আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুরবাণীর বিকল্প, আমার কুরবানীর পশু এবং ইব্রাহীমের শিক্ষা

থিংক সিম্পল।

আমাদের চারপাশে পুরো বায়োলজিকাল ইকোসিস্টেমটাই দাঁড়িয়ে আছে এক শ্রেণীর প্রাণী অন্য শ্রেণীকে খাওয়ার ওপর, তাই কুরবানীর ফলে কোন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এটা সম্পুর্ণ সত্য নয়। বিবর্তনও এটাকে সমর্থন করে। তাই দ্বিতীয় প্রজাতি যদি টিকে থাকতে চায়, তাদেরকে রিপ্রোডাকশন বাড়াতে হবে, ব্যর্থ হলে বিলুপ্তি অনিবার্্য। অতএব কোরবানীর কারণে গরু প্রজাতি বিলুপ্ত হলেও বিবর্তনের আলোকে আমাদের মাথা ব্যাথার কিছু নাই।

পৃথিবীতে অনেক প্রজাতিই ধ্বংশ হয়ে গিয়েছে। বিবর্তন নতুন প্রজাতির জন্ম দিয়েছে। গরুর ক্ষেত্রেও প্রকৃতি ভিন্ন কোন ব্যবস্থা নিবে। তবে পশু কুরবানীর মাধ্যমে মনের পশু কি আসলেই কোরবানী হয়? কোরবানীর জন্যে ব্যবহৃত পশুর কোন বৈশিষ্টটি মানুষের পশুত্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে? আমিতো দেখি কোরবানীর জন্যে ব্যবহৃত পশুগুলো বরং উপকারী জন্তু। সত্যিকার পশুতো সেগুলোই যারা মানুষের ক্ষতি করে।

আর তাদের সাথেই অনেক মানুষের মিল পাওয়া যায়, এবং সেই কারণেই সেইরকম পশু কুরবানী দেয়া “কিছুটা” যুক্তিযুক্ত হতে পারত। আমি হলে তেলাপোকার কুরবানী দিতাম। কারণ এরা বাড়েও বেশী, আর জ্বালায়ও বেশী। তবে পশুবীদেরা আমার সাথে একমত হতে নাও পারেন। প্রতি বছর আমাদের দেশে সম্পদশালী মানুষেরা কোরবানী দিচ্ছে, তারপরে সমাজের কি কোন পরিবর্তন আসছে? আমরা যদি একটি পপুলেশন কে নির্বাচন করি যারা কুরবানী দিয়েছে, এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষন করি কয়েক বছর ধরে যে কুরবানীর ফলে তাদের মাঝে কি পরিবর্তন আসছে।

তাহলে আমরা সহজেই বলতে পারব যে কুরবানীর এ উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে কি হচ্ছে না। আর হাজার বছর ধরে অবজারভেশনের মাধ্যমে এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা চলে যে কুরবানী এর উদ্দেশ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুনিয়াবী কোন কাজ যদি তার উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, তবে সেই কাজ বার বার করাকে আমরা অপচয় বলি। যেমন একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা কয়েকবার ব্যর্থ হলে তার পেছনে সময় ও শ্রম ব্যয় করাকে আমরা অপচয় বলে মনে করি। এক্ষেত্রে কেউ কেউ দাবী করতে পারেন যে ধর্মীয় কাজের পেছনে দুনিয়াবী অর্জনের বাইরে আরো অর্জন আছে যেটা পরকালে দেখা সম্ভব, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পরকাল থেকে কেউ আমাদেরকে তাদের কর্মের ফলাফল জানায়নি।

তাই বলা যাচ্ছে না যে দুনিয়ায় সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ এক কাজ পরকালে সাফল্য লাভ করতে পারে। ঠিক তেমনি ভাবে কেউ যদি বিশ্বাস করে যে একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষা কোটি বার চালনা করলে তাতে সাফল্য পাওয়া সম্ভব, তার ক্ষেত্রেও আমরা বলতে পারব না যে আসলেই পরীক্ষাটি উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারবে কি পারবে না। তাই স্বাভাবিক যে কাজ আমরা করি, তা হল, অপচয় এবং অনর্থক কাজকে আমরা ত্যাগ করি। কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে কেন জানি এ নিয়ম কেউ মানতে চায় না। ধর্মের নিয়মগুলো এক অলংঘণীয়, পরিবর্তন অযোগ্য এক বিধান।

সেই নিয়ম থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়ে ভাল কোন ফলাফল লাভের সুযোগ থাকলেও বাপ দাদাদের রীতি রেওয়াজ আমরা ছাড়তে চাই না। এ প্রসংগে একটা ঘটনা বলি, দুদিন আগে বাবার সাথে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলাম। বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কবে হাটে যাব। আমি তাকে বললাম যে, এবারের ঈদটা ভিন্নভাবে উদযাপন করলে কেমন হয়? গরুর দাম যেরকম বেড়ে গেছে, তাতে তো মনে হচ্ছে তেমন ভাল গরু কুরবানী দিতে পারব না। তার চেয়ে বরং ২০ হাজার টাকা আমাদের রিকশাওয়ালাকে দেই, সে তার মালিকের কাছ থেকে রিক্সাটি কিনে নিতে পারবে, এতে তার পরিবারটি আরো স্বচ্ছল হবে।

