Let the wind blow out the candles
১
দিনকাল ভালই যাচ্ছিল তামিমের, কিন্তু হঠাৎ করেই বাসায় উপদ্রব শুরু হয়ে গেল। ঠিক যে ভয়টাই সে করে আসছিল এতদিন।
অবশ্য এটা নতুন কিছু না, বাড়ির মানুষগুলা যেন তামিমের একটু শান্তি দেখতে পারবে না। যখনই বেশ উৎসাহ-টুৎসাহ নিয়ে কোন একটা কাজ শুরু করে সে, তখন-ই তার মা একটা না একটা ঝামেলা বের করবেই। যেমন ধরা যাক সে যখন ছোটবেলায় হঠাৎ করে "কবিতা" লেখা শুরু করল।
ছন্দটন্দ মিলতো না, তবে তামিমের মতে সেগুলা বেশ উচ্চমার্গীয় ছিল - তামিমের মা তার কবিতার খাতা পাওয়া মাত্রই বিশাল হাউকাউ শুরু করে পাড়া-পড়শি জড়ো করে ফেলল বলতে গেলে। তামিমের বাবা বাসায় এসে কিছু বললেন না, তিনি এমনিতে ঠান্ডা মানুষ। তামিম জানতো পিটুনি পরবে না পিঠে, তবে এমন এক কাজ করবেন তার আব্বাজান যে কবিতা লেখা সারা জীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।
পরের দিন তাই হল, তামিমের আব্বাজান তামিমকে শাহবাগের কোন একজায়গায় নিয়ে চলে গেলেন। বিচিত্র ধরণের কয়েকজনের সামনে তামিমকে নিয়ে গিয়ে তাকে বলা হল - তুমি কবিতা লিখতে চাইলে এদের সাথে দিনে কিছুক্ষণ করে থাকতে হবে।
তামিম ঢোক গিলে বলল - এনাদের সাথে কেন?
- কারণ এরা কবি। কবিতা লিখতে হলে এদের কাছ থেকে তোমার ইন্সপায়ারেশন নেওয়া দরকার...।
তারা আসলেই কবি ছিল কিনা জানা যায়নি, তবে তামিমের কবি হওয়ার স্বপ্ন সেদিনই চিরতরে বিদায় নিয়েছে। আজকাল তামিম ভাবে কবি হয়ে গেলে মন্দ হত না। তাইলে তার বিয়ে নিয়ে যে টেনশনে তার দাড়ি লাল হয়ে যেতে শুরু করেছে - এই ঝামেলা টা আর হত না।
ছেলে কি করে? শোনার পর নিবিড় খুব গম্ভীর হয়ে বলল, "চ্যাট করে। সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে বসে থেকে কি যে মজা পায়...... টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার তো, তাই সারাদিন চ্যাট মানে কমিউনিকেশনের ওপরে থাকে। হা হা হা"
নিবিড়ের মতে সে প্রায়ই উচ্চমাত্রার প্র্যাক্টিকাল জোক্স করে থাকে, তবে অধিকাংশ সময় এই দেখা যায় মানুষ জন জোকস শোনার পর আমোদিত না হয়ে হাসার জায়গা খুজে না পেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। তামিম তাড়াতাড়ি করে বলল, ইয়ে মানে ওসব কিছু না, কাজের জন্য কম্পিউটারে বসতে হয় আরকি... বলে নিবিড় এর দিকে করুণ চোখে তাকালো।
নিবিড় সিগারেট টানতে নিচে নামার পর তামিম বিড়বিড় করে বললো - আরেকটু হলে তো বারোটা বাজতে নিসিলো, মেয়ের বাপ তোর কথা শুনে কেমন জানি আনইউজুয়াল বিহেইভ করতেসে।
নিবিড় একটা কঠিন টান দিল। তামিম বিরক্ত হয়ে ও'র দিকে তাকালে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো, মাথা কাজ করতেসে না দোস্ত। তুই বিয়াশাদীর নাম শুনলেই দৌড় দেস, এইবার যে এত লাফালাফি করতেছস, কারণ কি? মেয়ে ফাটাফাটি সুন্দরী নাকি... মাম্মা?
তামিম গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বললো, সুন্দরী হতে পারে। আমি এখনো ভালো মত দেখি নাই।
নিবিড় এই কথা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকলো, তামিম নিবিড়ের দৃষ্টি পুরোপুরি উপেক্ষা করে বললো, আরে চেহারা যাই হোক - আসল ব্যাপার হল মেয়ে পুরা প্রফেশনাল আর ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড।
সারাদিন জবের ওপ্রে থাকে মনে হয়। আমার বেশি সময় দিতে হবে না।
নিবিড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, কেন যে আঙ্কেল তোরে ছোটবেলায় সাইজের ওপর রাখত টা দিছিল...। না হলে এখন একটু রস টস থাকতো তোর মাঝে...
