ভারত বিভাজনে চীনের আভ্যন্তরীন অনুশীলন ও কিছু কথা
আবু জুবায়ের
কয়েকদিন আগে ইন্টারন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ একটি পর্যালোচনা মূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করে তাদের নিজস্ব অয়েব সাইটে। এই ওয়েব সাইটের ঠিকানা http://www.iiss.org এই সংস্থার চায়নিজ ভার্সনে লেখা এই প্রবন্ধটি উপমহাদেশে নতুন করে চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়েছে। এই প্রবন্ধটি প্রকাশ হয়েছে এমন একটি সময়ে যখন চায়না ভারত এর মধ্যে ১৩ তম সীমান্ত বৈঠক চলছিলো। প্রবন্ধের ছিলো, If China takes a little action, the so-called Great Indian Federation can be broken up (Zhong Guo Zhan Lue Gang, http://www.iiss.cn, Chinese, August 8, 2009).
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রানালয় থেকে গত জুলাই মাসে বলা হয়েছে যে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান ২০১২ সালের আগেই ভারত আক্রমণ করার কর্মটি সেরে ফেলবে চীন। আভ্যন্তরীন টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থা, ক্রমাগত বেড়ে চলা বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক আস্থিরতা থেকে দেশের মানুষের নজর ঘোরানোর তাগিদেই চীনের এই ভারত আক্রমণের পরিকল্পনা।
ইন্ডিয়ান ডিফেন্স ভিউ�র এডিটার ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ভারত বর্মার মতে, �এবারের চীনের আক্রমণটি হবে আগের আক্রমণের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। কারণ এটা চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির দেশের মানুষের কাছ থেকে তদের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফিরিয়ে আনারও কুটনৈতিক লড়াই। তাই সর্ব শক্তি দিয়ে চীন ভারত দখলের চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়বে�।
দেশের ভিতরে নিজেদের ক্ষমতা বাঁচিয়ে রাখার জন্যে চীনা কমিউনিষ্ট দল ভারত আক্রমণের এই পরিকল্পনার জন্যে প্রস্তুতি নেওয়াও ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। ভারত সম্পর্কে বিদ্বেষ মূলক প্রচার চলছে জোর কদমে।
অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ছিন কাং ১৮ জুন বলেছেন , এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের নির্বাহী পরিষদ চীন এবং ভারতের বিতর্কিত এলাকা সম্পর্কিত যে দলিল গ্রহণকরেছে চীন তাতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং এথেকে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব দূর করার জন্য এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে । চীনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক চীন এবং ভারতের বিতর্কিত এলাকা সম্পর্কিত দলিল গ্রহণ করা ভারতের অপচেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত । সম্প্রতি ভারত বিরামহীনভাবে দুদেশের বিতর্কিত এলাকায় সৈন্যমোতায়েন বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তা থেকেই ভারতের আসল উদ্দেশ্যস্পষ্টভাবেবোঝা যায় যে, ভারত দুদেশের বিতর্কিত এলাকার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্যোগ নিয়ে জয় লাভের অপচেষ্টা করছে ।
কিছু দিন আগে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের নির্বাহী পরিষদে " ভারতের বিদেশী অংশিদারের কৌশল--২০০৯-২০১২" শিরোনামে চীন ও ভারতের বিতর্কিত এলাকা সম্পর্কিত দলিল গৃহীত হয়েছে । দলিলটি অনুযায়ী এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক ভারতকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে ।
এর মধ্যে ৬ কোটি মার্কিন ডলার চীন ও ভারতের বিতর্কিত এলাকা অর্থাত তথাকথিত " অরুণাচল প্রদেশের" পানি প্রকল্পে ব্যয় করা হবে । চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিভাগের রাজনৈতিক অফিসের উপপ্রধান ইয়ে হাইলিন মনে করেন , এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সদস্যদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ না করার উদ্দেশ্য লংঘন করেছে এবং এটা চীন-ভারত সীমান্ত সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে না ।
