আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্রামোফোন রেকর্ডের জীবন্ত জাদুঘর

পথে নেমেছি; পথই আমায় পথ দেখাবে। নিজের সংগ্রহের গ্রামোফোন বাজাচ্ছেন ইকবাল মতিন কৈফিয়ত: এটি একটি সম্পূর্ণ কপি-পেস্ট পোস্ট। আমাদের অসাধারণ সিরাজ সাঁই ভাইয়ের একটি পোস্টের মন্তব্যে এটি পেস্ট করেছিলাম। তার মতো আমিও মনে করি এ ব্যাপারটি সবার জানা উচিত। তার অনুরোধে এটি পোস্ট আকারে দিলাম।

এ ফিচারটির লেখক: আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর এখানে । ইকবাল মতিনের বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর তিন মাস। আর নওগাঁর কাশিমপুরের জমিদার শরৎ কুমার মৈত্রের বয়স ৯০ বছর। ওই সময় ইকবাল মতিন গিয়েছিলেন জমিদারের সঙ্গে দেখা করতে। শিশু ইকবাল মতিনের সংগীতের প্রতি অনুরাগ দেখে জমিদার মুগ্ধ হন।

সেই সুবাদে জমিদারবাড়িতে তাঁর তিন দিনের আতিথেয়তা মেলে। ফেরার সময় জমিদার তাঁকে সংগীতের একটি দুর্লভ গ্রন্থ উপহার দেন। বইটির নাম ভ্রাম্যমাণের দিনপঞ্জিকা। লেখক কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ছেলে প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও সংগীতবোদ্ধা দিলীপ কুমার রায়, যিনি ১৯২০ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত ভারতের বড় বড় শহর ভ্রমণ করার সময় ওস্তাদ ও বাইজিদের গান শোনেন। তাঁর এই গানের অভিজ্ঞতা নিয়েই ১৯২৭ সালে লেখেন ভ্রাম্যমাণের দিনপঞ্জিকা।

এই বই ইকবাল মতিনকে সেই সময়ের প্রখ্যাত শিল্পীদের দুর্লভ রেকর্ড ও এ-সংক্রান্ত ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ বইপুস্তক সংগ্রহের প্রতি নেশা ধরিয়ে দেয়। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন সংগীতের এক বিরাট সংগ্রাহক। ভারতবর্ষে ১৯০২ সালে ৭৮ আরপিএম গ্রামোফোন রেকর্ডে (কলের গান) প্রথম গান ধারণ করা হয়, যা ১৯০৩ সালে বাজারে আসে। সেই ১৯০৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার গানের রেকর্ড তিনি সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে চল্লিশের দশকেরও কিছু রয়েছে, যার অনেকগুলোই ভীষণ দুর্লভ।

এর মধ্যে ১০০ বছরের পুরোনো, অর্থাৎ ১৯১২ সালের আগে ধারণকৃত রেকর্ডের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে প্রথম দিকের চারটি গ্রামোফোন যন্ত্র। এর মধ্যে দুটি বড় চোঙওয়ালা, একটি ব্রিফকেস, অপরটি ক্যাবিনেট আকারের। কোনোটিই তিনি নষ্ট হতে দেননি। অবিকল নতুনের মতোই রয়েছে।

চোঙগুলো চকচক করছে। স্প্রিংগুলো কাজ করছে ঠিকঠাক। চাবি দিলেই শত বছর আগের সুরেই বেজে ওঠে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুধু দুর্লভ রেকর্ড সংগ্রহ করাই তাঁর নেশা নয়; এই রেকর্ডগুলো কখন, কোথায়, কীভাবে করা হয়েছে, তার চমৎকার ইতিহাস মুখে মুখে বলে যেতে পারেন ইকবাল মতিন। তা থেকে সাল, তারিখ, শিল্পীর বয়স, বাপ-দাদার পরিচয়—কিছুই বাদ যায় না।

অবাক করা বিষয়, এসব বলতে এক সেকেন্ডের জন্যও তাঁকে স্মৃতি হাতড়াতে হয় না। ইকবাল মতিন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান। শৌখিন সংগীতশিল্পী, সমালোচক, গবেষক এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় বেহালাবাদক। দেশে-বিদেশে বহু মঞ্চে বেহালা বাজিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। রাজশাহী নগরের সাগরপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