তামিম চোখ টিপে বলল, আমার রস লাগবে না, তোর আছে না? যা বউ দেখে আয়, তুই ওকে বললে পরে আমি দেখতে যামু। নিবিড় খুশি হয়ে গেল মনে হয়, বোতাম টোতাম ঠিক ঠাক করে বেশ গম্ভীর চেহারা নিয়ে ওপরে চলে গেল।
তামিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু - যে তাকে আঠারো বছর ধরে দেখছে - যে ভাবে সে তামিমকে যেভাবে চেনে, যেভাবে বুঝে আর কেউ সেভাবে চেনে না ... আসলেই কি সে চিনেছে তামিম কে? উত্তর টা হ্যা হলে তামিম স্বস্তি পেত হয়তো, যে অন্ততঃ একজনকে সে মনের কথাগুলো কোনরকম দ্বিধা না করেই বলে ফেলতে পারে। কিন্তু উত্তর টা হল - না। যেই বেস্ট ফ্রেন্ডের কাছেই সে আজ পর্যন্ত নিজেকে চেনাতে পারেনি - যেই বেস্ট ফ্রেন্ডকে সে নিজের আগ্রহ যে গুলো হাস্যকর নয় সেটি বোঝাবার সাহস পায়নি - চেনা নেই জানা নেই একটা মেয়ের সাথে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে গিয়ে সেই তামিম কি নিজেকে পদে পদে হাস্যকর প্রমাণ করবে না?
একটা উপায় হল তার নিজের মত সঙ্গী খুজে নেওয়া। যে সারাদিন নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে - নিজেও বোর ফিল করবে না তামিম কেও জালাবে না! এই সব ভয়ের কারণ হল - তামিম একটু অন্যরকম ছেলে, তার বেশি বন্ধু নেই, বাইরের দেশে থাকলে সে নার্ড বা গীক উপাধি পেয়ে যেত কিন্তু এই কপাল পোড়া দেশে সে বুক ফুলিয়ে বলা তো দূরে থাক, কান্নাকাটি করে বাপ-মা কে বুঝাতেই ব্যর্থ হয়েছে যে তার নিজের আগ্রহেরও মূল্য থাকতে পারে।
আর দশটা ভাল রেজাল্ট করা ছেলেমেয়ের মত ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে সে কম্পিউটার নিয়ে পরবে - শোনার সাথে সাথেই তার তামিমের মা ভিমড়ি খেলেন। তামিম আগে থেকেই আন্দাজ করে ডাক্তারি পড়া নিবিড়কে এনে রেখেছিল - সে সন্দেহ করেছিল একটা ছোটখাট স্ট্রোক-টিস্ট্রোক হয়ে যাবে। বাবাকে বলার কোন মানেই হয়না! তার চেয়ে তামিম এক অদ্ভূত প্ল্যান করে ফেললো, পরিচিত ওয়ার্ল্ড-টাকে পুরোপুরি বোকা বানিয়ে নিজের একটা জগৎ বানিয়ে নিলে কেমন হয়! মা যখন দেখছে সে পড়াশোনা করছে, সে তখন ইন্টারনেট ঘেটে ঘেটে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখছে। বাবা'র কাছে থেকে ভার্সিটি যাওয়ার ভাড়া দ্বিগুণ নিয়ে কম্পিউটারের বই-পত্র কিনে সিডির স্তূপ এর পেছনে লুকিয়ে রেখেছে। বন্ধুবান্ধব বেশি নেই তার, অবসর সময়ের ও অভাব তাই নেই, নিবিড় যখন অবাক হল সে দিনরাত চ্যাট করে যাচ্ছে কম্পিউটারে- সে চোখ টিপে বললো বিয়ে করুম তো দোস্ত, মেয়েদের সাথে "সোশ্যালাইজ" হওয়ার চেষ্টা করছি!
নিবিড়-ও বোকা হয়ে গেল।
আসলে তামিম বানিয়ে ফেলেছে মজার একটা বস্তু। আসলে এটা একটা সফটওয়ার - দেখতে পরচিত ইন্টারনেট-চ্যাট (নির্ঘন্ট দ্রষ্টব্য) করার সফটওয়ার গুলোর মতই, তবে পার্থক্য হল এটা আসলে কৃত্রিম, অবাস্তব এক চরিত্রের সাথে কথা বলার সফটওয়ার। যেই চরিত্রটি, কথপোকথনকারীর সাথে গল্প করতে করতে কথপোকথনকারীর মতই একটি অস্তিত্ব নিজের ভেতর তৈরি করে নেয়। শখের বশে তামিম যেই কাজ করা শুরু করেছিল, সেটা যে আসলেই সম্ভব হবে এটা সে ভাবতে পারে নি! তামিম এখন দিন-রাত এই ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার-টির সাথে গল্প করতে করতে ক্যারেক্টার-টিকে "ট্রেইন" করছে। তামিমের সফটওয়ার এর এই ভার্চুয়াল ক্যারেকটার টি যত বেশি তামিমের সাথে কথা বলবে, সে নিজেকে তত বেশি তামিমের মত তৈরি করে ফেলছে - সফটওয়ার টি এখন জানে তামিম কি পছন্দ করে, কি পছন্দ করে না, কোন পরিস্থিতিতে তামিম কি আচরণ করবে বা কি বলবে - সব! বাইরে থেকে দেখলে যে কেউ মনে করবে তামিম ইন্টারনেটে কারো সাথে চ্যাট করছে - কিন্তু আসলে তামিম সবাইকে বোকা বানিয়ে সফটওয়ারটির ভেতর নিজের আরেকটি সত্ত্বা তৈরি করে ফেলছে! অন্য কেউ যদি এখন এই সফটওয়ার টির কৃত্রিম চরিত্রটির সাথে চ্যাট করে, সে মনে করবে সে তামিমের সাথেই চ্যাট করছে - ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করবে না তামিম নামধারী এই কথপোকথনকারী আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আড়ালে কোন কম্পিউটার প্রোগ্রাম!