আর কিছু টাকা দিয়ে ঈদের দিন রিকশাওয়ালার পুরো পরিবার দাওয়াত করে খাওয়াবো। তাহলে সত্যিকার অর্থেই অনেক কিছুর কুরবানী হবে। মনের অহংকারের কুরবানী হবে যে রিকশাওয়ালার পরিবার আমাদের মতই কেউ। তিনিতো রাগে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালেন। বললেন “কত বড় বড় আলেম ওলামা আছে, যারা এই বিধান পরিবর্তনের কথা ভাবছে না, আর তুমি কোন জ্ঞানী হইস যে এই কথা বল! আমি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্যে বললাম যে দেখ, কুরানে বলা হচ্ছে তোমাদের মাংশ, রক্ত আল্লাহর কাছে পৌছে না।

পৌছে তোমাদের তাক্বওয়া। এখানে আল্লাহ তায়ালা ছোট্ট একটা হিন্ট দিয়ে রেখেছেন যে পশুই যে কোরবানী করতে হবে এমন কোন কথা নেই। শব্দগুলোকে আমরা যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করি, তাহলে এ কথা বলা যায় যে তাক্বওয়া অর্জনের জন্যে যে পদ্ধতি অধীকতর ভাল মনে হয় তা অনুসরণ করা যায়। আর নবীর যুগে অনেক কাজ কুরান দ্বারা এক রকমভাবে পরিচালিত হলেও যুগের প্রয়োজনে আমরা কিন্তু তা পরিবর্তন করেছি। বাবা কিছুটা ঠান্ডা হলেন, তবে বার বার সাবধান করলেন, এই বলে যে কুরান অনেক কঠিন এবং বড় বিষয়।

এতে গভীর জ্ঞান আছে। অনেকে বুঝতে না পেরে বিপথগামী হয়ে গেছে, যেমন জয়নুল আবেদিন, দাউদ ইব্রাহীম এবং তার কিছু বন্ধুদের কথা বললেন। আরো বললেন যে আমার ধারনাটি আমি লিখে তাকে যেন দেই, তিনি জামেয়া আজহার এবং মদীনা ইউনিভার্সিটিতে পাঠাবেন। আমি জানি যেসব মোল্লারা ড্রাইভারদেরকে স্তন পান করানোর ফতোয়া দিতে পারে, তাদের মাথা দিয়ে ভাল কোন পরিবর্তনের ধারনা পয়দা হওয়া অসম্ভব। প্রশ্ন হচ্ছে দেবতার উদ্দেশ্যে পশু বলি দেয়া কি কোন খারাপ কিছু? মোটেই না, প্রাচীন যুগ থেকেই বিভিন্ন জাতীতে এ প্রথা প্রচলিত।

মুসলমানরা একমাত্র ইলাহ এর উদ্দেশ্যে গরু বলি দেয়। তবে তাদের প্রক্রিয়াটা উত্তম। অনেকে মিলে পশুটাকে শুয়ে পশ্চিমে মুখ করে দেবতার নাম উচ্চারণ করতে করতে তারা বলি দেয়। অন্য ধর্মের লোকেরা এক কোপে পশুটাকে মেরে ফেলে, ডেনমার্কে আঠারো বছর হওয়া উপলক্ষে ডলফিন বলি দেয়া হয়, এটা অবশ্য প্রথা, এভাবে যেতে থাকলে জঙ্গলে মানুষ বলি দেয় হয়। এটাও নিশ্চই খারাপ না।

মানুষতো পশুরই অংশ, আর যে হারে মানুষ বাড়ছে, তাতে এই প্রজাতির বিলুপ্তির সম্ভাবনা বলির মাধ্যমে ঘটা অসম্ভব। তাই দেখা যাচ্ছে প্রথা অনুযায়ী কারো বলিই খারাপ না। আর যদি খারাপ ভাবা হয়, তবে একই লাইনে দাঁড়িয়ে আমারটাই ভাল, তা বলার যৌক্তিক কোন কারণ দেখছি না। প্রকৃত পক্ষে ইব্রাহীমের শিক্ষা মানুষের জন্যে আসলে কোন শিক্ষাই না। এটা মানুষের জ্ঞানের জন্যে চরম অবমাননাকর একটা ঘটনা।

এটি মানুষের নৈতিকতাবোধের পুরোটাই ধ্বংশ করে দেয়। যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে এই উত্তরই পাওয়া যাবে যে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন শিশুকেই হত্যা করার প্রচেষ্টাও একটি অনৈতিক কাজ। স্রষ্টা যদি মানুষ সম্পর্কে আসলেই অজ্ঞ থাকতেন, তাহলে তার জন্যে এটাই যুক্তিযুক্ত পরীক্ষা হত যে তিনি মানুষকে যে জ্ঞান দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে সে অনৈতিক যে কোন কাজ করতে অস্বীকার করতে পারে কিনা। পৃথিবীতে আমরা এমন অনেক মানুষ দেখি, যারা সত্য ন্যায়ের ধার ধারেনা, তারা শক্তিমানদের তোষামোদিতেই ব্যস্ত, আরেক পক্ষের সত্য ও ন্যায় এর কোন বোধ নেই, তারা তাদের ভালবাসার বা অনুসরণীয় মানুষটি যা বলে তাই অন্ধভাবে মেনে নেয়, এবং শেষ দলটি, যারা সত্য ও ন্যায়ের জন্যে শক্তিমানদের ভয় করে না, যেটা নৈতিক, মানবিক এবং ক্ষতিকর নয়, নিজের জ্ঞান ব্যবহার করে সেটার পক্ষেই কথা বলে। কোন দলটিকে আমরা সাহসী, সৎ এবং সঠিক বলি তার উত্তর আমরা নিজেদের কাছেই পাবো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।