শ্রেণীসংগ্রাম যেন নিয়মের ভাগ্যবান ঠাপ; আমাদের ঘরে তাই বিশ্বায়ন স্বামীর প্রতাপ
মুক্তগদ্য লেখার প্ররোচনা আসলে আমার দরজা জানালা বন্ধ হয়ে যায়, আর গদ্যে প্রাসঙ্গিক নিষ্ঠা যতটা বজায় রাখতে হয় সেই প্রসঙ্গকেও সাহসী মোকাবেলা করা নির্ভর করে কবির পথ ও পাঠাগারের উপর, নিজস্ব অবস্থান বুঝে এই মন্তব্য করলাম। আর যতটা মুক্তহস্তেই লিখিত হোক না কেন বিষয়ের বহুগামিতা যেন সামর্থ্যের ঝামেলা না হয়ে দাড়ায়, তাই 'ভাবতে ভাবতে ঝামেলায় পড়া'র নিষ্পাদন হয় কবিতাকে দোষারোপ করে। কতো হোলপাকা কতো বুলিয়ান ভাগে কবিতাকে বিভক্ত করলো, নাই, আছে, তাদের ইয়াত্তা থেকে মুক্তির জন্য যেসব কবিতা আমার ভালো না লাগে তাদেরকে আমি ঝামেলাযুক্ত কবিতা বলি। এইটা আমার ঢাল। তাহলে সেই অর্থে মুক্তগদ্য আমার তলোয়ারবাজি।
প্রতিটি কবিতাই খুব সহজে নাকচযোগ্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তাই সাবধান হতে হয় বাকযুদ্ধে - তারপরও ব্যক্তিগত ধারণার মোটাদাগ প্রীতি নির্ধারণ করে পক্ষ বিপক্ষ - আপেক্ষিক এই বিচারে আমরা জানি 'আমার কবিতা কেমন?' প্রত্যেক কবিরই নিজের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর, ''আমার সবগুলো কবিতা এমনই যে আমি খুশি এগুলো আমার লেখা। '' পৃথিবীর ব্যস্ততম সড়কেও যে মাথায় এই উত্তর ভেসে যায় সে মুখে ফুটে ওঠা হাসি ছড়িয়ে যায় ভিড়ের বৃত্ত আর এতক্ষণ যে প্রক্রিয়ার কথা বললাম তার নাম প্রশান্তি। কবিতার প্রতিত্তুরে ভাবলেশশূন্য মুখ হয়তো চোখে পড়ে না কারো - তারপরও হলপ করে বলি কবিতার সামনে দাড়ানো সবগুলো মুখই অভিব্যক্তিহীন- মানুষের চেতনার মহাবিশ্বে ব্যক্তিগততম জায়গা এটা
এমন আত্মতৃপ্ত-চিন্তার আঁচড়ে কবি কিন্তু দূষিত হয় না
প্রমাণের জন্য পেছনে ফেলে আসা রূপকথা যেমন গেরিলার হাত ধরে হয় কুসংস্কার - কবিতার কাছে বিশ্বাস আর ভালবাসা তেমন সম্পর্কিত নয়
কিন্তু এইতো সেদিন বায়রন আমার কথার প্রতিবাদ করে বলল, ' But I hate things all fiction...there should be always some foundation of fact for the most airy fabric- and pure invention is but the talent of a liar.' - April 2, 1817
তারও কিন্তু ইচ্ছা ছিল শুধু লেখক পরিচয়ে পরিচিত না হবার -
সত্য/মিথ্যার প্রশ্ন এড়িয়ে তাই নিজের সাক্ষাতকার নেয়া দূষণ না
জানি, কবিতার শিরোনাম জিনিসটা অদ্ভুদ, কখনো ঝট করে আবার কখনো আরোপ করা লাগে - আরো অদ্ভুদ কোন কোন একক পংক্তি, পথের মাঝখান থেকে পাওয়া আর না পাওয়ার বেলায় চুরি করা সেই লাইন লিখে রাখতে না পারলেও অন্তত মনে রাখতে কত চেষ্টা, আর তারচেয়েও জোর চেষ্টা পরে সেটা কোথাও ফিট করতে - ইদুর আর ম্যাগপাই পাখির মতো খাওয়া প্রথমে খোসা তারপরে বাদাম