২
তামিম ওপরে (তার হবু শ্বশুরবাড়ি) গিয়ে দেখলো এখনি উৎসব উৎসব একটা ভাব শুরু হয়ে গিয়েছে, আড়ালে নিবিড় কে টেনে নিয়ে গেলে নিবিড় দাত বের করে বললো, বউ এর নাকি তোরে "ব্যাপক" পছন্দ হইসে!
তামিম বললো, বউ মানে কি? এখনো তো বউ হয় নাই।
আর ভালো কথা, "বউ" আমারে দেখে-ই নাই, মিথ্যা বললি কেন?
নিবিড় হাই তুলে বললো, পছন্দ করে নাই মানে, মনে তো হয় তোর প্রেমে পইড়া গেছে। কারণ সেই এই বাড়িতে একমাত্র মানুষ, যে বুঝতে পারসে জামাই আমি না, তুই। বলেই নিবিড় মন খারাপ করে ফেললো। বেচারা আসলেই বেশি ফিটফাট, জোড় করে চুল আচড়ে না দিলে উশকো চুলের তামিমকে এই বাড়িতে ঢুকতে দিতো কিনা সন্দেহ আছে।
নিবিড় এর কথা শুনে তামিম দাত বের করে বললো, "বুঝিস না, ক্যারিয়ার-ওরিয়েন্টেড মেয়ে তো, কম্পিউটার প্রোগ্রামারের চেহারা কেমন হয় বুঝে ফেলসে!"
নিবিড় বললো, কম্পিউটার প্রোগ্রামার মানে? "মানে ওইতো পিসি'র সামনে বসে থাকি না, নিজেরে প্রোগ্রামার মনে হয়।
" বলে তাড়াতাড়ি চলে গেল তামিম। তামিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিবিড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ডটার সাথে কি জেনে শুনে এত বড় বেঈমানী করা ঠিক হচ্ছে?
হবু স্ত্রী'র সাথে তামিমের কথোপকথন খুব একটা বেশি হল না। দেখা গেল মেয়েটা যা-ই বলে তামিমের উত্তর সবসময় দু-তিনটে শব্দেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তামিম অবশ্য মোটামোটি একটা প্ল্যান করে এসেছিল কিভাবে, কি নিয়ে কথা বলবে এসবের, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখন ও'র মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছেনা।
তামিম অবশ্য এটা নিয়ে খুব একটা বিব্রত-ও নয়। সে মোটামোটি তার হবু স্ত্রী'র যেরকম একটা ছবি কল্পনা করে এসেছিল তা হল - বেশ রাগী রাগী একটা মুখ হবে, অতিরিক্ত রকমের ফর্সা প্রায় রক্তশূণ্যতায় ভোগা রোগীর মত মুখ, সেখানে একটা হালকা সোণালী ফ্রেমের চশমা মুখটাকে আরো থমথমে করে দেবে। দেখাগেল তামিমের কল্পনার সাথে কোন মিল-ই নেই মেয়েটার - একদম ছিপছিপে, বাড়াবাড়ি রকমের স্লিম তবে খারাপ লাগছে না একদমই, মুখটা কঠিন না - সবসময়ই ঠোট চাপা দিয়ে রেখেছে যেন মাত্র হেসে ফেলবে। কালো হালফ্যাশনের চশমা, তবে সেটা চেহারায় বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে। তামিম আপাতত চুলের দিকে হালকা হা করে তাকিয়ে আছে।
যেই জায়গাটায় তার কল্পনার সাথে বাস্তবে অনেক বেশি অমিল - কোনমতে বাধা অযত্নে বড় হয়ে যাওয়া রুক্ষ কতগুলো চুলের বদলে পিঠ পর্যন্ত নেমে আসা কালো চুলের দিকে তাকিয়ে তামিম বোকা হয়ে গেল যেন।
- আপনি তো ইঞ্জিনিয়ার, তাই না?
= হু
- আপনি ক্রিকেট খেলেন?
