সময়কে কাধে নিয়ে চলো বন্ধু
আজকের সমাজ ও সমাজের মানুষ নানা স্তরে বিভক্ত। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যেন আকাশ পাতাল ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। অর্থের মাধ্যমে কেউ হচ্ছে রাজা, কেউ প্রজা আবার কেউ শাসক, কেউ শোষিত। এই বৈষম্য বাড়ছে কিন্তু কমছে না। কেউ গড়ছে সম্পদের পাহাড় আবার কেউ ভিখারির জীবন যাপন করছে।
কেউ বসে আছে সোনার সিংহাসনে আবার কেউ রাস্তায় ফুটপাতে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। যুগ যুগ ধরে এই বাংলাদেশের মানুষ যে জুলুম, শোষন, শ্রেণী বৈষম্য আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে একটি স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য আজও সে স্বপ্ন স্পর্শ থেকে এই ভূখন্ডের মানুষ অনেক দূরে অবস্থান করছে।
নদী বহুল দেশ আমাদের। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বহ্মপুত্র বিধৌত বাংলাদেশ প্রচুর পলিমাটি সমৃদ্ধ। এ মাটির নিচে লুকিয়ে আছে মূল্যবান খনিজ সম্পদ।
দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দণি-পূর্ব অঞ্চলে যথাক্রমে সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া, চাকমা ও মুরং উপজাতিদের বাস। বাংলাদেশের দক্ষিণে সমূদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় মগ জাতীয় লোকের বাস। দেশের ব্যপক সমতল অঞ্চলজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর লোকজন। বাঙ্গালী নামের পেছনে নৃতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক উপাদানও কাজ করে। যেমন- প্রথম একটি কৌম গোষ্ঠীর নাম হিসেবে বঙ্গ পরিচিত ছিল, যা পরে আঞ্চলিক অর্তে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে ১৯৪৭-৭১ পর্যন্ত এক ভিন্ন ধরনের ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে ছিল। ঐ সময় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর একটি পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই ছিল শাসকবর্গের মূল ল্য। ১৯৫১সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির ফলে ভূমি মালিকানা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠতে লাগল। মানুষ শিতি হতে লাগলো।
উন্নত জীবনের আশায় মানুষ শহরমুখী হল। শহরে এসে কেউ ব্যবসা, চাকুরী, কেউ শিল্প শ্রমিক হয়ে তাদের জীবনধারা পাল্টাতে থাকে। ফলে তাদের মাঝে গড়ে উঠে নতুন নতুন শ্রেণী। কিন্তু ব্রিটিশ শোষন থেকে মুক্তির পর বাংলাদেশ অঞ্চলের মানুষ নতুন করে জীবন ধারা পরিবর্তনের যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা করেছিল পাকিস্তানি অদূরদর্শী শাসকদের একগুয়েমী ও বঞ্চনার ফলে অল্পসময়ে তা ভুলুন্ঠিত হল।
নব্য উপনিবেশ পাকিস্তানের শোষন ও বঞ্চনার যাতাকলে দূর্বিসহ হয়ে উঠে পশ্চিম পাকিস্তান তথা বাংলাদেশী দরিদ্র নিরন্ন মানুষের জীবনযাত্রা।
পাক শোষন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অধিকার আদায়ে সংগ্রামী জনতা। সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় অধিকার আদায়ের মজুর শ্রমিক তাতে জেলেরা। ১৯৭১ সালে নয় মাস ব্যাপী মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী দেশীয় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিসমূহ একসাথে দেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
বিভিন্ন বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নব্বইয়ের দশকে বা এর মাঝামাঝি সময়ে সামাজিক স্তরবিন্যাসে শিতি, অর্ধশিতি ও অশিতি যুবকেরা একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়। তাদের কর্মসংস্থানের সমস্যা জাতীয় সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
