আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাইভেট পাব্লিক ক্যাচাল - আমিও একটু ঘী ঢালি

একজন নগন্য মানব।

দাবী ১: পাব্লিকে যারা ভর্তি হয় তারা সবাই মেধাবী। যারা মেধাবী না তারা চান্স না পেয়ে প্রাইভেটে ভর্তি হয়। দাবীটি অনেকাংশেই ভুল। ধরেন আপনি অনেক মেধাবী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। চান্সও পেয়েছেন। তবে আপনার রোল মেরিটলিস্টে একটু নিচের দিকে এসেছে সামান্য কয়েকটা নম্বর কম পাবার কারনে। আপনাকে একটু কমদামী কিছু সাবজেক্ট অফার করা হলো। তখন আপনি কি করবেন? সত্যিকার অর্থে দেখা যায় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আকর্শনীয় সাবজেক্ট আছে হাতে গোনা কয়েকটি যার আসন সংখ্যা যৎসামান্য।

তাই দেখা যায় সেসব সাব্জেক্টে অল্পকিছু মেধাবী ভর্তি হচ্ছে আর বাকিরা অন্য কোথাও চেষ্টা করছে। আর বাদ বাকী যে শতশত সাব্জেক্ট রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাতে ভর্তি হচ্ছে অপেক্ষমান লিস্টের নিচের দিকে অবস্থানরত ছেলে মেয়েরা। তার উপরে আবার কোটা সুবিধাও আছে। বুয়েটে গেলে দেখা যায় যে এখানে সব বিষয়েরই কম বেশী ডিমান্ড আছে, তাই বুয়েটে প্রতি বছর যে প্রায় ৮০০ ছেলে মেয়ে ভর্তি হচ্ছে তাদের প্রায় সবাইকে মেধাবী বলা যায়। তবে মনে রাখতে হবে যে বুয়েটে ভর্তি পর্রীক্ষা দিয়েছে এমন অনেকেই আবার আইবিএ বা মেডিকালেও চান্স পেয়ে বসে আছে।

তাদের অনেকেই আবার বুয়েটে ভর্তি হয় না, তখন যেসব যায়গা খালি হয় সেখানে অপেক্ষমান তালিকা থেকে অনেককেই নেয়া হয়। মেডিক্যালের সমস্যা হলো, ঢাকা, সলিমুল্লাহ, সিলেট, রংপুর এরকম হাতেগোনা ৪-৫টা ছাড়া অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলোর সাম অনেক কম। সেসব জায়গায় যাদের সিরিয়াল আসে তারা অনেক সময় আর মেডিক্যালে পড়তে চায় না। তাদের স্থানও নিচের দিক থেকে দখল হয়। তাই দেখা যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয় তাদের একটা বিশেষ অংশ ভর্তী হয় ভাগ্য ভালো বলে।

শুধুমাত্র রোলটা সিরিয়ালের একটু নিচের দিকে বলেই বেশ কিছু সংখ্যক মেধাবী প্রাইভেটে বা বিদেশে চলে যায়। দাবী ২: প্রাইভেটে ভর্তি হয় বড়লোকের সন্তানেরা দাবীটা আংশিক সত্য। তবে পুরোপুরি নয়। সব প্রাইভেটেই থাকে টিউশন উইভারের ব্যবস্থা। SSC, HSC দুটোতেই GPA ৫ প্রাপ্তদের জন্য থাকে ১০০% উইভার।

বড় বড় প্রাইভেট ইউনির দেখা যায় প্রতি সেমিস্টারের প্রায় ১০% ছাত্রই উইভার প্রাপ্ত। বাকিদের জন্যে থাকে আংশিক উইভার। এই উইভারের সুযোগ অনেক অস্বচ্ছল ছেলে মেয়েরাই নেয়। দাবী ৩: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যপক গবেষনা হয় ! আপ্নেই বলেন, যারা গবেষনার যোগ্য তাদের কয়জন দেশে আছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনার ফান্ড প্রায় অব্যবহৃত পরে আছে। সরকার ডেকেও লোক পাচ্ছে না।

বিজ্ঞান গবেষনাগার গুলোর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশে আপনি নতুন নতুন যেসব গবেষনার কথা শুনবেন তার প্রায় সব দেখতে পাবেন হচ্ছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর বাকিরা কোথায়? যারা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে আছেন তারাতো গেছেনই, আর যারা দেশে আছেন তারা গবেষনার চেয়ে উচ্চবেতনে কাজ করার প্রতিই বেশী আগ্রহী। দাবী ৪: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা হয় না। ধারনাটা নামি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভুল।

তবে অখ্যাত কুখ্যাত অনেকগুলোই আছে যেখানে পরাশুনা কিছুই হয় না, তাই বলে যেগুলোয় হয় সেশব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এ কথা বলা নিতান্তই অনুচিৎ। নামি প্রাইভেটে দেখা যায় পাব্লিকের বড় বড় প্রফেসররা গিয়ে পড়ান। ওখানে বেতন বেশ ভালই দেয়, তাই তাদের পড়ানো বেশ ভালো হয়। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে তারা যখন যান তখন সেখানে যে তাদের মন থাকে না তা ভুক্তভোগীরা সবাই জানেন। আর যেসব পাব্লিকে রাজনীতি হয় সেখানে দেখা যায় যে মেধাক্রমে পেছনের দিক থেকে কাউকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রভাষক করা হয়।

এই সব রাজনৈতিক প্রভাষকরা কেমন ক্লাস নেন তা বলাই বাহুল্য। আর পড়াশুনার দিক থেকে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় ছাত্রছাত্রীরা বছরে তিন সেমিস্টার করে ভালই চাপে থাকেন। আপনারা শুনে থাকতে পারেন যে, প্রাইভেটে পড়ে আর জিপিএ ভালো এমন অনেক ছাত্র ছাত্রেরই পড়াশুনার চাপের কারনে অবসর সময় বের করে নেয়া অনেক কঠিন কাজ । তাই আসুন আমরা সবাই প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ও খারাপ দিক দুটোই মেনে নেই এবং একত্রে বাংলাদেশ গড়ে তুলি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.