আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : বন্ধ থাকা সিম আর সামান্য দীর্ঘশ্বাসের গল্প



হ্যালো। বেশ বিরক্ত নিয়ে হ্যালো বলল রিনি। বলতেই ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিল। এরপর আধঘণ্টা বিরতি। আবার বোধহয় সাহস সঞ্চয় করে ফোন।

আবার রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে হ্যালো বলে রিনি। এবারো কাট। লাইন কেটে দিল। কিছক্ষণ পর একই কাজ আবার। এবার অবশ্য কেটে দিতে পারল না।

তার আগেই রিনি কথা শুরু করল, অ্যাই যে শোনেন। রাখবেন না। একটা কথা বলি। ওপাশে চুপ। রিনি বলল, যদি কথা বলার সাহস-ই না থাকে তাহলে ফোন করেন কেন? ওপাশে তাও কেউ কথা বলল না।

চুপ। এবার রিনি নিজেই কেটে দেয় লাইন। তারপর আরো বেশ কয়েকবার ফোন। রিনি আর রিসিভ করল না। মোবাইল বন্ধ করে রাখল।

চরম বিরক্ত রিনি। কোথা থেকে যে আসে এসব? ২. দুদিন পর আবার সেই নাম্বার থেকে ফোন। রিনি ধরতেই ওপাশ থেকে হড়হড় করে একটা ছেলে কথা বলা শুরু করল, দ্যাখেন আমি বহু কষ্টে আপনার নাম্বার পেয়েছি। আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি। এই পছন্দের পরিমাণ আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না।

আমার গত তিন মাসের পরিশ্রম আপনার নাম্বার। আমি এর আগেও আপনাকে বিরক্ত করেছি। কিন্তু কী করব বলুন, আমি কথা বলার সাহস পাইনি। আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? রিনি ছোট্ট করে বলল, না। বলেই লাইনটা কেটে দিল।

সঙ্গে সঙ্গে আবার ফোন। রিনি ধরল না। আবার ফোন। রিনি ধরছে না। ফোন বাজছে।

রিনি সাইলেন্ট করে রেখে দিল। ফোন বাজছেই। রিনি নিস্পৃহ। ধরছে না। একটা সময় কোনো সমাধান না করেই ঘুমিয়ে পড়ল রিনি।

ওপাশ থেকে ফোন আসছেই। ৩. সকালে ঘুম থেকে উঠেই পাশ ফিরে মোবাইলটা হাতে নিল রিনি। ভীষণ অবাক সে। ছেলেটা পাগল নাকি? উনআশিটি মিস্ড কল। লাস্ট কল, রাত চারটা তেরো! অন্য যেকোনো মেয়ে হলে হয়তো কিছুটা ইমপ্রেসড হতো।

রিনি হচ্ছে না। হবার কোনো কারণও নেই তার। সে অলরেডি একজনের সাথে কমিটমেন্টের জায়গায় চলে গেছে। রিনি আসিফ নামে একটা ছেলেকে ভালোবাসে। যে কারণে এই ছেলের প্রতি তার কৌতূহলের চেয়ে বিরক্তি বাড়ছে।

যদিও একই সাথে মায়াও হচ্ছে তার। রিনির ধারণা ছেলেটা আর ফোন করতে নাও পারে। কথা শুনে যা বুঝেছে, ছেলেটা খারাপ না। কথাবার্তায় এক ধরনের আকুতি আছে। মার্জিত ভাবও ছিল।

আবার যদি ফোন করে তবে সে ঠিক করেল ছেলেটাকে ভালোভাবে বিষয়টা বলে দেবে। শুধু শুধু একটা মানুষের কষ্ট বাড়াতে চায় না রিনি। রাতে অপোয় থাকে রিনি। কিন্তু ছেলেটার কোনো ফোন নেই। বেশ কিছুণ অপো করে রিনি আসিফকে ফোন করল।

অনেক রাত পর্যন্ত কথা চলল তাদের। কথা শেষে ঘুমাতে যাবার প্রস্তুতি নিতেই রিনির ফোন বেজে উঠল। সেই ছেলেটা। রিনি ফোন ধরল। বেশ শান্ত ভঙ্গিতে বলল, হ্যালো।

