একটা গাড়ী খুজছি , ব্যাক টু দ্য ফিউচারে যাওয়ার গাড়ীটা খুজছি / তথ্যের অংক , যুক্তির জ্যামিতি
ব্লগে ফেসবুকে অনেকে বলছেন আর্মি আসছে।
মানুষ যা দেখে তার পেছনেও দেখা যায়।
আমি সেটাই দেখার চেষ্টা করি বরাবর।
সেটা করতে গিয়ে আমার আশেপাশের স্বদেশীরা যা করেন তাতে উৎসাহি হইনা।
নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নেই।
এতে অনেকে আমাকে স্বার্থপর , সুবিধাবাদি ভাবেন।
কথা মিথ্যা নয়।
আমি সেই রকম ই , আমার প্রোফাইল ট্যাগেই সেই ডিসক্লেইমার দেয়া আছে।
তো যা বলছিলাম - এখন সবাই বলছেন আর্মি আসবে।
এটাই এখন সবার চোখের সামনের পর্দা।
আমি এই পর্দার পেছনেও কিছু দেখতে পাই।
আমার ইউনিভার্সিটির একটা শিখ ছেলে , সার নাম সিং , জন্ম ৮৯ তে।
এই ছেলে ভারতের রাজনীতি নিয়ে যখনই কথা বলে তখনি খুব হিংস্র চেহারা নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে ওঠে-
"গান্ধি পরিবার কোনদিন এদেশে প্রধানমন্ত্রি হতে পারবেনা"
আমি জিজ্ঞেস করলাম - কেন ?
ওর উত্তর - "হলেই আমরা মেরে ফেলবো"
ওর কথার সাথে মনমোহন সিং কে প্রধানমন্ত্রি বানানোর একটা কানেকশন খুজে পেলাম।
ইন্দিরা গান্ধিকে নির্মম ভাবে মারার পরও স্বর্নমন্দিরের ঘটনার সেই প্রতিশোধের আগুন নিভে যায়নি।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ওদের রক্তের ভেতরে সেই প্রতিশোধ জমে আছে।
সম্ভবত রাহুল গান্ধিও ভবিষ্যতে কংগ্রেস প্রধান হলেও সরকার প্রধান হবেন না মা কে অনুসরন করে।
এই ছোট্ট ঘটনাটা তুলে আনলাম এ কারনে যে - অনেকে বলে থাকেন জামাত হলো ইহুদিদের বাংলাদেশী ভার্সন।
আমি দ্বিমত করলাম।
জামাত হলো ভারতের শিখদের বাংলাদেশী ভার্সন।
সাঈদী এক্সিকিউটেড হলে শেখ পরিবার বাকি জীবনের জন্য জেনারেশন আফটার জেনারেশন জামাতের হিটলিস্টে যাবে।
প্রয়োজনে ওরা ওপেন পলিটিক্স থেকে আন্ডার গ্রাউন্ড পলিটিক্সে যাবে।
তাও শেখ পরিবারের উপর ওদের প্রতিশোধ স্পৃহা প্রজন্মের পর প্রজন্ম রক্তের ভেতরে জমে থাকবে।
এবার রায় প্রসংগে -
বিচারপতি নাসিমের সাথে আইনজীবি জিয়াউদ্দিনের স্কাইপি চ্যাট যখন ফাঁস হয় তখন সেখানে অনেক গুলো বাক্যের মধ্যে একটা বাক্যই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন ছিলো।
এবং আমি ফেসবুকে হিয়ার গোজ দা ভারডিক্ট নামে যে স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম মৃত্যুদন্ড অনুমান করে সেটার কারনও ছিলও ঐ বাক্যটি।
অন্যদিকে বিচারপতি ফজলে কবীর তার প্যানেল নিয়ে যে রায়টি দিয়েছেন সেটি একদম উল্টো হয়েছে যেটা হওয়া উচিত ছিলো।
তাদের মত উল্টো করে রায়টি দেবার সাহস হয়নি বলেই বোধহয় বিচারপতি নাসিম সাহেব কৌশলে পালিয়েছেন।
