আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

...........রিহানের প্রতিবিম্ব ..........

সত্য অপ্রিয় হলেও সুন্দর

রিহান দুধটুকু খেয়ে নে বাবা। দুধ খেতে পারবো না। প্রতিদিন এই অখাদ্য খেতে ভাল্লাগেনা। দুধ দেখলেই এখন আমার বমি আসে বিরক্ত কন্ঠে আপত্তি জানায় রিহান। কিন্তু দুধ খেলে তো শরীর ভাল থাকবে।

কত পড়াশোনা করিস। শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে না? যাও তো আম্মু ঘ্যান ঘ্যান করো না আমি এখন ব্যাস্ত আছি। কি করছিস বাবা ? কম্পিউটার নিয়ে শুধু শুধু বসে আছিস পড়ছিস নাতো কিছু। একটু কথা বলি না হয় তোর সাথে। দেখ আম্মু এরকম ন্যাকামি আমার সাথে করবে না।

আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তুমি এখান থেকে যাও তো, ডিস্টার্ব করো না। রিহান বিরক্ত হ্য় আম্মুর উপর। সাজেদার বুকের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। কিছু বলতে পারেন না তিনি তার একমাত্র ছেলেকে।

রিহান কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। কিছু বললেই রেগে যায়। সাজেদা উদাস হয়ে যায় কত স্মৃতিই না ভীর করে মনের পাতায়। এইতো সেদিন রিহান জন্ম নিল কত ছোট ছিল, কচি কচি হাত পা শুন্যে ছুড়তো নিজেকে বড় সুখী মনে হতো সাজেদার। কত কষ্টই না সহ্য করেছে সে তার ছেলেকে বড় করতে গিয়ে।

কত রাত জেগে কাটিয়েছে তার ছেলের জন্য । রিহানের এরকম রুক্ষ আচরনে তাই সাজেদার বুকটা কষ্টে ফেটে যায়। কেন এমন হয়ে যাচ্ছে রিহান? তাদের আদর ভালবাসার কি কোন কমতি ছিল? কই তেমন মনে হয় নাতো তার। রিহান যখন যা চেয়েছে তখনি তা দিতে চেষ্টা করেছে তারা। তাহলে কেন এমন হলো? হিসেব মেলে না সাজেদার।

হয়তো এটা প্রকৃতির বিধান সন্তান বড় হলে বাবা মাকে আর প্রয়োজন পরে না ? দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় সাজেদা। রিহান আড় চোখে তাকিয়ে মায়ের চলে যাওয়া দেখে। হাফ ছাড়ে রিহান, ধেত্তরি আম্মুটা শুধু শুধু বিরক্ত করে। রিহান এখন আর সেই ছোটটি নেই সেটা যেন আম্মু ভুলেই যায়, বিরক্তিকর ! মোবাইলে রিং হচ্ছে কে আবার কল করলো। ওহ্‌ জেনি কল করেছে।

ইষৎ উজ্জল হয় রিহানের মুখ। হ্যালো কেমন আছো জান? এই মাত্রই তোমার কথা ভাবছিলাম, আর কি আশ্চর্য সঙ্গে সঙ্গে তোমার কল ! রাতে খেয়েছো ঠিক মতো, আমার সোনা পাখি? হু তুমি আমার সোনা পাখি ময়না পাখি টিয়া পাখি । আই লভ ইউ সো মাচ। হ্যা তোমাকে অনেক ভাল বাসি জান। কি বলছো কত টুকু ভালোবাসি? আমি তোমাকে সব কিছু থেকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসি।

কি বলছো আমার বাবা মা? হ্যা তাদের থেকেও বেশি ভালোবাসি, হুম। রিহানের গলা এক বারো কেঁপে উঠে না। এসব মন ভুলানো কথা সে বহুবার বহু মেয়েকেই বলেছে, এসব বলতে হয়। হ্যালো জানু তোমার কি মনে আছে কাল আমরা লিটুদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি ? কাল লিটুর আব্বু আম্মু কেউ বাসায় থাকবে না শুধু তুমি আর আমি। অনেক মজা হবে।

আর শোন কাল তোমাকে একটা মজার জিনিস খাওয়াবো যেটা খেলে দেখবে কি ফিলিংস আসে। মনে হবে স্বর্গে চলে গেছ। রিহান তার এক বন্ধুর মাধ্যমে দুটো ইয়াবা ট্যাবলেট সংগ্রহ করেছে আজ। এর আগেও সে ইয়াবা খেয়েছে জিনিসটার মজাই আলাদা। ওহ্‌ জান, হ্যা শুনছি ওকে তাহলে কাল সকাল এগারটা সময় তোমার সাথে দেখা হচ্ছে।

