আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!
দবীর বাসা খুজছে। নানা হাউজিং সাইটে গত দুমাস ধরে ফর্ম পূরন করে চলেছে, মেইল করেই যাচ্ছে কিন্তু কেউ নক করছে না। আজকে সে বেরুলো যাদেরকে সে মেইল করেছিলো তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাসাটি সরেজমিনে দেখতে। সে কিছু হিসাব করেছিলো, অবশ্য সে হিসাবে বেশ সিদ্ধহস্ত।
তার গবেষনার বিষয় হলো কম্পিউটার সিমুলেশন। তাবৎ ইন্জ্ঞিনিয়ারিং ম্যাথস তাকে সিমুলেট করে টেস্ট করতে হয় ইম্লিমেন্টেশনের আগে। প্যারামিটারগুলো টেস্ট করবার পরেই কোম্পানী গুলো কাজে হাত দেয়। এবং সেগুলো কিভাবে যেনো কাজেও লেগে যায়!
তার হিসাবটা বেশ সহজ। ১০ টা বাড়ির মালিককে সে নক করেছে, যার মধ্যে ৬ টার ভাড়া খুবই বেশী কিন্তু সবগুলো শহরের বেশ বাইরে।
যেগুলো শহরের বাইরে সেগুলোর ৩টার আশেপাশে সস্তায় কোনো হাউজিংও নেই আর তেমন কোনো ইন্ডাস্ট্রিও নেই। আর বাকি চারটি খুবই সস্তা এবং শহরের প্রানকেন্দ্রে। প্রথম চিন্তাতেই সেখানে যাওয়া অর্থহীন কারন জায়গাটা নিশ্চয়ই থাকার উপযোগী না। আর শহরের বাইরে যেগুলো ভাড়া খুব বেশী সেখানে নিশ্চয়ই কোনো বনেদী পরিবারই ভাড়া নেবে!
শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ১ ঘন্টার লং ড্রাইভ, মাঝে একটা বিশাল বন, প্রাকৃতিক দৃশ্য বলতে অসাধারন। গেটের সামনে দাড়িয়ে গেটে থাকা টেলিফোন থেকে দিলো কল,"হ্যালো, আমি দবীর আহমেদ, আসলে একটু দেখা করতে এসেছিলো মিস্টার নরিনের সাথে।
কালকে আমার এয়াপয়েন্টম্যান্ট নেয়া ছিলো। " ও পাশ থেকে কিছু না বলেই ফোন রেখে দিলো আর সাথে গেট খুলে গেলো। মূলত এটা একটা ভিলা বাড়ি। হিসাব মতো এটা ভাড়া হয়ে গেছে। তবু এসেছে যদি কোনো সম্ভাবনা থাকে।
গাড়িটা রেখে বাড়ির দরজার সামনে দাড়াতেই এক বৃদ্ধ লোক কপাট খুলে দাড়ালো,"হ্যালো মিস্টার দবীর, আসুন আসুন, আশা করি কোনো সমস্যা হয়নি। ভিতরে আসুন!"
দবীর ভিতরে ঢুকেই দেখলো বেশ অগোছালো, লাগেজ থেকে কাপড় উপচে পড়ছে, এখনো সোফা সেট হয়নি। দবীরের মনে খুচাখুচি শুরু হলেও তবুও আশাবাদী। ভদ্রলোক মাথার চুলটা আচড়িয়ে সামনে এসেই,"আরে বসুন, বসুন। অনেক দূর থেকে এসেছেন।
আপনার মেইলটা আমি পড়লাম। আপনি বলেছিলেন আপনি এ জায়গাটা সম্পর্কে বেশ কিছু সার্ভে করবেন, জানতে পারি কি সার্ভে?তার আগে বলুন কি খাবেন? টুলামোর আছে নতুন আইরিশ ব্রান্ড, চলবে?"
"না, ধন্যবাদ। আমার অভ্যাসটা আসলে এখনো রপ্ত হয়নি!" মুখে একটু হাসি ঝুলিয়ে,"আমি আসলে রিসার্চের কাজে জড়িত। আপনার নামটা আমি অনেক শুনেছি, বিশেষ করে রিডবার্গের সাথে সার্ভের প্রপোজালটা আমার পছন্দও হয়েছে। যাই হোউক, আমি একটা নতুন বিষয় নিয়ে সার্ভে করছি যার জন্য আমার একটা খালি জায়গা দরকার যেখানে জন বসতি নেই।
"
"আপনার কাজটা কি নিয়ে সেটা কি জানতে পারি?" নর্লিনে একটু সামনে ঝুকে ভ্রু কুচকে কিছু দেখতে চাইছে ওর চোখে।
"আমার কাজটা হলো ওয়েভ ভ্যারিয়েশন অব নেচার ডিউ টু ফ্লিপিং সাইড অব স্পেস টাইম কন্টিনাম!যদিও উদ্ভট কিন্তু কিছু সিমুলেশন নতুন করে কিছু দেখাতে চাইছে!" দবীর মুখটা এমন ভাব করলো মনে হয় সে এখন বিশাল অট্টসির জন্য অপেক্ষা করছে!
"ওহো, ভিয়েনা ইউনিভার্সিটিতে আমার এমন এক বন্ধু আছে, যে আসলে ফিজিক্স নিয়ে বড় বড় প্রবন্ধ লেখে! তো বলুন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?" নর্লিন কে দেখে মনে হলো সে খুব ইন্টারেস্টেড এটা জানারজন্য।
দবীর মনে ভাবলো ভাবলো মাছ টোপ গেলা শুরু করেছে,"আপনি জানেন হয়তো আমি এ বাসার জন্য লাইনে ছিলাম যদিও সিরিয়াল নম্বরটা অনেক পিছনে। আমার আসলে কোনো উপায়ও নেই। আপনি চাইলে আপনাকে সেরকম দাম দিতেও প্রস্তুত!"
