ফাঁসির মঞ্চ থেকে আমাদের যাত্রা শুরু
পুলিশ এর হাত থেকে ছাড়া পেলাম ২টায়। এর আধাঘন্টা আগে ইভ টিজিং এর অপরাধ এ কলেজ প্রাঙ্গন থেকে আমাকে এবং আমার দুজন সহকর্মীকে আটক করে পুলিশ। দেখাতেই আমার এক সহকর্মি কে এস.পি. হারুন তার মুখ মোবারক থেকে সম্বোধন ছুঁড়ে দেন "শালার পুত,পাছার উপর বাড়ি দিয়া পাছা লাল কইরা ফেলমু। এইখানে কি করছ্। এটা নাচানাচির জায়গা?কি করছ্ এখানে?"
ঘটনাটা শুনুন, বহিরাগতরা দুপুর ১টার পর প্রবেশ করতে হয় কলেজে(ফেনী সরকারী কলেজ)।
আমি বহিরাগত হয়েই গিয়েছিলাম কলেজে। কারন আমাদের স্কুল কলেজে শিক্ষকদের কিছু শুচি সমস্যা আছে। ছাত্রদের তো গোয়াল পালা গরু ভাবা হয় সাধারনত। কলেজ ড্রেস সহ হাবিজাবি কিছু ফর্মালিটিস মেন্টেইন করতে হয়। আমি সেই ফর্মালিটিস এর নিকুচি করি।
তাই বহিরাগত হয়েই প্রবেশ। তখন কলেজ ফাঁকা। না আছে কোন ছাত্র, না কোন ছাত্রী। কলেজে প্রবেশের আগে এস.পি. হারুন এর সাথে দেখা হয়। কলেজ এ যাওয়ার পথে একজন সহকর্মির জুতো ছিঁড়ে যায়।
রাস্তার পাশে বসা মুচির কাছে জুতো সেলাই করতে থামলাম, আর পুলিশ এসে ওখানে হাজির। জিজ্ঞেস করলো কি করছি। জুতো সেলাই এর কথা বললাম। কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করায় বললাম কলেজে যাচ্ছি। আমাকে আবার জিজ্ঞেস করলো আমার চুল কেন এতো বড়।
বললাম নাটকের প্রয়োজন এ বড় রাখছি। এ ছাড়া জনগণ এর রাজাদের দেখানোর মত আর কোন যুক্তি ছিলোনা। চলে গেলেন ওনারা। এবং আমাদের চার্জ করার কারন আমার বড় চুল। জুতো ঠিক করে কলেজে প্রবেশ করলাম।
পুরো কলেজ ফাঁকা। আমার কাজ শেষ করে বেরুচ্ছি কলেজ থেকে, সেই পুলিশের গাড়ি পথ আগলে দাঁড়ালো। এস.পি. হারুন বললেন "শালার পুত,পাছার উপর বাড়ি দিয়া পাছা লাল কইরা ফেলমু। এইখানে কি করছ্। এটা নাচানাচির জায়গা?কি করছ্ এখানে?"কি কাজে আসলাম বলা হল ওনাকে।
সেই কাজেই যে এসেছি তার Prove চাইলেন তিনি। প্রিন্সিপাল এর কাছে নিয়ে গেলেন আমাদের। যদিও আমার কাজ ছিল অফিস এ। প্রিন্সিপাল এর কাছে আমাদের দেখিয়ে বললেন "এরা কলেজ প্রাঙ্গনে ইভ টিজিং করছিল। এরা কি আপনার ছাত্র?"।
সব শিক্ষক ছিলেন ওখানে। প্রতিজন শিক্ষক নিশ্চিত করলেন আমরা কেউই এই কলেজের ছাত্র নই। আমাদেরকে ধরে নিয়ে যেতে পারে কোন বাঁধা ছাড়াই। রুমটায় তুমুল ভাবে চলছে আমার চুলের তিরষ্কার। বেশ বিনোদন পাচ্ছিলেন প্রতিজন শিক্ষক।
তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন কিছু অভিবাবক এবং এস.পি.। চুল বড় রাখার কারনে তাদেরও একই কথা বললাম যে আমার নাটকের চরিত্রের প্রয়োজন এ আমাকে রাখতে হয়েছে। কয়েকজন বলে উঠলেন যে এসব নাটক ফাটক করে পোলাগুলা নষ্ট হয়। একজন শিক্ষক বললেন চুল বড় রেখে যদি সাংস্কৃতিক কর্মি হওয়া যেত তবে সবাই চুল বড় রাখতো,এই বলে তিনি উচ্চস্বরে হাসতে লাগলেন সাথে আছেন সবাই। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে ওনাদের সাথে আমার কথা হল।
আমার কলেজ ID বের করে দেখালাম। আমাকে তখন কলেজ ছাত্র বলে চিহ্নিত করলেন শিক্ষক বৃন্দ। এর পর কিছুক্ষন চলল এস.পি. এর গুনগান। উনি একটা পত্রিকা বের করে নিজের একটা নিউজ দেখালেন সবাইকে। প্রশংসার উচ্ছাসিত তখন সবাই।
