Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর নির্দেশের পরও বেড়েই চলছে বাজারদর
সর্বশেষ বাজার ও দ্রব্যমূল্য বিষয়ক এক সভায় বাজারের সিন্ডিকেট ও অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
গণতন্ত্র ধ্বংস ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করার অপচেষ্টায় কেউ যাতে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে এবং রমজান মাস সামনে রেখে অসাধু সিন্ডিকেট যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে না পারে সে জন্য মাঠ প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে, সে জন্য জেলাপর্যায়ে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। '
দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মহাজোট সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র ধ্বংস ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করার অপচেষ্টায় কেউ যাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের সজাগ থাকতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ’
বাজার ব্যবস্থাপনায় নাখোশ হয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরোধে সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ৫ জন চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিযোগিতা বাড়ানো।
বাজার ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি লুৎফুল হাই সাচ্চু বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি সফল হতে পারছে না বলে জানিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা নেই এটা দাবি করলে তা মিথ্যা বলা হবে। আমাদের এখনও অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক ঘোষণা দিয়েছিলেন , কারওয়ান বাজার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে রাজধানীর চারপাশে চারটি বহুতল পাইকারি মার্কেট নির্মাণের ।
কিন্তু এইসব আদেশ- নির্দেশ এবং প্রতিশ্র“তির কোনটিরই সফল বাস্তবায়ন আজও দেখতে পায়নি দেশবাসী।
নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রহসন
নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও সরকারের বেধে দেয়া দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না তেল, চিনি, আটাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। পাইকারি বাজারে এসব পন্যের দাম বেশি সেই পুরনো অজুহাত খুচরা ব্যবসায়ীদের। এছাড়া অনেক বাজারে সরকারি মূল্যতালিকাটিও খুলে ফেলছেন। প্রসাশনের নাকের ডগায় খোদ রাজধানীর মালিবাগ বাজারে ঘটেছে এই ঘটনা! শীতকালীন সবজির বাজারে আগমনে সবজির বাজার নিম্নমুখী হলেও দাম বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যের।
এতে বাজারে এসে হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ ক্রেতারা বলেছেন, যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরেও বিক্রেতারা বেশি দাম নিচ্ছেন।
বস্তুত, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে বিশৃঙ্খলা অনেক পুরোনো সমস্যা। সরকার এই বিশৃঙ্খলা দূর করার ক্ষেত্রে খুব কম সময়ই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
এর ফলে সাধারণ মানুষকে বারবার ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সরকার একদিকে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য ধান-চালের দর কিছুটা উঁচু রাখতে চায়, অন্যদিকে দেশের মানুষকে কম মূল্যে চাল খাওয়াতে চায়। এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করা যথেষ্ট দুরূহ কাজ। বর্তমান সরকার শুরু থেকেই কৃষি খাতে ভর্তুকি ও সমর্থন বাড়িয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কৃষকেরা কতটা ন্যায্য দাম পেয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আর তাই কৃষি নিয়ে সরকারের যাবতীয় প্রয়াসের সুফল জনগণ কতটা ও কত দিন পাবে, তাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সুতরাং, বাজারশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের আরও কাজ যে বাকি আছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আন্তর্জাতিক বাজার ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট
আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যপণ্য যথাক্রমে চাল, গম ও ভুট্টার দাম বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ববাজারে গত ১০ বছরে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে এবং আগামী ১০ বছরে তা আরও ৫০ শতাংশ বাড়বে বলেবিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রধান কারণটি যে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, তা নিয়ে বিতর্ক নেই।
কারণ, বিশ্বে দিন দিন একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে আবাসন ও শিল্পায়নসহ কতগুলো বৈশ্বিক কারণে ফসলি জমির পরিমাণ কমছে। এর ওপর জমির উর্বরতা শক্তি কমায় উৎপাদনের হারও হ্রাস পাচ্ছে ক্রমাগত। সেই সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন ও সেচ-সুবিধার অভাবেও বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
বর্তমানে বাজারে যে চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭-৪২ টাকায়, তা ঠিক দুই বছর আগে এই সময়ে ছিল ২১-২৫ টাকা। অর্থাৎ, দুই বছরে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৭ টাকা।
তবে চিকন চালের দাম কেজিপ্রতি আরও বেশি বেড়েছে। এক বছর আগে নাজিরশাইল ছাড়া অন্যান্য চিকন চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৪ থেকে ২৫ টাকা। অথচ এখন (নাজিরশাইল ছাড়া) সবচেয়ে কম দামের চিকন চালের দামও ৩৮-৪৩ টাকা। বাংলাদেশের বাজারে সরকারি হিসাবে গত এক বছরে দর বাড়ার হার প্রায় ৫০ শতাংশ। স্বাধীনতার পর এই হার সবচাইতে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাজারের খাদ্য মূল্যের সঙ্গে আমাদের ওতপ্রোত সম্পর্ক। কয়েক বছর ধরে বিশ্ব বাজারে চালসহ বিভিন্ন খাদ্য মূল্য ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারই ফলশ্র“তিতে আমাদের দেশেও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এবার খরায় কানাডা ও রাশিয়ায় গমের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য মূল্য আরো একধাপ বাড়তে পারে। বিষয়টি আগাম ভেবে দেশের বর্তমান ফসলের দিকে সরকারের নজর দেয়া দরকার বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন।
কৃষি অর্থনীতিবীদরা মনে করেন, খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে হলে সবার আগে জনসংখ্যার রাশ টেনে ধরতে হবে। একইসাথে বাড়াতে হবে ক্রয়ক্ষমতার পরিধি বৃদ্ধি করা। প্রতি বছর ২০ লক্ষ নতুন মুখ মোট জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে। ইদানীং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের গতি শ্লথ হয়ে গেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে কোনো উপায়েই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।