= না
- ও। আপনাকে দেখে অবশ্য মনেও হয়না। একটু বোকা বোকা লাগে, হি হি
= ও
- আপনি অনেক বেশি পড়াশোনা করেন, তাই না?
= উমম...
- আমিও করি! আমার একমাত্র হবি হল বই পড়া। আমি অনেক ইংরেজী নভেল পড়ি জানেন।
আপনার প্রিয় লেখক কে?
= আম...... কি?
- লেখক... প্রিয় লেখক বা লেখিকা
= (খানিকক্ষণ মাথা চুলকে) ইয়ে জানি না তো, মানে বই এর রাইটারের নাম তো কখনো দেখি না... বলে তামিম নিজেই বোকা হয়ে গেল। নিজেকে পুরোপুরি বেকুব মনে হচ্ছে এখন তার।
- বাহ, আপনি বেশ মজার তো! আম... চলুন একদিন বাইরে ঘুরে আসি আমরা।
তামিমের হাতের গ্লাসে পানি ছিল, গলাতেও বোধহয় ছিল কারণ সে বিষম খেয়ে গ্লাস থেকে পানি ফেলে দিল। এবার আসলেই নিজেকে গর্ধভ মনে হচ্ছে তার - সে চলে যাওয়ার পর কিরকম একটা হাসির পাত্র হবে এটা ভেবেই তার গলা শুকিয়ে আসছে।
কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, মানে......, ডেইট?
এই প্রথম মনে হল মেয়েটা একটু চিন্তা করছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো - মানে আমি ভাবছিলাম আরো কিছুক্ষণ কথা বললে মনে হয় আমাদের নিজেদেরই ভাল লাগত। এখানে তো আর ফ্রি হয়ে কথা বলা যায় না, তাই না?
= হ্যা
- তাহলে চলো কালকে বের হই, সারাদিন ঘুরবো আমরা, তুমি সারাদিন আমার চুল নিয়ে গবেষণা করার সময় পাবে।
= ওকে
- আমিও কিন্তু তোমাকে নিয়ে গবেষণা করবো!
= আচ্ছা
- আর ভাল কথা, তুমি ওইদিন কোন কাজ রাখবে না, জব ও না। জব টব আমার একেবারেই ভাল লাগে না, আমি কোনদিন জবে ঢুকব না।
= ব্যাপার না
৩
তামিমের অন্ধকার রুম, হালকা আলো যা আসছে মনিটর থেকে। ব্রাইটনেস কমিয়ে দেওয়ায় সেই আলোটাও তীব্র হতে পারে নি। তামিমের পেছনে দাড়িয়ে আলতো করে কাধে হাত রাখল জেবিন। অন্য যেকোন সময় হলে তামিম চমকে গিয়ে লাফ দিয়ে উঠতো সন্দেহ নেই, কিন্তু জেবিনের এরকম ছোয়ার সাথে তামিম অভ্যস্ত হয়ে গেছে এখন।
"আবার চ্যাট?" জেবিন বেশ নরম গলায় বলল।
হ্যা... এইতো একটু! প্রায় শেষ... এখন সিমুলেট করে দেখছি আসলেই আমার ক্যারেক্টারিস্টিকস এর সাথে কতখানি ম্যাচ করে।
কি বললে? জেবিনকে বেশ বিভ্রান্ত দেখাল। কিছু না, কিছু না! কিন্তু যাই হোক হানি, আজকে আমার মন খুব ভাল জান! এক কাজ করি চল, আজকে আমরা বাইরে ডিনার করি! তুমি ঝটপট রেডি হয়ে নাও তো।
জেবিন চলে গেলে তামিম আবার ঝুকে পড়ল মনিটরের দিকে। প্রায় ৭০% ঠিক ম্যাচ পাওয়া যাচ্ছে - তামিমের তৈরি করা সফটওয়ারের ভেতরে পরাবাস্তব জগতে গড়ে উঠেছে আরো একটি তামিম।
যে তামিম রক্ত মাংসে গড়া না, এলুমিনিয়ামের চাকতির ওপর ম্যাগনেটিক ফিল্ডে আটকে পরা একটা প্রোগ্রাম, যে চিন্তা করে তামিমের মতই, কথা বলে তামিমের মতই।
সোজা কথায়, তামিমের চারিত্রিক গুণাবলী প্রোগ্রামটা ধরে ফেলেছে। কোন পরিস্থিতিতে তামিম কি বলবে, এটার মোটামোটি নির্ভুল একটা প্রেডিকশান প্রোগ্রাম টা করতে পারে। তামিমের বেশ খুশি হওয়ার কথা। তার এতদিনের সাধনা - পুরোপুরি নিজের প্রচেষ্টায় সে যে এতদূর এসেছে, এটা কাউকে জানাতে পারছে না সে।
