আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

করণীয়/বর্জনীয় - ১

Real knowledge is the knowledge about "The Real", or at least, that which leads to "The Real" - rest is just conjecture!

[লেখাটি আগে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে] আমাদের পাড়ার মসজিদের ৩ নং হুজুর, অনেক সময়ই কোন এক ওয়াক্তের নামাজের পর “বাকী নামাজের পরে বারান্দায় মিলাদ আছে, যে যে পারেন শরীক হতে চেষ্টা করবেন”—এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে থাকেন। আমি কখনোই সেই ’যে যে পারেনের’ দলে থাকতে পারিনি, তবে অনুমান করতে পারি যে, ঐ সব মিলাদ খুব সম্ভবত, কারো পরীক্ষায় ভালো করার জন্য দোয়া চেয়ে, অথবা পরীক্ষায় ভালো করার পর শুকরিয়া জানিয়ে, বা কারো রোগমুক্তির জন্য দোয়া চেয়ে, অথবা কোন মৃত স্বজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বা একই ধরনের কোন উপলে আয়োজিত। আমি ভাবতে চেষ্টা করেছি যে, কি ধরনের মানসিক অবস্থায় কোন মিলাদের আয়োজক, অর্থাৎ যিনি মিষ্টি ইত্যাদি বা ঐ মিলাদের আনুষঙ্গিক খরচ বহন করছেন, তিনি এই ’ভাবগম্ভীর’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছেন? আমি উপরে যে কারণগুলোর কথা উল্লেখ করছি, সে সব কারণে যদি তিনি মিলাদের আয়োজন করে থাকেন, তবে ধরে নিতে হবে যে, তিনি একজন বিশ্বাসী — কারণ, তার কোন উপস্থিত জাগতিক প্রাপ্তি নেই ঐ খরচের বিনিময়ে — তিনি “বিশ্বাস” করছেন যে, তার ঐ পুণ্যময় আয়োজনের বিনিময়ে আল্লাহ্ তাকে কিছু একটা দেবেন। একজন অবিশ্বাসীর জন্যও মিলাদের আয়োজন করা সম্ভব, তবে তা হবে কোন তাৎক্ষণিক জাগতিক অর্জনের জন্য, যেমনটা ধরুন “জনগণকে” ফু্সলাতে ভোটের মৌসুমে কোন অবিশ্বাসী তাগুত নেতাও মিলাদের আয়োজন করতে পারেন। রাসূল (সা.) বিশুদ্ধ ও সন্দেহমুক্ত হাদীসে বলে গেছেন যে, মানবকুলের মাঝে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে তাঁর প্রজন্ম, তার পর তার পরের প্রজন্ম এবং তার পরে তার পরের প্রজন্ম ।

বলা বাহুল্য এই শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে মুসলিম হিসেবে গুণগত মানের শ্রেষ্ঠত্ব — ঐশ্বর্য্য বা বস্তুবাদী শ্রেষ্ঠত্ব নয়। রাসূল (সা.)-এঁর মুখনিসৃত দ্বীন সংক্রান্ত প্রতিটি কথা, মন্তব্য ও অনুশাসন আমাদের জন্য প্রশ্নাতীত ভাবে শিরোধার্য এবং তিনিই হচ্ছেন একমাত্র মানুষ যার প্রতিটি আদেশ ও নিষেধ প্রশ্নাতীত ভাবে মেনে নিতে আমরা, মুসলমিরা, বাধ্য — অন্তত যতক্ষণ আমরা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিতে চাইবো। তাহলে তাঁর কথামত শ্রেষ্ঠ মুসলিম যারা - অর্থাৎ প্রথম তিন প্রজন্মের মুসলিমগণ - তাঁদের চেয়ে কি আমাদের আমল, আখলাক, আকীদাহ বা ইবাদতের পদ্ধতি শ্রেষ্ঠতর বা বিশুদ্ধতর হতে পারে? যারা রাসূল (সা.)-কে দেখেছেন, যাদের সামনে রাসূল (সা.)-এঁর কাছে কুর’আনের বাণী নাযিল হয়েছে, যারা বিদায় হজ্জ্বে আরাফাতের ময়দানে তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন, যারা তাঁর সাথে বদর, ওহুদ বা তাবুকের অভিযানে অংশ নিয়েছেন, তাঁর মাথার একটি চুল যারা স্নেহ ও শ্রদ্ধাভরে মাটি থেকে তুলে নিয়েছেন, অথবা যারা তাঁর গৃহে বড় হয়েছেন বালক হিসেবে [যেমন, আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.)] — এঁদের চেয়ে আমরা রাসূল (সা.)-কে বেশী জানবো, বেশী বুঝবো বা বেশী ভালোবাসবো, এমনটা ভাবা অত্যন্ত প্রাথমিক যুক্তিতেই একটা অর্বাচীনের কাজ বলে গণ্য হবে — বুঝিবা একধরনের বে-আদবীও বটে। সুনান ইব্নে মাজায়, আব্দুল্লাহ ইব্নে মাস্উদ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) তাঁদের “খুতবাতুল হা’জা” বা “প্রয়োজনীয় খু্তবা” বলে একটা খুতবা এমনভাবে শিক্ষা দিতেন (অর্থাৎ এমন ধরনের গুরুত্ব সহকারে), যেমন ভাবে তিনি তাঁদের কুর’আনের আয়াত শিক্ষা দিতেন। তিনি তাঁদের নির্দেশ দেন যে, তাঁরা যেন তাঁদের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড উক্ত খুতবা দ্বারা শুরু করেন।

