আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিকফা চুক্তি কেন এবং কার স্বার্থে?

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নানা কসরতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার বাংলাদেশকে একটি আপত্তিকর চুক্তিতে স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হচ্ছে। চুক্তিটি এখনো স্বাক্ষরিত হয়নি, তবে হতে চলেছে। ১৭ জুন মন্ত্রিসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা নামক চুক্তিটি স্বাক্ষর করবে। পুরো নাম ‘Trade and Investment Cooperation Framework Agreement’ বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় এরকম_ 'বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার কাঠামোগত চুক্তি'।

২০০১ সালে মার্কিন প্রশাসন এই চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়।

তখন নাম ছিল টিফা। এই নামে প্রায় একই ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক লাভের দিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশের কী লাভ হবে? বাংলাদেশের লাভ নয়, বরং ক্ষতির দিক অনেক। সামান্য 'ক্ষতি' শব্দটি ব্যবহার করলে প্রকৃত অবস্থাটি বোঝা যাবে না।

বস্তুত বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে থাকবে। এটা বুঝতে পেরে শুধু বামপন্থিরাই নয়, এমনকি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী শ্রেণীর বড় অংশ তীব্রভাবে বিরোধিতা করে এসেছে। সেই কারণে ১২ বছর ধরে চুক্তির বিষয়টি ঝুলে ছিল। চুক্তির প্রথম খসড়াটি রচিত হয়েছিল ২০০২ সালে। বিএনপির শাসনামলে।

বিএনপির মতো প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্রাজ্যবাদনির্ভর সরকারও সম্মত হতে পারেনি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে চুক্তিটির খসড়া পুনরায় পেশ করা হয় কিছুটা সংশোধিত আকারে। এর পর সামান্য রদবদল করে এবং নামে পরিবর্তন এনে বিশেষ করে cooperation শব্দটি যোগ করে এটিকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যরূপে উপস্থাপিত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এখন সেটি স্বাক্ষরিত হতে চলছে।

প্রথমে বোঝা দরকার, এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত তাগিদ কেন? ১২ বছর ধরে তারা নাছোড়বান্দার মতো লেগে আছে কেন? শুধু তাই নয়, প্রচ্ছন্ন হুমকি-ধমকিও দিয়েছে তারা।

অন্যদিকে এটাও বোঝা দরকার, এতকাল পর আওয়ামী লীগ সরকার এখন কেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল।

চুক্তির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পরপরই ১৯ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে এক নিবন্ধ লিখলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি চুক্তির সমর্থনে বক্তব্য হাজির করতে গিয়ে চুক্তির সমালোচকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন এই বলে যে, সমালোচকরা না পড়েই সমালোচনা করছেন। মন্ত্রীর অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। মন্ত্রণালয়ের দ্বারা সরবরাহকৃত চুক্তির চার পৃষ্ঠার খসড়াটি আমরা পড়েছি এবং তার ভিত্তিতেই আমাদের সমালোচনা।

তবে চুক্তির পরিপূর্ণ বিষয়াদি আমাদের জানা নেই। কারণ তা প্রকাশ করা হয়নি। সেটিও আমাদের সমালোচনার বিষয়। এত গোপনীয়তা কেন? এত রাখঢাক কেন?

যে চুক্তির বিষয়টি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ঝুলেছিল তা এত তাড়াহুড়া করে স্বাক্ষর করার প্রয়োজনীয়তা কেন দেখা দিল? আমরা বলছি, এই চুক্তি দ্বারা বাংলাদেশকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বাঁধা হবে। এমন গুরুতর অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন সরকারের কী করা উচিত? সরকারের উচিত এই নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা ও বিতর্কের ব্যবস্থা করা।

সেটাই গণতন্ত্রের রীতি। আমাদের দাবি জনমত যাচাই করা হোক। সংসদে আলোচিত হোক। কিন্তু না, সংসদে উঠবে না চুক্তির বিষয়টি। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য রহমত আলীর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সাফ বলে দিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সংসদে উপস্থাপন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

অথচ আমরা জানি যে, সংবিধানের ১৪৫ (ক) ধারা অনুসারে বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি সংসদে উত্থাপন করার যে বিধি তা বাধ্যতামূলক। তবে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো চুক্তি হলে তা সংসদের গোপন বৈঠকে উপস্থিত করতে হবে। টিকফা চুক্তি বাণিজ্যবিষয়ক চুক্তি। সামরিকবিষয়ক কোনো চুক্তি নয়। তাহলে তা সংসদে প্রকাশ্যে উত্থাপিত হবে না কেন? আর যদি তেমন গোপনীয় ব্যাপার হয়ে থাকে তাহলে তা সংসদের গোপন অধিবেশনেই উত্থাপিত করা হোক।

