আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাংসপিন্ড হয়ে উঠা...............

আমার আমি......
তার মস্ত একটা আকাশ ছিল, ছিল একটা নদী, ছিল সবুজ শীতল একটা বাগান । পাখিদের সাথে খেলত, ছুটত প্রজাপতিদের পিছে । তার স্বপ্নগুলোর কোন সীমারেখা ছিল না । আকাশ ইচ্ছা হলেই ছুত প্রতিনিয়ত । তারপর হঠাৎ করেই যেন মিলিয়ে যেতে লাগল সব ।

সে হতে চেয়েছিল শহরের সবচেয়ে দামি, সূদর্শন আর লোভনীয় মাংসপিন্ড কারন ততদিনে ওর জানা হয়ে গেছে দামি, সূদর্শন আর লোভনীয় মাংসপিন্ড ছাড়া আর কারো তেমন কোনো দাম নেই এই সমাজে । তাই একদিন অন্য একজন সূদর্শন মাংসপিন্ডের সাথে সে শহরের সবচেয়ে নামকরা মাংসপিন্ড পরিচর্যা কেন্দ্রে গিয়েছিল । যারা অনেক দিন ধরে সুনামের সাথে সূদর্শন মাংসপিন্ড তৈরি করে আসছিল, তাই সে খুব উত্তেজিত ছিল । তাকে দেখে মাংসপিন্ড পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রধান তৈলাক্ত মুখে বলেছিল তার দ্বারা সবচেয়ে দামি সূদর্শন মাংসপিন্ড হওয়া সম্ভব বা তাকে বানানো সম্ভব, কিন্তু এই প্রধানকে তার এতটুকুও পছন্দ হয়নি যা সে প্রকাশ করতে পারেনি ঐদিন । এখানে আসার পর থেকেই তার আকাশটা তার কাছে সঙ্কুচিত আর ধোঁয়াশা হয়ে উঠতে লাগল ।

তার নদীটা হয়ে উঠল সংকীর্ন আর বাগানটা বিবর্ন । হ্যা, এরাও তাকে আকাশ, নদী, ফুল-পখির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল যা তার কাছে ছিল শধুই কিছু ফ্রেমে আবদ্ধ বস্তু । সীমাবদ্ধের পাখিগুলো শুধুই আকাশে উড়ত, প্রজাপতিগুলো ছিল শুধু ফুলতেই সীমাবদ্ধ যেখানে তার আকাশটা ছিল সম্পুর্ন অন্যরকম সেখানে সেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তার কথামতই পাখিগুলো হয়ত নদীতে সাঁতার কাটত কিংবা কথা বলত মিষ্টি সুরে, হয়ত প্রজাপতি ফুলে না উড়ে গাইত গান । যেখানে তার রং-তুলি আঁচড় কাটত রঙ্গিন রঙ্গে, সেখানে সে পরিচর্যা কেন্দ্রে খুঁজে পেয়েছিল বিবর্ণ আর ফ্যাকাসে রংগুলাকে ।

যা দিয়েই তাকে তার স্বপ্ন বুনতে হত, আবদ্ধ করত হত বিবর্ণ ক্যানভাসে । পরিপূর্ণ সুদর্শন মাংসপিন্ড হওয়ার জন্য তার মাঝে নিয়মিত ঢুকানো হত পুষ্টিকর দ্রব্য সামগ্রী । যা তাকে তীব্র যন্ত্রনা দিলেও সে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছিল এই ভেবে যে সে সবচেয়ে দামি, সূদর্শন মাংসপিন্ড হয়ে উঠছে যন্ত্রনা ভোগ করে করে । সে ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি এই যন্ত্রনা তাকে বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন । তীব্র যন্ত্রনা হওয়ার প্রধান কারন তাদের যন্ত্রপাতি যেমন পুরানো ছিল তেমনি তাদের রক্ষনাবেক্ষনকারীরাও অনভিজ্ঞ এবং অপরিপক্ক ছিল ।

তারা ঐসব পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে পুষ্টিকর দ্রব্যসামগ্রী তাদের মাঝে যেখান সেখান দিয়ে জোরপুর্বক প্রবেশ করানোর চেষ্টা করত, হয়ত মাঝে মাঝে তারা সফল ছিল তবে বেশিরভাগ সময় ব্যর্থতা প্রকাশ পেত তবুও তারা এটাকে ভ্রুক্ষেপ করে নাই কখনো । তারা উল্লসিত ছিল প্রবেশ করাতে পেরেই, সেটা যে পথ দিয়েই হোক । তাদের লক্ষ্য একটাই, এক একটা সূদর্শন মাংসপিন্ড । সেটা করেই তারা আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলত । তারা দেখতে চাইত না মাংসপিন্ডের মাঝে কিছু আছে নাকি, তারা বাহ্যিক রূপ দেখেই মহা আনন্দিত ।

সেও আনন্দিত হয়েছিল সেদিন, যেদিন সে পরিচর্যা কেন্দ্র হতে বের হয়েছিল একজন সূদর্শন মাংসপিন্ড হয়ে । গর্বিত অনুভব করেছিল অনেক তবে মনের এককোনে যে তার হারিয়ে ফেলা আকাশ নদীরা উঁকি দেয়নি বারংবার, তা নয় । তবে সে তার ধুসর আকাশ, বিবর্ন বাগানকে একপাশে সরিয়ে রাখতে পেরেছিল কারন তারা যে আজ বড় অচেনা তার কাছে যা ছাড়া সে একসময় কল্পনায় করেনি কোনকিছু । নিলয় পিছন ফিরে বসে আছে তার চোখ সামনের দিকে প্রসারিত যেখানে আকাশের মেঘগুলো খেলা করছে, হাতে আজকের পত্রিকা যেখানে তার ছবি ছাপা হয়েছে দেশের দশজন সফল মানুষের একজন হিসাবে । আজ সবচেয়ে বেশি আত্মতৃপ্তিতে ভোগা উচিৎ নিলয়ের তবু কেন জানি পারছে না সে, কারন তার কাছে মনে হচ্ছে পত্রিকা একটা ভুল করেছে ছাপাতে ।

তা হল মাংসপিন্ডের যায়গায় তারা তাকে মানুষ সম্ভোধন করেছে, যা সে ভুলে গিয়েছে সেই কবেই । এখন তার কাছে তাকে স্রেফ এখন্ড মাংসপিন্ড মনে হয়, কারন মানুষ হতে হলে তার একটা আকাশ থাকতে হয় যা সে হারিয়েছে অনেক আগেই ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.