আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধুখালীতে 'বসবাহিনী' আতঙ্ক

পাখি উড়ে যায় রেখে যায় ছায়া, মানুষ মরে যায় রেখে যায় মায়া।

শুধু ইভ টিজিংই নয়, মধুখালীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো নয়। প্রতিদিনই হামলা-মারামারির ঘটনা ঘটছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা হচ্ছে গায়ের জোরে। চলছে নীরব চাঁদাবাজি।

এ সবের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা পাঁচ নেতা-কর্মী। মধুখালীবাসীর কাছে তাঁরা 'বস বাহিনী' হিসেবে পরিচিত। মধুখালীর সংসদ সদস্য আবদুর রহমান অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বুধবার তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এসব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রচারণা। আমার দলের কোনো নেতা-কর্মী আইনশৃঙ্খলার অবনতির সঙ্গে জড়িত নয়।

আর মধুখালীতে ইভ টিজিং বাড়লেও অন্য কোনো অপরাধ বাড়েনি। ইভ টিজিং সারা দেশেই বেড়েছে। এটা মধুখালীর একক কোনো সমস্যা নয়। ' মধুখালী থানার ওসি মহসিনুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ইভ টিজিং সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ছিল। এখনো আছে।

এটা ভবিষ্যতেও থাকবে। মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারণার কারণে ইভ টিজিং নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। ইভ টিজিং ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো বলে তিনি দাবি করেন। জানা গেছে, যেকোনো সময়ের তুলনায় ইভ টিজিং বেড়েছে মধুখালীতে। ইভ টিজিংয়ের শিকার হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েরাও।

থানায় অভিযোগ জানিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। ইভ টিজিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের নামও। ইভ টিজিংয়ের ফলে ধর্ষণের ঘটনাও বেড়েছে মধুখালীতে। চাঁপা রানী হত্যাকাণ্ডের শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই প্রকাশ হয়েছে রত্না কর্মকারের অপহরণের ঘটনা। গত ২০ অক্টোবর সাড়ে তিন বছরের এক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

মধুখালীর নয়াবাড়ী ঘোষকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মেয়েটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে মধুখালী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ফরিদপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ২২ অক্টোবর এ বিষয়ে মধুখালী থানায় মামলা করেন তার বাবা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তিনি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সম্প্রতি হাছিনা মনোয়ার নামে এক মহিলা থানায় অভিযোগ করে বলেন, তাঁর মেয়ে জেরিনকে বখাটেরা অপহরণের হুমকি দিয়েছে। ডাকের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, নির্ধারিত নম্বরে ফোন করার জন্য। সেখানে ফোন করলে সন্ত্রাসীরা হাছিনা মনোয়ারকে জানায়, তারা জেরিনকে দিয়ে নীল ছবি তৈরি করবে। পরে তা মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

এসব সন্ত্রাসী দেড় বছর ধরে তাঁর মেয়েকে খারাপ প্রস্তাব দিয়ে আসছে। রাস্তায় চলাচলের সময় আশালীন মন্তব্য করে। হাছিনা মনোয়ার নিজের এবং মেয়ের নিরাপত্তা চেয়েছেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি দুবার জিডি করেন। মধুখালী থানা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মধুখালীতে পাঁচজনের একটি গ্রুপ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক শিল্পপতির ছেলে। তিনি এলাকায় 'বস' হিসেবে পরিচিত। এলাকায় তিনি ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে চলাফেরা করেন। বস বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হচ্ছেন মুরাদুজ্জামান মুরাদ, ওয়াসিম, বাবুল, জাহিদ ও মির্জা মিলন।

তাঁদের মধ্যে জাহিদ ও মুরাদ এলাকার নানা দখল প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। মির্জা মিলন প্রশ্রয় দিচ্ছেন চাঁপা রানী হত্যাকাণ্ডের নায়ক রনির মতো অপরাধীদের। বস বাহিনী প্রধানের সঙ্গে সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এ প্রসঙ্গে আবদুর রহমান বলেন, 'বস বাহিনীর প্রধানকে আমি চিনি। তিনি কোনো সন্ত্রাসী কাজে জড়িত নন।

আর জড়িত থাকলেও একজন আমার কাছে এলে আমি তাঁকে নিষেধ করব কিভাবে? আমি সবার এমপি। সবাই আমাকে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক। ' গত সোমবার বালুমহাল ইজারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধুপুর শহরে কোয়েল নামে একজনকে মারধর করেছে বস বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। মধুখালী হাসপাতালে কোয়েলের চিকিৎসায়ও বাধা দিয়েছে তারা।

এ বিষয়ে কোয়েলের পরিবার মামলা করতে ভয় পাচ্ছে বলে তাঁর পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। বস বাহিনীর জাহিদ ও মুরাদ সম্প্রতি বাবলু খান নামে একজনকে রেলওয়ের জমি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করেছে। বাবলু ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ করার জন্য রেলওয়ে থেকে জমি লিজ নিয়েছিলেন। জাহিদ ও মুরাদ বাবলু খানকে সেই জমি থেকে উচ্ছেদ করেছে। জানা গেছে, বাবলু খান ২০০৪ সালে ছয় বছরের জন্য রেলওয়ের জমি বরাদ্দ নিয়েছিলেন।

গত জুন মাসে তিনি ফের ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য জমি লিজ নেন। সম্প্রতি জাহিদ মুরাদ তাঁকে সেই জমি থেকে উচ্ছেদ করেছে। মধুখালী বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, চাঁদা ছাড়া ব্যবসার বিষয়টি চিন্তাও করা যায় না। এটা সব সরকারের সময়ই হয়ে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।