পৃথিবীটাকে যেমন পেয়েছ তার থেকে সুন্দর করে রেখে যেতে চেষ্টা কর
গ্রামের একটি পাঠশালায় ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ছাত্ররা হইচই করছে। এমন সময় পন্ডিত মশাই প্রবেশ করলেন।
পন্ডিত : ওরে হ্যাবলা, ক্যাবলা, যদু, মধু, গোবরা, গণশা, ভ্যাবলা ।
ছাত্ররা : (সমস্বরে) প্রেজেন্ট স্যার।
পন্ডিত : সে তো চোখেই দেখতে পাচ্ছি।
বলছি গোলমাল করছিস কেন?
ছাত্ররা : (সমস্বরে) এই গোলমাল করছিস কেন?
পন্ডিত : থাম, থাম, হতভাগার দল। ওরে ভ্যাবলা, কাল স্কুলে আসিসনি কেন রে?
ভ্যাবলা: আজ্ঞে, কাল আমার মুখ দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল।
পন্ডিত : বিড়ি টেনেছিলি বুঝি?
ভ্যাবলা: আজ্ঞে, না স্যার। সে তো আপনার ঠেঙানি খেয়েই ছেড়ে দিয়েছি। মা বললেন, তোর পেটে আগুন লেগেছে।
স্কুলে যাসনে।
পন্ডিত : বটে। হ্যাঁ রে মন্টা। তুই কাল আসিসনি কেন রে?
মন্টা : কাল তো আপনার সঙ্গে হাটতলায় দেখা হয়েছে।
পন্ডিত : ও, তুমি শুধু দেখা করতে আস।
পড়তে আস না? কিরে ভ্যাবলা কিছু বলবি?
ভ্যাবলা: পৃথিবীর আকার কিরূপ, স্যার?
পন্ডিত : ইম্পর্টেন্ট কোশ্চেন, টুকে নে। পৃথিবীর আকার চতুষ্কেকাণ। যথা−ঈশান, অগ্নি, নৈর্ঋত ও বায়ু।
ছাত্র : পন্ডিত মশাই। একটা ট্রান্সেলেশন বলে দিন না?
পন্ডিত : কী ট্রান্সেলেশন, বাবা?
ছাত্র : আজকাল হাতিবাগান বাজারে ছয় আনা সের কুচো চিংড়ি দিয়ে একটা বড় পরিবার ভালোভাবে চলে যায়।
পন্ডিত : ওরে বাবা, টুকে নে। ইম্পর্টেন্ট কোশ্চেন। টুডে, টুমরো এলিফ্যান্ট গার্ডেন মার্কেটে সিক্স এনাস সের স্নল লবস্টার, এ বিগ ওয়াইফ গোজ ওয়েল।
ছাত্র : আচ্ছা পন্ডিত মশাই, তার বংশে বাতি দিতে কেউ নেই, এর ইংরেজি কী?
পন্ডিত : এসব ইম্পর্টেন্ট কোশ্চেন কোত্থেকে খুঁজে বার করছিস? নে টুকে নে। দেয়ার ইজ নো ওয়ান গিভ ক্যান্ডেল ইন হিজ ব্যাম্বু।
এই মন্টা, ইংরেজিতে চিমনি বানান কর?
মন্টা : সি এইচ আর এমনি−চিমনি।
পন্ডিত : এই মরেছে। সি এইচ আর এমনি−চিমনি। ওকে নীল ডাউন করে দাও।
ছাত্র : ডিম্ব কোন লিঙ্গ, স্যার?
পন্ডিত : ইম্পর্টেন্ট কোশ্চেন।
ডিমের ভেতর মেল হবে কি ফিমেল হবে, কে জানে রে, বাবা। নে টুকে নে। উভয় লিঙ্গ।
ছাত্র : পন্ডিত মশাই। ঘুড়িতে লাট খাচ্ছে, ইংরেজি কী?
পন্ডিত : ও, খুব ঘুড়ি ওড়ানো হয় বুঝি? টুকে নে।
ইম্পর্টেন্ট কোশ্চেন। দি কাইট ইজ ইটিং গভর্নর। এই তুই বানান কর, ফটকে।
ছাত্র : ফটকে? ফ আর পা গেছে আটকে−ফটকে।
পন্ডিত : বটে।
আচ্ছা বানান কর, রুক্সিণী।
ছাত্র : রুক্সিণী? স্বরে আ।
পন্ডিত : রুক্সিণীতে স্বরে আ কোত্থেকে পেলি?
ছাত্র : গোড়া থেকে আউড়িয়ে নিচ্ছি।
পন্ডিত : আউড়িয়ে নেওয়াচ্ছি। ওকে ঠ্যাং তুলে হ্যান্ড আপ অন দি বেঞ্চ করে দাও।
এই তোরা একটা খবর শোন। তোরা সবাই কাল ফরসা জামা-কাপড় পরে ফিটফাট হয়ে আসবি। কাল ইন্সপেক্টর সাহেব আসছেন।
ছাত্র : আচ্ছা স্যার, সাহেব ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে আমরা কী করব?
