সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে
পিয়ালঃবাতাসে রাশি রাশি কুয়াশা ধেয়ে আসছে । সেই সাথে আমার পুরনো দীঘির জল থেকে উঠে আসছে শৈত্যভাপ। চারদিকে বাতাস হুহু হিমেল বাতাস। বাতাস জুড়ে গন্ধ ছড়িয়ে আছে শিউলী চাপা বকুল । শিশিরে ভিজে লাজুক হয়ে আছে রজনীগন্ধা।
মাতাল কেনো আজ পাগল বাতাস ?জ্যোৎস্না ধেয়ে আসছে কেনো বলো কার প্রতীক্ষায়?পায়েল আমি কাঁপছি হিমেল হাওয়ায় এবং কিছুটা তোমার স্পর্শ পাব বলে। ক্র্যামলিন কতদূর জানিনা। শুধু জানি তুমি ছিলেনা অনেকদিন। এই পলেস্তারা খসে যাওয়া দেয়ালের আড়ালে লুকোচুরি খেলা আমাদের থেমে আছে সে অনেকদিন। তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি প্রায় রাতে ।
কতদিন ভুল কোরে দৌড়ে গিয়েছি তুমি এসেছ নাকি।
পায়েলঃপিয়াল তোমায় দেখিনা অনেকদিন। এই পুরনো ভিটায় তোমার সাথে এক ঠোঁট কাপানো শীতের রাতে তোমার হাত ধরব বলে ,একটু চিবুক ছুব বলে তোমার কিংবা তুমি আমাকে ছুবে বলে আমি ছোটে এসেছি আবার একটি কিংবা কয়েকটি রাত্রীর জন্য। তুমি এখনো একটিবারের জন্য দেখা দিলেনা। কিন্ত্ত আমিওতো পারছি তোমার সামনে যেতে।
আমি যে কেঁপে উঠছি। পিয়াল আমি তোমার প্রতিক্ষায় আছি । আজ রাত শুভরাত । দেখো বাতাসে মাতাল গন্ধ। কুয়াশা ধেয়ে আসছে আমাদের আড়াল করবে বলে ।
মৃদু আলোতে আমি তোমাকে ঠিকই চিনে নেব পিয়াল একটিবার তুমি লজ্জা ভেঙ্গে শতবর্ষী ভবনের সিড়ি মাড়িয়ে উঠে এসো দ্বিতলায়। আমি এখানে বসে আছি তোমার অপেক্ষায়।
পিয়ালঃতুমি আমায় ভুলে গেলে কিনা জানিনা পায়েল। কিন্ত্ত আমি তোমার কাছে যাবই। তুমি এতদূর থেকে এসে অন্তরালে থেকে যেতে পারনা।
হিমেল হাওয়া বয়ে চলুক। পিপড়েরাও যেন বের না হয় ঘর ছেড়ে। আজ রাত একান্তই তোমার আমার । কথা বলো কিংবা নাই বলো। চেয়েই থেকো।
আমি নাহয় শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেই চলে আসব পায়েল।
পায়েলঃঅবশেষে তুমি এসেছ পিয়াল?
পিয়ালঃআমি এসেছি পায়েল । অবশেষে আমাকে আসতে হলো কেননা আমি না এসে পারছিলাম না। কেমন আছো পায়েল?
পায়েলঃ ভাল আছি। এতদূরে কেনো একটু কাছে এসো আমি প্রাণ ভরে তোমাকে একটু দেখি।
পিয়ালঃতুমি এমন নদী হলে কবে?তোমার ঠোটে এত শিশির কেনো?এত কাঁপছো কেনো তুমি?