যাইহোক- স্কাইপি চ্যাটে নাসিম সাহেব জিয়াউদ্দিনকে যেটি বলেছেন :
"সাইদির মামলাটা হইলো আমগো দেশী দরবারের মত"
কথাটা বলার কারন -
সাইদির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো আনা হয়েছে সেগুলোর সবগুলোই সত্য ঘটনা এবং প্রত্যেকটা ঘটনার সংগে দেলোয়ার শিকদার নামে একজন ওয়ার ক্রিমিনাল জড়িত ছিলো।
অপরাধ গুলো আসলেই ঘটেছিলো কিনা এবং ঘটে থাকলে দেলু শিকদার সেটার সংগে জড়িত ছিলো কিনা - এগুলোর কিছুই এই মামলার ফোকাস ছিলোনা।
এই মামলার ফোকাস ছিলো -
আজকের দেলোয়ার সাঈদীই ৭১'র দেলু শিকদার কিনা।
যদি হয় "হ্যা" তাহলে নিশ্চিত মৃত্যুদন্ড
যদি নয় "না" তাহলে সম্পুর্ন নির্দোষ অবস্থায় খালাস।
কাদের মোল্লার মত মাঝামাঝি কিছু হবেনা লঘু শাস্তির মত।
এই ধরনের যুক্তি দেখানোর কোন সুযোগ নেই যে তাকে অমুক স্থানে রাইফেল হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছে , কিন্তু খুন করতে দেখেনি।
সুতরাং সাঈদীর মামলার রায়ের প্যাটার্ন হওয়া উচিত ছিলো -
১৯৭১ সালে অভিযোগ ক , খ , গ , ঘ বিবৃত যুদ্ধাপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে ঘটেছিলো এবং সন্দেহাতীত ভাবে এরসংগে দেলু শিকদার যুক্ত ছিলো।
আমাদের রায়ে বিবেচ্য বিষয় ছিলো - এই দেলোয়ার সাঈদীই ১৯৭১'র দেলু শিকদার কিনা।
যথেষ্ট স্বাক্ষ্য-প্রমান সাপেক্ষে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে যে এই সাঈদীই সেদিনের সেই দেলু শিকদার।
এর ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধের দায় সন্দেহাতীতভাবে তার উপর বর্তায়।
সুতরাং - অমুক অপরাধের জন্য এই ধারায় মৃত্যুদন্ড ধার্য করা হলো এবং সেটি ফাঁসির মাধ্যমে কার্যকর করা হবে।
কিন্তু বিচারপতি ফজলে কবীরের বেন্চ্ঞ পুরোই উল্টোটা করলেন রায়ে যেটা হওয়ার কথা ছিলোনা।
বিচারপতি ফজলে কবীর সুচনা মন্তব্যে / অভিমতে বললেন - এই সাঈদীই সেই দেলু শিকদার।
সেকারনেই ইমিডিয়েটলী ফেসবুকে বলতে পেরেছিলাম - হিয়ার গোজ দা ভারডিক্ট যদিও তখনো রায়ের ১ম অংশও পড়া শুরু হয়নি।
বিচারপতি বলতে চেয়েছেন - এই সাঈদীই সেই দেলু শিকদার , তারা বিবেচনা করেছেন দেলু শিকদার উত্থাপিত অভিযোগ বিবৃত অপরাধগুলো করেছে কিনা।
কিন্তু সাড়ে ৩ বছর কিন্তু সাঈদির মামলাটি সেই রাস্তায় চলেনি।
মামলাটি চলেছে এইভাবে - দেলু শিকদার বিয়ন্ড ডাউট ওয়ার ক্রিমিনাল , এই সাঈদিই সেদিনের দেলু শিকদার কিনা।
এরকম ধাপ্পা দিলেন কেন সেটা বুঝতে পারি কাদের মোল্লার রায় থেকে।
কাদের মোল্লার রায়ে বিচারকরা মুখে বলেছেন অভিযোগ প্রমানিত , বিস্তারিত রায়ে বলেছেন অভিযোগ ভালোমত প্রমান হয়নি ।
মাঝখান দিয়ে পাবলিক খেপেছে - অভিযোগ প্রমান হলে শাস্তি লঘু কেন ?