ওকে, লভ ইউ সুইটি, টেক কেয়ার, গাড নাইট, বাই..। রিহান পুলকিত অনুভব করে আগামি কালের কথা চিন্তা করে। যাক এক মাসের পরিশ্রম সার্থক হচ্ছে কাল। অবশ্য কিছু টাকা খরচ হয়েছে জেনির মন পাওয়ার জন্য। মেয়েটা বড্ড খাই খাই স্বভাবের।

সমস্যা নেই, এবার শুধে আসলে উসুল করবে সব। কালকের সব ঘটনা ভিডিও করে রাখবে রিহান। এর পর পাখি তোমাকে যা বলবো তাই করবে তুমি আমার হাতের পুতুল হতে বাধ্য হবে হা হা হা হাসে রিহান। এরকম কিছু পুতুল রিহানের হাতে অলরেডি আছে আহা ভাবতেই রিহানের মজা লাগে। রিহান দেখতে শুনতে ভালো, অনেকেই বলে হিরোদের মতো নাকি।

তাই পাখিদের অভাব হয়নি কখনো তার। কম্পিউটারের গোপন ফাইলে রাখা মহামুল্যবান ভিডিও গুলো দেখেতে থাকে রিহান। শকুনের চোখের মত চকচক করতে থাকে তার চোখ। দেখতে দেখতে একসময় ক্লান্ত হয়ে আসে রিহানের চোখ আর শরীর। কম্পিউটার বন্ধ করে শুয়ে পড়ে রিহান আগামী কালের অ্যাডভেঞ্চারের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পরে রিহান।

রিহান চোখ মেলে তাকায় মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেছে কোন এক অজানা কারনে। বুকের ভেতরটা ধ্বক ধ্বক করছে। কোন এক অজানা অপ্রাকৃতিক কন্ঠ যেন নাম ধরে তাকে ডাকছিল। হয়তো স্বপ্ন দেখেছে, মনে মনে ভাবে রিহান। চোখ বন্ধ করে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে রিহান।

আচমকা কারো দীর্ঘ শ্বাস ফেলার শব্দে চমকে উঠে রিহান ঘুরে তাকায় তার কম্পিউটার রাখা টেবিলের দিকে। কে কে কে ওখানে বসে আছে? রিহানের গলা জড়িয়ে আসে। চেয়ারে কেউ একজন বসে আছে চুপ করে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না লোকটার। রিহানের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে সে।

সেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলেছে মনে হয়। কে আপনি আমার রুমে ঢুকলেন কিভাবে? কি চান আপনি? রিহান ভয় পাওয়া গলায় জিগ্যেস করে। শান্ত হও রিহান আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই কারন আমি হলাম তুমি। মা..মা..মানে ? হ্যা আমি হলাম তোমার প্রতিবিম্ব তোমার ছায়া আমিই হলাম তুমি। তুমি কি নিজেকে ভয় পাও রিহান? কি যাতা বলছেন আমি কেন আপনি হতে যাবো এইতো আমি এইতো আমার শরীর।

হ্যা ওটা তোমার শরীর কিন্তু আমি তোমার প্রতিবিম্ব। কি সব আবোল তাবোল বকছেন? কি ভাবে রুমে ঢুকলেন আপনি? কি চান আমার কাছে? আমি সব সময় তোমার সাথেই ছিলাম রিহান ছায়ামূর্তি বলে উঠে। আমি কিছু জিনিস তোমাকে দেখাতে চাই । কি জিনিস? রিহান কাপা কন্ঠে প্রশ্ন করে। তাকাও, দেখ রিহান, ভালো করে দেখ।

বন্ধ কম্পিউটার সয়ংক্রিয় ভাবে অন হতে দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠে রিহানের। কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠেতে থাকে ছবি। রিহানের বুকটা ধ্বক করে উঠে। এ যে তার মায়ের ছবি। সারা শরীর এমন রক্তাক্ত কেন? রিহান প্রশ্ন করার আগেই ছায়া মূর্তি বলে হ্যা রিহান এটা তোমার মায়ের ছবি যাকে তুমি রক্তাক্ত করেছ বার বার।

দেখ তোমার বাবার ছবি কেমন করে রক্ত ঝরছে, দেখ রিহান। দেখ রিহান দেখ তোমার শিকার করা পাখিদের ছবি দেখ কেমন রক্তাক্ত মাংশ পিন্ড হয়ে গেছে সবাই। দেখ রিহান সেই রিক্সা ওয়ালার ছবি যাকে তুমি থাপ্পর মেরে ছিলে দুটাকা বেশি ভারা দাবি করায়, দেখ, দেখ রিহান। এই দেখ তোমার ইউনিভার্সিটির সেই চশমা পড়া সহজ সরল ভালো মেয়েটি। যাকে তুমি আর তোমার বন্ধুরা মিলে টিজ করো দেখ কেমন রক্তাক্ত।

