আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওড়াওড়ির দিন (আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর আত্মজৈবনিক ভ্রমন কাহিনী)



আমি তখন বেইলিরোডের অফিসার্স কোয়াটার্সে থাকি। সামনে নববর্ষ। আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে নববর্ষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন আর পরিচালনার। কলোনির মধ্যে ভালো নাচ গান করে এমন কজনকে বেছে নিয়ে রিহার্সেল শুরু করেছি। অনুষ্ঠানে একটা নাটক আছে।

সেটা জমবে বলেই মনে হচ্ছে। যেসব ছেলেমেয়ে নাম দিয়েছিল তাদের সবাইকে নেওয়া যায়নি। ভালো নয় বলেই বাদ দিতে হয়েছে। বিশেষ করে একজনকে কিছুতেই নেওয়া গেল না। ছেলেটা একটা কলেজে বি এ পড়ে।

সে নাম দিতে চায় গানে। তাকে একটা গান গাইতে বললে সে আমাদের খুব জনপ্রিয় একটা গানই শোনাল,কিন্তু যে উৎকট সুরে সে তা শোনাল যে তার কথাগুলো না জানা থাকলে বোঝার উপায়ই নেই যে সেটা ঐ গান। গলার অবস্থাও প্রায় সুরের মতই। এ কি কোনো মানুষের না কোনো শান্ত নিরীহ গৃহপালিত জীবের বোঝা দায়। এরপর কি করে তাকে চান্স দিই।

কিন্তু বাদ পড়ায় সে এমন ভয়াবহভাবে তেড়ে উঠল যেন অনুষ্ঠান থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ গানটা বাদ দেওয়া হয়েছে। তাকে বাদ দেওয়ার জন্য আমরা তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করব কী সংগীতের ব্যাপারে আমাদের আপাদমস্তক মূর্খতার জন্য সেই উল্টো আমাদের জন্য দুঃখিত হতে লাগল। যা হোক,দিনকয় একটানা হুমকি ধমকি চালিয়ে সে যেদিন সত্যি সত্যি বুঝল আমরা তাকে কিছুতেই চান্স দিচ্ছি না সেদিন সে সবার সামনে হটাৎ করে হা্উ মাউ করে কেদে উঠে তাকে চান্স দেবার জন্য অনুরোধ করতে লাগল। সে অঝর কান্না আর থামে না। বিশ বাইশ বছরের একটা ছেলের এমন হাহা কান্না চোখে দেখা কঠিন।

আমরা তাকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলাম। ভালো করে প্রা্কটিস করলে সামনের বছর সুযোগ দেওয়ার আশ্বাসও দিলাম। কিন্তু কিছুতেই কাজ হল না। পাড়ার এমন জমজমাট জলসায় সবার সামনে গান গাইতে না পারলে বেচে থেকে কি লাভ । সবাই মিলে ঠেলে ঠুলে তাকে বাসায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করি কিন্তু নকল ধরা পড়া ছাত্রের মতো সে আমাদের পা জড়িয়ে ধরে হুহু করে কাদে।

আমরা জনা পাচ সাত লোক শেষ পর্যন্ত প্রায় গায়ের জোরে তার হাত থেকে রেহাই নিলাম। ও বিদায় নিলে এলেন ওর আব্বা। তার মুখে প্রায় ধমকের সুর:দিন না ছেলেটাকে একটা চান্স। কোরান হাদিস উল্টে যাবে নাকি? বাবা ব্যার্থ হলে এলেন আম্মা,তার স্বরে মাতৃহৃদয়ের করুন ফরিয়াদ। মা গেলে একসঙ্গে সাত ভাই বোন,সবশেষে কলোনির কিছু বাসিন্দা।

কোনটা রাখি?শ্যাম না কুল?অনুষ্ঠান না গান? আমার তেড়িয়া ভাবভঙ্গির সামনে সবকিছু নিস্ফল বুঝেও সে আশা ছাড়ল না। তার অটল বিশ্বাস :লেগে থাকলে চান্স তার হবেই। একসময় টের পেলাম রিহার্সেল ঘরের আশেপাশে তার চলাফেরা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ভয় হল কিছু একটা করে বসে কিনা। কিনতু দেখেশুনে বুঝলাম ওসব মতলব তার নেই।

তার প্রার্থনা নেহাতই মানবিক করুনা। একটু দয়া দিয়ে তার জিবনটা ধুয়ে দিতে হবে। তার সাথে চোখাচোখি হলেই দেখতে পাই তার চোখে পানি ছলছল করছে। কি করে আমাকে বোঝাবে তার শিল্পী জীবনের এই জয়যাত্রালগ্নে অনুষ্ঠানে গান গাওয়াটা তার জন্যে কী ভীষন জরুরি। ..................... (চলবে?).................................................................


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।