বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের স্বপ্ন নিয়ে আরজিনা বেগম এগিয়ে এসেছেন, তার পদচারণা বিশ্বদরবারেও এখন সমাদৃত। অথচ হঠাৎ করেই প্রতিবেশী শিউলীর বিয়ে ঠিক করেছিলেন তার বাবা-মা। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে চায়। শিউলী কী করবে ভেবে না পেয়ে ছুটে আসে তার আরজিনা আপার কাছে। কারণ সে জানে কেউ এগিয়ে না এলেও আরজিনা আপা ঠিকই এগিয়ে আসবেন এবং সাহায্য করবেন।
ঘটনা জানার পর আরজিনা শুধু এগিয়েই আসেননি বরং বিয়ের আগের দিন শিউলীর বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে ভেঙে দেন। শিউলীই শুধু নয়, যেখানে বাল্যবিবাহ সেখানেই আরজিনার প্রতিরোধ। অথচ অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবা-মা এক সময় আরজিনা বেগমের বিয়েও ঠিক করেছিলেন। তারও আগে গ্রামে গড়ে ওঠা এক শিশু সংগঠনে আরজিনা সব সদস্যের মাঝে নিজের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয় না।
এরপর গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের কাছে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে গ্রামের সচেতন মানুষ আরজিনার বাবা-মাকে বুঝিয়ে তার বিয়ে বন্ধ করে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বাবা-মাকে বোঝাতে সক্ষম হন আরজিনা। বাল্যবিবাহের পরিণতি অনেক ভয়ঙ্কর ও খারাপ। বাবা-মা-সহ গ্রামের আরও যারা বাল্যবিবাহের জন্য ছেলেমেয়েদের জোর করে তাদের দেখিয়েছে, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে শেষ হয়ে যেতে। তাই মাত্র ১২ বছর বয়সেই নীলফামারীর জলঢাকার আরজিনা বেগম শুরু করেন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কাজ।
সম্প্রতি আরজিনা নোবেল পুরস্কার প্রদানকারী দেশ নরওয়েতে অনুষ্ঠিত অসলো ফ্রিডম ফোরাম আয়োজিত সম্মেলনে বাংলাদেশের মুখপাত্র হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সামনে বাল্যবিবাহ বন্ধে তার অভিজ্ঞতা এবং নিজের বিয়ে কীভাবে ভেঙেছে সে কথা তুলে ধরেন। সিএনএন, বিবিসিসহ অনেক মিডিয়ায় তার এ সাক্ষাৎকার প্রকাশ ও প্রচার হয়। বাল্যবিবাহ বন্ধে সোচ্চার আরজিনার কৈমারী ইউনিয়নের অবস্থা এক সময় অন্য আট-দশটি ইউনিয়নের মতোই ছিল। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া, শিশুদের স্কুলে না যাওয়া, খোলা মাঠে পায়খানা, বাড়িতে সন্তান প্রসব ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
কিন্তু গত ৬-৭ বছরে বদলে গেছে কৈমারীর সে চিত্র। এলাকার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সর্বোপরি ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্বে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
বর্তমানে কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন, শিশুদের পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত, গর্ভকালীন পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবের হার বেড়ে গেছে অনেকগুণ, চার বছর আগেই অর্জন করেছে বাল্যবিবাহমুক্ত ইউনিয়ন হওয়ার গৌরব। আর এসব উন্নয়নমূলক কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে কৈমারী ইউনিয়ন পরিষদ। কৈমারীর ১০টি গ্রামের শিশুদল ও গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন ইস্যুতে প্ল্যান বাংলাদেশের সহযোগী সংস্থা ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ল্যাম্ব, উদয়াঙ্কুর সেবাসংস্থার সহযোগিতায় এলাকাবাসীকে সচেতন করছে।
কৈমারী ইউনিয়নের সাফল্য অনুপ্রাণিত করেছে অন্যদেরও। পাশর্্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদগুলোও কৈমারীর এসব অর্জনকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। আরজিনা বেগম বলেন, আমি সব সময় সাহসের সঙ্গে কাজ করি। কারণ আমি বিপদে পড়েছিলাম। কিন্তু নিজের বুদ্ধি দিয়ে সে বিপদ পাড়ি দিয়েছি।
এরপরও বলব আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল বলে আমি সহজে কাজ করতে পারি। তাই সবারই উচিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও বুদ্ধি থাকা। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সমাজের সব মানুষেরই এগিয়ে আসা উচিত। সত্যি বলতে, বড় হওয়া যার অদম্য বাসনা, তাকে কি কেউ আটকে রাখতে পারে? সহপাঠী, শিশুদল ও গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের সহযোগিতায় তিনি তার বিয়ে বন্ধ করতে সক্ষম হন। এখন কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় সব বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, অনলাইনে সবার জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, সব শিশু পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত, গর্ভকালীন চেকআপ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবের হার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
চার বছর আগেই অর্জন করেছে বাল্যবিবাহমুক্ত ইউনিয়ন হওয়ার গৌরব। আর এসব উন্নয়নমূলক কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে কৈমারী ইউনিয়ন পরিষদ। প্রতিবছর সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে প্রণীত অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন বাজেট। কৈমারী ইউনিয়নের সাফল্য অনুপ্রাণিত করেছে অন্যদেরও। পাশর্্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদগুলোও কৈমারীর এসব অর্জনকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।