আরো দেখ রিহান এই রক্তাক্ত মানুষের মিছিল যাদের ট্যাক্সের টাকায় তোমার ইউনিভার্সিটি তৈরি, তোমার শিক্ষদের বেতন দেওয়া হয় দেখ ভালো করে দেখ। এই দেখ রক্তাক্ত মানচিত্র......... না না না আমি আর দেখতে চাই না চাই না চাই না চিৎকার করে কেঁদে উঠে রিহান। তুমি কে ? তুমি কে? হা হা হা হেসে উঠে ছায়ামূর্তি আমাকে এখনো চিনতে পারোনি রিহান? এই দেখ আমার মুখ চিনতে পারো কিনা? ঘুরে তাকায় ছায়ামূর্তি রিহানের দিকে। আতকে উঠে রিহান এতো তারই মুখ কিন্তু এমন বিকৃত কেন? চোখ গুলো যেন শকুনের চোখ, পৈশাচিক আগুনে কেমন জ্বলছে। মুখে এত ঘা কেন? দাত গুলো এত বড় হায়েনার মতো? উহ্‌ কি বিভৎষ ! না না না তুমি কখনো আমি হতে পারি না তুমি অন্য কেউ, অন্যজন।

না রিহান আমি তোমারই প্রতিবিম্ব। না না না আমি তোমাকে চাই না, আমি তোমাকে ঘৃনা করি, তুমি চলে যাও তুমি চলে যাও। রিহানের চিৎকার প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে রুমের দেয়ালে। রিহান তুমি কি সত্যিই চাও আমি আমি চলে যাই? হ্যা হ্যা হ্যা চলে যাও চলে যাও। কিন্তু রিহান আমি চলে গেলে তোমার আগামীকালের পাখি শিকারের স্বপ্ন পুরণ হবে না।

আমি চাই না স্বপ্ন পুরন করতে চাই না চাই না। আমি চলে গেলে তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে তোমার বন্দী খাঁচার পাখিদের কাছে, সেই চশমা পরা সরল মেয়েটির কাছে, সেই রিক্সা ওয়ালা টির কাছে, তোমার বাবা মায়ের কাছে। আমি চাইবো সবার কাছে ,ক্ষমা চাইবো সবার কাছে । আমি চলে গেলে তোমাকে সেই সব ঋন শোধ করতে হবে রিহান। করবো আমি শোধ করবো।

তুমি যাও, যাও এবার। আমি সহ্য করতে পারছিনা তোমাকে। ঠিক আছে রিহান আমি চলে গেলাম। হ্যা যাও যাও যাও..... ঘুম ভেঙ্গে গেল রিহানের । সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে তার বুকের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।

উফ কি বিভৎস স্বপ্নই না দেখেছে রিহান। সকাল প্রায় হয়ে গেছে আর ঘুম আসবে না। দরজা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় রিহান। সূর্য টাও ঘুম ভেঙ্গে পুব আকাশে উকি দিচ্ছে । অপার্থিব এক পবিত্র আলোয় ভরে আছে চার পাশ।

আহা কত দিন পর আজ এত সকালে ঘুম থেকে উঠলো রিহান। সকালটা এত সুন্দর হ্য় এর আগে কখনো খেয়াল করে দেখনি কেন সে মনে মনে ভাবে রিহান। মনে পরে যায় স্বপ্নের কথা ওটা কি আসলেই স্বপ্ন ছিল? স্বপ্ন হলে ছিল না হলে নাই কিন্তু রিহান তার কুৎসিৎ প্রতিবিম্বটাকে সত্যিই বিদায় দিয়েছে। আজ তার অনেক কাজ সবাইকে কল করে অথবা দেখা করে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই রিক্সা ওয়ালা আর চশমা পড়া মেয়েটিকে খুজে বের করতে হবে।

রিহান তার আব্বু আম্মু রুমের দিকে হাটা শুরু করে। সাজেদার ঘুম ভেঙ্গে গেছে । কি ব্যাপার রিহানের গলা না এত সকালে তো কখনো তার ছেলে ঘুম থেকে উঠে না। কোন সমস্যা হয় নি তো? তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুললেন সাজেদা। দরজায় রিহান দাড়িয়ে তার চোখে জ্বল।

কিন্তু মুখে এক অনাবিল পবিত্র আভা। রিহান তার মাকে জড়িয়ে ধরে। আম্মু আমাকে ক্ষমা করো ....। সাজেদা গভীর মমতায় হাত বুলায় তার ছেলের মাথায়। কি হয়েছে আমার পাগল ছেলে .............


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।