ওপাশ থেকে কোনো শব্দ নেই। এবার রিনি হেসে দিল। কী ব্যাপার আজকেও সাহস নেই? রিনির কথাটা যেন টনিকের মতো কাজ করল। ওপাশে একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল। দীর্ঘশ্বাসটা রিনির কাছে হতাশার মনে হলো না।

মনে হলো, কেমন যেন একটা মুক্তির নিঃশ্বাস। তারপর শুরু করল, কী বলব বলেন? ওই দিন যে আচরণ করলেন। আচরণ মানে? খারাপ কী করলাম? রিনি জবাব দিল। না, আপনার কাছে খারাপ মনে নাও হতে পারে। কিন্তু আমার খারাপ লেগেছিল।

ঠিক আছে, তাহলে সরি। না, ঠিক আছে। আচ্ছা, যাই হোক। বলেন, আপনি কেন আমাকে ফোন করছেন? ওপাশ থেকে আবার দীর্ঘশ্বাস। রিনি আবারো হাসল।

আপনি এত দীর্ঘশ্বাস ফেলেন কেন? ওপাশে অনেকণ নীরবতা এবং দীর্ঘশ্বাস। তারপর জবাব দিল, আমার কাজই আসলে এটা। আমার সর্বোচ্চ গন্তব্যও এই পর্যন্ত। আমার সবকিছুর শেষ রেজাল্টই দীর্ঘশ্বাস। যেকোনো কাজের শেষে আমার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফিরতে হয়।

এবার রিনি একটু আগ বাড়িয়ে একটা কথা বলে ফেলল, আপনি প্রেম ভালোবাসা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আমাকে ফোন করছেন? ওপাশে উত্তর নেই। সেই দীর্ঘশ্বাস। রিনি এবার একটু রেগে গেল। আপনি পাগল নাকি? না, হাঁপানির রোগী? এত দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন কেন? এবার একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস। বোঝা গেল, অনেক চেষ্টা করেও গোপন না করতে পারা দীর্ঘশ্বাস এটা।

রিনি বলল, কথা বলছেন না কেন? কী বলব? যা জিজ্ঞেস করলাম। হ্যাঁ। প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত বিষয়ই। আপনাকে দেখে আমার ভালো লেগেছিল। বহু দীর্ঘশ্বাসের পর আপনার কাছাকাছি পৌঁছা আমার।

শুনুন, আমি আপনাকে তাহলে কিয়ারলি কয়েকটা কথা বলি। আপনার দীর্ঘশ্বাস আমি বাড়াতে চাই না। শুরুতেই শেষ করতে চাই। আমি একজনকে ভালোবাসি। আমাদের সম্পর্কের বয়স প্রায় সাড়ে তিন বছর।

আপনি প্লিজ আগে থেকেই একটু সচেতন হোন। আমার আসলে কিছু করার নেই। এটা সম্ভব না। আর আজকের পর থেকে আপনার সাথে আমার কথা বলাও সম্ভব না। সে শুনলে রাগ করবে।

আপনি ভালো থাকুন। এবারও রিনি একটা দীর্ঘশ্বাস প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু ওপাশ থেকে সেটা শোনা গেল না। দীর্ঘশ্বাস না ছেড়েই কথা বলল, ঠিক আছে। আজ তো সম্ভব? রিনি বলল, না।

তাও পারছি না। ঠিক আছে আমি আপনার সাথে আর বড় জোর পাঁচ মিনিট কথা বলব। তারপর রেখে দেব। ওকে। রিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলো।

ওপাশ থেকে আর কোনো শব্দ নেই। রিনি বলল, বলেন। কী বলতে চান? এবার একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল। আপনি কি জানেন, আপনার সম্পর্কে আমি আপনার চেয়ে বেশি জানি। আপনার খোঁজ নিতে নিতে আপনার সম্পর্কে এত কিছু জেনে গেছি যার অনেক কিছু আপনি নিজেও জানেন না।