শহরে বাড়তে থাকে শিতি বেকারের সংখ্যা। গ্রামেও কর্মহীন হতে থাকে শ্রমিকরা। এদের বয়সসীমা ২০-৩০ বছরের মধ্যে। বিশাল জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের বেকারত্বের কারণে সমাজে নানাবিধ অনাচার, অশান্তি, অপরাধ প্রবনতা তথা সামাজিক সমস্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে বারবার উন্নয়ন কার্যক্রম বিঘিœত হয়।
বর্তমানে দেশে প্রায় আড়াই কোটি লোক বেকার। ১৯৮১সালে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ১কোটি ৩০ল। এর মধ্যে শিতি বেকারের সংখ্যা ছিল ১০লাখ। শিতি যুবকদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না হওয়ায় দেশের বিপুল পরিমান দ জনশক্তি কর্মহীন হয়ে পড়ে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, গবেষক ও আইনজীবিদের এক বিরাট অংশ দেশের জাতীয় উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে ব্যর্থ হয়।
এদের মধ্যে যারা ভাগ্যবান তারা বিদেশে পাড়ি জমায়। কিন্তু এতে দেশের যুবকদের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। ফলে উচ্চ শিার প্রতি সাধারন মানুষের মনে একটি অনীহার ভাব সৃষ্টি হয়।
গ্রামে কাজ নেই। শ্রমবাজারে বিপর্যয়, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিন চোখ মুছতে মুছতে বিমানবন্দরে এসে নামছে।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ধীরগতির তাই গ্রামের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ কাজ পাচ্ছে না। প্রতিবছর ১৫লাখ নতুন মুখ এসে যুগ হচ্ছে শ্রমবাজারে। গায়ে খাটা এসব মানুষ তবুও বেকার থাকছে। ছাটাইয়ের শিকার হচ্ছে শিল্প কারখানা থেকে।
শিা ক্রমশ দেশের মুষ্টিমেয় বিত্তবান লোকের হাতে কুগিত হয়ে পড়ে।
শিা সকলের সমান অধিকার একথা উপেতি হয়। শিার সুযোগ সঙ্কুচিত হওয়ার ফলে সামাজিক ব্যবধান অনেকগুন বেড়ে যায়। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর পুঁজিবাদী অর্থনীতি অনুসরণ করার ফলে সমাজে শ্রেণী বৈষম্য মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। দেশে নিরন্ন ভূমিহীন কৃষক ও বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত কোটি টাকার মালিকের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতেই থাকে। ১৯৭৫সালের ৩১মার্চ পর্যন্ত ১কোটি টাকার উর্দ্ধে ব্যাংক ব্যালেন্স আছে এমন লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র দুই জন।
১৯৭৭সালে তাদের সংখ্যা দাড়ায় ১২তে। ১৯৮৫ সালে ৬০ এবং ১৯৯০সালে এই কোটিপতির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রখ্যাত কলামিষ্ট আ.জ.ম ওবায়েদুল্লাহ এক নিবন্ধে লিখেছেন- ‘‘পাকিস্তান আমলে বলা হতো, দেশ বাইশ পরিবারের হাতে বন্দী। ’ অর্থাৎ তখন পাকিস্তানে কোটিপতি পরিবারের সংখ্যা ছিল ২২টি। আজ আমাদের জন্য সুখকর সংবাদ যে দেশে কোটিপতির সংখ্যা কত তা গুনে গুনে সময় ব্যয় ছাড়া কিছুই নয়।
কাষ্টমসের প্রেইজার, এলজিইডির কেরানী, বিমানবন্দরের কিনার, মন্ত্রীর বন্ধুর ছোট ভাই, অমুক প্রভাবশালীর অমুক, দলের নেতা- উপনেতা ও পাতিনেতা থেকে শুরু করে সবাই কোটিপতি। মন্ত্রী এমপিদের কথা নাইবা বললাম। ’’
বাংলাদেশে পরনির্ভরশীল পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সীমাহীন দারিদ্র ও গুটিকয়েক লোকের অবিশ্বাস্য প্রাচুর্য পাশাপাশি অবস্থান করে। দেশের নব্য ধনীরা সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবয় ঘটায়। এরাই হয় অপসংস্কৃতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
ফলে দেশের লোকায়ত সংস্কৃতির স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চরমভাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।