অবশ্য অন্যান্য উপায়ও আছে - বহুবচনের আধুনিক পরবর্তী পথে হারানো সিদ্ধান্তের মতো, কখনো কখনো, আর সবসময়ের মতো তখনও কিন্তু চোখগুলো থাকে পথের অক্ষরে যদিও কবিতায় শব্দের চেয়ে ক্ষুদ্রতম কোন একক হয় না
যেমন আমরা এও জানি, বাক্যাংশের মিছিলে প্রতিবাদ এবং প্রশমন, আবার সেই বুলিয়ান হ্যা এবং না, হাত ধরাধরি করে চলে। তাই বাক্যের উৎস জিভ ন্যাংটো তরবারি হলে তাকে সময়ে সময়ে কোন কিছুর ভিতরে ঢুকতে হয়, খাপের প্রয়োজন আছে। বন্ধ করা হোক বৈচিত্র্যের দোহাই দেয়া নিরীক্ষামূলক অপ্রয়োজনীয় খুন খারাপী।
পাঠকের চাহিদা মেটানো বা দৃষ্টি আকর্ষণী কৌশল হিসাবে তাই শব্দের স্বাভাবিক পারম্পর্য কোন কারণ ছাড়া ভাঙা মোটেও কাব্যিক নয়, এটা থলথলে উত্তরআধুনিকতা; তবে জেনেশুনে কবিতায় যৌক্তিক বিন্যাস নিয়ে সন্দেহ তৈরী করা ইতোমধ্যেই পরীক্ষিত এক প্রয়াস, তবে তার প্রয়োজন কতোটা প্রমাণিত সে বিষয়টাও সন্দেহজনক
আর যে কবিতা জেনেশুনে যৌক্তিকতা ভাঙার চেষ্টা করে তাদের খুবই রসালো হতে হয়, নাহলে কৌতুক। অনেক সময় অলঙ্কারবহুল যুক্তিও বাগাড়ম্বরপূর্ণতা দোষে অযৌক্তিক ঠেকে, যদিও হয়তো সেখানে আছে কল্পনা আর বাস্তবের সম্মিলন, তাই বলে শব্দের গুরুত্ব কিন্তু ছন্দপ্রকরণ বা ব্যকরণে নয়, বরং মাত্রা, লয় আর তাদের উঠানামায় - শব্দকে ব্যবহার করতে হয় এর সর্বোচ্চ কাব্যিক মূল্যে। 'আধুনিক' ও 'আধুনিকপরবর্তী' কবিরা শ্রুতিগত মান আর শব্দযন্ত্রে তার প্রভাব আর একই সাথে প্রচলিত মানে থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। ভেঙে ফেলেন ক্রিয়া এবং স্বর ও ব্যঞ্জণ বর্ণের ক্রমিকতা, এটা কবিতার কেন্দ্রীয় প্রণোদনা, এজন্য এর কোন শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই।
পাঠকপ্রিয়তা উদ্দেশ্য না হলেও প্রত্যেক কবিরই আছে কৌশল, বুদ্ধি মতামত আর মেরামতে ভরপুর হাতিয়ার বাক্স, টুলবক্স, পাঠকের সাথে মিথষ্ক্রিয়া ঘটানোর জন্য, উৎপ্রেক্ষার ভাষায়।
যেমনভাবে পংক্তিতে ধ্বন্যাত্মক শব্দ কবিতায় নাটকীয়তা সৃষ্টি আর একই সাথে কবিতার মানে ও প্রকৃতি বদলে দিতে পারে তেমনি অনুপ্রাস, শিসধ্বনি, স্বরসাদৃশ্য আর ঐকতান, এরা সবাই নির্ভর করে ব্যঞ্জণ ও স্বরবর্ণের শ্রুতিগত এইসব গুণাগুণের উপর।
