আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোস্টার

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই

ডিসেম্বর মাসটা বছরের সব মাস থেকে আলাদা। বিজয় দিবস নয়, যেন প্রতিটি রাতে কান খাড়া হয়ে থাকে। ব্ল্যাক আউট আচ্ছন্ন নগরে নিরবতা খান খান করে উড়ে যাচ্ছে বোমারু বিমান, ঘরের বাইরে তালা, ভেতরে আতঙ্কিত মেয়েরা, শত শত বাড়ি কবরের মতো নিস্তব্ধ, তিন মাসের শিশু দুধের জন্য কেঁদে উঠতেই জননী মুখ চাপা দিচ্ছে। জমাট বরফের মতো থমকে গেছে জীবন যাত্রা। ছুটছে গ্রামে।

অফিসে ফিস ফিস শব্দ। গুজব আসছে যে কোন সময় গ্রামে ঢুকে যাবে মিলিটারি। হিম শীতল গ্রামের ভেতর ঢুকে গিয়ে অনুভব করি, কাদার ভেতর ডুবে আছে অর্ধেক শরীর, হাতে গ্রেনেড। অপারেশনের জন্য কিশোরেরা হামাগুড়ি দিচ্ছে জঙ্গলে। মুক্তিদের জন্য রাতে ভাত নিয়ে বসে আসে এক বিধবা।

ছাগলের ঘরের নিচে পুঁতে রেখেছে রসদ। রেডিওতে ক্ষীন কণ্ঠে পাকসেনাদের খতমের কাহিনী আসছে। একএকটা শত্রু খতম হলে উল্লাসে ফেটে পড়তে চায় সাধারণ মানুষ। কোন এক ডিসেম্বরে আমাদের বাবা সব ভাইবোনকে যাদুঘরে নিয়ে গিয়েছিল। বাবার নিষেধ সত্ত্বেও স্বাধীনতার গ্যালারীতে গিয়ে আমাদের কিশোর চোখগুলো অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়েছিল।

এপ্রিলের ছবি। খন্ড খন্ড মানুষের দেহ যেন ছেঁড়া কাপড়ের মতো পড়ে আছে এখানে ওখানে। কামরুল হাসানের পোস্টারে ইয়াহিয়ার দাঁতালো ছবি। ঠিক পাশেই কাচের বাক্সের ভিতর সারি সারি মানুষের খুলি। খুলিগুলো ছিল মূলত: নৃশংসতার নমুনা।

গ্রামের গ্রামে উন্মৃক্ত আকাশের নিচে এমন খুলি ছড়িয়ে ছিল। যেন জীবন্ত মানুষগুলো মানুষ না। যারা কথা বলতো, হাসতো খেলতো। চোখ ছিল, পরের দিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছিল। বধু ছিল।

কোলে শিশু ছিল। শিশুটিও পড়ে আছে এক নালায়, শেয়াল টেনে নিচ্ছে তার কচি হাত। বিষন্ন ও আহত হৃদয়ে গ্যালারী থেকে বের হয়ে আসার সময় হঠাৎ একটা পোস্টার চোখে পড়েলো। পথের দুপাশে উচ্ছসিত মানুষ, দলে দলে মুক্তিসেনা ট্রাকে করে বন্দুক ফোটাতে ফোটাতে শহরে ঢুকছে। এভাবেই বিজয়ের শুরু।

আর পোস্টারটা দেখার পর পথের ধারে দাঁড়ানো মানুষদের মতো ভীষণ আনন্দিত উঠেছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আত্মসমর্পনের ছবিটা ভাল লাগেনি। নরপশুগুলো মাথা নত করে আছে, সামনে বহুব্যবহৃত অস্ত্র । আত্মসমর্পণ তো তাদের জন্য যাদের সমর্পণযোগ্য আত্মা থাকে। এই পাকিস্তানী পিশাচদের কী আত্মা বলে কিছু ছিল? থাকলে কী করে সত্তুরোর্ধ সেই বৃদ্ধকে চুল ধরে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে পারে? দিনের পর দিন ভগ্নী-জননীসম নারীর সম্ভ্রমহানী করে, উলঙ্গ করে বিদ্যালয়ে আটকে রাখে, স্তন কেটে নিয়ে উৎসব করে।

শিশুদেরও রেহাই দেয় না! এরা কোন পৃথিবীর, এদের জন্ম কোন জন্তুর গর্ভে? শুধু বড় আফসোস, যুদ্ধটা কেন চললো না আরো কিছু বছর? অস্ত্র সমর্পিত করে এত সস্তায় দেশে ফিরে যেতে দেয়া হলো কেন? পাকসেনাদের খুলি মাটিতে সাজিয়ে রাখা উচিৎ ছিল নর্দমার ইটের মতো। আর সেদিনই খুলির স্তুপের পাশে আধলার মতো গুড়ো গুড়ো ফেলে রাখা দরকার ছিল তাদের বিশ্বস্ত সহচর গোলাম আজম নিজামীসহ রাজাকার আলবদরদের কঙ্কাল! যদি তা হতো আকাশের সমান পোস্টারে ছাপা থাকতো, আর মিছিলটা হতো আরো বিরাট বিজয় মিছিল। ------ ড্রাফট ১.৫/ ব্লগার শোশমিতার স্মৃতিচারণে মন্তব্যকৃত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।