জন্ম ১৯৫৬ সালে। প্রকৌশল, ভূগোল, নদীবিজ্ঞান, ভূমিরূপবিদ্যা এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর তাঁর একক ও যৌথভাবে লেখা বেশ কয়েকটি বই বাংলাদেশ ও ভারত থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ইকবাল মতিনের পৈতৃক বাসার আটটি কক্ষে মাত্র তিনজন মানুষ থাকেন। বেশির ভাগ কক্ষ গানের রেকর্ড আর বইপুস্তকের দখলে। পৃথিবীর যেখানে যখন গেছেন, দুর্লভ বই পেলেই কিনেছেন।

একটি বইয়ের পেছনে তাঁর ২৪ হাজার টাকা ব্যয় করারও রেকর্ড রয়েছে। ঘরে ঘরে থরে থরে সেই বই সাজিয়ে রেখেছেন। একইভাবে রেখেছেন গানের রেকর্ডও। ইকবাল মতিনের সংগ্রহে রয়েছে যত সব দুর্লভ গ্রামোফোন রেকর্ড। এই রেকর্ডের আকার সাধারণত ১০ ইঞ্চি হতো।

অথচ তাঁর কাছে বেশ কিছু ১২, ১১, ৯, ৮, ৭ ইঞ্চি মাপের রেকর্ড রয়েছে। এমনকি একটি ৪ ইঞ্চি মাপেরও আছে। এ ছাড়া অত্যন্ত দুর্লভ পিচবোর্ডের তৈরি একটি রেকর্ডও আছে। কোনো গানবাজনা ধারণ করার পর তার একটি মাস্টার কপি বা স্যাম্পল কপি সেই শিল্পীর কাছে পাঠানো হতো। তিনি সেটা অনুমোদন করলেই তা বাজারে ছাড়া হতো।

সেই সময়ের এমন ১৪টি মাস্টার কপি তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। পাজল প্লেট খুবই দুর্লভ। এই প্লেটে পর পর তিনবার পিন রেখে ঘোরালে তিন রকম গান বাজে। সেটিও একখানা তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এবং তাঁর গুরু তানসেনের বংশধর ওস্তাদ উজির খাঁর রেকর্ডও রয়েছে সংগ্রহে।

মোটকথা, ১৮৭৭ সালে টমাস আলভা এডিসনের কণ্ঠে বিশ্বের প্রথম ধারণকৃত বাক্য ‘মেরি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্প’ থেকে শুরু করে ১৯০৯ সালে ধারণকৃত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের স্বকণ্ঠে গাওয়া গানের রেকর্ড, নেতাজি সুভাষ বসু ও মহাত্মা গান্ধীর ভাষণও রয়েছে। ২০০১ সালে প্রখ্যাত সরোদবাদক পণ্ডিত রাধিকা মোহন মৈত্রের ওপরে ভারতে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়। এর তথ্য সংগ্রহের জন্য ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ল্যাডলি মুখোপাধ্যায় এবং বলিউডের বর্তমান সময়ের হিন্দি সিনেমার বিশিষ্ট সাউন্ড রেকর্ডার উজ্জ্বল চক্রবর্তী তাঁর কাছে এসেছিলেন। ওই তথ্যচিত্রে কৃতজ্ঞতা স্বীকার অংশে ইকবাল মতিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে তাঁর সাগরপাড়ার বাসায় বসে তিনি তাঁর সংগৃহীত গানের রেকর্ডের গল্প শোনালেন।

কথায় কথায় বললেন, ভারতবর্ষে ১৯০২ সালের ৮ নভেম্বর গ্রামোফোনে সর্বপ্রথম রেকর্ড করা হয় কলকাতার ক্ল্যাসিক থিয়েটারের দুই নৃত্যশিল্পী শশীমুখী ও ফণীবালার গান। তবে ১১ ও ১২ নভেম্বর রেকর্ডকৃত মিস গওহর জানের গান আগেই বাজারে আসে। তখনকার প্রখ্যাত গায়িকা গওহর জান তাঁর গান রেকর্ডিংয়ের জন্য কোম্পানির কাছ থেকে তিন হাজার টাকা সম্মানী নিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালে নিজস্ব কারখানা তৈরির আগ পর্যন্ত কলকাতায় গানবাজনা ধারণ করে জার্মানির হ্যানোভার শহরে রেকর্ডের কপি করাতে হতো। কপি করানোর সময় রেকর্ডের লেবেলে শিল্পীর নাম যাতে ভুল না হয়, সে জন্য শিল্পীরা গানের শেষে চিৎকার করে নিজের নাম বলতেন; যেমন, ‘আই এম মিস গওহর জান’।