কবিতায় 'মত' শব্দটা অগ্রহণযোগ্য, শুধুমাত্র উপমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম, তাও বাংলার মহানতম কবি আর বিশ্বসাহিত্যের তাঁরও পূর্বজ কবিদের বদৌলতে এই পথও বন্ধ। এতে বাংলা কবিতায় রূপকের গুরুত্ব বেড়ে গেল, কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ে গেল রূপকই কবিতা, তাই জীবনানন্দীয় ঘোর যুক্ত এবং মুক্ত দুটোই হওয়া খুব সোজা, বাংলা কবিতার এই বাঁকে যেটা এখনো সোজা হয়নি তা হলো একই পংক্তিতে রূপক আর উপমার সহজাত গলাগলি। এই নতুন ধরনের লেখালেখি নিয়ে সবসময়ই অনেক কথা বলা হয়, 'বিমূর্ত, খোলাবাক্য... ইত্যাদি। ' কিন্তু তা যে দ্বিমাত্রিক তথা ব্যঙ্গছন্দকে এর নিজস্ব মান থেকে সরিয়ে আনে, কবিতার মেদবহুল অংশ ছাটাই বলতে এতটুকুই এর প্রভাব ব্যকরণের উপর; তবে শব্দের ছাটাই হয়েছে দেদারসে, সহজ নিশানা তো তাই
শব্দকে যদি পৃষ্ঠতল হিসাবে ভাবি, তাহলে কবিতার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে আঙ্গিকের গুরুত্ব বাড়ে, কিন্তু ব্রেইল ব্যবহার করা আবৃত্তিতে কবিতা বকাবাদ্য করে তার নিজেরই দৃশ্যমান সামগ্রিক শরীরকে, বিশেষ কোন শব্দকে নয়, কোন একক শব্দের খারাপত্বও ঢাকা পড়ে পঁচা অঙ্গসৌষ্ঠবে, শারীরিক বিষয়টাই এমন - প্রয়োজনো কখনো কখনো মেদের বদলে সিলিকন
এদিকে ঘনীকরণ বলে শব্দের উপর যে জোর দেয়া হচ্ছে, তাকে পাঠের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি অথবা পদক্ষেপ নিতে হয় একসাথে কবি এবং পাঠক উভয়কেই, একটা সময়ের পর যখন উভয়ই সাবলীল তখন এসব শব্দের পাঠোদ্ধারে, আর জটিল উপমা অথবা দীর্ঘ বিস্তারী রূপক অনুধাবনে একই মাপের দুর্বোধ্যতা পাড়ি দিতে হয় - ঘনীকরণ এখন ঘরোয়া একটা দিক
কবিতার ঘরকে মজবুত করতে তাই বলছিলাম দৃষ্টিসর্বস্ব আঙ্গিকের প্রভাব এখন আবার নিম্নমুখী, স্বস্তিকর প্রবণতা, এতে সম্ভবনা বাড়ে রূপক এবং তাতে ভর করা যুক্তির, ইচ্ছা করেই উপমার গুরুত্ব কমিয়ে দিলাম; সেইসব যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হওয়ার যা আগে কোণাকাঞ্চির আবডালে ছিল, খোলাসা হচ্ছে কাব্যভাষার বিচারে অপ্রয়োজনীয় নিরীক্ষার কাঠিন্য দেয়াল -
একাধিক প্রচেষ্টা দেখেছি যেখানো সমালোচনার স্বার্থে রূপককে উপমারই ঘনীভূত রূপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, অবশ্যই সঠিক, কিন্তু এও ঠিক যে পূর্বে উল্লেখিত রূপকের দৈর্ঘ্য বর্তমান কবিতার সবচে দৃশ্যমান খটকা - প্রবণতাটা সাম্প্রতিক শুধু এই কারণেই খটকা শব্দটা ব্যবহার করলাম।
কিছু রূপকের ডানা এতই বিস্তারী, লক্ষ্যবস্তুকে ছোঁ মারা ছাড়াও চাইলে সহজেই সমগ্র পংক্তিকে এমনকি কখনো কখনো পুরো কবিতাকে তার ছায়ায় খারাপ ও ভালো উভয় প্রকারের গ্রাসই করতে পারে - আঙ্গিকের দেয়াল যেহেতু ভেঙে পড়ছে তাহলে এটাই বোধহয় নতুন আড়াল
