একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাকে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। বাকি ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সেগুলো থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬, ১৯ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ দেয়া হয়েছে। অন্য ছয়টি অভিযোগে আলাদা করে কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। অন্যদিকে ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সাঈদীকে সেই সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর পরই এ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এই রায় ‘ঐতিহাসিক’।
অন্যায় করে যে পার পায় না এ রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো। এ রায়ের মাধ্যমে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কষ্ট দেশ কিছুটা হলেও ভুলতে পারবে, ৩০ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দ-াদেশের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে।
এদিকে সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আপীল করব। কারণ উনি (সাঈদী) নির্দোষ। উনার বেকসুর খালাস পাওয়ার কথা ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে মিথ্যা সাক্ষী উপস্থাপন করে এই রায় পেয়েছে। রায় ঘোষণার উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
প্রধান গেট ছাড়ায় মূল ভবনের তিন বার চেকিং করে সাংবাদিক আইনজীবী ও পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ॥ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে সাংবাদিক, আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সকাল ১১টা ১০ মিনিটের সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে এজলাস কক্ষে আনা হয়। ১১টা ১১ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার জন্য চেয়ারম্যানসহ অন্য দু’বিচারপতি আসন গ্রহণ করেন। শুরুতেই চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, এটি ১২০ পৃষ্ঠার রায়।
তবে আমরা রায়ের ৫৬ পৃষ্ঠার সারাংশ পড়ব।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, ‘আমরা রায়ের আগে দুটি কথা বলতে চাই। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিচয় দেয়ার কোন দরকার নেই। ওনার ওয়াজ শোনার জন্য হাজার মানুষ যান। ওনার বর্তমান নাম আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
উনি শুধু প্রখ্যাত মাওলানা নন, উনি দুবারের এমপি। জামায়াতের নায়েবে আমির। কিন্তু আমরা তাঁকে নায়েবে আমির কিংবা সাংসদ হিসেবে বিচার করছি না। আমরা আজ থেকে ৪২ বছর পূর্বে সংঘটিত অপরাধের বিচার করছি। ওই সময় সাঈদী ছিলেন ৩০ বছরের যুবক।
তিনি ছিলেন বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। পিরোজপুরে সাউদখালীতে বাড়ি। তখন তিনি কোন ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আলেম পাস।
উর্দুতে ভাল কথা বলতে পারতেন। তাই পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে তাঁর ভাল যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাদের বিচার করতে হবে, তিনি সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না। আমরা সেই ৩০ বছরের যুবকের বিচার করছি। বর্তমানের সাঈদীর বিচার করছি না, যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে গ্রামের নিরীহ লোক ও সাধারণ মানুষ।
তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৭ জন।
রায় পড়া শুরু ॥ সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের ৫৬ পৃষ্ঠার সারাংশ পড়া শুরু হয় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে। পিনপতন নীরবতার মধ্যে বিচারপতি আনোয়ারুল হক প্রথমে রায় পড়া শুরু করেন। এর পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সর্বশেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে শুরু করেন।
শেষ করেন ১টা ৪৫ মিনিটে। সর্বশেষে পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান সাজা ঘোষণা করেন। ৮ ও ১০ এই দুটি চার্জে সাঈদীকে ফাঁসি দেয়া হয়।
চার্জ দুটিতে কী আছে ॥ মামলার রায়ে ৮ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ মে বেলা ৩টায় সাঈদীর নেতৃত্বে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়তায় সদর থানার চিতলিয়া গ্রামের মানিক পসারীর বাড়িতে হানা দিয়ে তার ভাই মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহিমসহ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচটি বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
সেনা ক্যাম্পে ফেরার পথে সাঈদীর প্ররোচনায় ইব্রাহিমকে হত্যা করে লাশ ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়া হয়। মফিজকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
পরে সাঈদী ও অন্যদের আগুনে পারেরহাট বন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় সাঈদী সরাসরি অপহরণ, খুন, যন্ত্রণাদানের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(২)(এ) ধারা অনুসারে অপরাধ।
অভিযোগ-১০-এ বলা হয়েছে, ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এসব বাড়ির মালিক হলেন, চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল ম-ল, বিসা বালি, সুকাবালি, সতিশ বালা প্রমুখ। সাঈদীর ইন্ধনে তার সহযোগীরা বিসা বালিকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। বেসামরিক মানুষের বসবাসের বাড়িতে আগুন দেয়া নিপীড়নের শামিল। সাঈদী এ ঘটনায় বাড়িঘর পোড়ানো, বিসা বালিকে হত্যার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, যা আইনের ৩(২)(এ) ধারায় অপরাধ।
অন্য ৬টিও প্রমাণিত ॥ এ দুটি বাদে আরও ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
সেই চার্জগুলো হচ্ছে, ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগ। চেয়ারম্যান রায়ে বলেন, ২টি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় এসব অপরাধে নতুন সাজা দেয়ার প্রয়োজন নেই।
কী আছে ঐ অভিযোগে ॥ অভিযোগ-৬-এ বলা হয়েছে, ৭ মে সাঈদীর নেতৃত্বে একদল শান্তি কমিটির সদস্য পিরোজপুর সদরের পারেরহাটে গিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের ওই এলাকায় স্বাগত জানান। মুকুন্দ লাল সাহার দোকান থেকে বাইশ সের স্বর্ণ ও রৌপ্য লুট করেন সাঈদী।