এটা তেমন বড় কোন ব্যাপার না, সে চিন্তিত জেবিন কে নিয়ে। চঞ্চল, প্রাণবন্ত একটা মানুষকে সে কি অদৃশ্য খাচায় বন্দী করে রেখেছে? যত দিন যাচ্ছে, সে তত বিষণ্ণ হয়ে যাচ্ছে - সারাদিন তামিম ব্যস্ত থাকে বিরক্তিকর অফিসের কাজে, রাতে বাসায় ফিরে সে তার প্যাশন - প্রোগ্রামিং নিয়ে বসে। জেবিনের সাথে মাঝে যতবার দেখা হয়, কথা হয় ছাড়া ছাড়া।
অথচ আগে এমন টা হত না। জেবিন খুবই উৎফুল্ল ছিল।
তামিম অফিসে থাকতে ফোনের পর ফোন করত। বাসায় ফিরে গেলেই ঝাপিয়ে পড়ত তামিমের ওপর। সবকিছুই সুন্দর ছিল... কিন্তু এখন সবকিছুর ওপর-ই ধুলো জমে গেছে। ফু দিলে ধুলো সরে গিয়ে হয়ত অল্প কিছুক্ষণ সুন্দর দেখায়, এরপর আবার সেই মলিন।
আবার ধুলো জমে।
এক্সপোটেনশিয়ালি বাড়তে থাকে সে ধুলোর আস্তর।
তামিম বাসায় ফিরে গিয়ে পা টিপে টিপে জেবিনের পেছনে গিয়ে দাড়াল। চমকে দেওয়ার জন্য সে জেবিনের চোখ ঢাকতে হাত তুলতেই জেবিন ঘুরে তাকাল।
তামিম শিউরে উঠল - এই চোখের মেয়েকে সে বউ করে আনে নি।
ইয়ে... তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো ভাবছিলাম! একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল তামিম।
জেবিন তাকাল তামিমের দিকে, কিছু বলল না।
তামিম দাড়িয়ে রইল, জেবিন কি সারপ্রাইজের জন্য অপেক্ষা করছে? কি সারপ্রাইজ দেবে সে? আগে হয়তো এই দুটো কথাতেই ভয়ানক খুশি হত জেবিন। লাফিয়ে উঠতো আনন্দে।
এখন কোনকিছুতেই সে অবাক হয়না।
ইয়ে, জেবিন... ভাবছিলাম তোমাকে আমি আমার সফটওয়ার টা দেখাব... মানে আমি সারারাত চ্যাট করি যেটায়, ওই চ্যাটিং সফটওয়ার টা।
মনে হয় তোমার ভাল লাগবে।
জেবিন একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। তামিম, আমার চ্যাট এইসব ভাল লাগে না। তুমি জান, কম্পিউটার এইসব থেকে আমি দূরে থাকি।
তামিম বলল, সোনামনি, প্লিজ আমার কথা শুন।
একবার দেখ, ভাল না লাগলে বাদ, ওকে?
রাতে জেবিন ঘুমিয়ে পড়ার পর তামিম খুব সন্তর্পনে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসল। সে ভেবেছিল কাজ প্রায় শেষ, কিন্তু কাজ কেবল-ই শুরু।
৪
সকাল সাড়ে এগারটা প্রায়। তামিমের বস মাত্র তামিমের রুম পেরিয়ে কফির জন্য চলে গেলেন। তামিমের বসের যদি মানুষের মন পড়ার ক্ষমতা থাকত তিনি জানতে পারতেন ঠিক এই মুহূর্তটার জন্যই তামিম দেড়ঘন্টা ধরে বসে আছে।
হ্যালো।
- হানি, কি করছ?
তেমন কিছু না। কি করা যায় তাই ভাবছি......
- তোমাকে কি বলেছিলাম ভুলে গেছ? আমার রুমে গিয়ে কম্পিউটারের সামনে বস। আমি চ্যাটে বসে আছি, তোমার সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেব, বস নেই এখন!
শোন...... তুমি তো জান চ্যাট করতে ভাল লাগে না আমার......
- আরে একবার বসেই দেখ না! বিশ্বাস কর তোমার ভাল লাগবে, প্রমিস......
ফোন রেখে দিয়ে সোজা হয়ে বসল তামিম। বস রুমে ঢোকার আগে ইশারা দিয়ে তামিমকে রুমে ঢোকার জন্য ইঙ্গিত দিলেন।
- তামিম, ডকুমেন্টেশন রেডি হয়েছে?