সে জন্য ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী আমরা দেখি যে, জুম্মার খুৎবাই হোক অথবা ঈদের খুৎবাই হোক অথবা বিয়ের খুৎবাই হোক — যে কোন গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনের শুরুতে, দ্বীনের জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব যারা, তারা রাসূল (সা.)-এঁর দিক নির্দেশনা মোতাবেক খুতবাতুল হা’জার বক্তব্য বা তার সদৃশ বক্তব্য দিয়ে তাঁদের কর্মসূচীর সূচনা করতেন। দ্বীন ইসলামের বৈশিষ্ট্য এবং আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁর ক্রীতদাস হিসেবে, আমাদের নিজেদের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি কেমন হওয়া উচিত, তা অনুধাবন করার ব্যাপারে, এই খুৎবার সারমর্ম অনুধাবন করাটা অত্যন্ত সহায়ক হবার কথা। আমরা সেজন্য খুতবাতুল হা’জার আরবী উচ্চারণ এবং অর্থ, পাঠক তথা সকল দ্বীনী ভাইবোনদের অবগতির জন্য এখানে উদ্ধৃত করবো ইনশা'আল্লাহ! [sb]আরবী উচ্চারণ: “ইন্নাল হামদালিল্লাহ্ - নামাদুহু ওয়া নাস্তায়িনুহু ও নাস্তাঘফিরুহ্ - ওয়া নাউযুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়া মিন সাইয়িআতি ‘আমালিনা। মাই ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লালাহ্, ওয়ামাইউদলিল ফালা হাদিয়ালাহ্। ওয়া আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ্ - ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।

আম্মাবা‘দ। ফা ইন্না খাইরাল কালামি (অন্য র্বণনায়, হাদীসি) কালামুল্লাহ্ - ওয়া খাইরাল হাদি, হাদিউ মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম। ওয়া শাররুল উমুরী মুহদাসাতুহা - ওয়া কুল্লা মুহ্দাসাতিন বিদা’ - ওয়া কুল্লা বিদাতীন দালালা, ওয়া কুল্লা দালালাতীন ফিন্নার। ” এখানে রাসূল(সা.) যা বলেন তার ভাবার্থ হচ্ছে: অবশ্যই সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহরই প্রাপ্য। তাই আমরা তাঁর প্রশংসা করি এবং আমরা তাঁর সহায়তা ও সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আমরা তাঁর মাঝে আমাদের নিজেদের আত্মার অমঙ্গলময়/পাপপূর্ণ প্ররোচনা থেকে এবং তার পরিণতিতে আমাদের নিজেদের পাপকর্ম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না — কিন্তু আল্লাহ্ যাকে বিপথগামী হতে দেন, তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আমি স্যা দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং তার কোন শরীক নেই এবং আমি এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর ক্রীতদাস এবং (শেষ) রাসূল। অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ বক্তব্য হচ্ছে আল্লাহর কিতাব — কুর’আন, এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দিক নির্দেশনা (হেদায়েত) ও উদাহরণ হচ্ছে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এঁর উদাহরণ। দ্বীনের ব্যাপারে এবং আল্লাহর ইবাদত করার ব্যাপারে কেউ সবচেয়ে নিকৃষ্ট যে কাজটি করতে পারে, তা হচ্ছে তাঁর উপাসনা করার এবং তাঁর নৈকট্য লাভের নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করা — কেননা প্রতিটি নতুন ভাবে উদ্ভাবিত পন্থা হচ্ছে একেকটি নব্য-প্রথা (বা বিদ্আত) — এবং প্রতিটি নব্য-প্রথা হচ্ছে একটি বিচ্যুতি বা পথভ্রষ্টতা (দালালা বা misguidance) — আর সেই পথভ্রষ্টতা (যে কাউকে) জাহান্নামের আগুনে নিয়ে যায়।