রিনি শুনে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাল না। এটা তাকে চমকে দেয়ার ফর্মুলা হতে পারে। তারপর জিজ্ঞেস না করলে খারাপ দেখা যায় ভেবে বলল, কী জানেন? থাকুক। সেসব আর বলতে চাই না। কোনো একদিন আপনার সাথে দেখা হলে বলব।

রিনি কিছু বলল না। হাসল। মনের অজান্তেই বলল, দেখা! ওপাশ থেকে আবার বলল, কোনো কিছুই অসম্ভব না। আশায় আছি। হয়তো থাকবও।

আপনাকে আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে তো। কিছু করার নেই। চাইলেও সরে যেতে পারব না। মানুষের চাওয়ায় তো সব হয় না। মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ মতা তো মানুষের কাছে নেই।

আপনি না বলে দিলেন কিন্তু কিছু হতেও পারে। এই যে যেমন আপনি পড়ছেন একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে। অথচ আপনি হয়তো চেয়েছিলেন সরকারি ভার্সিটিতে পড়তে। ঠিক না? রিনি অসচেতনভাবেই হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে দিল, হুমম। এখানে আপনার ইচ্ছায় কিছু হয়নি।

ঠিক আছে তাহলে রিনি। আপনি ভালো থাকুন। আপনার কথাই থাকবে। আমি হয়তো আর ফোন করব না। তবে মানুষ তো, ভুল হতেই পারে।

আরো দুয়েকবার করে ফেলতে পারি। রিনি চুপ করে রইল। ওপাশ থেকে আবারো একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। আর সাথে সাথেই লাইনটা কেটে গেল। ৪. সকালবেলাটা একটু অন্যরকম লাগছে রিনির কাছে।

কাল রাতের ছেলেটা তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। অনাকাক্সিত ফোন রিনির প্রায়ই আসে কিন্তু এরকম গোছানো কথা কেউ বলে না। এর আগে যারা করত, সবাই কমবেশি উলটপালট কথাই বলত। রিনি ছেলেটার কথা ভাবতে থাকলেও আর ভাবনা, বেশি দূর নিতে পারে না। ভার্সিটিতে দৌড়াতে হয়।

সারাদিন কাস শেষ করে বিকেলে আসিফের সাথে দেখা করে রিনি। জানায় সব। আসিফ রাগের অভিনয় করে চেঁচিয়ে ওঠে, দাও। শালার নাম্বারটা দাও। আমার বউয়ের সাথে...।

ওই, এসব কী বলো? আমাদের কী বিয়ে হয়েছে নাকি? না হোক, হবে তো। হোক আগে। না, আমি এখনই বলব। না, এখন বলা চলবে না। না, বলব।

না, বলা যাবে না। তাদের এই বলা যাওয়া না যাওয়ার তর্ক কখন যে সন্ধ্যা নামিয়ে দিল, সেদিকে ল্যই করল না দুজনের কেউই। যখন খেয়াল হলো তারপর আর খুব বেশি তর্ক বাড়ানো হলো না তাদের। ৫. তবে দিনের পর দিন রিনি আসিফের এই তর্ক চলতেই থাকল। একটা সময় তর্কটা সামান্য বিষয় থেকে বড় ধরনের বিষয়ে রূপান্তরিত হলো।

বিষয়ও পাল্টে গেল। তাদের ভালোবাসায় ভাটা পড়ল। অস্বাভাবিকভাবে বদলে গেল আসিফ। কারণ, যে আসিফ একসময় রিনিকে বউ বলার তর্ক করত, আজ সে রিনিকে বউ হিসেবে কেন গ্রহণ করবে না সেই তর্কে লিপ্ত। একসময় যে রিনির ভালো বিষয় বলে বলে হয়রান হয়ে যেত, আজ তাকে দেখা যায় রিনি নামেই যেন সে বিরক্ত হয়।