বস্তুত আজ পর্যন্ত বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত কোনো চুক্তিই সংসদে উত্থাপিত হয়নি। আমার সন্দেহ হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপিত হলে মন্ত্রীরা এটা পাঠ করেছিলেন কিনা।

বর্তমানে মহাজোট সরকার যে জনপ্রিয়তা হারিয়ে প্রায় শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে, তা সরকার নিজেও ভালো করে জানে। আওয়ামী লীগের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা যখন লেখে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা 'তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে' তখন এ ব্যাপারে সন্দেহের খুব বেশি অবকাশ নেই। সরকার যত জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে, তত সে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বৈদেশিক শক্তির ওপর।

কারণ বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়া আর না যাওয়া অনেকাংশে বৈদেশিক শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ওপর নির্ভর করে। এটা শেখ হাসিনাও ভালো করে জানেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখন তিনি গ্যাস রপ্তানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেই ভূমিকাকে আমরা প্রশংসা করলেও বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি ও মার্কিন প্রশাসন মোটেই পছন্দ করেনি।

২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, গ্যাস রপ্তানিতে সম্মত না হওয়ার জন্যই আমেরিকা তাকে হারিয়ে দিয়েছে। এবার সেই ভুল তিনি আর করবেন না। আমেরিকাকে খুশি করার জন্য আগ বাড়িয়ে অনেক কিছুই তিনি করবেন। গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে। সম্পর্ক উন্নত করার জন্য তিনি এখন একধাপ এগিয়ে দ্রুত টিকফা চুক্তি করতে আগ্রহী ও তৎপর হয়ে উঠেছেন।

আমার এই বিশ্লেষণ যদি সত্যি হয় (সত্য বলেই আমি মনে করছি) তাহলে বলতে হয় 'হায়! বড় দুর্ভাগা বাংলাদেশ!'

বাংলাদেশ এত দুর্ভাগা যে, প্রধান বিরোধী দল যারা ভালো-মন্দ সব প্রশ্নেই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারাও কিন্তু আমেরিকার প্রশ্নে সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারাও আমেরিকার কৃপাপ্রার্থী। দেশপ্রেম এদের কারোর মধ্যেই নেই। টিকফা প্রশ্নে বিএনপির সামান্যতম আপত্তি শোনা যায়নি।

অতীতেও বহুবার দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে যত বিরোধই থাকুক না কেন, মার্কিনের প্রশ্নে উভয়ই একমত।

১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে যখন বিএনপির বাণিজ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (WTO) গঠনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন (শোনা যায় সেই বিশালাকার দলিলও বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তিদের কেউ পাঠ পর্যন্ত করেননি), তখন জাপান সফররত তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা টোকিও থেকেই এই চুক্তিকে অভিনন্দিত করেছিলেন। ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার আমেরিকার সঙ্গে সোফা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করেনি। অথচ সোফা চুক্তি ভয়াবহরূপে জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এই চুক্তি বলে মার্কিন সৈন্য সশস্ত্রভাবে বিনা ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারবে এবং খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধ করলেও বাংলাদেশের আদালতে বিচার হবে না।

২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য বাংলাদেশের মাটি, সমুদ্র ও আকাশ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালাতে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে চেয়েছিল। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ ধরনের কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পর্যন্ত ছিল না। তবু মার্কিন প্রেমিক সরকার আগ বাড়িয়ে এই দেশদ্রোহী কাজটি করেছিল। মার্কিন সৈন্যবাহিনীকে দেওয়া এই বিশেষ সুবিধাটি এখনো বহাল আছে।

পরবর্তীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা এটি বাতিল করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক বিরোধ থাকা সত্ত্বেও শ্রেণীর প্রশ্নে তারা একমত। উভয়ই লুটেরা ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধি। উভয়ই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বশংবদ ও তাদের স্বার্থের পাহারাদার।

এবার দেখা যাক, মার্কিন প্রশাসনইবা এত আগ্রহী কেন টিকফা চুক্তির ব্যাপারে। কারণ এমন চুক্তি করতে পারলে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে অথবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে যৌথভাবে অবস্থান নেওয়া বা দরকষাকষি থেকে বিরত করা যাবে। সেটা আমেরিকার জন্য সেই দেশের বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর জন্য খুবই লাভজনক। WTO-এর সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ব্রাজিল, ভারত প্রভৃতি দেশ যৌথভাবে অবস্থান নিয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোও জোট বেঁধে তাদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা চালায়।