= এইতো বস, এক ঘন্টার মধ্যেই হয়ে যাবে।
বস আড়চোখে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললেন, প্রায়োরিটি ইমারজেন্সি তুমি তো জানই... একঘন্টার মধ্যে কাজ জমা না দিতে পারলে বড় রকম সমস্যায় পড়ে যাবে।
একঘন্টা পরে বস তামিমের রুমে ঢুকে দেখলেন, সে মনযোগ দিয়ে মনিটরের দিকে ঝুকে আছে।
"তামিম?" প্রথমবার ডাকার সময় শুনলই না তামিম। দ্বিতীয় বার বস একটু গলা চড়িয়ে ডাকার পর সম্বিত ফিরে পেল সে।
কাজের অবস্থা কি? বলেই বস সন্দেহের দিকে মনিটরের দিকে তাকালেন।
"কাজ? ও কাজ। কোন কাজ?" যেন আপন মনেই বললো তামিম। এরপর হঠাৎ করেই বলল, "ও আচ্ছা, কাজ!" দাত বের করে ফাইল টা এগিয়ে দিল বসের দিকে।
বস চলে যাওয়ার পর তামিম আবার মনিটরের দিকে ঝুকে পড়ল।
নিবিষ্ট মনে লগ রিপোর্ট দেখছে সে। ভ্রু কুচকে রেখেছে সে।
তার স্ক্রিণে কোন চ্যাট-সফটওয়ার খোলা ছিল না।
ফোনের শব্দ আবার তার কাজের ব্যাঘাৎ ঘটাল।
সেলফোনের স্ক্রিণ জুড়ে জেবিনের উচ্ছ্বল ছবি।
তামিমের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। কতদিন সে এ হাসি দেখেনি?
ফোন রিসিভ করে ভয়ে ভয়ে তামিম বলল, হ্যালো?
৫
বসুন্ধরা সিটি নামের শপিং কম্পলেক্সের লেভেল ৮ এর খোলা জায়গাটায় নিবিড় দাড়িয়ে সিগারেট টানছিল। তার সামনে কফি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে তামিম। আশেপাশে তামিম ছাড়া সবাই ধূমপায়ী হলেও তামিমের কোন আপত্তি করেনা এই জায়গাটার ব্যাপারে। খোলা অংশ থেকে শহরের ভিউটা খুবই সুন্দর।
নিবিড় বলল, আর কি আমারে জানাইতে চাস তুই? তুই প্রোগ্রামার (তামিমের কাছ থেকে এ কথা শোনার পর নিবিড়ের মাঝে তেমন কোন ভাবান্তর দেখা যায়নি) মানুষ বুঝলাম, কিন্তু সেইটা বলার জন্য এমনে ডাইকা আনতে হবে? তুই যেমন কইলি ইমারজেন্সি, আমিতো কি না কি হইসে ভাইবা টেনশন করা শুরু করসি। বলেই আধাজ্বলা সিগারেটটা নিভিয়ে রাস্তার দিকে ছুড়ে ফেলল আটতলা থেকে।
দোস্ত, আমি একটা সফটয়ার বানিয়েছি (এখনো নিবিড়ের কোন ভাবান্তর হল না) ......... এটা মানুষের সাথে চ্যাট করতে করতে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা নিতে থাকে।
- "তো?" নিবিড়কে বেশ অধৈর্য মনে হল। তামিম বলল, আমি এই সফটওয়ার টার সাথে চ্যাট করেছি অনেক দিন, ফলে সে আমার ব্যক্তিত্বের একটা কপি নিজের মধ্যে তৈরি করে ফেলেছে।
আমার মনমানসিকতা, চিন্তা ভাবনা, পছন্দ-অপছন্দ এসব অবস্থা থেকে নিজেকে ট্রেইন করেছে সফটওয়ার টা। কোন পরিস্থিতিতে আমি কি বলব - এটা প্রোগ্রাম টা ধরে ফেলতে পারে।
নিবিড় তাকিয়েই থাকল। এবার তামিম তামিম অধৈর্য হয়ে বলল, তুই বুঝতে পারছিস না? এখন কেউ যদি এই সফটয়ারের সাথে কমিউনিকেইট করে, মানে চ্যাট করে, সে ধরে নেবে আমার সাথে চ্যাট করছে। কোন একটা পরিস্থিতিতে আমি যা বলব এই সফটওয়ার টাও একই কথা বলবে।
"হুম, ইন্টারেস্টিং। " বলল নিবিড়। তামিম বলে চলল, আমাকে খুশি করার জন্য ইন্টারেস্টিং বলা লাগবে না। আসল কথা হল -
"আবে, তোরে খুশি করার জন্য বলসি মানে?" নিবিড় লাফিয়ে উঠল। "আসলেই ইন্টারেস্টিং, তুই নিজে কোডার দেইখা ভাবস আমি মগা? এরকম সফটয়ার তৈরি করা প্রফেশনাল লেভেলের কাম, অন্ততঃ এইটুক আইডিয়া আছে।
" আহত দেখাল নিবিড় কে।
"শোন - " বাধা দিল তামিম। "আসল ঘটনা অন্যখানে। " ইতস্ততঃ করল তামিম। " - যে সিক্রেট বলার জন্য তোকে ডেকে এনেছি, সেটা এইটা না।