এর পর দৃষ্টি ঘুরলো আমাদের উপর। পুনরায় শুরু হল আমার চুল আলোচনা। সবার একই রায়, যার চুল এতো বড় সে অবশ্যই বখাটে খারাপ ছেলে। সেই ছেলে মেয়েদের অবশ্যই উত্যক্ত করবে। এস.পি. এর সাথে কথা বললাম, উনি বললেন আমরা কলেজ প্রাঙ্গনে ঘোরাঘুরি করেছি।
আমাদের ধরে আনা হয়েছে ইভ টিজিং এর দায়ে। আর যদি আমরা কলেজের কাজের কথা না বল্তাম তবে হাজতে ঢোকানো হত আমাদের ইভ টিজিং এর দায়ে। আমাদের থেকে অঙ্গীকার নামায় সই নেয়া হল যে আমরা এর পর আর ইভ টিজিং করবো না। কলেজ ছাত্র বলে ছেড়ে দেয়া হল। আমি বললাম আমরা যে কাজটি করিনি সেই কাজ করেছি বলে কেন সাইন করব? প্রিন্সিপাল চোখ রাঙ্গিয়ে আমাকে বললেন আমি যদি আর একটি কথাও বলি তবে আমাকে পুলিশে ধরিয়েই দেবেন।
এস.পি. বললেন বাইরে গাড়ি আছে তার,বাহিনীও আছে, নিয়ে যাবে যদি আর একটি কথাও বলি। আগত্য সাইন করলাম। অপরাধ না করেও কানে ধরে বলতে বাধ্য করলো যে আর কখনো এমন কোন কাজ করবোনা। আমাকে কোন কথা বলারই কোন সুযোগ দেয়া হল না।
বলুন এখন, পুলিশ কি করছে? মূলত পুলিশ কিছুই করছেনা।
ইভ টিজিং এ যারা অপরাধী তারা দিব্যিই আছে। পুলিশ দেখে তারা আত্মগোপনও করছে। মাঝে হয়রানির শিকার হচ্ছে অন্যরা। এই অন্যদের মাধ্যমে বেশ নাম কুড়াচ্ছে পুলিশ। এর কি প্রতিকার!!! সংস্কৃতির প্রতি যখন শিক্ষকদের এতই শুচিবায়ু তবে শিক্ষকতা কোন যোগ্যতায় করান?ডিগ্রীর জোর? উনারা কি গান শোনেন না? কোন যোগ্যতায় শোনেন? উনাদের কাছে সংস্কৃতি মানে যদি শুধু গান আর আবৃত্তি হয়ে থাকে তবে একজন নাট্যকর্মী কেন থিয়েটার করেন? কেন সংস্কৃতির বাহক হবেন কেউ? ষোল কলার এই মাধ্যম কোন দৃষ্টিতে দেখা হয় তবে? যেখানে মানুষ গড়ার কারিগররাই বলছেন নাটক ফাটক করে ছেলে মেয়ে নষ্ট হয়?? যে পুলিশটা ভালো খারাপ নির্ণয় করে ড্রেসআপ দেখে সে কি শৃংখলা রক্ষা করবে? যে অভিবাবক গণ নিজ চোখেই দেখছেন যে একজন কিভাবে আর একজন কে তোষামদি করছে তারাইবা কেমন অভিবাবক,নিজ সন্তানকে সেই তোষামদে পুষ্ট ব্যাক্তিদের হাতে শিক্ষার উদ্দেশ্যে সপে আসেন! আর সবাই কেমন নাগরিক দেশের, তোষামদ আর ক্ষমতার জোরে একটা মিথ্যা কে চাপিয়ে দিল অযথাই।
যেখানে অপমানিত হতে হল কিছু নিরপরাধ লোকদের! সেই পুলিশদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি আমরা ইভ টিজিং এর দায় যারা দেশের জন্য কাজ করার চাইতে নিজ মান উন্নয়নে নিরপরাধ কাউকে অপরাধী করে? সেইসব শিক্ষক এর হাতে ছেড়ে দিয়েছি শিক্ষার ভার, যারা একজন এস.পি. এর মান রক্ষার্থে অপমান করছে কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী কে মিথ্যে দায় চাপিয়ে!!!
কেউই আমরা কিছু করিনা এদের তিব্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে। আমাদের সাহস নেই। আমরা ঠিকই পঙ্গু। আর আমাদের পঙ্গুত্বে ভর দিয়ে ঠিকই ফায়দা লুটে নেয় কিছু ক্ষমতাবান। এদের কি বলবেন? আমিতো দেশদ্রোহীই বলব।
জানিনা এভাবে নাম উল্লেখ করে লিখায় আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কিনা!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।