আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিন্নধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ব্রিটেনের পুলিশ।

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/

গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করার পর অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা তাঁর পক্ষে জামিনের আবেদন করলে বিচারক হাওয়ার্ড রিডল তা নামঞ্জুর করে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে সকালে ব্রিটিশ পুলিশের কাছে অ্যাসাঞ্জ আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। খবর বিবিসি, এএফপি ও এপির। এদিকে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি ভিসা জানিয়েছে, তারা উইকিলিকসের সংশ্লিষ্ট সব ধরনের আর্থিক লেনদেন স্থগিত করেছে।

কোম্পানির মুখপাত্র গতকাল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উইকিলিকসের সঙ্গে যুক্ত সব ধরনের আর্থিক লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রনির্মাতা কেন লোচ, সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক জেমিমা খান ও সাংবাদিক জন পিলজার প্রত্যেকেই অ্যাসাঞ্জের পক্ষে জামিন হিসেবে ২০ হাজার পাউন্ড দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আসামি জামিনে মুক্তি পেলে পালিয়ে যেতে পারেন জানিয়ে আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। বিচারক বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। জামিন দেওয়া হলে পরে তিনি নিজেকে আইনের হাতে তুলে দিতে ব্যর্থ হতে পারেন।

’ আদালত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অ্যাসাঞ্জকে রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেন। আদালতে অ্যাসাঞ্জকে শান্ত দেখা গেছে। তাঁর পরনে ছিল নীল রঙের একটি কোট ও সাদা শার্ট। আদালতের কাছে নাম, পরিচয় জানান তিনি। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা আবার আদালতের কাছে অ্যাসাঞ্জের জামিনের আবেদন করবেন।

সুইডেনে ৩৯ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুই নারী। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি এবং বেআইনিভাবে জোর খাটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। গত আগস্টে সুইডেনে অবস্থানের সময় তিনি এসব অপকর্ম করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দেশের কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবশ্য ওই সব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিহিত করে তা অস্বীকার করেছেন অ্যাসাঞ্জ।

তবে অ্যাসাঞ্জের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সুইডেনের তদন্ত কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তার তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের কোনো যোগসূত্র নেই। এর আগে লন্ডন মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরের একটি থানায় অ্যাসাঞ্জকে আসতে বলা হয়। তিনি সেখানে হাজির হলে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বলে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পর ব্রিটেনের পুলিশ অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী মার্ক স্টিফেনসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দুই পক্ষের আলোচনায় ঠিক হয়, অ্যাসাঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করবেন। সে অনুযায়ী অ্যাসাঞ্জ থানায় গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত মাসে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ একই অভিযোগে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় যথাযথ তথ্য না থাকায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তা কার্যকর করেনি।

অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাঁর আইনজীবী মার্ক জানান, লন্ডন মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা তাঁকে ডেকে বলেন, সুইডেন থেকে তাঁদের কাছে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এসেছে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। মার্ক বলেন, তাঁর মক্কেল অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী এবং অভিযোগের খাতা থেকে নাম প্রত্যাহার করতে চান। তাই আত্মসমর্পণে রাজি হন। অ্যাসাঞ্জের আরেক আইনজীবী জেনিফার রবিনসন বলেন, ‘সুইডেনের তদন্ত কর্মকর্তাদের তিনি স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের সমন না পাঠিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাটা অন্যায্য।

’ তিনি বলেন, অ্যাসাঞ্জ এখনো তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন না। কারণ অভিযোগগুলো সুইডিশ ভাষায় লেখা এবং এ ভাষা তিনি জানেন না। অভিযোগ ইংরেজি ভাষায় না দেওয়াটা মানবাধিকার ও ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসের লঙ্ঘন। সম্প্রতি আড়াই লাখ মার্কিন গোপন কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেয় উইকিলিকস। এর আগে এই ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধসংক্রান্ত বিপুল পরিমাণ মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে।

এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসাঞ্জকে আটক করার দাবি ওঠে। উইকিলিকসের ওয়েবসাইটটিও ব্যাপক আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা, তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ-তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা, ওয়েবসাইট হ্যাক করা, প্রথম ডোমেইন নেমটি বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা ধরনের চাপ রয়েছে ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষের ওপর। উইকিলিকস গতকালও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে গোপন নথি ফাঁস করেছে। এসব নথিতে বলা হয়, রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও পোল্যান্ডকে রক্ষায় গোপন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ন্যাটো।

এর আগের দিন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন স্থাপনার খবর ফাঁস করে উইকিলিকস। অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তারে সন্তোষ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে আফগানিস্তানে সফররত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস গতকাল বলেন, ‘এটি একটি ভালো খবর। ’ গত সোমবার মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার বলেন, ওয়েবসাইটটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএস এসপিওনাজ অ্যাক্ট ছাড়াও অন্য আইন ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করছেন তাঁরা। গ্রেপ্তার উইকিলিকসকে থামাতে পারবে না: উইকিলিকসের মুখপাত্র ক্রিস্টিন রাফনসন বলেছেন, ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হামলা।

তবে এই গ্রেপ্তার তাঁদের সংগঠনকে গোপন তথ্য ফাঁস করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। নোয়াম চমস্কির সমর্থন: জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন সাংবাদিক নোয়াম চমস্কি। অ্যাসাঞ্জের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে গিলার্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘অস্ট্রেলিয়ার সরকারের পক্ষে আপনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করুন, অ্যাসাঞ্জ যাতে যথাযথ নিরাপত্তা ও অধিকার পান, তা নিশ্চিত করা হবে। ’ এদিকে ব্রিটেনে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তারের পর অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদি অ্যাসাঞ্জকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে তারা সম্ভবত তাঁকে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে। উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা গ্রেফতার কারাগারে পাঠানো হয়েছে : গোপন তথ্য প্রকাশ অব্যাহত থাকবে।

আমারদেশ। বিশ্ব তথ্যযুদ্ধের নায়ক গ্রেফতার। নয়াদিগন্ত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।