"
"এইটা না মানে, আরো সিক্রেট আছে?" নিবিড়ের চোখ কপালে। " হ্যা। " কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তামিম বলল, "তোর ভাবির সাথে আমার...... ......... ইন্টিমিসি কমে যাচ্ছে। "
নিবিড় হা করে তাকিয়ে থাকল। "দিন দিন আমার মনে হচ্ছে - আমরা দূরে সরে যাচ্ছি।
"
নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকল তামিম। সিগারেটের খালি প্যাকেটে সে সিগারেট খুজে যাচ্ছে, প্যাকেট খালি সেটা জানার পরও। তামিম শিউরে উঠল একটু, নিবিড়ের এটা "এক্সট্রিম-টেন্সড সিন্ড্রোম"।
তামিম বলল - "একটা উপায় আছে। আমি ভেবে দেখেছি, সমস্যা আমাদের কমিউনেকেশনে।
আমি ওকে কত ভালবাসি, সেটা তুই জানস। তোর ভাবিও কম ভালবাসে না আমাকে। কিন্তু আমি যে কতটা পাগল ওর জন্য, সেটা ওর কাছে এক্সপ্রেস করতে পারি না। কারণ ......... কারণ ......... যে কারণেই হোক আমি কথা চালাতে পারি না...... ওর সাথে কথপোকথনের সবটাই জুড়ে থাকে ওর কথা...... আমি তেমন কিছুই বলি না... যেকারণে.........। " থামল তামিম।
চোখ গুলো নিচে নামিয়ে রেখেছে সে।
"... যেকারণে কিছুই জানিনা আমি ও'র সম্পর্কে। "
নিবিড় তাকিয়ে থাকল তামিমের দিকে। তামিম চোখ তুলে অন্যমনস্ক ভাবে বলল, "আমার ওকে আরো চেনা দরকার। কিন্তু কি করব, কথাই তো বলতে পারিনা ও'র সাথে।
ও আর আমি পুরাপুরি অন্যরকম......... সবসমইয় ভাবতাম যদি আমার হয়ে কেউ জেনে নিত ও'র সম্পর্কে! যদি জানতে পারতাম - আমার জেবিন কেমন!" খুব আসতে আসতে বলল তামিম।
নিবিড় বলল, "কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? তোকেই জানতে হবে তোর বউ কিরকম। তোর কমিউনিকেট করতে হবে ওর সাথে। তোর সাথে ও যা শেয়ার করে, অন্য কার কাছে তা শেয়ার করবে?"
- "করবে, যদি লোকটা তামিম-ই হয়। যে কিনা মুখ ফুটে সারাদিন কথা বলবে আমার জেবিনের সাথে।
"
= "সেটাই তো বলছি...... তোর স্ত্রী'র সাথে তোকেই কথা বলতে হবে -"
- "কিন্তু আমি তো পারি না কথা বলতে - কোনদিন ই পারি নি। বলতে হবে অন্য কাউকে। অন্য তামিম - যার কথা বলায় কোন সমস্যা নেই - কোন জড়তা নেই - যে তামিম আমার হয়ে জানবে জেবিনের সম্পর্কে। জেবিনও নিজেকে খুলে দেবে ও'র কাছে - কারণ সে ভাববে সেই তামিম..."
নিবিড় চট করে ঘুরে দাড়িয়ে বলল, "তোর চ্যাট সফটওয়ার - তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ......"
তামিম ঠান্ডা গলায় বলল, "আমার সফটওয়ারের প্রথম ফেইজ ছিল কথপোকথনকারীর বৈশিষ্ট্য এনালাইসিস করা । সেটার রেজাল্ট ছিল পজেটিভ।
সেকেন্ড ফেইজ - যার চরিত্র এনালাইসিস করে এসেছে এতদিন তার অনুকরণে অন্য কারো সাথে কনভারসেশন চালিয়ে যাওয়া। সফটওয়ার টা এতদিন আমাকে দেখে দেখে শিখেছে আমি কি রকম মানুষ। এখন সে আমার হয়ে কথা বলবে জেবিনের সাথে। খুব ছোট্ট একটা পরিবর্তন যোগ করতে হয়েছে আমায়। সেটা হচ্ছে আলাপচারিতা মুছে যাবে না - যেটা দেখে অনায়াসেই আমি জেবিন সম্পর্কে জানতে পারব সবকিছু।
"
নিবিড় বলল, "সেকেন্ড ফেইজ কবে শুরু হয়েছে?" তামিম বলল, "আজকেই। আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম কি না কি হবে - কিন্তু তোর ভাবী ধরতেই পারে নি কিছু। অনেক অবাক হয়েছে, আমাকে এভাবে কথা বলতে দেখে - ভেবেছে আসলেই আমি কথা বলছি ওর সাথে চ্যাটে। অনেক খুশি হয়েছে জানিস। - ফোন করে সে কি কান্না!"