WTO-এর সম্মেলনে প্রত্যেক দেশের এক ভোট। এটা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জন্য বিশেষ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা ছোট ছোট দেশের যৌথ উদ্যোগকে ভেঙে দিতে চায়। সে জন্য প্রতিটি দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি করে নিজের বলয়ে নিয়ে আসতে আগ্রহী। বাণিজ্যবিষয়ক কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা আমেরিকার সঙ্গে আলাদা করে ফয়সালা করতে হবে (যেখানে অবশ্যই অনেক শক্তিধর আমেরিকারই জয় হবে)।

ফলে বাংলাদেশ যৌথভাবে দরকষাকষির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ঠিক এটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়। তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশের সঙ্গে মার্কিনের বাণিজ্য অনেক বেশি সেসব দেশ যথা চীন ও ভারত কিন্তু টিকফা চুক্তিতে রাজি হয়নি। আর বাংলাদেশ হাত বাড়িয়ে রাজি হয়ে বসেছে।

বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই এই সংক্ষিপ্ত রচনায়।

তবে এ প্রসঙ্গে একটা বিষয় আলোচনা না করলেই চলছে না। সেটি হলো মেধাস্বত্ব সম্পর্কিত বিষয়। চুক্তির খসড়ায় মেধাস্বত্ব আইন সংরক্ষণের কথা জোরের সঙ্গে বলা হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল সব ক্ষেত্রেই সব জিনিসের ওপর প্যাটেন্ট আরোপ (যা Intellectual Property right বা tripa বা মেধাস্বত্ব অধিকার নামে পরিচিত)। বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের ওপর রাষ্ট্রের সব রকম বাধা-নিষেধ বা নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার, কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি হ্রাস, গণবণ্টন ব্যবস্থা প্রত্যাহার, পরিসেবার ক্ষেত্র সম্পূর্ণ উন্মুক্তকরণ, আমদানি উদারিকরণ ইত্যাদি।

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে মেধাস্বত্ব অধিকার ও অন্য কিছু বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রথমে ২০১৫ সাল ও পরবর্তীতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টিকফা চুক্তির ফলে আমরা এখনই TRIPS-এর অধীনে এসে যাব। উপরোক্ত ছাড় কার্যকর হবে না। এদিকে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রায় সব জিনিসের ওপর প্যাটেন্ট করে বসে আছে। ফলে তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে এবং এরকম আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার ফি দিতে হবে।

ওষুধসহ এসব জিনিসের দাম বেড়ে যাবে।

ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক ছাড়াও টিকফা চুক্তি বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বও দারুণভাবে হুমকির মুখে পড়বে। টিকফা চুক্তিতে বলা আছে, 'বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুরক্ষা' নিশ্চিত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মার্কিন বিনিয়োগের সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে মনে করা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এগিয়ে আসবে। এই অজুহাতে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন কোম্পানির তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে সহায়তার জন্য বিনিয়োগ সুরক্ষা প্রয়োজন সেখানে মার্কিন নৌ সেনা আসতে ও ঘাঁটি স্থাপন পর্যন্ত করতে পারবে।

বাণিজ্যিক সুবিধা ছাড়াও ভূরাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্যও মার্কিন প্রশাসন আমাদের টিকফা গিলানোর জন্য এত তৎপর হয়ে উঠেছে।

মার্কিন প্রশাসন মুক্তবাজার দর্শনকে চাপিয়ে দিয়ে আমাদের সব অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে তাদের লুণ্ঠনের জন্য উন্মুক্ত করাতে চায়। তাদের পণ্য ও পুঁজি অবাধে (প্রায় বিনা শুল্কে) যাতায়াত করতে পারবে। টিকফা চুক্তিতেও সেই দর্শনের প্রতিফলন আছে। WTO একই কথা বলে।

কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যে পণ্য শ্রমশক্তি তার যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিন্তু কঠিন বাধা রয়েছে। মার্কিন পুঁজি ও পণ্য অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিক মার্কিন দেশে যেতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এটাই হলো দ্বিমুখী নীতি। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণের দায়িত্ব হলো টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর দানে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

মহাজোট সরকার যাতে স্বীয় দলীয় স্বার্থে দেশের এত বড় সর্বনাশ না করতে পারে সে জন্য এখনই সচেতন ও তৎপর হতে হবে।

লেখক : রাজনীতিক।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।