পন্ডিত : আমি সব ম্যানেজ করে নেব। সে তোদের ভাবতে হবে না।
বাবার কাছে একুশ বছর ঠ্যাঙানি খেয়ে তবেই ইংরেজিতে দখল হয়েছি। আমায় ঠেকায় কোন ব্যাটা। যা, এখন ছুটি। সবাই বাড়িতে যা, বাড়ি যা।
(পরের দিন সকালে পাঠশালায় ছাত্ররা উচ্চ স্বরে ইংরেজি পড়ছে)
পন্ডিত : এই, চুপ, চুপ।
ইন্সপেক্টর সাহেব এসে গেছেন। গুড মর্নিং, স্যার।
ইন্সপেক্টর: গুড মর্নিং। এত কম ছাত্র কেন?
পন্ডিত : হতভাগা ছেলেরা ভয়ে সব আসেনি। স্যার, ইয়েস্টারডে ইঙ্কপূজা ছিল কি না।
ইন্সপেক্টর: ইঙ্কপূজা?
পন্ডিত : হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভেরি ভেরি ব্ল্যাক ওমেন। সোর্ড হ্যান্ড।
ইন্সপেক্টর: আই সি। ইউ মিন খালিপূজা?
পন্ডিত : খালিপূজা নয়। তাহলে তো এমটি পূজা বলতুম।
কালিপুজো, কালিপুজো।
ইন্সপেক্টর: আচ্ছা, পন্ডিত। টুমি বাংলা বলো। হামি
বাংলা বুঝতে পারি।
পন্ডিত : বাট স্যার, মাই ইংলিশ কামস মোর।
অর্থাৎ আমার ইংরেজিটাই বেশি আসে। ফাদার্স নিয়ার টুয়েন্টি ওয়ান ইয়ার্স ইংলিশ লার্ন কি না।
ইন্সপেক্টর: ইউ আর এ বিগ ফুল।
পন্ডিত : সলালি, সলালি টেল, স্যার। ছেলেরা না শুনে ফেলে।
ইন্সপেক্টর: আপনি কী রকম পড়াচ্ছেন, আমাকে শোনান।
পন্ডিত : অল রাইট, স্যার। বাবা গণেশ, বলো তো ছাপ্পান্ন কড়ায় কত গন্ডা?
গণেশ : পন্ডিত মশাই, ঝালাই করা না পেটা করা?
পন্ডিত : দাঁড়া। সাহেব চলে যাক। তোকে মেরে আরও ধোলাই করে ছাড়ব।
ইন্সপেক্টর: ধোলাই কেয়া হায়?
পন্ডিত : ও মানে, ইয়ে মানে, কী বলি রে বাবা, মানে ইয়ে, ক্লথ ওয়াশিংয়ের কথা হচ্ছে, স্যার। আচ্ছা ভ্যাবলা, বলো তো ভুতপূর্ব হেড মাস্টার মানে কী?
ছাত্র : পারব না তো, স্যার।
পন্ডিত : টুকে নাও। যে হেড মাস্টার পূর্বে ভুত ছিলেন।
ইন্সপেক্টর: ননসেন্স।
পন্ডিত : এই মরেছে। ভ্যাবলা, তুমি বলো, বাবা। আমি তোমায় হাড়ে হাড়ে চিনি, ইংরেজি কী?
ছাত্র : হাড়ে হাড়ের ইংরেজি কী, স্যার?
পন্ডিত : বোন টু বোন।
ছাত্র : আর চিনি?
পন্ডিত : চিনির ইংরেজি জানো না? সুগার। টুকে নাও।
আই সুগার ইউ বোন টু বোন।
ইন্সপেক্টর: হা হা হা। আচ্ছা পন্ডিত, গুড বাই।
পন্ডিত : গুড বাই। দেখলেন তো স্যার, আমার লার্নিংয়ের রান, মানে বিদ্যের দৌড়।
টুয়েন্টি ওয়ান ইয়ার্স ইংলিশ লার্নিং ফাদার...
ইন্সপেক্টর: শাট, শাট আপ।
পন্ডিত : ও বা...বা (ইন্সপেক্টর চলে যায়)
ছাত্র : স্যার, একটা কথা বলব?
পন্ডিত : এক শ বার বলবে।
ছাত্র : আপনাকে বিগ ফুল বললেন কেন?
পন্ডিত : বিগ ফুল মানে বড় ফুল। বিলেতে গিয়েই সাহেব নিজের বাগান থেকে যেটি সবচেয়ে বড় ফুল সেটি আমার জন্য উপহার পাঠাবেন। আমার পড়ানোর কায়দা শুনে সাহেবের তাক লেগে গেছে।
ছাত্র : স্যার।
পন্ডিত : কী?
ছাত্র : স্যার, দপ্তরি কী একটা চিঠি নিয়ে আসছে।
পন্ডিত : ও কিছু নয়। সার্টিফিকেট এসে গেল। সাহেবদের কাজই ঝটপট।
দপ্তরি : না, পন্ডিত মশাই। সাহেব আপনাকে বরখাস্ত করেছেন। পড়ে দেখুন।
পন্ডিত : সে আমি আগেই বুঝতে পেরেছি রে। এর পরও যদি ডিসমিস না করে তো নিজের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে যে।
এমনি যে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছি বাছাধনকে, ডিসমিস না করে যায় কোথায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।