অভিযোগ-৭-এ বলা হয়, সাঈদী তার সশস্ত্র সাঙ্গোপাঙ্গ ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সদর থানার ভাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে হানা দেন।
পরে তিনি তাঁকে আটক করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন, যারা তাঁকে নির্যাতন করে।
অভিযোগ-১১ ॥ সাঈদীর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ইন্দুরকানি থানার টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে পাকিস্তানী সেনাদের নিয়ে যান। সেখানে সাঈদী তার বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করেন।
অভিযোগ-১৪ ॥ মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় যায়। মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী ঘর থেকে বের হতে পারেননি।
তখন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তাঁকে ধর্ষণ করে।
অভিযোগ-১৬ ॥ সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের রাজাকার দল পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোন মহামায়া, অন্ন রানী ও কমলা রানীকে ধরে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
অভিযোগ-১৯ ॥ সাঈদী প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে রূপান্তর করে তাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হতো।
যেগুলো প্রমাণিত হয়নি ॥ ১২টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে সেই সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়।
অভিযোগগুলো হলো, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ১৯।
প্রথম মামলা॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রথম মামলা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাসল গঠন করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন তাঁকে ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে বিচার কাজ।
অবশেষে ২০১৩ সালের ২৯ জুন উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ (সিএভিতে) রাখেন। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষনা করে।
তৃতীয় রায় ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ ৯টি মামলার মধ্যে এটি তৃতীয় রায়।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদকে মৃত্যুদ- ও কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেন। এখন আরও ৬টি মামলা বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। মামলাগুলো হলো জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আব্দুল আলীম।
আমি সন্তুষ্ট ॥ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার প্রসিকিউশনপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন আমরা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগ প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছি।
আদালত পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যালোচনা করে এ রায় দিয়েছে। আমরা আটটি অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের ধারণা ছিল, ১৯টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে। তারপরও এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় ঘোষণার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম, প্রধান সমন্বয়ক (এ্যার্টনি জেনারেল পদমর্যাদায়) এম কে রহমান, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মমতাজ উদ্দিন ফকির, চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, প্রসিকিউটর হায়দার আলী, প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম, প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর নুর জাহান মুক্তা, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আনোয়ার হোসেনসহ সিনিয়র আইনজীবিগণ। ডিফেন্স পক্ষের সিনিয়র কোন আইনজীবী এজলাস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। তবে জুনিয়র আইনজীবী সাজ্জাদ আলী চৌধুরীসহ চার জুনিয়র ডিফেন্স আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এ্যাম্বুলেন্সে সাঈদী ॥ কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ঢকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। আগে দুটি ও পিছনে একটি পুলিশ ভ্যান পাহারা দিয়ে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।
জামায়াতে ইসলামী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকায় ট্রাইব্যুনালে আরও বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়।
চুপ চুপ তুই রাজাকার ॥ রায় ঘোষণার পর ডকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দাঁড়িয়ে যান এবং বলতে থাকেন, ‘আপনারা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে রায় দেননি। আপনারা শাহবাগের কিছুসংখ্যক নাস্তিক ও ব্লগারদের...’ এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত অনেকে ‘রাজাকার, রাজাকার, চুপ কর’ বলে তীব্র ধিক্কার দিতে থাকেন। পরে পুলিশ তাঁকে ডক থেকে নামিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যায়।
প্রমাণ করতে হবে ॥ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। বাকি ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়াত সেগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেয়া হয়েছে। দুটিতে ফাঁসি দেয়া হলেও অন্যগুলোতে কোন সাজা দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় আসামিপক্ষ আপীল করলে যদি ২টি অভিযোগ থেকে খালাস পান সে ক্ষেত্রে তিনি কি মুক্ত হবেন।
এ প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যেহেতু ২টিতে মৃত্যুদ- দিয়েছেন, অন্য ৬টিতে দোষী সাব্যস্ত হলেও কোন সাজা দেয়া হয়নি।
সাঈদীকে মুক্ত হতে হলে ৮টি অভিযোগ থেকেই মুক্ত হতে হবে। যেহেতু ২টিতে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। সে কারণে অন্যগুলোতে কোন সাজা দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে প্রধান সমন্বয়কারী এমকে রহমান বলেছেন, ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ২টিতে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।
ধরে নেয়া যায় অন্য ৬টিতেও মৃত্যুদ- সমান অপরাধ। এগুলো সুপ্রীমকোর্ট ঠিক করবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।