এবার ফিরে আসি প্রবন্ধটিতে। মজার ঘটনা হচ্ছে এই প্রচারনাটি চায়নার নানা প্রতিরক্ষা জার্নাল এবং ওয়েব সাইট সমুহে প্রকাশ করা হচ্ছে। ভারত এটাকে ঝান লুঊ স্ট্র্যাটেজি হিসাবে দেখছে।
এই প্রবন্ধে উল্ল্যেখ করা হয় ভারত কেন্দ্রিক এশিয়া নীতি প্রকৃত পক্ষে হিন্দুস্থান কেন্দ্রিক এক ধরনের কেন্দ্রীকতা। ইতিহাসে একক ভারত বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকে পারে না। ভারত একমাত্র হিন্দুত্ব দিয়ে একটি রাষ্ট্রের একক সীমানা রক্ষা করতে বেশি ব্যতিব্যস্ত। তথা কথিত ভারত বিভাগও ধর্ম ভিত্তিক হয়েছে বলে এই প্রবন্ধে উল্ল্যখ করা হয়। ভারতের শ্রেনী বৈশম্য,ধর্মের উগ্রতা,ধর্মান্ধতা সহ নানা বিষয় ভারতের রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিকে ঝাকুনি দিচ্ছে।
প্রবন্ধে লেখক মনে করেন চায়নার তার নিজের স্বার্থ এবং এশিয়ার উন্নয়নের খাতিরে ভারতের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির সাথে আলাদা ভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করা উচিত। এর মধ্যে আসামিস (আহমিয়),তামিল এবং কাষ্মিরিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং পরবর্তিতে তাদের ভারত থেকে বের হয়ে যাবার জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে চিনের সহযোগিতা করা উচিত। এর মধ্যে উলফাকে সাহায্য করার মাধ্যমে আসামকে তাদের জাতীয় স্বাধীনতার মর্মার্থ অনুভব করতে দেয়া উচিত। এই প্রবন্ধে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে এই ভাবে যে,বাংলাদেশকে অনুভব করলে বোঝা যায় যে এই দেশের সবচেয়ে বড় হুমকি ভারত। যারা আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ভারত ফেডারেশনের মধ্যে নিয়ে আসতে চায়।
ভারত চায়নাকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ভিয়েতনামকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে, যেখানে দক্ষিন চায়না সাগরের নানশা দ্বীপপুঞ্জকে ভিয়েতনাম দখল করে রেখেছে।
এখন চায়নার প্রয়োজন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা সেখানে জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে চায়নার প্রতিপক্ষে।
এখানে আরো বলা হয়েছে যে চায়না বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে সাহায্য করতে পারে যাতে করে পশ্চিম বঙ্গের স্বাধীনতার জন্য তারা উতসাহ দিতে পারে। সেটা না হলে অন্তত আরেকটি বাঙ্গালিদের রাষ্ট্র সৃষ্টি করা যেতে পারে। যাতে করে বাংলাদেশ একটি ভালো প্রতিবেশি পেতে পারে।
এটি অত্যন্ত আখাংকিত বিষয় এই উপমহাদেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
এই প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছে নেপাল,পাকিস্থান ভুটানকেও আসামের স্বাধীনতার জন্য সহযোগি হতে পারে। এছাড়া তামিল ও নাগাদের স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশকে পশ্চিম বঙ্গের স্বাধীনতার জন্য সহযোগিতা করার মাধ্যমে চায়না ভারতের দখলে থাকা চায়নার ৯০০০০ বর্গ কিঃমিঃ জমি পুনররুদ্ধার করতে পারবে।
এই প্রবন্ধের মাধ্যমে এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনের এক রূপপরিকল্পনা দেখানো হয়েছে। ভারতের প্রতিবেশিদের সাথে এক ধরনের আক্রমনাত্নক সম্পর্ক এবং ভারতের অনেকগুলো জাতিগোষ্ঠি তাদের স্বকীয়তা প্রমান করবার জন্য অনেকদিন ধরে চেষ্ঠা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উত্তর পূর্বের সাতটি দেশ ছাড়াও পাঞ্জাব,কাশ্মীর,পশ্চিম বংগ,দার্জিলিংকে নিয়ে গ্রেটার নেপাল,তামিলদের নিজেদের রাষ্ট্র,এছাড়া ভারতের প্রায় এক রাজ্যের সাথে আরেক রাজ্যের সম্পর্ক খুব যে ভালো সেটা বলা যাবে না। উত্তর প্রদেশ দিল্লিকে ইলেক্ট্রিসিটি দিতে চায় না। এছাড়া পানি সমস্যাতো রয়েছেই। ভারতের স্বৈরতান্ত্রিক আচরন এই উপমহাদেশ ছাপিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশও ভুক্তভোগি হচ্ছে। ভারতীদের মানবিক গুনাবলী অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে।
বিকৃতরুচির দেশে পরিণত হয়ার ফলে আত্নমর্যাদাশীল অনেক জাতিগোষ্ঠি ভারতের অংশ হিসাবে থাকতে চাইছে না। চায়নার কৌশল বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল জনক হতে পারে বলে অনেকে মনে করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।