সদ্যজাত এই রূপকতত্ত্বের লক্ষ্যই হচ্ছে কবিতা অনুধাবনের গঠনতন্ত্রে রূপকের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। লক্ষণা বা শব্দের আলঙ্কারিক প্রয়োগে আর ছক বা পরিলেখ'র প্রতিচ্ছবি হিসাবে রূপকের ভূমিকা ক্রমানুসারে আধুনিক ও আধুনিকপরবর্তী, সমালোচকদের প্রাপ্তি। বাক্যপ্রকরণ শুধুমাত্র আদর্শ অবধারণিক কাঠামো, কিন্তু উদ্দেশ্য কখনোই চরম না, বিধেয়ও না, আমরা শুধু সম্ভাব্য বিভিন্ন কোণ থেকে একে দেখতে আর অনুধাবন করার চেষ্টা করতে পারি - এর অর্থ এই না যে রূপকের যে ভূমিকা থাকে একাধিক প্রসঙ্গের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপণ করার সেই প্রাতিষ্ঠানিক নড়বড়ে, রূপক এখনো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিচালিত করে, পাঠককেই এক্ষেত্রে হতে হয় সুচতুর, সচেতন বলা উচিত ছিল। প্রসঙ্গের এই সাম্প্রতিক আদান প্রদান সেই একই রকম প্রণোদনা, কবিতার প্রাণকেন্দ্র, সেই একই রকম শাস্ত্রীয় ভিত্তিহীন। যেহেতু ঘনীভূত উপমা বা বিস্তারিত সাদৃশ্য দ্বারা একে প্রতিস্থাপণের পায়তারা হয়েছে, বিদ্যমান, সমান্তরাল পদাম্বয়ী প্রয়াস যেহেতু ইতোমধ্যেই আলোচ্য, সেহেতু স্বীকার করি রূপক একটি বাক্যিক সাজসজ্জা, হয়তো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, কিন্তু স্বাতন্ত্র্যসূচক নয়।
আরো নঞর্থক ভাবে অযৌক্তিক, তবে কবিতার স্বার্থে এই অযৌক্তিকতা ধনাত্মক। রূপকের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী। একে কোন প্রকার সাহিত্যিক বিবৃতির দ্বারা প্রতিস্থাপণ করা যাবে না, কারণ এটা খোলাবাক্যের সর্বোচ্চ পর্যায়, রূপকের তুলনারাশির মাপকাঠি, একক নেই; এর মুখোমুখি অন্য কোন বর্ণণা টিকতে পারবে না কারণ এক গ্রন্থিবদ্ধ করার পন্থা অনির্দিষ্ট। রূপক কবির জন্য প্রতিচ্ছবি আর পাঠকের জন্য প্ররোচনা।
এখনো সমস্যা থাকে সঙ্কেত আর রূপকের পার্থক্যে, সাদৃশ্যতা যদি এই দুয়ের অভেদ, তবে সাদৃশ্যতার কাল তথা স্থায়ীত্ব আর প্রাসঙ্গিকতায় এদের অমিল।
রূপকের নিয়োগ করা হয় তাৎক্ষণিকতার প্রেক্ষিতে, আর সঙ্কেত সীমিত প্রসঙ্গে। সঙ্কেত কেন্দ্রিক এই পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত নিমার্ণে পুরো কৃতিত্ব প্রাচীণযুগ থেকেই একমাত্র ধর্মশাস্ত্রের, আর তারপরে সংলগ্ন দর্শনবিদ্যার, সঙ্কেত তার দুই উৎসসমেত একই রূপে এখনো টিকে আছে, এর সামাজিক সু ও কু দুটো প্রভাবই প্রসঙ্গত কারণে এড়িয়ে যাব, যেহেতু সাহিত্যে এর প্রভাব হিসাবে অবশ্যই উল্লেখ করবো