এভাবে কথাগুলো উপস্থাপন করে কোন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার শুরুতে রাসূল(সা.) যে ব্যাপারগুলো পরিষ্কার করে দিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে এই সত্যতা যে, আল্লাহ্ হচ্ছেন অসীম ঐশ্বর্যশালী —আল্-গনী — এবং তিনি হচ্ছেন সকল প্রয়োজনের উর্ধ্বে — স্বাধীন! এবং সেই নিরিখে তাঁর সৃষ্টি — তা সে নবী রাসূলদের মত বিশেষ ব্যক্তিবর্গের কথাই বলা হোক, অথবা, আমাদের মত সাধারণ মানুষদের কথাই ধরা হোক — আমরা অপরিহার্যভাবে আল্লাহর দিক নির্দেশনা, তাঁর সাহায্য ও তাঁর সহায়তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে তাঁর মুখাপেক্ষী। এবং এই ‍‍"খুতবাতুল হা’জা” তার বক্তাকে এবং শ্রোতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, কোন মঙ্গলময় বাণী যেমন আল্লাহর দয়া ও তাঁর অনুমোদিত সামর্থ্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না — তেমনি কোন হৃদয় তাঁর দয়া বা তাঁর দেয়া সামর্থ্য ছাড়া সেই মঙ্গলবার্তা আত্মস্থও করতে পারবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’লার দিক নির্দেশনা ব্যতীত আত্মার পরিশোধন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সৎকার্য সমাধা করাও সম্ভব নয়। সুতরাং এই খুতবা আল্লাহর সাহায্য যেমন প্রার্থনা করে, তেমনি আল্লাহর দিক নির্দেশনা যে আমাদের জন্য অপরিহার্য তারও স্বীকারোক্তি ও ঘোষণা প্রদান করে। যে-কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে এই বিশেষ খুৎবার বাণীটুকু উচ্চারণ করার প্রয়োজনীয়তা, এখনকার দুঃসময়ে বুঝি যে কোন পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে অনেক বেশী।

আজ আমরা সময়ের এমন এক অববাহিকায় এসে উপস্থিত হয়েছি, যেখানে আমাদের দুর্বিনীত হতে রীতিমত শিক্ষা দেয়া হয় — আপনি যত দুর্বিনীত হবেন — যত বেশী “হামসে বড়া কৌন হ্যায়” মত ভাব দেখাতে পারবেন, আপনাকে তত আত্মবিশ্বাসী বলে গণ্য করা হবে। আজ তাই রাজনৈতিক বক্তৃতা থেকে শুরু করে ; কোন খেলা শেষে সফল খেলোয়াড়ের সামনে যখন মাইক্রোফোন ধরা হয়, তখন অগণিত বার ‘আমি’ এই করেছি বা “আমরা” সেই করেছি, এমন কথা উচ্চারিত হতে শোনা যায় দম্ভ সহকারে। আজকাল, আমরা প্রতিনিয়ত ভুলে যাই যে, পৃথিবী জুড়ে কিলবিল করা সাড়ে ছয় শত কোটি মানুষের মাঝে যে কোন ব্যক্তি হচ্ছেন মাত্র ’একজন’ — গতকাল জন্ম হবার পূর্বের এক ফোঁটা নাপাক বীর্য এবং আগামীকালের মৃত্যুর পরবর্তী পর্যায়ের গলা-পচা মাংস ঢাকা হাড়গোড়। এই দেখুন না গত প্রায় দুই দশক ধরে, পৃথিবীতে সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হবার ফলে, একচ্ছত্র ক্ষমতার যে দাপট এবং অহমিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ অন্ধপ্রায় — তার হোতা, অত্যন্ত উদ্ধত প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কি করুণ অবস্থায় মৃত্যু হলো। অথচ, যারা তার দম্ভোক্তিগুলো মনে করতে পারেন, তারা নিশ্চয়ই অবাক হবেন এই ভেবে যে, অমন উদ্ধত ব্যক্তিটি, Alzheimer’s disease-এ আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর আগে নিজের নামটিও হয়তো ঠিকমত মনে রাখতে পারতেন না।