নির্দ্বিধায় বলেও ফেলে এই মেয়ের সাথে আর চলা যায় না। জীবন চালানো তো অসম্ভব। রিনি জানে আসিফের বদলে যাবার কারণ কী? আসিফের অফিসের কলিগ। বিবাহিত এক মেয়ে। আসিফের ব্যাপারে যার বিস্তর আগ্রহ।

তাদের সমস্যা বাড়তে থাকে। এসবে একসময় অস্থির হয়ে যায় রিনি। তবে ছেড়ে দিতে পারে না আসিফকে। তার এতদিনের সম্পর্ক। তবে একটা সময় এতদিনের সম্পর্ক, সম্পর্কহীনতায় রূপ নেয়।

রিনির বান্ধবীরা বা অন্য যে কেউ জিজ্ঞেস করলে জবাব দিতে হয়, অনেকদিন ধরে যোগাযোগ নেই। ৭. তাদের জীবন, তাদের গন্তব্যও পাল্টে যায়। রিনিও একা একা জীবনে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকে। এতকিছুর পরও হঠাৎ হঠাৎ তার হাত চলে যায় মোবাইলে সেভ করা আসিফের নাম্বারে। আজও একবার চলে গিয়েছিল।

কিন্তু নিজেকে সামলে নিল। কী লাভ? যে থাকতে চায় না তাকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে। হঠাৎ-ই রিনির কেন জানি মনে পড়ে যায় সেই অজ্ঞাত ছেলেটার কথা। কি মনে করে সেই ছেলেটার নাম্বার খুঁজতে থাকে সে। পেয়েও যায়।

সেভ করে রেখেছিল। ডায়াল করতেই তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। মোবাইল বন্ধ। এরপর আরো অনেকবার ট্রাই করে রিনি। সেই একই কথা।

রিনি নিজের জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে ওঠে। কেউ রইল না। একদিন অবশ্য এই বিষয়টাও কেটে যায়। কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। তার বিয়ে ঠিক হয়।

রিনি বিমর্ষ হয়। কিছুটা আসিফের জন্য, কিছুটা সেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়া অজ্ঞাত ছেলেটার জন্য। সে অনেকবার ছেলেটার মোবাইলে ট্রাই করেছে। সে বিয়ের আগে তাকে একবার দেখতে চায়। যদিও সে প্রত্যাশা অবশ্য আর পূরণ হয় না।

৮. রিনির আজ বিয়ে হয়ে গেল। বরের নাম, শফিক। ব্যবসা করে। রিনির পছন্দ অপছন্দ কোনো বিষয়ই নাই এখানে। সবার জীবনে একটা বিয়ে করতে হয় সে হিসেবে সেও করেছে।

এখানে যা হয়েছে সেটা দুই ফ্যামিলির বিয়ে। যে বিয়েটা দুজন মানুষের হবার কথা ছিল তা আসিফ নষ্ট করে দিয়েছে। রিনি অনেক মন খারাপ নিয়ে তার বাসর ঘরে বসে আছে। ভীষণ মন খারাপ তার। আসিফের কথা মনে হচ্ছে বারবার।

কী করল আসিফ! হঠাৎ শব্দে চমকে ওঠে রিনি। তার বর ঘরে ঢুকেছে। শফিক। খুব শান্ত একটা লোক মনে হলো রিনির কাছে। শফিক বলল, একটা কথা বলি রাগ করো না।

আমি আমার সারাজীবন ধরে একটা বিষয় ঠিক করে এসেছি, আমার সংসারটা পুরোই একটা বিশ্বাসের ওপর বেঁচে থাকবে। চলো, আজ এই প্রথম অবস্থাতেই একটা কাজ করি। দুজনের মোবাইলের সিম বদল করে ফেলি। কথাটা শুনে ভেতরে কামড় দিয়ে ওঠে রিনির। বলে কি লোকটা? প্রথম দিনেই দেখি সংসার ভাঙার আয়োজন।

