ইমরোজ
বাংলাদেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার গল্প ধারণ করতে গিয়েছিলাম সুনামগঞ্জে। নাম তাঁর কাঁকন বিবি। হালুয়াঘাট বলে একটি গ্রামে তিনি থাকেন।
সূচনা
২০১১ সালের মাঝামাঝি আমরা বন্ধুরা মিলে কাঁকন বিবির খোজ করতে যাই। মূল উদ্দেশ্য ছিল তিনি কেমন আছেন সেটা জানা।
আর তাঁর মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা। এ ব্যাপারে আমরা সাহায্য পেয়েছি সুনামগঞ্জের আরেক মুক্তিযোদ্ধা বজলুর মজিদ চৌধুরীর কাছ থেকে।
ভ্রমণ
নানা কারণে হাতে সময় একেবারেই কম ছিল। তার উপর আমরা কেউই তেমন প্রফেশন্যাল সাংবাদিক না। ঠিক হলো দিনে দিনে গিয়ে দিনে দিনেই ফিরে আসব।
সে মোতাবেক একদিন রাতে রওনা দিয়ে ভোরে পৌছালাম সুনামগঞ্জে।
আদ্যোপান্ত
প্রথমেই আমরা গেলাম বজলুর মজিদ চৌধুরীর বাড়িতে। তিনি একজন নামকরা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫ নং সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর বাসায় পৌছালাম সকাল সাড়ে ন'টার দিকে।
তিনি আমাদের প্রাথমিকভাবে কাঁকন বিবির গল্প শোনালেন। কাঁকন বিবি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্যাংরাটিলার পাক আর্মির ইনফরমেশন দিয়ে সাহায্য করেছিলেন আমরা সে গল্প শুনলাম। এরপর তিনি মোবাইলে কাঁকন বিবিকে বললেন, "তোমার কিছু সন্তান এসেছে তোমার সাথে দেখা করার জন্য, তুমি বাড়ি আছো"?
ওপাশ থেকে তিনি আমাদের স্বাগতম জানালেন।
এরপর আমাদের চলা শুরু হলো। কখনও নৌকায়, কখনও হেটে আবার কখনও মটর সাইকেলে পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌছে গেলাম হালুয়ারঘাট কাঁকন বিবির বাড়িতে।
তাঁর কাছে গল্প শুনলাম তাঁর সেসব দিনের অভিজ্ঞতার। কিছু টাকা আমরা বন্ধুরা মিলে যোগাড় করে তাঁর হাতে দিয়ে এলাম চিকিৎসা বাবদ। মদ্দা কথা কাঁকন বিবি এখন ভালো আছেন।
তবে তিনি ভালো ছিলেন না। ১৯৭১ সালের পরে কেউ তাঁকে মনে রাখেন নাই।
১৯৮৫ সালে তাঁকে শুটকি বিক্রিরত অবস্থায় এক বাজারে আবিষ্কার করেন বজলুর মজিদ চৌধুরী। তিনি কাঁকন বিবির উপরে একটি ফিচার তৈরী করে তৎকালীন পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে পড়ে, শেখ হাসিনা কাঁকন বিবির সাথে দেখা করেন। (ডকুমেন্টারির শেষভাগ দ্রষ্টব্য)। শেখ হাসিনা তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন।
তিনি হালুয়ারঘাটে কাঁকন বিবির জন্য তিন কেয়ার সরকারী খাস জমি বরাদ্দ করেন। সেই সাথে একটি নির্দিষ্ট টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে দেন। সেখান থেকে মাসে মাসে টাকা আসে কাঁকন বিবির কাছে।
১৯৯৬ সালের পর থেকে এখন অবধি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ভালো আছেন। তিনি তাঁর ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন সুনামগঞ্জের এক নিভৃত গ্রামে।
তবে ১৯৭১ সাল থেকে টানা ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কাঁকন বিবির কষ্ট আমাদের চোখে পানি এনেছিল। পড়ার কাপড় ছিল না তাঁর, ছিল না খাবার জন্য ভাত।
এই জননীকে অনেক শ্রদ্ধা, অনেক ভালোবাসা। সেই সাথে বাংলাদেশের সকল শহীদ, জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
পরিশেষ
কাঁকন বিবির মত মুক্তিযোদ্ধারাই হোক আমাদের পাথেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।