যে, সঙ্কেতের সাথে রূপকের এই পার্থক্যই রূপকের স্বাতন্ত্র্যতা - ধর্মগ্রন্থে যে উপায়ে, যেসব রূপকের উপস্থিতি তারাও অনেক সময় নির্দেশনাপূর্ণ খোলাবাক্যের চিত্রকল্প হতে পারে, সার্থক রূপকের আপাত তিনটি শর্তই হয়তো পূরণে সক্ষম, তারপরও এর প্রাসঙ্গিকতা, যদি ধরে নেই সাহিত্যের ব্যবহারিক কোন প্রয়োগ নেই, শুধু সাহিত্যের খাতিরে এবং বিচারে যথেষ্ঠ নয়।
নিয়ন্ত্রিত ভাষাবিজ্ঞান আর পর্যায়ক্রমিক ব্যকরণে শব্দের মানেকে স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে ধরে যে ব্যাখ্যা তাকে শুধুমাত্র সাংখ্যিক ভাষার উপাদান মনে করি, মানব-ঘটনা আর চিন্তার যোগসূত্রকারী অঙ্কে তাই শাস্ত্র যে দ্বৈতসত্ত্বার ধারণায় আবদ্ধ, কবিতায় কাম্য সাম্যাবস্থায় যেহেতু অন্তর্নিহিত আর দৃশ্যমান এই দুটো মানে চাই, তা গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে। যদিও কবিতা সমসময়ই সাংখ্যিক ভাষাকে ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে দার্শনিক ভঙ্গিতেই দেখতে পছন্দ করে, তারপরও এগুলোই শুধু কারণ না রূপকের ব্যকরণের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার। যেটুকু তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার চল তার উৎপত্তিও মাত্র এক প্রজন্ম পুরনো আর বিকাশ তো এই দশকেরই ঘটনা, তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ নয় - আর এই তাত্ত্বিকতারও মূল মতবাদ হলো যে রূপক ক্রিয়া করে ভাবনার স্তরে, পূর্বে উল্লেখিত একাধিক প্রসঙ্গের মধ্যে যোগসূত্রস্থাপনকারী রূপকের সেই ভূমিকায় আভিধানিক অর্থগত দিক থেকে রূপক যতটা শাস্ত্রভুক্ত ছিল তাও যেন শেষ হয়ে গেল এতে করে, আমার মতে; এখন এরা সম্পর্কিত করে একাধিক চিন্তাক্ষেত্র, যদিও এর বিদ্যমান তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা হলো, 'উৎস' ক্ষেত্র আর 'লক্ষ্য' ক্ষেত্র, সেই ঘুরেফিরে ধারণাতীত সম্ভাবনাকে দুটো পারস্পরিক সম্পর্কিত কিন্তু ভিন্ন সত্ত্বা নামে ডাকা, তবে এই ধারণাগত রূপকতত্ত্ব এখনকার আধুনিকপরবর্তী রূপককে প্রচলিত ভাষাতাত্ত্বিক রূপক বা রূপকায়িত ভাব থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করে, অবশ্যই আরো উল্লেখযোগ্য মনে করি এই স্বাতন্ত্র্যতা, রূপকের এই নবতর বিশেষণ; অবশ্যই এই ধারণাগত রূপক প্রচলিত ভাষাতাত্ত্বিক রূপকের প্রচলনের সীমিত ভাষাভিত্তিক আঞ্চলিক গন্ডি ভেঙে বেরিয়ে আসে তবে এতে ধারণাকে এতটা প্রাধান্য দেয়ার কারণে লক্ষ্যক্ষেত্র বা পাঠকের নিজস্ব ভাবনা অনুবাদের বিষয়টা ধর্তব্যের বাইরে চলে যায়, যদিও আমার মতে যোগ্য কবিহাতে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ গুণে এই দুর্বলতাও হয়ে ওঠে হাতিয়ার, প্রসঙ্গের যোগসূত্র ইচ্ছাকরে দেখানো অথবা লুকানোর বেলায়।