"ওহো মিস্টার দবীর, শুধু এটার জন্য? আমি আপনাকে আসলেই সাহায্য করতে পারতাম, কিন্তু মনে হয় না আমি সে অবস্হানে আছি।
তবে ছোট একটা সাহায্য করতে পারি, উপরের একটা ছোট রুম আছে, তবে আমি জানি না আপনে পছন্দ করবেন কিনা, তবে যদি আপনি কোলাহল পছন্দ না করেন আর আপনার আসবাবের পরিমান খুব বেশি না হয় তাহলে হয়তোবা আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। তবে ভারা নিয়ে ভাববেন না, আমার কাজের নেশা অবশ্যই একটু বেশী। যদি মনে করেন আপনার সাহায্য দরকার, তাহলে আমি সেটার জন্য প্রস্তুত!"
দবীর মনে মনে হাসলো। কাজ হয়েছে!
২.
শীত আসতে বেশি দেরি নেই। গাছের সবুজ পাতাগুলো এখনই পিঙ্গেল কালারে রূপ নিয়েছে।
দু সপ্তাহ ধরে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে চষে বেড়াচ্ছে এই কারনে যে হাতে আছে মাত্র আর ৪ টি সপ্তাহ। এর পরেই বরফ পড়া শুরু করবে। স্যাটেলাইট ম্যাপিং বহু আগেই নেয়া হয়েছে বিশেষ করে প্রতি স্কয়ার মিটারে গাছের পরিমান থেকে শুরু করে মাউনটেইন কার্ভেচার সহ সব। এখন দরকার থার্মোসেন্সর আর ইনফ্রারেড ফ্রিকোয়েন্সির সাউন্ড ডিটেক্টর যেগুলো প্রত্যেকটা নিজেদের সাথে কমুনিকেট করবে ওয়ারলেস ওয়েভে। আর সার্ভার ট্রান্সরিসিভারটার জন্য এখন একটা মোক্ষম জায়গার দরকার।
পাহাড়ের চুড়ায় দবীর। দূরবীন দিয়ে অনেক ক্ষন ধরে নর্লিনকে দেখার চেষ্টা করছে। নর্লিন দাড়িয়ে আছে বাড়ির ছাদে, আজ সকালে তাকে সাহায্যের জন্য বলতেই বুড়ো নর্লিন এক পায়ে দাড়িয়ে গেলো। পুরো এন্টেনার সহ রিসিভার স্টেশনটা ওর বাসাতেই ছিলো। মাঝে মাঝে ভাবে দবীর থাকার জায়গাটাই যেখানে অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো সেখানে এখন পুরো বাড়ির ফ্যাসিলিটিজ!
নর্লিন মিনিট পাচেকের পড় হাত উঠালো, মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসলো,"সাউন্ড রিসিভ এন্ড ক্লিয়ার, ডাটা ফ্লো নাও ২৫৫।
" ডাটা ফ্লোর জন্য এনলস সিস্টেমটা বেশ পুরোনো, যদিও এখন গিগাবাইট পর্যায়ে চলে গেছে। অবশ্য ছোট ছোট র ডাটার রিডিং খুব বেশি হলে ৩২ কেবির সাথে এক সাথে ৮টা ক্লায়েন্ট সেন্সরের ডাটা। বাকি সব স্লিপ মোড!
দবীর হিসাবটা মনে মনে করতে গিয়ে খুশি!
৩.
"আরে দবির সাহেব, আজকে টা্র্কি সাথে লাক্সের সিজলার। ড্রিংকস এর জন্য লিংকডিন। কেমন মনে হচ্ছে?" নর্লিন কীচেন থেকে টার্কির বড় ট্রেটা আনতে আনতে বলে উঠলো!
দবীর হাতে ফান্টার পুরো ক্রেট নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,"ওহ নর্লিন, ইু আর গ্রেট।
আজকে একটা দারুন দিন!"
নর্লিন হাতের ট্রেটা টেবিলে সাজাজতে সাজাতে ওর দিকে বিষ্ময়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,"দারুন দিন মানে? গত দু সপ্তাহ ধরে তো মনে হচ্ছে আমরা একটা র্যাবিট হোল খুজে বেড়াচ্ছি বরফের চাইয়ের নীচে। গতকাল সামান্য একটু টেম্পারেচার ডিফারেন্স দেখা দিয়েছে জিওলজিক্যাল প্যাটার্নে তার সাথে স্পেস টাইম কন্টিনামের কি কোনো সম্পর্ক আছে?"
দবীর একটু গম্ভির স্বরে ওর দিকে এগিয়ে এলো। মনে হলো কিছু বলতে চায়, কিন্তু তার আগেই মাথাটা নীচে করে দাড়িয়ে থাকলো মূর্তির মতো!
নর্লিন একটা ঢোক গিলে হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে ওর দিকে এগিয়ে এলো,"দবির, তুমি কি লুকোচ্ছ?"
দবীর ওর দিকে তাকিয়ে বললো,"উই আর ইন ডীপ শিট নর্লিন। ইউু বেটার ডিগ এ হোল এস মাচ এস ইুউ কেন টু দ্যা নর্দেস্ট রিজিওন!"
চলবে : ২য় পার্ট
(উল্লেখ্য একটা সায়েন্স ফিকশনের লেখনের পায়তারা করতাছি। উদ্দেশ্য হইলো অনেকেই ফিজিক্সের অনেক কিছুই বুঝে না।
এইবার ভাবতাছি গল্পের মাধ্যমে যদি ট্রাই লওন যায়!)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।