আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাজার : বল্গাহীন ঘোড়া - ২

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
বাজার পরিস্থিতি ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সাধারণ মানুষকে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয়ের প্রথমটিই ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। এতে বলা হয় ‘দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময় মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মজুদদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ব্যবস্থা সম্পর্কে ইশতেহারের ১.১ অনুচ্ছেদে আরো বলা হয়েছে, ‘ সময়মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে। ’ ক্ষমতায় আসার পর সরকার দুই বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য রয়ে গেছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই।

সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের অনেক আশা দেখিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী একটা সময় বেশ সরগরম ছিলেন গণমাধ্যমে। সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নিজেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বার বার বৈঠক করেছেন। তাতে কোনো লাভ হয়নি। বাজারকে তিনি সিন্ডিকেট মুক্ত করতে পারেননি।

তার বক্তব্যের পর বহুবার বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। খাদ্যমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পরিবহন চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছেন। এখন পর্যন্ত এটা নিরসনেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম গত ১১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে ভোজ্যতেল ও চিনি ব্যবসায়ীরা দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, ওই বৈঠকের আগেই বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।

এরপরও দফায় দফায় বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশের তেলের প্রায় সবই আসে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। এর মধ্যে নূরজাহান গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, এসএ গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, এমইবি গ্রুপ ও সিটি গ্রুপ ৯৭ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে। বাকি তিন শতাংশ আমদানি করে ছোট ১৭টি বেসরকারি কোম্পানি। আমদানি করা সিংহভাগ তেলের নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি কয়েকটি বড় কোম্পানির হাতে থাকায় সিন্ডিকেট করা সহজ হয়।

এর ফলে সরকারের পক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে হলে আগে কমপক্ষে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণকে জানাতে হবে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ওজন ও পরিমাপ (পণ্যসামগ্রী মোড়কজাতকরণ) বিধিমালার ২০(৪) ধারায় বলা হয়েছে, মোড়কজাত বা বোতলজাত পণ্যের দাম বাড়াতে হলে উৎপাদনকারী বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানকে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোক্তাকে অবহিত করতে হবে, যার একটি হবে বহুল পঠিত পত্রিকা। এছাড়া মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক বা তার প্রতিনিধিকে এ ব্যাপারে নোটিশ দিতে হবে। এ দুটি প্রক্রিয়ার পরই কেবল পণ্যের দাম বাড়ানো যাবে।

চার বছর আগের সঙ্গে তুলনা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ও সরকারি হিসাব অনুযায়ী চাল, ডাল আটাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম গত চার বছর আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি। সেনাসমর্থিত জরুরি আইনের ফখরুদ্দীন সরকারের সময় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছিল। কমতে শুরু করেছিল আবার জরুরি সরকারের আমলেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধানের বাম্পার ফলন ও আন্তর্জাতিক বাজারে অনুকূল পরিস্থিতি থাকায় চালের দাম কিছুটা কমেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে ভোজ্যতলের দামও কিছুটা কমেছিল জরুরি সরকারের আমল থেকে।

ভোজ্যতেল , আলু ও ডালের দাম ইতোমধ্যে বিগত সব সময়ের চেয়ে বেড়েছে। বাড়ছে প্রতিদিন। চার বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল ১৭ টাকা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকায়, নাজির/মিনিকেট ছিল ২৪ টাকা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০-৪২ টাকায়, খোলা সয়াবিন তেল ৪৮ থেকে ৯৬ টাকায়, খোলা পাম অয়েল ৩৯ থেকে ৮৬ টাকায়, আটা ১৬ টাকা থেকে ৩৩ টাকা , মসুর ডাল ৪৫ থেকে ১০০ টাকায় এবং চিনি ৩৭ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকায়। সেনা সমর্থিত জরুরি শাসনকালে দ্রব্যমূল্য ছিল মানুষের নাগালের বাইরে। সে সময়ই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল বাজারমুখী হতে।

তবে বর্তমানে বেশিরভাগ পণ্যের দাম সেই সীমাকেও অতিক্রম করেছে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.