আসুন ভালো থাকি আজ (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী পত্রিকায় খবরটি এসেছে। আমাদের সময়.কম শিরোনাম করেছে, ভারতের মদদে শাহবাগের আন্দোলন.., ইত্তেফাকও প্রায় একই রকম একটি শিরোনাম করেছে, পত্রিকাটির শিরোনাম-ভারতের সহায়তায় শাহবাগ আন্দোলন। মানব জমিনও একই কথা বলেছে, তারা অবশ্য খবরটি যে টাইমস অব ইন্ডিয়ার সেটা বলেছে আগে।
শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধীদের কাছে মোক্ষম আরেকটি অস্ত্র তুলে দেওয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই। প্রকাশিত সংবাদটির শুভংকরের ফাঁকির কথাটি বলার আগে অন্তত একটি প্রশ্নের অবতারণা করতেই হয়, কেন এই ধরনের প্রচারণা? এই সময়ে এসে? মনে হয় উত্তরটা সহজ, দেখা যাক:
১. টাইমস অব ইন্ডিয়ার শিরোনামটি হলো এরকমrotesters at Shahbagh in Bangladesh backed by India, এর বাংলা অনুবাদ করতে গিয়েই বিভিন্ন পত্রিকায় বলা হচ্ছে, ভারতের মদদ কিংবা সহায়তায়।
প্রকৃতপক্ষে এর বাংলা অনুবাদ হওয়া উচিৎ ছিল, শাহবাগের আন্দোলনে ভারতের সমর্থন। কারণ, মূল প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে strongest support from neighbour India. প্রতিবেশী কোনও দেশের এমন একটি আন্দোলনে একটি দেশ সমর্থন করতেই পারে, কিন্তু সেখানে মদদ বা সহায়তা করাটাকে সন্দেহের চোখে দেখার অবকাশ আছে বৈকি।
২. এবার আসি প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সবচাইতে মজার দিকটিতে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম আর প্রতিবেদনের মধ্যে রয়েছে কয়েক কোটি মাইল দূরত্ব। যদিও শিরোনাম করা হয়েছেProtesters at Shahbagh in Bangladesh backed by India, প্রতিবেদনের প্রথম প্যারাতেই বলা হয়েছে, protesters at Shahbagh, a busy intersection in Bangladeshi capital Dhaka, have probably their strongest support from neighbour India. এখানে PROBABLY শব্দটি খেয়াল করুন।
শিরোনামে সহায়তার ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও মূল প্রতিবেদনে কিন্তু রয়েছে সংশয়। প্রতিবেদনের এই অংশের অনুবাদ হতে পারে এরকম: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়ে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনে সম্ভবত প্রতিবেশি ভারতের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে। ইত্তেফাক এমনটাই করেছে। কিন্তু এই বাক্যগুলোর মধ্যে PROBABLY শব্দটিকে বেমালুম চেপে গেছে মানব জমিন আর আমাদের সময়.কম (আমি এখন পর্যন্ত তিনটি পত্রিকায় সংবাদটি দেখেছি), মানব জমিন লিখেছে-‘মঙ্গলবার ইন্দ্রানি বাগচির ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই আন্দোলনে প্রতিবেশি ভারতের জোরালো সমর্থন রয়েছে’ আর আমাদের সময়.কম লিখেছে,‘... জোরালো মদদ রয়েছে’! মূল প্রতিবেদনে যেখানে রয়েছে সংশয়, সেখানে আমাদের এই দুটি পত্রিকা নিশ্চিত খবর দিয়ে দিল! কেন? এটা কি শুধুই অদক্ষতা? নাকি অন্য কিছু?
৩. আরও একটি মজার বিষয় হলো, প্রতিবেদনের কোথাও কিন্তু সহায়তা বা মদদের কোনও তথ্য প্রমাণ নেই। আছে কয়েকজনের মন্তব্য, যেগুলোতে শহবাগের আন্দোলনকারীদের প্রশংসা করা হয়েছে।
এতেই কি প্রমাণিত হয়ে গেল যে, এখানে ভারতের ‘মদদ’ রয়েছে?
৪. এই সময়ে এই ধরনের একটি সংবাদ প্রকাশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে নাস্তিকতার প্রসঙ্গ টেনে এনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছিল, সম্ভবত তাতে ভাটা চলে এসেছে। আজকের কালের কণ্ঠ দেখুন। প্রতিথযশা আলেমরা এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে কথা বলা শুরু করেছেন। এই বার্তাগুলো ছড়ানোর ফলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকবে।
আর এ কারণেই নতুন আরেকটি ইস্যু প্রয়োজন। ভারত বিরোধিতার সেই পুরনো এবং প্রায় অকার্যকর কৌশলটিই সম্ভবত সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডুবন্ত মানুষের কাছে খড়কুটোও অনেক সময় টাইটানিক জাহাজ হয়ে দাঁড়ায়!
৫. বাংলাদেশের সকল গণমাধ্যমকেই সংবাদটির ব্যাপারে সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব কামনা করি। প্রচার করতে চাইলে এর সঠিক অনুবাদ প্রকাশ করাই উচিৎ।
(প্রতিবেদনগুলোর লিংক:
১।
Click This Link
২। Click This Link
৩। Click This Link
৪। Click This Link) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।