নাজমুল ইসলাম মকবুল
এবার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশীর সন্তান হেনসেন হাশিম ক্লার্ক। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে মিশিগান অঙ্গরাজ্য থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থীকে পরাজিত করে ৫৩ বছর বয়সী ডেমোক্রেট ক্লার্ক শতকরা ৭৯ ভাগ ভোট পেয়ে কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তার এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্যাপিটাল হিলে তথা যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশের ভিত আরও মজবুত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার এই ঐতিহাসিক বিজয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশী অধ্যুষিত মিশিগানসহ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে আনন্দের বন্যা বইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে মিশিগানের রয়েছে এক আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা।
বিশ্বের মোটর গাড়ির রাজধানী ও গ্রেট লেক খ্যাত মিশিগান হচ্ছে শিল্প সমৃদ্ধ স্টেট।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হেনসেন হাশিম ক্লার্ক যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে নির্বাচিত হচ্ছেন সেপ্টেম্বরের প্রাইমারির পরই এমন আভাস ছিল প্রায় স্পষ্ট। কিনু্ত তারপরও স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা হ্রাস ও দেশজুড়ে ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের নানা প্রকার প্রচার-প্রপাগাণ্ডার ফলে আমেরিকান ভোটারদের মতি গতি নিশ্চিত হয়ে বোঝা যাচ্ছিল না।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের শ্রীধরা গ্রামের অভিবাসী আবদুল হাশিমের সন্তান হেনসেন হাশিম ক্লার্ক। তার মা আফ্রিকান-আমেরিকান তেলমা হাশেম।
হাশিম ক্লার্ক মাত্র ৮ বছর বয়সেই বাবাকে হারান। মা-তেলমা হাশেম জীবনযুদ্ধে হার মানেননি। অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে সামান্য গার্ডের চাকরি করেও ছেলেকে ভাল স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করান। কিন্তু তিনি সেই মাকেও হারিয়ে ফেলেন মাঝপথে। ছেলে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছে মা তা দেখে য়েতে পারেননি।
সেই দুঃখ হেনসেনকে সবসময় তাড়া করে ফেরে। তিনি নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইন আর্টসের ওপর গ্র্যাজুয়েশন করেন। এরপর বিশ্বখ্যাত জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ল স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি নেন ১৯৮৪ সালে। লেখাপড়া শেষে জন্মস্থান ডেট্রয়েট শহরে চলে আসেন। শুরু করেন আইন ব্যবসা।
কিন্তু মানবতাবাদী হেনসেন মানুষের ভালোবাসার টানে আইন পেশা ছেড়ে যোগ দেন রাজনীতিতে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ১৯৯০ সালে মিশিগান স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে তার প্রথম অভিষেক ঘটে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। নির্বাচিত হন স্টেটের উচ্চ কক্ষ সিনেটে। প্রায় দু’দশক দাপটের সঙ্গে মিশিগান স্টেটের রাজনীতিতে বিচরণ করেন।
বর্তমানে তিনি মিশিগান স্টেটের স্টেট সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডেমোক্রেট পার্টিতেও রয়েছে তার যথেষ্ট প্রভাব।
এছাড়াও হেনসেন কর্নেল ইউনিভার্সিটির কাউন্সিল মেম্বার, মিশিগান আইন রিভিশন কমিশনের মেম্বার এবং মিশিগান লেজিসলেটিভ ব্ল্যাক ককাসের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরগুলোর অন্যতম ডেট্রয়েট শহরের পূর্ব এলাকা ও আশপাশের ছোট কয়েকটি শহর কেন্দ্রিক ডিস্ট্রিক্ট ১৩ থেকে হেনসেন হাশিম ক্লার্ক এবার ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে ৪৩৫ আসনের যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বিজয়ী হয়ে নিজের পাশাপাশি পিতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনলেন বিরল সম্মান। তার মেয়াদকাল হচ্ছে ২ বছর।
হেনসেন তার ক্যাম্পেইনে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ট্যুরিজম, শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি,স্থানীয় সরকারের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
হেনসেনের প্রাপ্ত মোট ভোট হচ্ছে ১ লাখ ৫০৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান জন হেলার পেয়েছেন ২৩ হাজার ৪৫২ ভোট। দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশী অধ্যুষিত মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ১৩ ডিস্ট্রিক্টে প্রায় সহস্রাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান ভোটার রয়েছেন।
তার মোট ভোটারের মধ্যে শতকরা ৬১ ভাগ কালো, ৩২ ভাগ শ্বেতাঙ্গ ও ৮ ভাগ হিসপানিকসহ বহু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে।
হেনসেন বিগত ২০০৭ সালে ঘুরে এসেছেন পিতৃভূমি বাংলাদেশ। গিয়েছিলেন পিতার ভিটায়। স্বদেশের আতিথিয়েতায় মুগ্ধ অভিভূত হেনসেন, প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। চই প্লাম কোহানকে নিয়ে সংসার করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।