এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
একটি জরুরী ঘোষনা,বঙ্গপোসাগরে নিম্মচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্নিঝড়টি আজ ভোর রাতের দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানতে পারে। এমতবস্থায় এলাকাবাসিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল সাইক্লোন সেন্টারে অবস্থান নেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরুধ করা যাচ্ছে। মাইকে জরুরী ঘোষনাটি শোনার পর থেকে অন্যদের মত আক্কাস আলীও বাজার থেকে বাড়ির দিকে হাটাঁ শুরু করল। সুদের উপর টাকা নিয়ে কয়েকদিন আগে দোচালা ছনের ঘর ছন পাল্টিয়েছে আক্কাস আলী। দুই সন্তান আর বউ নিয়ে মাথা গোজাঁর জন্য দোচালা ঘরটিই আক্কাস আলীর শেষ সম্বল।
বড় মেয়ের নাম ময়না ছোট ছেলের নাম আব্বাস। বর্গা জমিতে চাষ করে মানুষের জমিতে কামলা দিয়ে কোন রকম চলে আক্কাস আলীর সংসার। আজ যদি সত্যি ঘূর্নিঝড় হয় তাহলে আক্কাস আলীর কি হবে?আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে আক্কাস আলীর বাড়িতে এসে দেখে ময়না ৩টা বাশঁ সামনে নিয়ে বসে আছে। আক্কাসের বুঝতে কষ্ট হয়না ঘূর্নিঝড়ের ঘোষনা দেওয়া টেক্সিটা গ্রামেও এসেছে।
ও ময়নার মা বাশঁ কি আর নাই?
না,ময়নার বাপ।
এই তিনটা গাইড়া দাও। আল্লাহ যদি রাখে তাইলে থাকব।
বাশঁ আর পাটের রশি দিয়ে আক্কাস কাজে নেমে পড়ে। ঘরের তিন কোনায় ভাল করে গর্ত করে বাশঁ দুইটা গাইড়া দিয়া আক্কাস মনে মনে আওড়াতে থাকে হে খোদা গরীবকে আর মাইরোনা। ঝড়-তুফানে যদি এই ঘর না থাকে বউ পোলা নিয়ে থাকুম কই?ও ময়নার মা পলিথিনে ময়নার আর আব্বাসের কিছু কাপড় লইয়া লও।
তোমার একখান কাপড়ও লইয়া লইয়ো।
দোচালা ছনের ঘরের দরজা বন্ধ কইরা আক্কাস বউ সন্তান নিয়া সাইক্লোন সেন্টারের দিকে হাটাঁ শুরু করে । হাটঁতে হাটঁতে আক্কাস সিদ্ধান্ত নেয় বউ সন্তানদের সাইক্লোন সেন্টারে রেখে আসবে। যতই কিছুই হউক আক্কাস এই ঘর ছেড়ে যাবেনা। বউ আর দুই সন্তানকে সাইক্লোন সেন্টারে রেখে আসার সময় আক্কাসের ময়নার মা সবার সামনেই আক্কাসের পা দইরা কইলো ,ময়নার বাপ দোহাই যাইয়ো না।
আক্কাস ময়নার মা'র কাকে কানে বলে যে পাশে বাশঁ গাইড়া দিতে পারিনাই সেই পাশে আমি বাশঁ হইয়া খাড়ামু। ময়নার মায়ের চোখের পানির দিকে না থাকিয়ে দোচালা ছনের ঘর রক্ষায় আ্ক্কাস বাড়ি ফিরে এল।
ঘরের যে কোনায় বাশঁ দিতে পারে নাই সেই কোনয় গিয়ে হেলান দিয়ে বসে রইল। ময়না আর আব্বাসের মুখ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল আক্কাস। হঠাৎ মাঝ রাতে আক্কাসের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
প্রকৃতির তান্ডবে আক্কাসের ঘরের চাল উড়ে গেল । কয়েক মিনিটের মধ্যে আক্কাস ঘরের নিচে চাপা পড়ে জ্ঞান হারাল।
পরদিন শক্তকিছু হাত অজ্ঞান আক্কাস আলীকে বেড়ার নীচ থেকে উদ্ধার করল। চিকিৎসা দিয়ে আক্কাসের জ্ঞান ফিরাল। চোখ মেলে আক্কাস দেখল জলপাই রঙের যে পোশাক দেখলে আক্কাস ভয়ে কুকঁড়ে যেত সেই জলপাই রঙের পোশাক দারীরাই সারা গ্রামের মানুষদের সাহায্য করছে।
কাৎ হয়ে যাওয়া ধানের গোলা ঠিক করে দিচ্ছে ,আহত গরু ছাগলকে কে কি করতে হবে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে । ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের জমির বেচেঁ যাওয়া ফসল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
জলপাই রঙের একজন এসে কাগজে মোড়ানো কয়েকটি বিস্কুট আক্কাস আলীর হাতে দিল। বিস্কুট খাওয়া শেষে আক্কাস আলী কাগজের টোঙা খুলে দেখল একটি কবিতার শেষের ৩টি লাইন আছে। ৩ক্লাস পড়া আক্কাস আলী বানান করে
মূর্খ মানুষ, দূরে আছি, জানতে ইচ্ছা করে
দিনরাত লেফ-রাইট করলে ক'মণ শস্য ফলে
এক গণ্ডা জমিতে?
তিনটি লাইন পড়ে।
লেখার নীচে কবির নামও পড়ে। আক্কাস আলী কাগজটা যত্ন করে রেখে দেয়। অনেক রাজনীতিবিদও হোমড়া চোমড়া নিয়ে আক্কাসদের দেখতে আসে। ফটোসেশন আর টিভি ক্যামেরার সামনে আক্কাসদের কাধেঁ হাত দেওয়ার শর্ট নেওয়া শেষ হলেই আবার চলে গেছে নেতারা । কিন্তু জলপাই রঙের পোশাকধারীরা কয়েকদিন রাতদিন পরিশ্রম করেছে আক্কাস আলীদের আগের গ্রামটি ফিরে দেওয়ার চেষ্টায়।
কয়েকদিন পর এলাকার এক শিক্ষিত মানুষের কাছে কবিতার শেষের ৩টি লাইন নিয়ে যায় আক্কাস আলী। জানতে পারে প্রথাবিরোধী কবির কথা। লিভটুগেদারে বিশ্বাসী মনোভাবের কথা। অতিরিক্ত মদ পানে মৃত্যর খবরটিও জানতে পারে আক্কাস আলী। আক্কাস আলীর মনে প্রশ্ন জাগে মদ খাইয়া নারী লইয়া মৌজ কইরা কবিতা লেইখ্যা লেইখ্যা কত মন শস্য রক্ষা করা যায় ?
----------------------------
লেখাটি একবারেই লেখা।
কোনরকম সম্পাদনাও হয়নি। বানানও বাক্য গঠন কিছুই ২য়বার দেখা হয়নি । কারণ,এই লেখা সেইসব শিক্ষিতদের জন্য যাদের আক্কাস আলীদের মত সরল মনের মানুষ হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৫০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।