পায়েলঃতোমার চোখে এমন আগুণ হলো কি করে বলোতো?এত সুন্দর চিবুক তোমার !আর পারছি না একটু ধরো আমাকে একটু ধরো। তোমার হাতটি একটু বাড়িয়ে দাও। তোমাকে একটু ছুতে হবে আমার । অনেককাল প্রতীক্ষায় ছিলাম তোমাকে ছুব বলে। আর দেরী নয় একটু কাছে এসো।
আজ রাত শুধু আমাদের।
পিয়ালঃপায়েল আমি তোমাকে ছুতে পারব না। এই দেখো আমার হাত কাঁপছে। প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষায়
আমার হৃদয়ে অপেক্ষার বারুদ জমে এখন বিস্ফোরণ হবে বলে। আমি পারছি না পায়েল।
তোমার কাঁচা হলুদাভ তনু ,সোনা ঝরানো হাসি ,শিশিরে ভেজা ঠোঁট এত সুন্দর তুমি অথচ এতদিন তুমি ছিলে না। এতদিন আমি একা ছিলাম। আমি কেনো একা ছিলাম এতদিন । এতদিন তুমি কেনো এতদূরে ছিলে পায়েল ?
পায়েলঃপিয়াল জীবন বলতে আমি বুঝি একটা ভ্রমণ একটা দৌড়। জন্ম থেকে মৃত্যুর দিকে একটা দৌড়।
তাই আমিও একটা দৌড়েই জীবনটা দেখতে চাই। আমাদের আর দেখা হবে কিনা জানিনা। আমি জানিনা এ জীবনে আবার এমন কোন রাতে তোমার সাথে একান্তে আবার কোন এমন শুভক্ষণে আমাদের আর দেখা হবে কিনা। আমি আজ তোমাকে স্পর্শ করতে চাই । আমি আজ তোমাকে চাই পিয়াল।
এই দেখো আমি তোমার চিবুক ছুঁয়ে আছি,তোমার বুকের কালো পশমে আমার হাত। পিয়াল তুমি আমাকে আজ তোমার করুণার চাদরে ঢেকে দাও। তোমার স্পর্শের সুখটুকু নিয়ে আমি আবার ছুটি জীবনের টানে। তোমার কাছে আর কিছু চাইব না আমি। এ স্পর্শটুকু নিয়ে যাব সাথে কোরে- দূরদেশে।
আর আসব কিনা জানিনা । একটু কাছে আসো। আরো আরো কাছে।
পিয়ালঃআমি পুড়ছি পায়েল। আমার চোখে আগুণ দেখো কেমন ধাও ধাও কোরে জ্বলছে।
এ আগুণ তোমার শেষ স্পর্শের । বাতাসে কি আগুণ পায়েল,বাতাস কি পুড়ছে নাকি?দেখো তবে আমার শরীর জুড়ে এত উত্তাপ কেনো?তোমার কাঁপা ঠোঁটের কাঁপন আমায় একটু দাও। দাও একটু শিশির মাখা ঠোঁট। তোমার বক্ষদেশের হিমেল পাহাড়ের স্পর্শে আমায় শীতল করো। সোনারং শরীরের ভাঁজেতে দেখি নদীর ঝিলিমিলি।
তোমার শীতল নদীতে আমার উত্তাপ জুড়াই। পাতো ঠোঁট পাতো। খুলো ভাঁজ খুলো। হ্যা হ্যা ভাঙ্গো ঠিক এভাবেই ভাঙ্গো । আরো আরো ভাঙ্গো।
আমার ভেতরে জ্বলছে বন্ধু জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি
তোমার মাঝের বারুদ স্তম্ভ আমি যাই ছুঁয়ে
এখনই হবে বিস্ফোরণ হবে অগ্নুৎপাত
হাত রাখো হাত পায়েল বন্ধু
রাখো জীবনে জীবন
কাঁপনে কাঁপন তোল পায়েল
বন্ধু বাজাও শরীরের ঝনঝন
পশমে পশম রাখো পায়েল
রাখো পাজরে পাজর
ব্যথায় ব্যথা মাখো
স্পর্শে ঘর্ষে জ্বলুক রক্ত
পুড়ুক জীবন ভস্ম
জীবনে জীবন জন্মাই বন্ধু
চলো করি বপন আমাদের
জীবন কণিকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।