আজ তার উত্তরসূরী, ফেরআউনের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বিশ্ববাসীকে চোখ রাঙান এই বলে যে, “হয় তার দলে যোগ দিতে হবে” না হয় “পরিণতির জন্য প্রস্তুত হতে হবে” — দু’দিন পরে কৃমি বা কীটের খাদ্যে রূপান্তরিত হবে যে নশ্বর দেহ, তার অধিকারীর কি সীমাহীন ঔদ্ধত্য! পশ্চিমা বস্তুবাদী অবিশ্বাসী সমাজে তো বটেই, আমাদের দেশের মত মুসলিম প্রধান দরিদ্র দেশেও সাফল্যকে কেবলমাত্র উচ্চাকাঙ্খা, উদ্যম ও ব্যক্তিগত সংকল্পের variable হিসেবে চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের এমন একটা ধারণা দেওয়া হয় যে, দিগন্ত বা আকাশও অজেয় বা অস্পৃশ্য কিছু নয়। আপনি কেবল মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের পরে “সফল” ছাত্র-ছাত্রীদের যে সব সাক্ষাৎকারগুলো ওঠে - সেগুলোর কোনটিতে কি মনে করতে পারেন যে, কেউ তার উত্তর “আলহামদুলিল্লাহ্” বলে শুরু করেছে? বলেছে, ’আল্লাহর ইচ্ছায় বা আল্লাহর রহমতে আমি এমন ভালো করতে পেরেছি’? ২০০৪ সালের নভেম্বরে দেশে ফিরে, সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা একটি বিজ্ঞাপনের ”বিল বোর্ডের” মূলমন্ত্র যেন হঠাৎই আমার চোখে পড়লো: ”রুখবে আমায় কে” - এমনও হতে পারে যে, এই দম্ভোক্তি হয়তো আগেও টাঙ্গানো ছিলো, আমার চোখে পড়েনি। এই যে ইচ্ছা থাকলেই “আমি” সব করতে পারি — এই ভাবটা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক এবং ইসলামী মূল্যবোধের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী। বরং মুসলিমদের একটা অভিব্যক্তি রয়েছে, যেটাকে রাসূল (সা.) জান্নাতের রত্নভান্ডারের একটি বাণী বলে আখ্যায়িত করেছেন — “লা ‘হাওলা ওয়া লা ক্কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্” — কেবল আল্লাহ্ ছাড়া, গতির বা ক্ষমতার আর কোন উৎস নেই — এমন একটা অর্থ দাঁড়ায় আরবী ঐ অভিব্যক্তির। ইসলামের বাণীর প্রাণকেন্দ্রে তথা একজন মুসলিমের ব্যবহারের মূলে যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা হচ্ছে ’বিনয়’ — প্রাথমিক ভাবে আল্লাহর প্রতি বিনয়-অবনত দাসত্বের অনুভব — এবং সেটা থেকে সাধারণ ভাবে গোটা পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রে ও বিষয়ে এবং সকল কর্মকাণ্ডে ঔদ্ধত্য পরিহার করে বিনয়ের আশ্রয় নেয়া।

প্রতিনিয়ত এই সত্যতাটুকু অনুধাবন করা যে, আমরা যদি এমনকি একটা সৎ স্বভাব বা চরিত্রও অর্জন করে থাকি, সেটাও আল্লাহর করুণা সাপেক্ষে অর্জিত হয়েছে — কোন “আমিত্বের” বলে অর্জিত হয় নি। যখনই কেউ কোন অর্জনের জন্য নিজের উদ্যম, চরিত্র, বুদ্ধি বা কর্ম ক্ষমতাকে বাহ্বা দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে শুরু করবেন, মুসলিম হিসেবে তার ঈমান তখন দ্রবীভূত হতে শুরু করবে এবং তার ‘আমিত্ব’ বা অহমিকা তার ও আল্লাহর মাঝে এক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। সেজন্যই যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শুরুতে এই ’খুতবাতুল হা’জা’ পাঠ করলে তা আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, আল্লাহর উপর আমরা সার্বক্ষণিক ভাবে নির্ভরশীল এবং আমাদের সকল অর্জন কেবলই আল্লাহর করুণা-সাপেক্ষ অর্জন — স্বনির্ভর কিছু নয়। [হঠাৎ মনে হলো, আমাদের দেশের হুজুরদের, আমার এই জীবনে, এই খুতবা দিয়ে কোন আলোচনা বা অনুষ্ঠান শুরু করতে শুনেছি বলে আমি খুব একটা মনে করতে পারি না - আমার স্মৃতিতে বরং ”বালাগাল উলা বি কামালিহী” ধাঁচের শ্লোকই বেশী জীবন্ত - কি জানি আমি হয়তোবা miss করেছি!] (চলবে ....ইনশা'আল্লাহ্!)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।