আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবেশবাদীরা, একটু ভেবে দেখেন, পূর্ণিমার চাঁদ নাকি ঝলসানো রুটি, পরিবেশ নাকি অর্থনীতি



জানি, আপনারা খুব সচেতন। পরিবেশ রক্ষায় আপনারা স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানী বন্ধ করে দিলেন। এখন কি হবে একটু ভাবুন। যে কোন ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ইকোনমিতে স্টীল একটি বেসিক ইন্ডাস্ট্রি। আমাদের স্টীল ইন্ডাস্ট্রি গার্মেন্টস সেক্টরের মত এত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন না করলেও অন্তত দেশের চাহিদা পূরণ করে।

কিন্তু আমাদের দেশে কোন লোহার আকরিকের খনি নেই। স্টীল তৈরির কাচামাল সব আমদানি করতে হয়। এই অবস্থায় দেশে প্রস্তুত মাইল্ড স্টীল প্রোডাক্ট (এম এস রড) এর দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে কাচামালের দামের উপর। পরিবেশবাদীদের চাপে সরকার আমদানীকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজের উপর টন প্রতি ১০০০ টাকা এবং রি-রোলিং মিলের উপর টন প্রতি প্রায় ৪০০০ টাকা ট্যাক্স বসিয়ে দেয়। অথচ একই সময়ে, ইমার্জিং স্টীল জায়ান্ট ভারত আমদানীকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজের উপর থেকে সব ট্যাক্স উঠিয়ে নেয়।

এখন অবশ্য আমাদের দেশে স্ক্রাপ জাহাজ আমদানী বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের ৩০০ স্টীল ও রি-রোলিং মিল কাচামাল সংকটে পড়ে উৎপাদন ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। টাটার গবেষণা মতে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ স্টীলের চাহিদা ছিল ৫.১ মিলিয়ন টন। এর মূল্য টন প্রতি ৫৫০০০ টাকা করে হিসাব করলে হয় ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশী। আসুন সাধারণ হিসেবে এর ফলাফল আলোচনা করি।

১ বছর আগে আমরা যখন বাড়ির কাজ শুরু করি, তখন প্রতি টন রডের মূল্য ছিল আনুমানিক ৪০০০০ টাকা। বছরের এই সময়ে শুকনো মৌসুমে আমরা বাড়ির কাজ শুরু করি। এখন রডের দাম টন প্রতি ৫৬০০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রতি দিনই দাম বাড়ছে। এত দামে নির্মাণ কাজ চালানোর পরিবর্তে এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ। একই সংগে সরকারি-বেসরকারি এবং বিপুল সংখ্যক ডেভেলপারদের নির্মাণ কাজ সারা দেশ জুড়েই স্তিমিত।

আমাদের কন্ট্রাকটর সাহেবরা কাজ করতে না পেরে বসে আছেন। আমাদের রডমিস্ত্রী-রাজমিস্ত্রীরাও কাজের অভাবে বসে আছেন। উনাদের কাজ না থাকায় আয় সম্পূর্ণ বন্ধ। রডের ডিলার-এজেন্টদের আয় বন্ধ। এই বিপুল সংখ্যক রড পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রাক শ্রমিকদের আয় বন্ধ।

প্রায় ৯৯% দেশীয় মালিকানাধীন স্টীল ও রি-রোলিং মিলগুলো লোকসানের মুখে বন্ধ হবার শংকায়। হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ার ও পেশাজীবি চাকরি হারানোর শংকায়। এই শুকনো মৌসুমে যখন রডের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকার কথা, তখন কাচামাল আমদানি বন্ধ। এই প্রভাব শুধু রডের উপর পড়বেনা। সিমেন্ট, বালু, পাথর এইসব কিছুর উপরেই পড়বে।

রড ছাড়া কংক্রিট তৈরির এসব উপকরণের ব্যবহার কমে যাবে। সিমেন্ট কারখানাগুলো অবিক্রীত সিমেন্ট রাখার জায়গার অভাবে এবং স্বল্প চাহিদার কারণে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হবে। ফলাফলস্বরূপ আমাদের দেশীয় চাহিদা পূরণে সক্ষম সিমেন্ট কারখানাগুলো লোকসানের মুখে পড়বে। স্টীল শিল্পের প্রভাব অন্যান্য শিল্পে ব্যাপক। যেমন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প।

এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। শেষমেষ ভারত থেকে আমদানি করতে হবে, নয়ত টাটা বিনিয়োগ করে স্টীল শিল্পে মনোপলি শুরু করে দিবে। আর আপনার কাছে থাকা স্টীল ও রি-রোলিং মিলের শেয়ারের দাম নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। ফ্ল্যাট ও আবাসনের খরচ বেড়ে যাবে অন্তত ৩০ শতাংশ। আমাদের দেশীয় পেশাজীবিরা চাকরি হারাবেন।

বিদেশী বিশেষজ্ঞদের অপ্রয়োজনীয় উপস্থিতি বাড়বে। ভেবে দেখুন, পূর্ণিমার চাঁদ নাকি ঝলসানো রুটি, পরিবেশ নাকি অর্থনীতি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।