শফিক আবারো বলল, তোমার মোবাইলটা কোথায়? রিনি বলল, কোথায় যে আছে কীভাবে বলব? বাসায় যে বোন এসেছে তোমার সাথে তার কাছে হয়তো আছে। দাঁড়াও তাকে ডাকছি। বলে শফিক উঠে চলে গেল। শফিকের আচরণে রিনির ঘাম ঝরতে শুরু করল। কী করছে লোকটা? সে কি সব জানে নাকি? সে কি আসিফের কোনো বন্ধু নাকি? হঠাৎ রিনির ভাবনায় ছেদ পড়ে।

শফিক রিনির মোবাইল নিয়ে এসেছে। এই নাও মোবাইল। সিম খুলে দাও। চলো বদলে ফেলি। রিনি কিছু বলতে পারছে না।

চুপ করে আছে। সে অন্যদিকে ফিরে আছে। শফিকের হাতে মোবাইল থাকতেই হঠৎ করে বেজে উঠল। রিনির তার কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। কে ফোন করল? আসিফ নাকি? রিনি দ্রুত মোবাইলের দিকে তাকাল।

শফিকের চেহারায়ও কিছুটা বিস্ময়ের ছাপ। সে রিনির দিকে না তাকিয়েই মোবাইলটা রিনির হাতে দিল। রিনি রিসিভ করছে না। চরম বিব্রত। শফিককেও বিব্রত দেখাচ্ছে।

শফিক পরিস্থিতি নরমাল করার জন্য বলল, যাও। বাসা থেকে কেউ হয়তো ফোন করেছে। বারান্দায় গিয়ে কথা বলে এসো। রিনির হাত পা কাঁপছে। সে কী করবে? সেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়া ছেলের ফোন।

না ধরলে শফিক কী মনে করবে? ভাবতে ভাবতে সে ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে সেই পুরনো দীর্ঘশ্বাস। অবশেষে তোমার বিয়েও হয়ে গেল? যদি অন্য কাউকে-ই বিয়ে করলে তবে কি দোষ ছিল আমার? যাই হোক। তুমি ভালো থেকো। তবে শেষবারের মতো তোমার কণ্ঠটা শুনতে চাই।

একটা প্রশ্নের জবাব দাও, তোমার স্বামীটা কেমন? উত্তরটা দাও, আর কখনোই ফোন করব না। রিনি কিছু বলতে পারছে না। চুপ করে আছে। ওপাশ থেকে তাড়া দিল, জলদি বলো। রেখে দেই।

রিনি চুপ। আরে তাড়াতাড়ি বলো। তোমার স্বামী এসে পড়বে। বলো। রিনি আর কোনো উপায় না পেয়ে অনেকটা নিঃশব্দেই বলল, ভালো।

শুধুই ভালো? রিনি আর কিছু বলতে পারছে না। স্বামীকে শুধুই ভালো বলে শেষ? স্বামী সম্পর্কে একটু বাড়িয়ে বলতে হয়। রিনি জবাব দিচ্ছে না। হঠাৎ ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে এলো। সঙ্গে সঙ্গে কেটে গেল লাইনটাও।

৯. রিনি ঘরে চলে এলো। শফিক বসে আছে বিছানায়। রিনি বিছানায় গিয়ে বসতেই শফিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রিনি কেমন যে আঁতকে উঠল। দীর্ঘশ্বাসটা পরিচিত।

রিনি যাবতীয় লজ্জা ভেঙে মুখের শফিকের দিকে তাকাল। হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে শফিক। রিনি মুখ ফসকে বলল, তুমি...? শফিক থামিয়ে দিল। আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না। মেয়ে হিসেবে তুমি সুবিধার না।

কথাটা শুনে রিনির মাথায় যেন বাজ পড়ল। রিনি যে ধারণা করেছিল, সেটা ঠিক না। বিয়ের রাতে এই ফোন আসাটা তার বর হয়তো ভালোভাবে নেয়নি। তারপরেও রিনি অবিশ্বাস্য সাহস নিয়ে বলল, কেন? শফিক তার হাসি আরেক দফা বিস্তৃত করে বলল, স্বামীকে শুধুই ভালো বলেই শেষ? স্বামী সম্পর্কে একটু বাড়িয়েও বলতে হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.