নিজের ছাঁয়ার কাছ থেকে পালিয়ে থাকার প্রানান্তকর প্রচেষ্টায় আছি।
আমরাতো সব সময় খেলোয়াড়দের সম্পর্কে খোজ খবর রাখি। । কিন্তু তাদের যারা ম্যানেজ করে তাদের সম্পর্কে কতটুকু জানি??তাদের যারা সাহস যোগায়,অসময়ে পাশে থাকে, মাঠের ছোট্ট ডাগ আউটের ঐ কর্তাব্যাক্তিদের আপনাদের কাছে পরিচিতো করতেই আমার এই ছোট্ট উদ্যোগ। ।
ছোটো দল থেকে ধীরে ধীরে বড় দল গুলোগ ম্যানেজেরদের সম্পর্কে আলোচলা করবো। । আজ থাকছে প্রিমিয়ারলীগের তলানীতে থাকা ওয়েস্টহ্যামের কোচ আভ্রাহাম গ্রান্ট ও স্টক সিটির কোচ টনি পুলিস। ।
আভরাহাম গ্রান্ট (ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড)
আভ্রাহাম গ্রান্ট ১৯৫৫ সালের ৪ মে ইসরাইলে জন্ম গ্রহন করেন।
। তিনি ইসরিলের পেতাহ তিকাভা দলের আক্রমন ভাগের খেলোয়াড় ছিলেন। । অন্যান্ন কোচের মতো তিনিও খেলোয়াড় হিসাবে সফল ছিলেননা। ।
মজার ব্যাপার হলো তিনি সব সময় বিভিন্ন দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন,তার পরেও তিনি যখন তার সাবেক দল চেলসির দায়িত্ব গ্রহন করেন তখন তার কোচিং এর Class B লাইসেন্স ও ছিলোনা,যদিও তিনি ইসরাইল জাতীয় দলের দায়িত্বে ছিলেন ২০০২ থেকে ২০০৬ পরজন্ত। ।
১৯৭২ সালে তার নিজের শহরের দল হাপোল পেতাহ তিকাভার দায়িত্ব গ্রহনের মাধ্যমে কোচিং ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করেন। । ২০০৬ এ ততকালীন চেলসি কোচ হোসে মোরিনহোর হাত ধরে ইংল্যান্ডে পা রাখার আগে তিনি ইসরাইলের হেপল পেতাহ তিকাভা,মাকাবি তেল আভিভ,হাপল হাইফা,মাকাবি হাইফা ও ইসরাইল জাতীয় দলের কোচ হিসাবে কাজ করেন।
। এ সময় তিনি ইসরাইলের টোটো কাপ ৪ বার,ইসরাইলী চ্যাম্পিয়নশীপ ৪ বার এবং স্টেট কাপ ১ বার জেতেন। ।
২০০৬ এ ইসরাইল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যার্থ হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন ও চেলসির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। ।
২০০৭ এ হটাত করে হোসে মোরিনহোকে বরখাস্ত করা হলে তিনি চেলসির ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব গ্রহন করেন। । সেই বছর তিনি চেলসিকে প্রথমবারের মত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্সলীগের ফাইনালে ওঠান,পরে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কাছে টাইব্রেকারে হেরে যান। । যদিও তিনি চেলসি কে নিয়ে প্রিমিয়ার লীগে রানার্সাপ,কার্লিং কাপে রানার্সাপ ও চ্যাম্পিয়ন্সলীগে রানার্সাপ হন তার পরেও তাকে মওসুম শেষে বরখাস্ত হতে হয়।
।
২০০৯ এর অক্টোবরে তিনি পোর্টস্মাউথের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসাবে যোগ দেন,এবং নভেম্বরে দলের ম্যানেজার পউল হার্টকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে পোর্টসমাউথের ম্যানেজারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। । ২০০৯-২০১০ মওসুমে পোর্টসমাউথ রেলিগেটেড হয়,তথাপি পোর্টসমাউথ এফ.এ. কাপের ফাইনালে ওঠে,যেখানে চেলসির কাছে পরাজীতো হয়। ।
আভ্রাহাম গ্রান্ট পদত্যাগ করেন। । তিনি পদত্যাগের সময় পোর্টসমাউথের সাপোর্টারদের কাছে একটি খোলা চিঠি দেন যা শুরু হয় এই ভাবে “it was the hardest decision I have ever had to make... ...” । ।
জুন ২০১০ তে গ্রান্ট তার বর্তমান দল ওয়েস্টহ্যামের দায়িত্ব গ্রহন করেন।
। বর্তমানে লীগ টেবিলে তলানিতে থাকা ওয়েস্টহ্যাম কার্লিং কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে নিজেদের মাঠ উপ্টন পার্কে ৪-০ তে পরাজীতো করে সেমিফাইনালে পদার্পন করে। । কিন্তু তাদের প্রিমিয়ার লিগের পার্ফরমেন্স খুব হতাশা জনক,গত বারের পোর্টসমাউথের মতো এই বার ওয়েস্টহ্যাম রেলিগেশনের চোখ রাঙ্গানী দেখতে পাচ্ছে। ।
আভরাহাম গ্রান্ট সব সময় নবীন খেলোয়াড় দের সুযোগ দেন,তিনি যে খানেই গেছেন কম বয়সী প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের অগ্রাধীকার প্রদান করেছেন। ।
