লেখা শাহবাগে কি হচ্ছে? তা বোঝানোর জন্য দারুণ উৎসাহে প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া কোচিং ক্লাস শুরু করে দিয়েছেন। ফেসবুক এবং ব্লগ ও পিছিয়ে নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর তো কাজই জনগণকে জ্ঞান দান, তারাই বা বাদ যাবে কেন? ফলে আমরা জনগন এখন বেশ ব্যস্ত। সকালের চায়ের কাপের সঙ্গে পত্রিকা মারফত শুরু হয় আমাদের জ্ঞানার্জন। অফিস সেরে এসেই সন্ধ্যার খবরের সঙ্গে আরও এক পশলা কোচিং ক্লাস চলে।
শেষ হয় টক শো দিয়ে। সারাংশ হচ্ছে দেশে বিশাল ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ‘ষড়যন্ত্র’ টা কি টা নিয়ে রয়েছে বেশ দ্বিধা বিভক্তি। একদল বলছে ওখানে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চাওয়া হচ্ছে। আর অন্যদল বলছে, ওখানে কতিপয় নাস্তিক ইসলামের বিরুদ্ধে বিষেদ্গার করছে।
এর সঙ্গে সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে ব্যাপারটা ঘটছে তা হচ্ছে প্ল্যানিং এবং কাউন্টার প্ল্যানিং।
ব্লগাররা স্বপ্নেও ভাবে নি তাদের ডাকে এত লোক জড় হবে। বিরোধী কিংবা সরকারী কোন দলই বুঝে উঠতে পারে নি এমন জমায়েত হবে। ভানুর কৌতুকের মত, ‘দেখিনা ব্যাটা কি করে’ এর মত করে সবাই দেখছিল ‘কি হয়?’ সবাই হিসেব কষছিল কিভাবে নিজের কাজে লাগানো যায়। সরকারী দল ছিল বেশ সুবিধাজনক স্থানে, পদ্মা সেতু, দুর্নীতি, শেয়ার বাজার সব কিছু পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে সরে গেল।
প্রসিকিউশানের দুর্বলতা, অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো নব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বিরোধী নেত্রীর চিঠি সব শিকেয় উঠলো। কেবল ‘ফাঁসি চাই’। এর সঙ্গে জেগে উঠলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সরকারী দলের এতেও আপত্তি নেই। বাতাস নিজের পালেই লাগছে।
কিছু বাতাস বামপন্থী পালে লাগলেও আপাতত আপত্তি নেই।
ঝামেলায় পড়েছে বিরোধী দল। তাদের ইস্যু গুলো নিয়ে কেউ কথা বলছে না। প্রথম কিছুদিন গেল সিদ্ধান্ত নিতে, ‘কি বলব?’ অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল, এটাকে নাটক বলা হবে। জনগণ খুব পছন্দ না করায় নাটকের সংলাপ পরিবর্তনের চেস্টা করা হল এবং আশ্বাস দেয়া হল এমনটা করলে এই নাটককে সত্য ঘটনা বলে মেনে নেয়া হবে।
প্রত্যাখ্যাত হয়ে অন্য পথে পা বাড়াল। শুরু হল রহস্য রোমাঞ্চে ভরা এক থ্রিলার গল্পের।
খোঁজ শুরু হল, এই আন্দোলনের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা কোনটা। ‘সরকারী দল’ এর মদদপুস্ট এমন প্রচারণার চেস্টা হল। সরকারী দল খাওয়া পাঠাচ্ছে।
এলাহি খানা, সরকারী মন্ত্রী দের আনাগোনা, এসব তথ্য আমাদের জানিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হল, এটা আসলে সরকারের অপকর্ম থেকে চখ ফেরানোর কৌশল। এই আন্দোলন চললে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নিয়ে আলোচনা জনগনের মন থেকে সরে যাবে, তাই সরকার ইচ্ছে করেই এই আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। খুব কাজে দিল না। মউদুদ সাহেব ‘গনতন্ত্র মঞ্চ’ শুরু করবেন জানালেন। তবে কবে থেকে, টা বললেন না।
খুব কাজে আসছে না দেখে বিরোধী দল রণে ভঙ্গ দিলেন। রুটিন মাফিক কথাবার্তা চালিয়ে জাওয়ার দ্বায়িত্ব নেতাদের হাতে ছেড়ে বিরোধী নেত্রী সিঙ্গাপুর সফরে গেলেন। ‘জাগরণ মঞ্চ’ কে কিভাবে মোকাবেলা করা যায়? জামায়াত বেশ চুপচাপ। যা কার্যকলাপ টা চলছে ফেসবুক আর ব্লগে। মিথ্যা ছবি আর মিথ্যা বক্তব্য লিখে ব্লগারদের নাম করে পোস্ট করা হচ্ছে।
শাহবাগে কি ঘটছে তার কিছু মিথ্যা ছবি ফটোশপ দিয়ে তৈরি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হল। ব্লগার রাও সঙ্গে সঙ্গে আসল ছবি ছড়িয়ে দিয়ে বোঝাল এগুলো মিথ্যা ছবি। ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করা পোস্ট দেয়া হল, ব্লগার দের নাম করে। ব্লগার রাও জানালো এগুলো তাদের পোস্ট না। যে ফর্মুলা ব্যবহার করে ‘রামু’র ঘটনা ঘটানো হল, সেই সফল ফর্মুলার পুনরাবৃত্তির প্ল্যান নিয়ে এগোতে লাগলো।
পাশে এসে দাঁড়াল একটি দৈনিক পত্রিকা।
ব্লগে, ফেসবুকে অনেকেই পোস্ট দিয়েছিল বেশ কিছু শিবিরকে আজকে ট্রেনে করে ঢাকা যেতে দেখলাম। সবাই বুঝেছিল কিছু একটা তারা করবে। আর কিছু করার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দিন, শুক্রবার। জুম্মার নামাজ জামায়াতে পড়া ছাড়া উপায় নেই।
সবাইকেই তাই মসজিদে যেতেই হচ্ছে। কাজ এখানেই একটাই, সবাইকেই বিভিন্ন মসজিদে ভাগ করে দেয়া। কে কোথায় অবস্থান করবে। এরপর একযোগে মিছিল বের করা।
শিবিরের প্রধান শক্তি এদের নেটওয়ার্ক আর দলের প্রতি অন্ধ ভক্তি।
এই দুটোর সমন্বয়ে বিশাল এম মিছিল করে দেশবাসীকে দেখানো, ‘আমাদের সংখ্যা শাহবাগের চেয়ে বেশি’। তবে সহিংসতা তাদের প্ল্যানিং এর অংশ ছিল না না বুঝে করে ফেলেছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কাজটা করে তারা নিজেদের পায়ে কুড়াল চালালো কি না সময় বলে দেবে। তবে একটা উপকার তারা করেছে, শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়েছে। শহীদ মিনার ভেঙ্গে আর জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে নিজেদেরকে একঘরে করে ফেলেছে।
প্ল্যানিং আর কাউন্টার প্ল্যানিং এর এই খেলায় কে জিতবে তা এই মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে না। শাহবাগ আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলনের লেবেল লাগানোটা প্ল্যান? নাকি দেশকে সহিংস করে তোলাটাই প্ল্যান? নাকি অরাজক দেশকে শান্ত করবার জন্য কোন ত্রাতা নিয়ে আসাটা প্ল্যান?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।