আর ব্যকরণিকদের অসুবিদাও ওখানেই, তুলনামূলক সমালোচনার জন্য একই ধারণাগত রূপকের খুব বেশি প্রমাণ মেলা ভার
দর্শনের সেই চিরায়ত আকাঙ্খা, সেই চিরায়ত চরম সত্যের সন্ধানে এ যেন এক বিরাট আঘাত - জ্ঞানখন্ডের এই ধারাটি এতদিন যেভাবে অভিজ্ঞতা আর রূপকায়িত বর্ণণার সঠিক অবস্থান হিসাবে ভাষার অধ্যায় চিহ্নিত করেছিল - তার সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ - রূপক এখন চিন্তার অধ্যায়ে বিরাজ করে। ভাষার রূপকনির্ভরশীলতা প্রচলিত দার্শনিক আর ভাষাতাত্ত্বিক মানভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে শিখিয়েছে, দেখিয়েছে যে রূপক কবিতার উপাদান নয়, এমনকি ভাষারও নয়; রূপক ভাবনার ভিত্তি, ভাবনার তুলনামূলক একক যা আবার পরিবর্তনশীল ধ্রুবকের মতোও আচরণ করে, এই 'একক' কৃতিত্ব দেয়াটা অবশ্য আমার দাবি, প্রমাণিত কিছু না -
যদিও বাংলাকে অনেকে বরং ক্রিয়ানির্ভর ভাষা বলে রূপকনির্ভরশীলতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন, করেন, অসম্ভব দুষ্ট প্রয়াস, ভাষার সব ব্যকরণ ও তার ভিত্তি সে সবই আক্ষরিক - কোনটাই রূপকায়িত অভিজ্ঞতা না - এটাও একটা মিথ্যা বিবৃতি
আর শুরুতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলাম কবিতায় অবস্থিত পুরাণ, এই ধর্মগ্রন্থ, কাহিনী, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, সত্যমিথ্যা, এই বুলিয়ান আচরণ ও অন্যান্য অনুষঙ্গ, এগুলোকে যৌক্তিক বিন্যাস নামে ডাকা, ভেঙে ফেলা, এসবের আগে মনে রাখতে হয় শক্তিশালী পংক্তির সত্যতা প্রমাণের আগ পর্যন্ত তার বিশ্বাসযোগ্যয় দাড়ানোতেই আত্মপ্রত্যয় আর মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরেও এর বাচনিক মৃত্যু ঘটে না, কবিতায় তথ্যের কোন গুরুত্ব নেই, তাকে কিভাবে প্রেম দেয়া হলো সেটাই লক্ষ্যবস্তু - তাই বলছিলাম আজকে রূপকই কবিতা...বক্তব্য আর বিষয়ের জটিলতা যেহেতু বিবেচনা সাপেক্ষ, তাই ব্যাখ্যায় ভারাক্রান্ত না হোক, মুক্তগদ্যকেও আবদ্ধ করার সময় আসে - মুক্তগদ্যকে আমি ভয় আর প্রেম করি। সাম্যাবস্থাহীন এই নিক্তি ঠিক যেন কবিতার শব্দ বাছাই, শিল্পের চিরায়ত সেই দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব; দুইপক্ষ যথাক্রমে পছন্দনীয় উপাদান আর বিষয়ের অবদান...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।