নিবিড় কিছু বলল না, মনে হচ্ছিল সে বলার মত কিছু পাচ্ছে না।
তামিম বলল, "সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বাসায় চল। আজকাল দেখি পাচটার দিকেই সূর্য ডুবে যায়। "
৬
ধানমন্ডির একটা পেস্ট্রিশপের সামনে সিএনজি থামাল তামিম। ফুলের তোরাটা গাড়ির ভেতরেই রেখে নেমে পরছিল সে, শেষ মুহুর্তে আবার গাড়িতে ঢুকে নিয়ে তোরাটা হাতে নিয়েই পেস্ট্রিশপে ঢুকে পড়ল। জেবিনকে নিয়ে আগে একবার এখানে এসেছিল তামিম - প্রায় এগার মাস আগে।
বাসায় পৌছে কলবেল চেপে শার্ট ঠিক করছিল তামিম। গেট খুলে জেবিন দাড়াতেই তামিম হালকা হা হয়ে গেল। এত সুন্দর লাগছে জেবিনকে!
এক বছর আগে তাদের বিয়ের দিনে জেবিনকে চেনা যাচ্চিল না - মেক-আপে মনে হচ্ছিল পুতুল একটা। আজকে জেবিন সেদিনের মত সাজে নি, কিন্তু তামিমের মনে হল এত সুন্দর জেবিনকে আগে কখনও মনে হয়নি।
"হ্যাপি এনিভার্সরি!" বউ এর দিকে কেক এর প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিল তামিম।
"শুধুই এটা?" জেবিন ঠোট দিয়ে হাসি চেপে বলল।
তামিম রহস্যের ভঙ্গি করে পেছনে রাখা হাতটা বের করে আনল। হাতে ধরা ফুলের তোরা টা। ফুলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে জেবিনকে জড়িয়ে ধরতে গেল সে-
জেবিনের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল।
"তুমি আমার কোন কথা শোন না!"
জেবিন চলে গেল ভেতরে - তোরাটা তামিমের হাতেই রয়ে গেল।
"জেবিন - দাড়াও" তামিম সহসা হতবুদ্ধি হয়ে গেল। "তুমিতো গোলাপ -ই চেয়েচিল, তাই না! তুমি সবসময় বল লাল গোলাপ, লাল গোলাপ তোমার সবচেয়ে প্রিয় - "
ভুল হতেই পারে না - কারণ তামিম আজকেই তার সফ্টওয়ার এর লগ দেখে এসেছে ফুল নিয়ে জেবিনের প্রতিটা কথা শুরু ও শেষ হয়েছে লাল গোলাপে।
বেডরুমে বসে ছিল জেবিন। তামিম হাত বাড়িয়ে দিলে সে সরিয়ে দিল।
-- তুমি আমার কোন কথা শোন না তামিম -
- কে বলেছে সোনা - আমি সব শুনি...
-- কোনদিন শোন নি তুমি - আমি এত করে বললাম কালকে সাদা গোলাপ -
- ওহ.. স্যরি সোনা - যাই হোক গোলাপ-ই তো।
-- সাদা কালো নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই - এতা শুধু কালকের কথা না তামিম - তুমি কখনই সময় দাও নি আমাকে। তোমার সব সময় তোমার স্টাডিরুম আর ঐ ল্যাপটপ।
স্তব্ধ হয়ে চুপ করে বসে রইল তামিম। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে জেবিনের দিকে বাড়িয়ে দিল।
- "কি এটা - "
-- "পড় না, প্লিজ"
জেবিনের হাতে জোড় করে কাগজটা গুজে দিল তামিম।
অন্যমনস্কভাবে কিছুক্ষণ কাগজটার দিকে তাকিয়ে রইল জেবিন --- এরপর আস্তে আস্তে বলল "এটা আমাকে নিয়ে লেখা -- তুমি ---"
আগে কবিতা লেখার চেষ্টা করতাম, আব্বুর ধমক খেয়ে আর সাহস হয়নি লেখার -- তোমাকে দেখানোর ও সাহস হয়নি।
জেবিন চুপ করে বসে রইল, তামিম বলল বিশ্বাস কর আমি লিখেছি নিজে -
জেবিন হেসে ফেলল, "ছড়াটা বাচ্চাদের মত হয়ে গেছে!" তামিমকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আমাকে দেয়া সবচেয়ে সুন্দর ভালবাসা এটা!"
জেবিনের মাথাটা কাধের ওপর রেখে তামিম চুপচাপ বসে রইল। কম্পিউটার প্রোগ্রামটা কোন কাজেরই না, নিবিড়কে বলতে হবে কোন মক্কেল ধরে ওটা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য।
স্বাভাবিক, অঙ্ক কষে কি আর মনের হিসাব বের করা যায়?
অন্যান্য কল্পগল্প
_____________
নির্ঘন্টঃ
সফটওয়ারঃ কম্পিউটারে যেই প্রোগ্রাম গুলো চালানো হয়।
চ্যাট (chat) - ইন্টারনেট বা কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানুষদের সাথে টেক্সট লিখে গল্প করার সফটওয়ার।
আগে: চতুর্মাতৃকে http://tinyurl.com/23fkdp9
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।