেজে সাময়িক পরীক্ষা আরম্ভ হইবে। বছরব্যাপিয়া বাউন্ডুলেপনা করিয়া বেড়াইয়াছি, এইবার মনা পড়িয়াছে ফান্দে।
মাতামহোদয় অবশ্য আমার ওপর বড়ই প্রীত। তিনি ভাবিতেছেন, তাহার বাউন্ডুলে ছেলেটি বুঝি এইবার পরীক্ষার জন্য হইলেও বশ মানিল। কিছুক্ষণ পরপরই তিনি দুধ, চানাচুর ইত্যাদি টেবিলে রাখিয়া যাইতেছে। যদিবা ঘুণাক্ষরেও তিনি টের পাইতেন তাহার গুণধর ছেলেটি খাতায় মুখ গুঁজিয়া পড়াশুনার নাম করিয়া কী কুকীর্তি করিয়া চলিতেছে, তাহা হইলে বোধকরি তিনি মনে দুঃখে বাড়ি ছাড়িতেন।
যাহা হউক, ইত্যবস্যরে ‘শীত’ নামক প্রবন্ধ লইয়া কিছুদূর আগানো গেল।
প্রবন্ধের রূপ দেখিয়া আমি নিজেই মুগ্ধ। মনে ফুর্তি, বুঝিবা অদূর ভবিষ্যতে রবীন্দ্র-নজরুলের যুগ শেষ হইল বলিয়া! দ্বিগুণ উৎসাহে লিখিতে থাকিলাম। যখন প্রায় শেষ করিয়া আনিয়াছি, এমন মুহূর্তে ঘটিল সেই ঘটনা। ইহার জন্য আমি নিয়তিকেই দায়ী করিব, নতুবা কেনই বা তখন আমি প্রবন্ধখানা জোরে জোরে পড়িতেছিলাম, আর কেনই বা ঠিক তখনই পিতৃমহোদয় ঘরে ঢুকিলেন। আর পিতৃমহোদয়, উহার কথা আর নাই বা বলিলাম, যিনি সাহিত্যকে বলেন ছাগলের খাদ্য, তাহার সামনে প্রবন্ধ পাঠ! পৃষ্ঠদেশে বেত্রাঘাতের দাগ আর ব্যাথা লইয়া সেই রাতে আমি দুই চোখ এক করিতে পারি নাই।
পরের দিন সকাল হইতে বাড়ির সদস্যদের সাহিত্যকর্ম লইয়া টিপ্পনি, বেত্রাঘাত লইয়া অবিরাম হাসাহাসি চলিতেছিল। ঘরের এক কোণে মুখ চুন করিয়া বসিয়া থাকা ছাড়া আমার আর কোন গত্যন্তর ছিল না। অবশেষে আমিও ‘নিকুচি করি সাহিত্যের’ বলিয়া দরজা বন্ধ করিয়া পদার্থবিজ্ঞান পড়িতে বসিলাম। ফলে, অকালমৃত্যু ঘটিল এক উদীয়মান জ্যোতিষ্কের, বিশ্ব হারাইল এক অমূল্য রত্ন।
আর আমি হারাইলাম? থাক, তাহা আর নাই বা বলিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।