গওহর জানের এমন রেকর্ডও বাজিয়ে শোনালেন তিনি। পাশাপাশি অন্য শিল্পীদেরও সেই রকম রেকর্ড শোনা হলো, যাতে শিল্পীরা চিৎকার করে নিজের নাম বলেছেন; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সংগতকারী তবলাবাদক ও হারমোনিয়ামবাদকের নামও উচ্চারণ করেছেন। এমন রেকর্ডও দেখা হলো। ইকবাল মতিনের বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর তিন মাস। আর নওগাঁর কাশিমপুরের জমিদার শরৎ কুমার মৈত্রের বয়স ৯০ বছর।

ওই সময় ইকবাল মতিন গিয়েছিলেন জমিদারের সঙ্গে দেখা করতে। শিশু ইকবাল মতিনের সংগীতের প্রতি অনুরাগ দেখে জমিদার মুগ্ধ হন। সেই সুবাদে জমিদারবাড়িতে তাঁর তিন দিনের আতিথেয়তা মেলে। ফেরার সময় জমিদার তাঁকে সংগীতের একটি দুর্লভ গ্রন্থ উপহার দেন। বইটির নাম ভ্রাম্যমাণের দিনপঞ্জিকা।

লেখক কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ছেলে প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও সংগীতবোদ্ধা দিলীপ কুমার রায়, যিনি ১৯২০ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত ভারতের বড় বড় শহর ভ্রমণ করার সময় ওস্তাদ ও বাইজিদের গান শোনেন। তাঁর এই গানের অভিজ্ঞতা নিয়েই ১৯২৭ সালে লেখেন ভ্রাম্যমাণের দিনপঞ্জিকা। এই বই ইকবাল মতিনকে সেই সময়ের প্রখ্যাত শিল্পীদের দুর্লভ রেকর্ড ও এ-সংক্রান্ত ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ বইপুস্তক সংগ্রহের প্রতি নেশা ধরিয়ে দেয়। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন সংগীতের এক বিরাট সংগ্রাহক। ভারতবর্ষে ১৯০২ সালে ৭৮ আরপিএম গ্রামোফোন রেকর্ডে (কলের গান) প্রথম গান ধারণ করা হয়, যা ১৯০৩ সালে বাজারে আসে।

সেই ১৯০৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার গানের রেকর্ড তিনি সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে চল্লিশের দশকেরও কিছু রয়েছে, যার অনেকগুলোই ভীষণ দুর্লভ। এর মধ্যে ১০০ বছরের পুরোনো, অর্থাৎ ১৯১২ সালের আগে ধারণকৃত রেকর্ডের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে প্রথম দিকের চারটি গ্রামোফোন যন্ত্র। এর মধ্যে দুটি বড় চোঙওয়ালা, একটি ব্রিফকেস, অপরটি ক্যাবিনেট আকারের।

কোনোটিই তিনি নষ্ট হতে দেননি। অবিকল নতুনের মতোই রয়েছে। চোঙগুলো চকচক করছে। স্প্রিংগুলো কাজ করছে ঠিকঠাক। চাবি দিলেই শত বছর আগের সুরেই বেজে ওঠে।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুধু দুর্লভ রেকর্ড সংগ্রহ করাই তাঁর নেশা নয়; এই রেকর্ডগুলো কখন, কোথায়, কীভাবে করা হয়েছে, তার চমৎকার ইতিহাস মুখে মুখে বলে যেতে পারেন ইকবাল মতিন। তা থেকে সাল, তারিখ, শিল্পীর বয়স, বাপ-দাদার পরিচয়—কিছুই বাদ যায় না। অবাক করা বিষয়, এসব বলতে এক সেকেন্ডের জন্যও তাঁকে স্মৃতি হাতড়াতে হয় না। ইকবাল মতিন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান। শৌখিন সংগীতশিল্পী, সমালোচক, গবেষক এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় বেহালাবাদক।