এবার যেহেতু ফাঁসি দিতেই হবে সেহেতু রায়টা ইচ্ছা করেই উল্টো করে পড়তে হবে।
নইলে দেলু শিকদার আর দেলোয়ার সাঈদী এক ব্যক্তি - এর ভিত্তিতে রায় দিতে গেলে রায়ের জোর কমে যাবে।
আপিলে প্রসিকিউশন হেরে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
এর জের ধরে কি ঘটতে পারে :
আমার ধারনা ছিলো ২০১৩ পরবর্তী সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা উন্নতি ঘটবে।
অন্তত সরাসরি খুনাখুনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মত কিছু ঘটবে না।
যা ঘটবে আইন আদালতের মাধ্যমে।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পানি নয় , রক্ত গড়াবে অনেকদুর।
সাঈদীর মামলার রায়টা একটা প্যান্ডোরার বাক্সের মত বিষয় ছিলো।
এর কারন - জামাতের অন্য রাজাকার নেতাদের ৭১ 'র ভূমিকা সম্পর্কে শিবির চুপ থাকে , গালি হজম করে।
কিন্তু সাঈদীকে তারা সম্পুর্ন নির্দোষ বলে বিশ্বাস করে।
এটার একটা কারন ১৯৭১ সাঈদির রাজনীতির রেকর্ড না থাকা।
বিচারপতি ফজলে কবীরও সেটাই বলেছেন- সাঈদী মাদ্রাসার ছাত্র বিধায় আরবী - উর্দু ভালো পারতো , সেকারনে পাকিস্তান আর্মির সাথে কোলাবোরেট করেছিলো। কোন রাজনৈতিক চ্যানেলে সে রিক্রুট হয়নি পিস কমিটিতে।
সেকারনে সাঈদীর এক্সিকিউশন তাদের কাছে জুডিশিয়াল মার্ডার।
মার্ডার মানে - খুন , হত্যা , পেনাল্টি নয়।
এর জের ধরে যেটা ঘটতে পারে -
তারা হিট লিস্ট করবে।
এই হিট লিস্টে যারা সম্ভাব্য থাকতে পারে :
[১] আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের নেতা
[২] মিডিয়া - প্রথম আলো , সমকাল , কালের কন্ঠ , সবগুলো আওয়ামী টিভি চ্যানেল
[৩] অনলাইনে যারা জামাত শিবির বিরোধিতা নিয়ে সবচেয়ে বেশী ভোকাল ছিলেন এবং শাহবাগ আন্দোলনের অর্গানাইজাররা।
[৪] জামাত শিবির বিরোধী বুদ্ধিজীবিরা
[৫] বিচারক , ইনভেস্টিগেশন এবং প্রসিকিউশন প্যানেল
যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে ২০১৩ 'র পর তাহলে ওপেন পলিটিক্সে থেকেই তারা হিট লিস্ট অ্যাকটিভেট করবে।
যদি আওয়ামী লীগ আবার জোর জবর দস্তি করে ক্ষমতায় আসে তাহলে ওরা আন্ডার গ্রাউন্ড পলিটিক্সে চলে যাবে , সেখান থেকে হিট করবে।
আওয়ামী লীগ এবং ওদের ইন্টেলেকচুয়াল এনিমি অ্যানিহিলেট না করা পর্যন্ত ওরা ওপেন পলিটিক্সে আসবে না।
জিজ্ঞেস করতে পারেন - ওরা যে হিট যে করবেই সেটা কিভাবে বলতে পারেন....
গত ৪ বছরে জামাত শিবির তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে।
নিহতের সংখ্যা ২০০+ হতে পারে।
আহত বেশুমার।
অনলাইনে এরা সারাক্ষন গালাগালি শুনেছে , নিজেরে বাবা-মাকে গালাগালি শুনিয়ে বেহায়ার মত তাদের প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে।
এ সবের একটাই কারন - সাঈদীর মামলার রায় মূলত।
অন্যগুলোর ব্যাপারে ওরা যাবজ্জীবন মেনে নিবে কমপক্ষে।
যখন দেখবে ওদের সব মার খাওয়া ব্যর্থ , ওদের রিভেন্জ্ঞ ইনস্টিংক্ট কে চ্যালেন্জ্ঞ করার মত সাহসের রাজা গ্ল্যাডিয়েটর কিংবা শক্তির রাজা হারকিউলিস আমি নই।
গত আমলের চাল অনুযায়ি নিখুতভাবে এদের লোক বসে আছে সব জায়গায় - আর্মি- বিজিবি-পুলিশ- প্রশাসন ।
যারা অনলাইনে এইসব ব্যাপারে হ্যাডম দেখিয়ে বেড়ান এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
মিলিয়ে দেখুন......
মুজিব যেদিন মারা যায় সেদিন কয়জন আওয়ামী লীগার- ছাত্রলীগার পুলিশের গুলি খেয়ে মরে ছিলো ?
জিয়া যেদিন মারা যায় সেদিন কয়জন বিএনপিওয়ালা- ছাত্রদলের ছেলে পুলিশের গুলি খেয়ে মরে ছিলো ?
সাঈদী এখনো এক্সিকিউটেড হয়নি , এখনো আপিল বাকী আছে , বিচারকরা রায় দিয়েছেন উলটা করে যেটা আপিলে খুব শক্তিশালীভাবে ডিফেন্স ধরে বসবে......
এর ভেতরে ৭০ জনের বেশী মারা গিয়েছে একদিনে।
ভারতের শিখদের বাংলাদেশী ভার্সন জামাত শিবির এর শোধ নেবেই...
এই জেনারেশন না পারলে অতি সম্ভবত পরের জেনারেশন নেবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।