ব্যাক্তিগতো জীবনে গ্রান্ট ইসরাইলের টি.ভি. উপস্থাপিকা যুফিত গ্রান্ট এর সাথে বিবাহীতো,এবং তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। । তার ভাষ্যমতে তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই (দাদা,দাদী,ফুফু,চাচা) ২য় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের গণহত্যার সময় মারা যায়।
। তার বাবাও তার ২ হাত হারান। । ২০০৮ এ তাকে একবার অজানা ঠিকানা থেকে মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়েছিলো। ।
তিনি অজানা ঠিকানা থেকে একটি সাদা পাউডারের প্যাকেট পান,যা পরবর্তীতে নিরাপদ প্রতীয়মান হয়। ।
টনি পুলিস (স্টোক সিটি)
টনি পুলিসের পুরো নাম এন্থনি রিচার্ড টনি পুলিস। । জন্ম ১৬ জানুয়ারী ১৯৫৮ যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে।
। খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি ব্রিস্টল রোভার্স, নিউপোর্ট কাউন্টি সহ কয়েকটি দলের হয়ে রক্ষন ভাগের খেলোয়াড় হিসাবে খেলেন। । সিনিয়র ফুটবলে তিনি মোট ৩২৪ ম্যাচ খেলে গোল করেন ৯ টি। ।
ছোট থকেই তিনি খেলোয়াড়ী জীবনের পাশাপাশি প্রশিক্ষক হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে মনোনিবেশ করেন। । মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি ফুটবল এসোসিয়েশনের কোচিং ব্যাজ ধারন করেন এবং প্রথম শ্রেনীর (class A) কোচিং লাইসেন্স লাভ করেন মাত্র ২১ বছর বয়সে। ।
সিনিয়র দলের ম্যানেজার হিসাবে তার হাতেখড়ি বার্নমাউথের সহকারী কোচ হিসাবে,যেখানে তিনি বর্তমান টটেনহ্যাম ম্যানেজার হ্যারি রেডন্যাপের ডান হাত ছিলেন।
। সেখানে তিনি ম্যানেজার এবং খেলোয়াড় উভয় পদেই পাশাপাশি নিয়োজিতো ছিলেন। । এর পর তিনি যান ইংলিশ লীগ-২(ইংল্যান্ডের চতুর্থ শ্রেনীর লীগ) এর দল গিলিংহ্যামে যেখানে তিনি ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ।
১৯৯৯ সালে তিনি ব্রিস্টল সিটির দায়িত্ব নেল ও এক বছর পরেই তিনি ২০০০ সালে পোর্টসমউথের দায়িত্ব গ্রহন করেন। । সেখানে তিনি ২টি মওসুম পার করেন। । ২০০২-০৩ সেজনে তিনি স্টোক সিটির দায়িত্ব নেন ২০০৫ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
। এরপর তিনি আবারো ২০০৬ সালে দ্বিতীয় বারের মত স্টোক সিটির কোচিং পদে আসীন হন এবং তাদের ২০০৭-০৮ সেজনে চ্যাম্পিয়নশীপ থেকে প্রিমিয়ারলীগে উন্নীত করেন,যেখানে তারা পর পর ২ সিজন রেলিগেটেড না হয়ে টিকে আছে। ।
ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ারে তিনি ছোটো ও কম বাজেটের দল নিয়ে সফলতা অর্জন করার জন্য নামকরা। ।
তিনি ছোটো ছোটো দলের দায়িত্ব নিয়ে কখনো রেলিগেটেড হননি,বরং স্টোকের মত একটি দল কে তিনি চ্যাম্পিয়নশীপ(ইংল্যান্ডের ২য় শ্রেনীর লীগ) থেকে প্রিমিয়ারলীগে উত্তোলোন করেন এবং সেখানে ২ টি সফল মওসুম পার করেন। । অবশ্য প্রচন্ড ডিফেন্সিভ মানসিকতা এবং ফিজিক্যাল ফুটবল (শারিরীক শক্তির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা) খেলার জন্য তিনি সমালোচিতোও হন। । টনি পুলিস মোট ৬ টি দল কে বিভিন্ন সময়ে পরিচালনা করেন।
। মোট ৭৬৮ ম্যাচের বিপক্ষে তার জয় ২৮৪ টি,ড্র ২৩৩ টি, পরাজয় ২৫১ টি। ।
স্টাফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে তাকে একটি সম্মান জনক ডিগ্রী প্রদান করা হয়। ।
তিনি একজন এথলেটিক,এবং ২০০৯ সালে একটি চ্যারিটি ম্যারাথনে অংশগ্রহন করেন,এবং ৪ ঘন্টা ৩১ মিনিটে তিনি দৌড় শেষ করেন। । এছাড়া ডোনা লুইস ট্রাস্টের জন্য অর্থ উত্তোলোন করতে তিনি ২০১০ সালে মাউন্ট কিলিমানজারো সামিটে অংশ গ্রহন করেন। ।
আগামী কিস্তিতে থাকছে সান্ডারল্যান্ডের স্টিভ ব্রুস ও ব্লাকবার্ন রোভার্সের স্যাম আলাডাইস (কাল রাতে বরখাস্ত হয়েছেন)।
।
সাথে থাকবেন আশা করছি। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।