দেশে-বিদেশে বহু মঞ্চে বেহালা বাজিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। রাজশাহী নগরের সাগরপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। জন্ম ১৯৫৬ সালে। প্রকৌশল, ভূগোল, নদীবিজ্ঞান, ভূমিরূপবিদ্যা এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর তাঁর একক ও যৌথভাবে লেখা বেশ কয়েকটি বই বাংলাদেশ ও ভারত থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ইকবাল মতিনের পৈতৃক বাসার আটটি কক্ষে মাত্র তিনজন মানুষ থাকেন।

বেশির ভাগ কক্ষ গানের রেকর্ড আর বইপুস্তকের দখলে। পৃথিবীর যেখানে যখন গেছেন, দুর্লভ বই পেলেই কিনেছেন। একটি বইয়ের পেছনে তাঁর ২৪ হাজার টাকা ব্যয় করারও রেকর্ড রয়েছে। ঘরে ঘরে থরে থরে সেই বই সাজিয়ে রেখেছেন। একইভাবে রেখেছেন গানের রেকর্ডও।

ইকবাল মতিনের সংগ্রহে রয়েছে যত সব দুর্লভ গ্রামোফোন রেকর্ড। এই রেকর্ডের আকার সাধারণত ১০ ইঞ্চি হতো। অথচ তাঁর কাছে বেশ কিছু ১২, ১১, ৯, ৮, ৭ ইঞ্চি মাপের রেকর্ড রয়েছে। এমনকি একটি ৪ ইঞ্চি মাপেরও আছে। এ ছাড়া অত্যন্ত দুর্লভ পিচবোর্ডের তৈরি একটি রেকর্ডও আছে।

কোনো গানবাজনা ধারণ করার পর তার একটি মাস্টার কপি বা স্যাম্পল কপি সেই শিল্পীর কাছে পাঠানো হতো। তিনি সেটা অনুমোদন করলেই তা বাজারে ছাড়া হতো। সেই সময়ের এমন ১৪টি মাস্টার কপি তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। পাজল প্লেট খুবই দুর্লভ। এই প্লেটে পর পর তিনবার পিন রেখে ঘোরালে তিন রকম গান বাজে।

সেটিও একখানা তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এবং তাঁর গুরু তানসেনের বংশধর ওস্তাদ উজির খাঁর রেকর্ডও রয়েছে সংগ্রহে। মোটকথা, ১৮৭৭ সালে টমাস আলভা এডিসনের কণ্ঠে বিশ্বের প্রথম ধারণকৃত বাক্য ‘মেরি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্প’ থেকে শুরু করে ১৯০৯ সালে ধারণকৃত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের স্বকণ্ঠে গাওয়া গানের রেকর্ড, নেতাজি সুভাষ বসু ও মহাত্মা গান্ধীর ভাষণও রয়েছে। ২০০১ সালে প্রখ্যাত সরোদবাদক পণ্ডিত রাধিকা মোহন মৈত্রের ওপরে ভারতে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়। এর তথ্য সংগ্রহের জন্য ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ল্যাডলি মুখোপাধ্যায় এবং বলিউডের বর্তমান সময়ের হিন্দি সিনেমার বিশিষ্ট সাউন্ড রেকর্ডার উজ্জ্বল চক্রবর্তী তাঁর কাছে এসেছিলেন।

ওই তথ্যচিত্রে কৃতজ্ঞতা স্বীকার অংশে ইকবাল মতিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে তাঁর সাগরপাড়ার বাসায় বসে তিনি তাঁর সংগৃহীত গানের রেকর্ডের গল্প শোনালেন। কথায় কথায় বললেন, ভারতবর্ষে ১৯০২ সালের ৮ নভেম্বর গ্রামোফোনে সর্বপ্রথম রেকর্ড করা হয় কলকাতার ক্ল্যাসিক থিয়েটারের দুই নৃত্যশিল্পী শশীমুখী ও ফণীবালার গান। তবে ১১ ও ১২ নভেম্বর রেকর্ডকৃত মিস গওহর জানের গান আগেই বাজারে আসে। তখনকার প্রখ্যাত গায়িকা গওহর জান তাঁর গান রেকর্ডিংয়ের জন্য কোম্পানির কাছ থেকে তিন হাজার টাকা সম্মানী নিয়েছিলেন।

১৯০৮ সালে নিজস্ব কারখানা তৈরির আগ পর্যন্ত কলকাতায় গানবাজনা ধারণ করে জার্মানির হ্যানোভার শহরে রেকর্ডের কপি করাতে হতো। কপি করানোর সময় রেকর্ডের লেবেলে শিল্পীর নাম যাতে ভুল না হয়, সে জন্য শিল্পীরা গানের শেষে চিৎকার করে নিজের নাম বলতেন; যেমন, ‘আই এম মিস গওহর জান’। গওহর জানের এমন রেকর্ডও বাজিয়ে শোনালেন তিনি। পাশাপাশি অন্য শিল্পীদেরও সেই রকম রেকর্ড শোনা হলো, যাতে শিল্পীরা চিৎকার করে নিজের নাম বলেছেন; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সংগতকারী তবলাবাদক ও হারমোনিয়ামবাদকের নামও উচ্চারণ করেছেন। এমন রেকর্ডও দেখা হলো।

শোনালেন আরও মজার কথা। ‘তোমার ভালো তোমাতে থাক’ গানটি রেকর্ড করার সময় গানের কথা ভুলে যাওয়ার আশঙ্কায় লালচাঁদ বড়াল রেকর্ডিংয়ের সময় পাশে বসা যন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘ভুলে গেলে বলে বলে দিয়ো’। গানের ফাঁকে এ কথাও রেকর্ড হয়ে গেছে। এ ধরনের রেকর্ডও রয়েছে তাঁর কাছে। তারপর একে একে শোনালেন ওস্তাদ চুন্নু খাঁর সরোদ, চলচ্চিত্র অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের নানি, অর্থাৎ অভিনেত্রী নার্গিসের মা জদ্দন বাইয়ের কণ্ঠে রেকর্ডকৃত উচ্চাঙ্গসংগীত।

শিল্পী কমলা ঝরিয়ার নামের উপাধি কীভাবে ‘ঝরিয়া’ হলো, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। আসলে তাঁর নাম কমলা সিনহা। ৯-১০ বছর বয়সের এই বালিকা গান রেকর্ড করে চলে যাওয়ার পর কোম্পানির লোকেরা খেয়াল করেন, কমলার পদবি জানা হয়নি। তখন ট্রেনার কাজী নজরুল ইসলাম জানতে চান, মেয়েটি কোন জায়গার? জানা গেল, মেয়েটি বিহারের ঝরিয়া এলাকার। নজরুল ইসলাম বললেন, ‘রেকর্ডে ওর নাম কমলা ঝরিয়া লিখে দাও।

’ কমলা ঝরিয়ার অনেক রেকর্ডই তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। প্রথম দিকে রবীন্দ্রনাথের গানের রেকর্ডে লেখা থাকত—কথা: ড. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর গান মানুষের মুখে প্রচলিত ছিল রবিবাবুর গান বলেই। রবীন্দ্রসংগীত তখন লেখা হতো না। ১৯২৭ সালে শিল্পী কনক দাসের রেকর্ডে প্রথম লেখা হলো ‘রবীন্দ্রসংগীত’।

কনক দাসের বেশ কিছু গানও পাওয়া গেল তাঁর কাছে। ১৯১৭ সালে বাঙালি পল্টনের সৈন্যরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যাওয়ার জন্য যখন বর্ধমান ত্যাগ করেন, তখন তাঁদের সম্মানে রেলস্টেশনে যে ব্যান্ড বাজানো হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে রেকর্ড আকারে বের হয়। এটিও রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের প্রখ্যাত নাট্যশিল্পীদের নাটকের সংলাপও গ্রামোফোন কোম্পানিগুলো রেকর্ড করত। এই সংলাপের রেকর্ডের বিরাট সংগ্রহ রয়েছে তাঁর কাছে।

শুধু সংলাপই নয়, সেই সময়ের ৩২টি নাটকের চার শতাধিক রেকর্ড তিনি জোগাড় করেছেন। ইকবাল মতিনের ব্যক্তিজীবনের গল্পও সংগ্রহে রাখার মতো। ৩৭ বছর ধরে একই সাইকেলে চেপে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। আগে ছিলেন ছাত্র। এখন শিক্ষক।

বিভাগীয় প্রধান। কিছুদিন পর অবসরে যাবেন। তিনি বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষকের ঐশ্বর্য বাইরের জিনিসে নয়। তিনি দেশের মাটিতে কখনো কোট-টাই পরেন না। বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে পরে নেন।

তিনি বলেন, ‘তখন আমি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করি। ’  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।